แปล​ความหมาย​อัลกุรอาน​ - คำแปลภาษาเบงกาลี - อบูบักร์ ซะกะรียา

หมายเลข​หน้า​:close

external-link copy
196 : 7

إِنَّ وَلِـِّۧيَ ٱللَّهُ ٱلَّذِي نَزَّلَ ٱلۡكِتَٰبَۖ وَهُوَ يَتَوَلَّى ٱلصَّٰلِحِينَ

আমার অভিভাবক তো আল্লাহ্ যিনি কিতাব নাযিল করেছেন এবং তিনিই সৎকর্মপরায়ণদের অভিভাবকত্ব করে থাকেন [১]। info

[১] এখানে ‘ওলী’ অর্থ রক্ষাকারী, সাহায্যকারী, অভিভাবক। আর ‘কিতাব' অর্থ কুরআন। ‘সালেহীন’ অর্থ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমার ভাষায় সে সমস্ত লোক, যারা আল্লাহর সাথে কাউকে সমকক্ষ সাব্যস্ত করে না। এতে নবী-রাসূল থেকে শুরু করে সাধারণ সৎকর্মশীল মুসলিম পর্যন্ত সবাই অন্তর্ভুক্ত। আয়াতের অর্থ হচ্ছে, তোমাদের বিরোধিতার কোনো ভয় আমার এ কারণেই নেই যে, আমার রক্ষাকারী, সাহায্যকারী ও অভিভাবক হলেন আল্লাহ, যিনি আমার উপর কুরআন নাযিল করেছেন। এখানে আল্লাহ্ তা'আলার সমস্ত গুণাবলীর মধ্যে বিশেষভাবে কুরআন নাযিল করার গুণটি উল্লেখ করা হয়েছে এজন্য যে, তোমরা যে আমার শক্রতা ও বিরোধিতায় বদ্ধপরিকর হয়ে আছ তার কারণ হচ্ছে যে, আমি তোমাদেরকে কুরআনের শিক্ষা দেই এবং কুরআনের প্রতি আহবান করি। কাজেই যিনি আমার উপর কুরআন নাযিল করেছেন তিনিই আমার সাহায্যদাতা ও রক্ষণাবেক্ষণকারী। অতএব, আমার কি চিন্তা? আয়াতের শেষ বাক্যটিতে একটি সাধারণ নিয়ম বাতলে দেয়া হয়েছে যে, নবী-রাসূলগণের মর্যাদা তো বহু উর্ধ্বে, সাধারণ সৎ মুসলিমদের জন্যও আল্লাহ্ সহায়, রক্ষাকারী ও অভিভাবক। অর্থাৎ আল্লাহ্ই আমার জন্য যথেষ্ট। তিনিই আমার সাহায্যকারী, তার উপরই আমার ভরসা। আর তার কাছেই আমি আশ্রয় চাই। দুনিয়া ও আখেরাতে তিনিই আমার অভিভাবক। আর আমার পরে প্রত্যেক নেককার বান্দারও তিনি অভিভাবক। [ইবন কাসীর] এ আয়াতের সমর্থনে অন্যত্র এসেছে, “আমরা তো এটাই বলি, আমাদের উপাস্যদের মধ্যে কেউ তোমাকে অশুভ দ্বারা আবিষ্ট করেছে।” তিনি বললেন, ‘নিশ্চয় আমি আল্লাহকে সাক্ষী করছি এবং তোমরাও সাক্ষী হও যে, নিশ্চয় আমি তা থেকে মুক্ত যাকে তোমরা শরীক কর, আল্লাহ ছাড়া। সুতরাং তোমরা সবাই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কর; তারপর আমাকে অবকাশ দিও না। আমি তো নির্ভর করি আমার ও তোমাদের রব আল্লাহর উপর; এমন কোনো জীব-জন্তু নেই যে তাঁর পূর্ণ আয়ত্তাধীন নয়; নিশ্চয় আমার রব আছেন সরল পথে।’ [সূরা হুদ ৫৪-৫৬]

التفاسير:

external-link copy
197 : 7

وَٱلَّذِينَ تَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦ لَا يَسۡتَطِيعُونَ نَصۡرَكُمۡ وَلَآ أَنفُسَهُمۡ يَنصُرُونَ

আর আল্লাহ ছাড়া তোমরা যাদেরকে ডাক তারা তো তোমাদেরকে সাহায্য করতে পারে না এবং তারা তাদের নিজেদেরকেও সাহায্য করতে পারে না। info
التفاسير:

external-link copy
198 : 7

وَإِن تَدۡعُوهُمۡ إِلَى ٱلۡهُدَىٰ لَا يَسۡمَعُواْۖ وَتَرَىٰهُمۡ يَنظُرُونَ إِلَيۡكَ وَهُمۡ لَا يُبۡصِرُونَ

আর যদি আপনি তাদেরকে সৎপথে ডাকেন তবে তারা শুনবে না [১] এবং আপনি দেখতে পাবেন যে, তারা আপনার দিকে তাকিয়ে আছে; অথচ তারা দেখে না [২]। info

[১] অন্যত্রও আল্লাহ্ তা'আলা এ কথা বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, “তোমরা তাদেরকে ডাকলে তারা তোমাদের ডাক শুনবে না এবং শুনলেও তোমাদের ডাকে সাড়া দেবে না।" [সূরা ফাতের ১৪]

[২] অর্থাৎ এ উপাস্যদের দিকে তাকালে মনে হবে যেন তারা তোমার দিকে তাকিয়ে আছে। বস্তুতঃ তারা তাদের এ নির্জীব চোখ দিয়ে তোমাদের দিকে তাকাতে দেখলেও তারা কিন্তু তোমাদের দেখতে পাচ্ছে না। এ ব্যাপারে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। [ইবন কাসীর]

التفاسير:

external-link copy
199 : 7

خُذِ ٱلۡعَفۡوَ وَأۡمُرۡ بِٱلۡعُرۡفِ وَأَعۡرِضۡ عَنِ ٱلۡجَٰهِلِينَ

মানুষের (চরিত্র ও কর্মের) উৎকৃষ্ট অংশ গ্রহণ করুন, সৎকাজের নির্দেশ দিন এবং অজ্ঞদেরকে এড়িয়ে চলুন [১]। info

[১] আলোচ্য আয়াতগুলোতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সর্বোত্তম চরিত্রের হেদায়াত দেয়া হয়েছে। [সা’দী] তাতে তিনটি বাক্য রয়েছে। প্রথম নির্দেশ হচ্ছে, আপনি عفو গ্রহণ করুন। এখানে উল্লিখিত العفو শব্দটির আরবী অভিধান মোতাবেক একাধিক অর্থ হতে পারে এবং একত্রে সব ক'টি অর্থই প্রযোজ্য হতে পারে। সে কারণেই তাফসীরবিদ আলেমগণের বিভিন্ন দল বিভিন্ন অর্থগ্রহণ করেছেন। (এক) অধিকাংশ তাফসীরকার যে অর্থ নিয়েছেন তা হল এই যে, عفو বলা হয় এমন প্রত্যেকটি কাজকে যা সহজে কোনো রকম আয়াস ব্যতিরেকে সম্পন্ন হতে পারে। [ইবন কাসীর] তাহলে বাক্যটির অর্থ দাঁড়ায় এই যে, আপনি এমন বিষয় গ্রহণ করে নিন যা মানুষ অনায়াসে করতে পারে। অর্থাৎ শরীআত নির্ধারিত কর্তব্য সম্পাদনে আপনি সাধারণ মানুষের কাছে সুউচ্চমান দাবী করবেন না; বরং তারা সহজে যে পরিমাণ আমল করতে পারে আপনি তাই গ্রহণ করে নিন। মুফাসসিরগণের মতে, এ আয়াতটিতে আল্লাহ্ তা'আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মানুষের আমল-আখলাকের ব্যাপারে সাধারণ আনুগত্য কবূল করে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। [আত-তাফসীরুস সহীহ] অর্থাৎ মানুষ যা করতে পারে তার প্রকাশ্য রূপ দেখেই আমি সন্তুষ্ট থাকব। তাদের প্রকৃতি যেটা করতে সমর্থ নয় সেটা তাদের উপর চাপিয়ে দেব না। তাদের ভুল-ত্রুটি হলে সেটা উপেক্ষা করে যাব। তাদের উপর কঠোরত আরোপ করব না। [ইবন কাসীর; সাদী; ফাতহুল কাদীর]

(দুই) عفو এর অপর অর্থ ক্ষমা করা এবং অব্যাহতি দেয়াও হয়ে থাকে। তাফসীরকার আলেমগণের এক দল এক্ষেত্রে এ অর্থেই বাক্যটির মর্ম সাব্যস্ত করেছেন যে, আপনি পাপী-অপরাধীদের ক্ষমা করে দিন। [ইবন কাসীর, যায়দ ইবন আসলাম হতে]

আয়াতের দ্বিতীয় নির্দেশ হচ্ছে, আপনি عرف এর নির্দেশ দিন। এখানে العرف শব্দটির অর্থ, সৎকাজ বা পরিচিত কাজ। যে কোনো ভাল ও প্রশংসনীয় কাজই এর অন্তর্ভুক্ত। [ইবন কাসীর] অর্থাৎ যেসব লোক আপনার সাথে মন্দ ও উৎপীড়নমূলক আচরণ করে, আপনি তাদের থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করবেন না; বরং তাদেরকে ক্ষমা করে দিন। কিন্তু সেই সাথে তাদেরকে সৎকাজেরও উপদেশ দিতে থাকুন। অর্থাৎ অসদাচরণের বিনিময় সদাচরণ এবং অত্যাচারের বিনিময় শুধুমাত্র ন্যায়নীতির মাধ্যমেই নয়; বরং অনুগ্রহের মাধ্যমে দান করুন।

আয়াতের তৃতীয় নির্দেশ হচ্ছে, আপনি জাহেল বা মূর্খদেরকে উপেক্ষা করুন। যারা জাহেল তাদের কাছ থেকে আপনি দূরে সরে থাকুন। মর্মার্থ এই যে, আপনি অত্যাচারের প্রতিশোধ না নিয়ে তাদের সাথে কল্যাণকর ও সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্যবহার করুন এবং একান্ত কোমলতার সাথে তাদেরকে সত্য ও ন্যায়ের বিষয় বাতলে দিন। কিন্তু বহু মূর্খ এমনও থাকে যারা এহেন ভদ্রোচিত আচরণে প্রভাবিত হয় না; বরং এমতাবস্থায়ও তারা মূর্খজনোচিত রূঢ় ব্যবহারে প্রবৃত্ত হয়। এমন ধরনের লোকদের সাথে আপনার আচরণ হবে এই যে, তাদের হৃদয় বিদারক মূর্খজনোচিত কথা-বার্তায় দুঃখিত হয়ে তাদেরই মত ব্যবহার আপনিও করবেন না; বরং তাদের থেকে দূরে সরে থাকবেন। তাফসীরশাস্ত্রের ইমাম ইবন কাসীর রাহিমাহুল্লাহ বলেন, দূরে সরে থাকার অর্থও মন্দের প্রত্যুত্তরে মন্দ ব্যবহার না করা। এর অর্থ এই নয় যে, তাদের হেদায়াত করাও বর্জন করতে হবে। কারণ, এটা রিসালাত ও নবুওয়তের দায়িত্ব এবং মর্যাদার যোগ্য নয়। এক্ষেত্রে আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত একটি ঘটনা রয়েছে যে, উমার ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহুর খেলাফত আমলে উয়াইনাহ ইবন হিসন একবার মদীনায় আসে এবং স্বীয় ভ্রাতুস্পপুত্র হুর ইবন কায়সের মেহমান হয়। হুর ইবন কায়স ছিলেন সে সমস্ত বিজ্ঞ আলেমদের একজন যারা ফারূকে আযম রাদিয়াল্লাহু আনহুর পরামর্শ সভায় অংশগ্রহণ করতেন। উয়াইনাহ স্বীয় ভ্রাতুস্পপুত্র হুরকে বলল, তুমি তো আমীরুল মু'মীনের একজন অতি ঘনিষ্ঠ লোক; আমার জন্য তার সাথে সাক্ষাতের একটা সময় নিয়ে এসো। হুর ইবন কায়স রাদিয়াল্লাহু আনহু উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট নিবেদন করলেন যে, আমার চাচা উয়াইনাহ আপনার সাথে সাক্ষাত করতে চান। তখন তিনি অনুমতি দিয়ে দিলেন। কিন্তু উয়াইনাহ উমার ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহুর দরবারে উপস্থিত হয়েই একান্ত অমার্জিত ও ভ্রান্ত কথাবার্তা বলতে লাগল যে, “আপনি আমাদেরকে না দেন আমাদের ন্যায্য অধিকার, না করেন আমাদের সাথে ন্যায় ও ইনসাফের আচরণ।” উমার ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহু তার এসব কথা শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে হুর ইবন কায়স নিবেদন করলেন: “হে আমীরুল মুমিনীন, আল্লাহ রাববুল আলামীন বলেছেন, ‘আপনি ক্ষমা করুন, সৎকাজের নির্দেশ দিন এবং অজ্ঞদেরকে এড়িয়ে চলুন’ আর এ লোকটিও জাহেলদের একজন।” এই আয়াতটি শোনার সাথে সাথে উমার ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহুর সমস্ত রাগ শেষ হয়ে গেল এবং তাকে কোনো কিছুই বললেন না। উমার ফারুক রাদিয়াল্লাহু আনহুর ব্যাপারে প্রসিদ্ধ ছিল যে, আল্লাহর কিতাবে বর্ণিত হুকুমের সামনে তিনি ছিলেন উৎসর্গিত প্ৰাণ। [বুখারী ৪৬৪২]

التفاسير:

external-link copy
200 : 7

وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ ٱلشَّيۡطَٰنِ نَزۡغٞ فَٱسۡتَعِذۡ بِٱللَّهِۚ إِنَّهُۥ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

আর যদি শয়তানের কুমন্ত্রণা আপনাকে প্ররোচিত করে, তবে আল্লাহর আশ্রয় চাইবেন। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ [১]। info

[১] এ আয়াতটি পূর্ববর্তী আয়াতের উপসংহার। কারণ, এতে হেদায়াত দেয়া হয়েছে যে, যারা অত্যাচার-উৎপীড়ন করে এবং মূর্খজনোচিত ব্যবহার করে, তাদের ভুল-ক্রটি ক্ষমা করে দেবেন। তাদের মন্দের উত্তর মন্দের দ্বারা দেবেন না। এ বিষয়টি মানব প্রকৃতির পক্ষে একান্তই কঠিন। বিশেষতঃ এমন পরিস্থিতিতে সৎ এবং ভাল মানুষদেরকেও শয়তান রাগাম্বিত করে লড়াই-ঝগড়ায় প্রবৃত্ত করেই ছাড়ে। সে জন্যই পরবর্তী আয়াতে উপদেশ দেয়া হয়েছে যে, যদি এহেন মুহুর্তে রোষানল জ্বলে উঠতে দেখা যায়, তবে বুঝবেন শয়তানের পক্ষ থেকেই এমনটি হচ্ছে এবং তাঁর প্রতিকার হল আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাওয়া, তার সাহায্য প্রার্থনা করা। হাদীসে উল্লেখ রয়েছে যে, দু'জন লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস ওয়াসাল্লামের সামনে ঝগড়া-বিবাদ করছিল। এদের একজন রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারানোর উপক্রম হলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আমি একটি বাক্য জানি, যদি এ লোকটি সে বাক্য উচ্চারণ করে, তাহলে তার এই উত্তেজনা প্রশমিত হয়ে যাবে। তারপর বললেন, বাক্যটি হল এই

اَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرّجِيْمِ

সে লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট শুনে সঙ্গে সঙ্গে বাক্যটি উচ্চারণ করল। তাতে সাথে সাথে তার রোষানল প্রশমিত হয়ে গেল।” [বুখারী ৩২৮২, ৬০৪৮, ৬১১৫, মুসলিম ২৬১০, ইবন হিববান ৫৬৯২, আবু দাউদ ৪৭৮০, তিরমিযী ৩৪৫২, মুসনাদে আহমাদ ৫/২৪৪, নাসায়ী, আমলুল ইয়াওমে ওয়াল্লাইলা ৩৯৩] অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে তাহাজ্জুদের জন্য দাঁড়ালে তিনবার তাকবীর বলতেন, তিনবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলতেন, সুবহানাল্লাহ ওয়া বিহামদিহী তিনবার বলতেন, তারপর বলতেন:

اَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْم مِنْ هَمْزِه وَنَفْخِهِ وَنَفْثِهِ

অর্থাৎ আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই, তার কুমন্ত্রণা থেকে, অহংকার থেকে, তার হাতে মৃত্যু হওয়া থেকে। [আবু দাউদ ৭৬৪, ইবন মাজাহ ৮০৭, মুসনাদে আহমাদ ৪/৮৫]

التفاسير:

external-link copy
201 : 7

إِنَّ ٱلَّذِينَ ٱتَّقَوۡاْ إِذَا مَسَّهُمۡ طَٰٓئِفٞ مِّنَ ٱلشَّيۡطَٰنِ تَذَكَّرُواْ فَإِذَا هُم مُّبۡصِرُونَ

নিশ্চয় যারা তাকওয়া অবলম্বন করছে, তাদেরকে শয়তান যখন কুমন্ত্রণা [১] দেয় তখন তারা আল্লাহকে স্বরণ করে এবং সাথে সাথেই তাদের চোখ খুলে যায় [২]। info

[১] মূল আরবী হচ্ছে, طائف। মুজাহিদ বলেন, এর অর্থ ক্ৰোধ। [তাবারী] ইবন আব্বাস বলেন, এর অর্থ শয়তানের কোনো ছোঁয়া বা স্পর্শ। [তাবারী]

[২] শয়তান যেহেতু ইসলামের পথের দিকে দাওয়াত দেয়ার কাজটির উন্নতি কখনো দু'চোখে দেখতে পারে না তাই সে সমসময়ে-ই এ ব্যাপারে প্রতিকুল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। তাই এ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘যারা মুত্তাকী তারা নিজেদের মনে কোনো শয়তানী প্ররোচনার প্রভাব এবং কোনো অসৎচিন্তার ছোঁয়া অনুভব করতেই সাথে সাথেই সজাগ হয়ে উঠে। তারপর এ পর্যায়ে কোনো ধরনের কর্মপদ্ধতি অবলম্বনে দীনের স্বার্থ রক্ষিত হবে এবং সত্য প্রীতির প্রকৃত দাবী কী তা তারা পরিষ্কার দেখতে পায়। তারা তাওবা করে এবং প্রচুর পরিমাণে সৎকাজ করে। ফলে শয়তান বিফল মনোরথ হয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হয়। পক্ষান্তরে যাদের কাজের সাথে স্বার্থপ্রীতি অঙ্গা-অঙ্গীভাবে জড়িত এবং এ জন্য শয়তানের সাথে যাদের ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তারা অবশ্যি শয়তানী প্ররোচনার মোকাবিলায় টিকে থাকতে পারে না এবং তার কাছে পরাজিত হয়ে ভুল পথে পা বাড়ায়। একের পর এক খারাপ ও পাপের পথে শয়তান তাদেরকে নিয়ে যায়। এসব কাজ করতে তারা সামান্যতমও পিছপা হয় না। সুতরাং শয়তান তাদের পথভ্রষ্টতায় কমতি করে না। আর তারাও খারাপ কাজে যেতে কসূর করে না। [সা’দী]

التفاسير:

external-link copy
202 : 7

وَإِخۡوَٰنُهُمۡ يَمُدُّونَهُمۡ فِي ٱلۡغَيِّ ثُمَّ لَا يُقۡصِرُونَ

তাদের সঙ্গী-সাথীরা তাদেরকে ভুলের দিকে টেনে নেয়। তারপর এ বিষয়ে তারা কোনো ত্রুটি করে না [১]। info

[১] অর্থাৎ শয়তান মানুষদের মধ্যে যাদেরকে তাদের অনুগত পায়, তাদেরকে পথভ্রষ্টতায় নিপতিত করতেই থাকে। তারপর শয়তানরা তাদেরকে প্ররোচনা দিতেই থাকে, এ ব্যাপারে তারা কোনো প্রকার কমতি করে না। অনুরুপভাবে শয়তানের অনুসারীরাও শয়তানরা তাদেরকে যে সমস্ত গৰ্হিত কাজের প্ররোচনা দেয় সেগুলোর উপর আমল করতে সামান্যতম কুষ্ঠিত হয় না। [মুয়াসসার] সুতরাং অন্যায় কাজে তারা একে অপরের সহযোগী। তারা সর্বক্ষণ পথভ্রষ্টতাতেই লিপ্ত থাকে। তাদের কাছে কোনো প্রকার ওয়ায নসীহত আসলেও তা কাজে লাগে না। ওয়ায ও নসীহত তাদের চক্ষু খুলে দেয় না, যেমনটি পূর্বের আয়াতে বলা হয়েছে যে, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তারা শয়তানের ধোঁকায় পড়লেও ওয়ায-নসীহত পেলে তাদের চোখ খুলে যায় এবং তারা অন্যায় কাজ থেকে ফিরে আসে। কিন্তু যারা খারাপ লোক তারা শয়তানের প্ররোচনা ও ভ্রষ্টতাতেই লিপ্ত থাকে। তারা কখনো চক্ষুষ্মান হয় না। [জালালাইন]

التفاسير:

external-link copy
203 : 7

وَإِذَا لَمۡ تَأۡتِهِم بِـَٔايَةٖ قَالُواْ لَوۡلَا ٱجۡتَبَيۡتَهَاۚ قُلۡ إِنَّمَآ أَتَّبِعُ مَا يُوحَىٰٓ إِلَيَّ مِن رَّبِّيۚ هَٰذَا بَصَآئِرُ مِن رَّبِّكُمۡ وَهُدٗى وَرَحۡمَةٞ لِّقَوۡمٖ يُؤۡمِنُونَ

আপনি যখন তাদের কাছে (তাদের চাওয়া মত) কোনো আয়াত [১] নিয়ে আসেন না, তখন তারা বলে, ‘আপনি নিজেই একটি আয়াত বানিয়ে নেন না কেন?’ বলুন, ‘আমার রবের পক্ষ থেকে যা আমার কাছে ওহী হিসেবে প্রেরণ করা হয়, আমি তো শুধু তারই অনুসরণ করি। এ কুরআন তোমাদের রবের পক্ষ থেকে স্পষ্ট প্রমাণ। আর হিদায়াত ও রহমত এমন সম্প্রদায়ের জন্য যারা ঈমান আনে [২]। info

[১] এখানে আয়াত বলে মু'জিযা ও অলৌকিক কিছু প্রদর্শনের কথা বোঝানো হয়েছে। যেমন অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, “আমরা ইচ্ছে করলে আসমান থেকে তাদের কাছে এক নিদর্শন নাযিল করতাম, ফলে সেটার প্রতি তাদের ঘাড় বিনত হয়ে পড়ত।" [সূরা আশ-শু'আরা ৪] কারণ, মক্কার কুরাইশ ও কাফেররা সবসময় এটা বলত যে, আপনি কষ্ট করে এমন একটি মু'জিযা নিয়ে আসেন না কেন, যা দেখে আমরা ঈমান আনতে বাধ্য হয়ে যাই। এর জবাবে আল্লাহ্ তা'আলা তার নবীকে বলছেন যে, আপনি বলুন, মু'জিযা নিয়ে আসা আমার কাজ নয়। আমি তো শুধু আমার রবের ওহীর অনুসরণ করি। তিনি যদি কোনো মু'জিযা আমাকে প্রদান করেন আমি সেটা গ্রহণ করি। আর যদি না দেন তবে আমি নিজের পক্ষ থেকে সেটা চেয়ে নেই না। তারপর আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে সর্বশ্রেষ্ঠ মু'জিযা কুরআন গ্রহণ করার প্রতি পথনির্দেশ করলেন। [ইবন কাসীর]

[২] অর্থাৎ এই কুরআন তোমাদের রবের পক্ষ থেকে আগত বহুবিধ দলীল-প্রমাণ ও নিদর্শনের এক সমাহার। এতে সামান্য লক্ষ্য করলেই একথা বিশ্বাস না করে উপায় থাকে না যে, এটি যথার্থই আল্লাহর কালাম। এতে কোনো সৃষ্টিরই কোনো হাত নেই। অতঃপর বলা হয়েছে: এই কুরআন সারা বিশ্বের জন্য সত্য দলীল তো বটেই, তদুপরি যারা ঈমানদার তাদেরকে আল্লাহর রহমত ও হেদায়াত পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার অবলম্বনও বটে।

التفاسير:

external-link copy
204 : 7

وَإِذَا قُرِئَ ٱلۡقُرۡءَانُ فَٱسۡتَمِعُواْ لَهُۥ وَأَنصِتُواْ لَعَلَّكُمۡ تُرۡحَمُونَ

আর যখন কুরআন পাঠ করা হয় তখন তোমরা মনোযোগের সাথে তা শুন এবং নিশ্চুপ হয়ে থাক যাতে তোমাদের প্রতি দয়া করা হয় [১]। info

[১] এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, কুরআন মুমিনদের জন্য রহমত। কিন্তু এই রহমতের দ্বারা লাভবান হওয়ার জন্য কয়েকটি শর্ত ও প্রক্রিয়া রয়েছে, যা সাধারণ সম্বোধনের মাধ্যমে এভাবে বলা হয়েছে- “যখন কুরআন পাঠ করা হয়, তখন তোমরা সবাই তার প্রতি কান লাগিয়ে চুপচাপ থাকবে।" তবে আয়াতের হুকুমটি কি সালাতের কুরআন পাঠ সংক্রান্ত, না কোনো বয়ান-বিবৃতিতে কুরআন পাঠের ব্যাপার, নাকি সাধারণভাবে কুরআন পাঠের বেলায়; তা সালাতেই হোক অথবা অন্য যে কোনো অবস্থায় হোক- এ ব্যাপারে মত পার্থক্য রয়েছে। [বিস্তারিত জানার জন্য তাফসীর ইবন কাসীর দ্রষ্টব্য] এখানে প্রকৃত বিষয় হল এই যে, কুরআনুল কারীমকে যাদের জন্য রহমত সাব্যস্ত করা হয়েছে, সেজন্য শর্ত হচ্ছে যে, তাদেরকে কুরআনের আদব ও মর্যাদা সম্পর্কে অবহিত হতে হবে এবং এর উপর আমল করতে হবে। আর কুরআনের বড় আদব হলো এই যে, যখন তা পাঠ করা হয়, তখন শ্রোতা সেদিকে কান লাগিয়ে নিশ্চুপ থাকবে। [সা’দী]

التفاسير:

external-link copy
205 : 7

وَٱذۡكُر رَّبَّكَ فِي نَفۡسِكَ تَضَرُّعٗا وَخِيفَةٗ وَدُونَ ٱلۡجَهۡرِ مِنَ ٱلۡقَوۡلِ بِٱلۡغُدُوِّ وَٱلۡأٓصَالِ وَلَا تَكُن مِّنَ ٱلۡغَٰفِلِينَ

আর আপনি আপনার রবকে নিজ মনে স্মরণ করুন [১] সবিনয়ে, সশংকচিত্তে ও অনুচ্চস্বরে, সকালে ও সন্ধ্যায়। আর উদাসীনদের অন্তর্ভুক্ত হবেন না। info

[১] স্মরণ করা অর্থ সালাতও এবং অন্যান্য ধরনের স্মরণ করাও। চাই মুখে মুখে বা মনে মনে যে কোনোভাবেই তা হোক না কেন। সকাল-সাঝ বলতে সুনির্দিষ্টভাবে এ দু’টি সময়ও বুঝানো হয়ে থাকতে পারে। আর এ দু' সময়ে আল্লাহর স্মরণ বলতে বুঝানো হয়েছে সকালের ও বিকালের সালাতকে। [তাবারী] অনুরূপ অর্থে অপর সূরায় এসেছে, “এবং আপনার রবের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করুন সূর্যোদয়ের আগে ও সূর্যাস্তের আগে।” [সূরা কাফ ৩৯] পক্ষান্তরে সকাল-সাঁঝ কথাটা “সর্বক্ষণ" অর্থেও ব্যবহৃত হয় [কাশশাফ] এবং তখন এর অর্থ হয় সবসময় আল্লাহর স্মরণে মশগুল থাকা। এর উদ্দেশ্য বর্ণনা প্রসংগে বলা হয়েছে, তোমাদের অবস্থা যেন গাফেলদের মত না হয়ে যায়। দুনিয়ায় যা কিছু গোমরাহী ছড়িয়েছে এবং মানুষের নৈতিক চরিত্রে ও কর্মকাণ্ডে যে বিপর্যয়ই সৃষ্টি হয়েছে তার একমাত্র কারণ হচ্ছে, মানুষ ভুলে যায়, আল্লাহ তার রব, সে আল্লাহর বান্দা, দুনিয়ার জীবন শেষ হওয়ার পর তাকে তার রবের কাছে হিসাব দিতে হবে।

التفاسير:

external-link copy
206 : 7

إِنَّ ٱلَّذِينَ عِندَ رَبِّكَ لَا يَسۡتَكۡبِرُونَ عَنۡ عِبَادَتِهِۦ وَيُسَبِّحُونَهُۥ وَلَهُۥ يَسۡجُدُونَۤ۩

নিশ্চয় যারা আপনার রবের সান্নিধ্যে রয়েছে তারা তাঁর ইবাদাতের ব্যাপারে অহঙ্কার [১] করে না। আর তারা তাঁরই তাসবীহ পাঠ করে [২] এবং তাঁরই জন্য সাজদা [৩] করে। info

[১] যারা আল্লাহর কাছে রয়েছেন তারা আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতাগণ। সে হিসেবে আয়াতের অর্থ হচ্ছে, শ্রেষ্ঠত্বের অহংকার করা ও রবের বন্দেগী থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়া শয়তানের কাজ। এর ফল হয় অধঃপতন ও অবনতি। পক্ষান্তরে আল্লাহর সামনে ঝুঁকে পড়া এবং তাঁর বন্দেগীতে অবিচল থাকা একটি ফেরেশতাসুলভ কাজ। এর ফল হয় উন্নতি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভ। যদি তোমরা এ উন্নতি চাও তাহলে নিজেদের কর্মনীতিকে শয়তানের পরিবর্তে ফেরেশতাদের কর্মনীতির অনুরূপ করে গড়ে তোল।

[২] আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করে অর্থাৎ আল্লাহ যে ক্রটিমুক্ত, দোষমুক্ত, ভুলমুক্ত সব ধরনের দুর্বলতা থেকে তিনি যে একেবারেই পাক-পবিত্র এবং তিনি যে লা-শরীক, তুলনাহীন ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী- এ বিষয়টি সর্বান্তকরণে মেনে নেয়। মুখে তার স্বীকৃতি দেয় ও অংগীকার করে এবং স্থায়ীভাবে সবসময় এর প্রচার ও ঘোষণায় সোচ্চার থাকে।

[৩] এখানে সালাত সংক্রান্ত ইবাদাতের মধ্য থেকে শুধু সাজদার কথা উল্লেখ করার কারণ এই যে, সালাতের সকল রোকনের মধ্যে সাজদার একটি বিশেষ ফযীলত রয়েছে। হাদীসে রয়েছে যে, “কোনো এক লোক সওবান রাদিয়াল্লাহু আনহুর নিকট নিবেদন করলেন যে, আমাকে এমন একটা আমল বাতলে দিন যাতে আমি জান্নাতে যেতে পারি। সওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু নীরব থাকলেন; কিছু বললেন না। লোকটি আবার নিবেদন করলেন, তখনও তিনি চুপ করে থাকলেন। এভাবে তৃতীয়বার যখন বললেন, তখন তিনি বললেন, আমি এ প্রশ্নটিই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দরবারে করেছিলাম। তিনি আমাকে ওসীয়ত করেছিলেন যে, অধিক পরিমাণে সাজদা করতে থাক। কারণ, তোমরা যখন একটি সাজদা কর তখন তার ফলে আল্লাহ তা'আলা তোমাদের মর্যাদা এক ডিগ্রি বাড়িয়ে দেন এবং একটি গোনাহ ক্ষমা করে দেন। লোকটি বললেন, সওবান রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে আলাপ করার পর আমি আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহুর সাথে সাক্ষাৎ করে তার কাছেও একই নিবেদন করলাম এবং তিনিও একই উত্তর দিলেন।” [মুসলিম ৪৮৮]

অন্য এক হাদীসে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “বান্দা স্বীয় রবের সর্বাধিক নিকটবর্তী তখনই হয়, যখন সে বান্দা সাজদায় অবনত থাকে। কাজেই তোমরা সাজদারত অবস্থায় খুব বেশী করে দোআ-প্রার্থনা করবে। তাতে তা কবুল হওয়ার যথেষ্ট আশা রয়েছে। [মুসলিম ৪৭৯, ৪৮২]

সুরা আল-আ’রাফের শেষ আয়াতটি হল আয়াতে সাজদা। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কোনো আদম সন্তান যখন কোনো সাজদার আয়াত পাঠ করে, অতঃপর সাজদায়ে তেলাওয়াত সম্পন্ন করে, তখন শয়তান কাঁদতে কাদতে পালিয়ে যায় এবং বলে যে, আফসোস, মানুষের প্রতি সাজদার হুকুম হল আর সে তা আদায়ও করল, ফলে তার ঠিকানা হল জান্নাত, আর আমার প্রতিও সাজদার হুকুম হয়েছিল, কিন্তু আমি তার না-ফরমানী করেছি বলে আমার ঠিকানা হল জাহান্নাম।” [মুসলিম ১৩৩]

التفاسير: