[১] আয়াতের আরেকটি অনুবাদ হচ্ছে, বরং আমরা ইবরাহীমের মিল্লাতের অনুসরণ করব, যিনি একনিষ্ঠ ছিলেন এবং যিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। দু‘টি অর্থই এখানে গ্রহণযোগ্য। [তাফসীরে ফাতহুল কাদীর]
[১] কুরআন ইয়াকুব ‘আলাইহিস সালামের বংশধরকে (اَسْبَاط) শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করেছে। এটা (سبط) এর বহুবচন। এর অর্থ গোত্র ও দল। তাদের (سِبْط) বলার কারণ এই যে, ইয়াকুব ‘আলাইহিস সালামের ঔরসজাত পুত্রদের সংখ্যা ছিল বারজন। পরে প্রত্যেক পুত্রের সন্তানরা এক-একটি গোত্রে পরিণত হয়। আল্লাহ্ তা'আলা তার বংশে বিশেষ বরকত দান করেছিলেন। তিনি যখন ইউসুফ ‘আলাইহিস সালামের কাছে মিশরে যান, তখন সন্তান ছিল বার জন। পরে ফিরআউনের সাথে মোকাবেলার পর মূসা ‘আলাইহিস সালাম যখন মিশর থেকে ইসরাঈল বংশধরকে নিয়ে বের হলেন, তখন তার সাথে ইয়াকুব ‘আলাইহিস সালামের সন্তানদের মধ্য থেকে প্রত্যেক ভাইয়ের সন্তান হাজার হাজার সদস্যের একটি গোত্র ছিল। তার বংশে আল্লাহ্ তা'আলা আরও একটি বরকত দান করেছেন এই যে, অনেক নবী ও রাসূল ইয়াকুব ‘আলাইহিস সালামের বংশেই জন্মেছে। [তাফসীরে মা'আরিফুল কুরআন]
[২] আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আহলে কিতাবগণ হিব্রু ভাষায় তাওরাত পড়ত এবং মুসলিমদের জন্য আরবীতে অনুবাদ করে দিত। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “তোমরা তাদেরকে সত্যায়নও করবে না, মিথ্যারোপ করবে না; বরং বলবে, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহ্র প্রতি এবং যা আমাদের প্রতি নাযিল হয়েছে এবং যা ইবরাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব ও তার বংশধরদের প্রতি নাযিল হয়েছে, এবং যা মূসা, ‘ঈসা ও অন্যান্য নবীগণকে তাদের রবের নিকট হতে দেয়া হয়েছে। ” [বুখারী ৪৪৮৫]
[৩] নবীদের মধ্যে পার্থক্য না করার অর্থ হচ্ছে, কেউ সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন এবং কেউ সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন না অথবা কাউকে মানি এবং কাউকে মানি না - আমরা তাদের মধ্যে এভাবে পার্থক্য করি না। আল্লাহ্র পক্ষ থেকে আগত সকল নবীই একই চিরন্তন সত্য ও একই সরল-সোজা পথের দিকে আহবান জানিয়েছেন। কাজেই যথার্থ সত্যপ্রিয় ব্যক্তির পক্ষে সকল নবীকে সত্যপন্থী ও সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত বলে মেনে নেয়া ছাড়া গত্যন্তর নেই। যে ব্যক্তি এক নবীকে মানে এবং অন্য নবীকে অস্বীকার করে, সে আসলে যে নবীকে মানে তারও অনুগামী নয়। তার আসল দীন হচ্ছে বর্ণবাদ, বংশবাদ ও বাপ-দাদার অন্ধ অনুসরণ। কোনো নবীর অনুসরণ তার দীন নয়।
[১] আল্লাহ্র রং বলতে অধিকাংশ মুফাসসিরের নিকট উদ্দেশ্য হলো: আল্লাহ্র দীন বা ইসলাম। সারমর্ম হলো - যা কিছু বর্ণিত হলো, তা হলো আল্লাহ্র দীন, তাঁর নবী ইবরাহীমের মিল্লাত, এটা হলো সর্বোত্তম রং। আয়াতটির দুটি অনুবাদ হতে পারে। (এক) আমরা আল্লাহ্র রং ধারণ করেছি। (দুই) আল্লাহ্র রং ধারণ কর। নাসারাদের দীনের আত্মপ্রকাশের পূর্বে ইয়াহুদীদের মধ্যে একটি বিশেষ রীতির প্রচলন ছিল। কেউ তাদের দীন গ্রহণ করলে তাকে গোসল করানো হত। আর তাদের ওখানে গোসলের অর্থ ছিল, তার সমস্ত গোনাহ যেন ধুয়ে গেল এবং তার জীবন যেন রং ধারণ করল। পরবর্তী কালে নাসারাদের মধ্যেও এ রীতির প্রচলন হয়। তাদের ওখানে এর পরিভাষিক নাম হচ্ছে – ‘ইস্তিবাগ’ বা রঙ্গিন করা (ব্যাপ্টিজম)। তাদের দীনে যারা প্রবেশ করে কেবল তাদেরকেই ব্যাপ্টাইজড করা হয় না, বরং নাসারা শিশুদেরকেও ব্যাপ্টাইজড করা হয়। এ ব্যাপারেই বলা হচ্ছে যে, এ লোকাচারমূলক রঞ্জিত হবার যৌক্তিকতা কোথায়? বরং আল্লাহ্র রঙে রঞ্জিত হও। যা কোনো পানির দ্বারা হওয়া যায় না। বরং তাঁর বন্দেগীর পথ অবলম্বন করে এ রঙে রঞ্জিত হওয়া যায়।
[১] তোমাদের কাজের জন্য তোমরা দায়ী আর আমাদের কাজের জন্য আমরা দায়ী। তোমরা যদি তোমাদের ইবাদাতকে বিভক্ত করে থাক এবং অন্য কাউকে আল্লাহ্র সাথে শরীক করে তার ইবাদাত ও আনুগত্য কর, তাহলে তোমাদেরকে তা করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু এর পরিণাম তোমাদেরকে ভোগ করতে হবে। আমরা বলপূর্বক তোমাদেরকে এ কাজ থেকে বিরত রাখতে চাই না। কিন্তু আমরা নিজেদের যাবতীয় ইবাদাত ও আনুগত্য একমাত্র আল্লাহ্র জন্য নির্দিষ্ট করে দিয়েছি। যদি তোমরা এ কথা স্বীকার করে নাও যে, আমাদেরও এ কাজ করার ক্ষমতা ও অধিকার আছে, তাহলে তো ঝগড়াই মিটে যায়।
[২] এখানে মুসলিম সম্প্রদায়ের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে যে, তারা আল্লাহ্র ব্যাপারে নিষ্ঠাবান। নিষ্ঠা বা ইখলাসের অর্থ, আল্লাহ্র সাথে কাউকে অংশীদার না করা এবং একমাত্র আল্লাহ্র জন্য সৎকর্ম করা; মানুষকে দেখানোর জন্য অথবা মানুষের প্রশংসা অর্জনের জন্য নয়।