Përkthimi i kuptimeve të Kuranit Fisnik - Përkthimi bangalisht - Ebubekër Zekeria

Numri i faqes:close

external-link copy
34 : 10

قُلۡ هَلۡ مِن شُرَكَآئِكُم مَّن يَبۡدَؤُاْ ٱلۡخَلۡقَ ثُمَّ يُعِيدُهُۥۚ قُلِ ٱللَّهُ يَبۡدَؤُاْ ٱلۡخَلۡقَ ثُمَّ يُعِيدُهُۥۖ فَأَنَّىٰ تُؤۡفَكُونَ

বলুন, ‘তোমরা যাদের শরীক কর তাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছে, যে সৃষ্টিকে অস্তিত্বে আনে ও পরে সেটার পুনরাবৃত্তি ঘটায়?’ বলুন, ‘আল্লাহ্‌ই সৃষ্টিকে অস্তিত্বে আনেন ও পরে সেটার পুনরাবৃত্তি ঘটাবেন [১]।’ কাজেই (সত্য থেকে) তোমাদেরকে কোথায় ফেরানো হচ্ছে? info

[১] সৃষ্টির সূচনা সম্পর্কে মুশরিকরাও স্বীকার করতো যে, এটা একমাত্র আল্লাহরই কাজ। তাঁর সাথে যাদেরকে তারা শরীক করে তাদের কারো এ কাজে কোনো অংশ নেই। আর সৃষ্টির পুনরাবৃত্তির ব্যাপারটিও সুস্পষ্ট। অর্থাৎ প্রথমে যিনি সৃষ্টি করেন তাঁর পক্ষেই দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করা সম্ভব। কিন্তু যে প্রথমবারই সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়নি সে দ্বিতীয়বার সৃষ্টি করতে পারে কেমন করে? অন্য আয়াতেও আল্লাহ তা ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, "আল্লাহ, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তারপর তোমাদেরকে রিযক দিয়েছেন, তারপর তিনি তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন, অবশেষে তিনি তোমাদেরকে জীবিত করবেন। (আল্লাহ্‌র সাথে শরীক সাব্যস্তকৃত) তোমাদের মা’বুদগুলোর এমন কেউ আছে কি, যে এসবের কোনো কিছু করতে পারে? তারা যাদেরকে শরীক করে, তিনি (আল্লাহ) সে সব (শরীক) থেকে মহিমাময়-পবিত্র ও অতি উর্ধ্বে।” [সূরা আর-রুম ৪০] আরও বলেন, “আর তারা তার পরিবর্তে ইলাহরূপে গ্রহণ করেছে অন্যদেরকে, যারা কিছুই সৃষ্টি করে না, বরং তারা নিজেরাই সৃষ্ট এবং তারা নিজেদের অপকার কিংবা উপকার করার ক্ষমতা রাখে না এবং মৃত্যু, জীবন ও উত্থানের উপরও কোন ক্ষমতা রাখে না।” [সূরা আল-ফুরকান ৩]

التفاسير:

external-link copy
35 : 10

قُلۡ هَلۡ مِن شُرَكَآئِكُم مَّن يَهۡدِيٓ إِلَى ٱلۡحَقِّۚ قُلِ ٱللَّهُ يَهۡدِي لِلۡحَقِّۗ أَفَمَن يَهۡدِيٓ إِلَى ٱلۡحَقِّ أَحَقُّ أَن يُتَّبَعَ أَمَّن لَّا يَهِدِّيٓ إِلَّآ أَن يُهۡدَىٰۖ فَمَا لَكُمۡ كَيۡفَ تَحۡكُمُونَ

বলুন, ‘তোমরা যাদেরকে শরীক কর তাদের মধ্যে কি এমন কেউ আছে, যে সত্যের পথ নির্দেশ করে?’ বলুন, ‘আল্লাহ্‌ই সত্য পথ নির্দেশ করেন। যিনি সত্যের পথ নির্দেশ করেন, তিনি আনুগত্যের অধিকতর হকদার, না যাকে পথ না দেখালে পথ পায় না-সে [১]? সুতরাং তোমাদের কি হয়েছে? তোমরা কেমন বিচার করছ?’ info

[১] আয়াতে আল্লাহ্‌ তা’আলা সমস্ত মুশরিককে এবং নবীর শিক্ষা মেনে নিতে অস্বীকার করেছে এমন সকল লোককে জিজ্ঞেস করে, তোমরা আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদের বন্দেগী করো তাদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি যার মাধ্যমে তোমরা ‘সত্যের পথ-নির্দেশনা’ লাভ করতে পারো? অবশ্যি সবাই জানে, এর জবাব ‘না’ ছাড়া আর কিছুই নয়। যদি না পারে তবে কেবল যিনি পথভ্রষ্ট ও বিভ্রান্তকে হিদায়াত দিতে পারেন তিনি হচ্ছেন আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোনো হক ইলাহ নেই। তাহলে বান্দা কি তার অনুসরণ করবে যে হকের দিকে পথ দেখাতে পারে, যে অন্ধত্ব থেকে চক্ষুষ্মান করতে পারে, নাকি অনুসরণ করবে তার যে তার অন্ধ ও বোবা হওয়ার কারণে কোনো কিছুর দিকেই পথ দেখাতে পারে না? [ইবন কাসীর] এ ব্যাপারটিই ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তার পিতাকে বলেছিলেন, “হে আমার প্রিয় পিতা! আপনি তার ইবাদাত করেন কেন যে শুনে না, দেখে না এবং আপনার কোনো কাজেই আসে না?" [সূরা মারইয়াম ৪২]

التفاسير:

external-link copy
36 : 10

وَمَا يَتَّبِعُ أَكۡثَرُهُمۡ إِلَّا ظَنًّاۚ إِنَّ ٱلظَّنَّ لَا يُغۡنِي مِنَ ٱلۡحَقِّ شَيۡـًٔاۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَلِيمُۢ بِمَا يَفۡعَلُونَ

আর তাদের অধিকাংশ কেবল অনুমানেরই অনুসরণ করে, সত্যের পরিবর্তে অনুমান তো কোনো কাজে আসে না, তারা যা করে নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সে বিষয়ে সবিশেষ অবগত [১]। info

[১] অর্থাৎ তাদের নেতারা যারা বিভিন্ন ধর্ম প্রবর্তন করেছে, দর্শন রচনা করেছে তারাও এসব কিছু জ্ঞানের ভিত্তিতে নয় বরং আন্দাজ-অনুমানের ভিত্তিতে এগুলোকে ইলাহ সাব্যস্ত করে নিয়েছে। অনুমান করেই বলছে যে, এগুলো শাফা’আত করবে। অথচ এ ব্যাপারে তাদের কোনো দলীল-প্রমাণ নেই। আর যারা এসব ধর্মীয় নেতৃবৃন্দের আনুগত্য করেছে তারাও জেনে-বুঝে নয় বরং নিছক অন্ধ অনুকরণের ভিত্তিতে তাদের পেছনে চলেছে। [কুরতুবী] কারণ তারা মনে করে, এত বড় বড় লোকেরা যখন একথা বলেন এবং আমাদের বাপ-দাদারা এসব মেনে আসছেন আবার এ সংগে দুনিয়ার বিপুল সংখ্যক লোক এগুলো মেনে নিয়ে এ অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে তখন নিশ্চয়ই এই লোকেরা ঠিক কথাই বলে থাকবেন।

التفاسير:

external-link copy
37 : 10

وَمَا كَانَ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانُ أَن يُفۡتَرَىٰ مِن دُونِ ٱللَّهِ وَلَٰكِن تَصۡدِيقَ ٱلَّذِي بَيۡنَ يَدَيۡهِ وَتَفۡصِيلَ ٱلۡكِتَٰبِ لَا رَيۡبَ فِيهِ مِن رَّبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ

আর এ কুরআন আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য কারো রচনা হওয়া সম্ভব নয়। বরং এর আগে যা নাযিল হয়েছে এটা তার সত্যায়ন এবং আল-কিতাবের বিশদ ব্যাখ্যা [১]। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, এটা সৃষ্টিকুলের রবের পক্ষ থেকে [২]। info

[১] “যা কিছু আগে এসে গিয়েছিল তার সত্যায়ন”- অর্থাৎ তাওরাত, ইঞ্জীলসহ অন্যান্য কিতাবাদির সত্যায়ন। কারণ, সেগুলোতে এ কুরআনের সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল। তারপর এ কুরআন সে সুসংবাদকে সত্যায়ন করে আগমন করেছে। শুরু থেকে নবীদের মাধ্যমে মানুষকে যে মৌলিক শিক্ষা দেয়া হয়েছে তথা তাওহীদ, আখেরাতের উপর ঈমান ইত্যাদিকে পাকাপোক্ত করছে। কারও কারও মতে, এখানে অর্থ হচ্ছে, কিন্তু এ কুরআন তার সামনে যে নবী রয়েছেন অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তার সত্যায়ন করছে। কেননা তারা কুরআন শোনার আগ থেকেই তাকে দেখেছে। [কুরতুবী] তারপর বলা হয়েছে যে, এটি “আল-কিতাবের বিশদ ব্যাখ্যা” —অর্থাৎ সমস্ত আসমানী কিতাবের সারমর্ম যে মৌলিক শিক্ষাবলীর সমষ্টি, সেগুলো এর মধ্যে দিয়ে যুক্তি -প্রমাণ সহকারে উপদেশ দান ও বুঝানোর ভংগীতে, ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে এবং বাস্তব অবস্থার সাথে সম্পৃক্ত করে বর্ণনা করা হয়েছে। অথবা এর অর্থ, এতে যে বিধানাবলী রয়েছে সেগুলোকে স্পষ্ট করে বিস্তারিত বর্ণনা করছে। [বাগভী; কুরতুবী]

[২] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “প্রত্যেক নবীকেই তার (যুগ) উপযোগী মু'জিযা প্রদান করা হয়েছে। সে অনুসারে মানুষ তার উপর ঈমান এনেছে। আর নিশ্চয়ই আমাকে অহী দেয়া হয়েছে, যা আল্লাহ তা'আলা আমার উপর নাযিল করেছেন। অতএব, আমি আশা করছি যে, কিয়ামতের দিন আমার অনুগামী তাদের থেকে বেশী হবে।” [বুখারী ৪৯৮১]

التفاسير:

external-link copy
38 : 10

أَمۡ يَقُولُونَ ٱفۡتَرَىٰهُۖ قُلۡ فَأۡتُواْ بِسُورَةٖ مِّثۡلِهِۦ وَٱدۡعُواْ مَنِ ٱسۡتَطَعۡتُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ

নাকি তারা বলে, ‘তিনি এটা রচনা করেছেন?’ বলুন, ‘তবে তোমরা এর অনুরূপ একটি সূরা নিয়ে আস [১] এবং আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্য যাকে পার ডাক, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।‘ info

[১] এটা আল-কুরআনের ব্যাপারে আল্লাহর পক্ষ থেকে তৃতীয় চ্যালেঞ্জ। [ইবন কাসীর] তারা যদি কুরআন সম্পর্কে সন্দিহান হয় তবে তারা যেন এর মত একটি সূরা নিয়ে আসে। এর পূর্বে কাফেরদেরকে কুরআনের অনুরূপ কুরআন আনার ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া হয়েছিল। [দেখুন, সূরা আল-ইসরা ৮৮] তারপর তাদেরকে বলা হয়েছিল যে, কুরআনের মত কুরআন না আনতে সক্ষম হলে কুরআনের দশটি সূরা যেন নিয়ে আসে। [দেখুন, সূরা হুদ ১৩] কিন্তু তারা তাতেও অপারগ হয়। তখন তাদেরকে এ আয়াতে কুরআনের সূরাসমূহের একটি সূরা নিয়ে আসার চ্যালেঞ্জ করা হয় কিন্তু কাফের-মুশরিকগণ তাও আনতে সক্ষম হয়নি। আর তারা সেটা আনতে পারবেও না। [ইবন কাসীর] আল্লাহ বলেন, “অতএব যদি তোমরা তা করতে না পার আর কখনই তা করতে পারবে না।” [সূরা আল-বাকারাহ ২৪]

এ চ্যালেঞ্জ কুরআনের শুধু ভাষাশৈলীর উপর করা হয়নি। সাধারণভাবে লোকেরা এ চ্যালেঞ্জটিকে নিছক কুরআনের ভাষাশৈলী অলংকার ও সাহিত্য সুষমার দিক দিয়ে ছিল বলে মনে করে। কুরআন তার অনন্য ও অতুলনীয় হওয়ার দাবীর ভিত্তি নিছক নিজের শাব্দিক সৌন্দর্য সুষমার ওপর প্রতিষ্ঠিত করেনি। নিঃসন্দেহে ভাষাশৈলীর দিক দিয়েও কুরআন নজিরবিহীন। কিন্তু মূলতঃ যে জিনিসটির ভিত্তিতে বলা হয়েছে যে, কোনো মানবিক মেধা ও প্রতিভা এহেন কিতাব রচনা করতে পারে না, সেটি হচ্ছে তার বিষয়বস্তু, অলংকারিত ও শিক্ষা। [ইবন কাসীর]

التفاسير:

external-link copy
39 : 10

بَلۡ كَذَّبُواْ بِمَا لَمۡ يُحِيطُواْ بِعِلۡمِهِۦ وَلَمَّا يَأۡتِهِمۡ تَأۡوِيلُهُۥۚ كَذَٰلِكَ كَذَّبَ ٱلَّذِينَ مِن قَبۡلِهِمۡۖ فَٱنظُرۡ كَيۡفَ كَانَ عَٰقِبَةُ ٱلظَّٰلِمِينَ

বরং তারা যে বিষয়ে জ্ঞান আয়ত্ত করেনি তাতে মিথ্যারোপ করেছে [১], আর যার প্রকৃত পরিণতি এখনো তাদের কাছে আসেনি [২]। এভাবেই তাদের পূর্ববর্তীরাও মিথ্যা আরোপ করেছিল, কাজেই দেখুন, যালিমদের পরিণাম কি হয়েছে! info

[১] অর্থাৎ তারা কুরআনকে এ জন্যই মিথ্যা সাব্যস্ত করার প্রয়াস চালাচ্ছে যে, তারা এটাকে বুঝতে পারেনি, চিনতে পারেনি। [কুরতুবী] তাদের অজ্ঞতাই কুরআনকে মানতে নিষেধ করছে। অন্য আয়াতেও আল্লাহ এ রকম কথা বলেছেন। তিনি বলেন, “আর যখন তারা এটা দ্বারা হেদায়াত পায়নি তখন তারা অচিরেই বলবে, ‘এ এক পুরোনো মিথ্যা।" [সূরা আল-আহকাফ ১১]

[২] এখানে تَأْوِيْلُ এর মর্মার্থ হলো প্রতিফল ও শেষ পরিণতি। অর্থাৎ এরা নিজেদের গাফলতী ও নির্লিপ্ততার দরুন কুরআন সম্পর্কে কোনো চিন্তা-ভাবনা করেনি। তারা একটু চিন্তা করতে পারত যে পূর্ববর্তী যে সমস্ত সংবাদ এ কুরআন দিয়েছে তা সত্য কি না বা ভবিষ্যতের যে সমস্ত সংবাদ দিচ্ছে তা সঠিকভাবে ঘটে কি না? কিন্তু তারা কোনো কিছু ভাল করে বুঝার আগে তা অস্বীকার করে বসেছে। ফলে এর প্রতি মিথ্যারোপে লিপ্ত রয়েছে। যদি তারা সত্যিকারভাবে এটা নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করত তাহলে অবশ্যই কুরআনকে বুঝতে পারত। আর এটাও বুঝত যে, এটা আল্লাহর বাণী। [ফাতহুল কাদীর] আর যে বিষয়ে তাদের জ্ঞান কাজ করে না যেমন পুনরুত্থান, জান্নাত, জাহান্নাম, ইত্যাদি সেগুলোকে তারা অস্বীকার করে বসেছে, সেগুলোর সাথে কুফরি করেছে, অথচ এখনও কিতাবে তাদের উপর যা আপতিত হওয়ার ওয়াদা করা হচ্ছে তার প্রকৃত অবস্থা আসেনি। আর এ মুশরিকরা যেভাবে আল্লাহর ভীতি প্রদর্শনে মিথ্যারোপ করেছে তাদের পূর্বেকার উম্মতরাও তা অস্বীকার করেছিল। [মুয়াসসার]

التفاسير:

external-link copy
40 : 10

وَمِنۡهُم مَّن يُؤۡمِنُ بِهِۦ وَمِنۡهُم مَّن لَّا يُؤۡمِنُ بِهِۦۚ وَرَبُّكَ أَعۡلَمُ بِٱلۡمُفۡسِدِينَ

আর তাদের মধ্যে কেউ এর উপর ঈমান আনে আবার কেউ এর উপর ঈমান আনে না এবং আপনার রব ফাসাদসৃষ্টিকারীদের সম্মন্ধে অধিক অবগত [১]। info

[১] অর্থাৎ যারা কুরআনে মিথ্যারোপ করে তাদের মধ্যে কেউ কেউ নিজের অন্তরে এর প্রতি ঈমান পোষণ করে এবং ভাল করেই জানে যে, এটি সত্য ও হক। কিন্তু সে অহংকার ও গোঁড়ামী করে তাতে মিথ্যারোপ করে থাকে। আবার তাদের মধ্যে কেউ কেউ আছে যারা এর উপর অন্তর থেকেই অবিশ্বাসী। তারা মূলত না জেনে এর উপর মিথ্যারোপ করছে অথবা আয়াতের অর্থ, তাদের মধ্যে কেউ কেউ এখন এ কুরআনে মিথ্যারোপ করলেও ভবিষ্যতে ঈমান আনবে। আবার কেউ কেউ ভবিষ্যতেও এর উপর ঈমান আনবে না বরং অস্বীকার ও অবিশ্বাসের উপর অটল থাকবে। কোনো কোনো মুফাসসির বলেন, এখানে কুরআনকে বোঝানো হয়নি। বরং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বোঝানো হয়েছে। তখনও উপরে বর্ণিত উভয় প্রকার অর্থ হতে পারে। তাছাড়া কারও কারও মতে, আয়াতটি মক্কাবাসীদের সাথে নির্দিষ্ট। অপর কারও কারও মতে সেটি সকল কাফেরের জন্য ব্যাপক। [ফাতহুল কাদীর]

এরপর আল্লাহ বলছেন যে, “তিনি বিপর্যয়সৃষ্টিকারীদের সম্পর্কে অধিক অবগত।" সে অনুসারে তাদেরকে তিনি প্রতিফল দিবেন। যারা গোঁড়ামী করে কুফরিতে অটল রয়েছে তিনি তাদের ভাল করেই জানেন অথবা আয়াতের অর্থ, যারা ঈমান আনবে আর যারা ঈমান আনবে না তাদের সবাইকে তিনি ভালভাবে জানেন। তাদের মধ্যে যারা বিপর্যয়সৃষ্টিকারী তাদের সম্পর্কে তিনি সম্যক অবগত। অনুরূপভাবে কারা অন্তরে ঈমান থাকার পরও মুখে স্বীকার করছে না, আর কারা অন্তর থেকেই না জেনে এর উপর কুফরী করছে তিনি সবাইকে ভালভাবেই জানেন। [ফাতহুল কাদীর]

التفاسير:

external-link copy
41 : 10

وَإِن كَذَّبُوكَ فَقُل لِّي عَمَلِي وَلَكُمۡ عَمَلُكُمۡۖ أَنتُم بَرِيٓـُٔونَ مِمَّآ أَعۡمَلُ وَأَنَا۠ بَرِيٓءٞ مِّمَّا تَعۡمَلُونَ

আর তারা যদি আপনার প্রতি মিথ্যা আরোপ করে তবে আপনি বলুন, ‘আমার কাজের দায়িত্ব আমার এবং তোমাদের কাজের দায়িত্ব তোমাদের। আমি যা করি সে বিষয়ে তোমরা দায়মুক্ত এবং তোমরা যা কর সে বিষয়ে আমিও দায়মুক্ত [১]।’ info

[১] অর্থাৎ অযথা বিরোধ ও কুটতর্ক করার কোনো প্রয়োজন নেই। যদি আমি মিথ্যা আরোপ করে থাকি তাহলে আমার কাজের জন্য আমি দায়ী হবো। এর কোনো দায়ভার তোমাদের ওপর পড়বে না। আর যদি তোমরা সত্য কথাকে মিথ্যা বলে থাকো তাহলে এর মাধ্যমে আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। বরং এর দ্বারা তোমরা নিজেদেরই ক্ষতি করছো। এটা দ্বারা তাদের কাজ-কর্মের স্বীকৃতি নয় বরং তাদের সাথে সম্পর্কচ্যুতির ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। যেমনটি সূরা আল-কাফেরূনে বলা হয়েছে। অনুরূপভাবে ইবরাহীম আলাইহিসসালামও তার জাতির সাথে এ ধরণের সম্পর্কচ্যুতির ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন: “তোমাদের সংগে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদাত কর তার সংগে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদেরকে মানি না। তোমাদের ও আমাদের মধ্যে সৃষ্টি হল শক্রতা ও বিদ্বেষ চিরকালের জন্য; যদি না তোমরা এক আল্লাহতে ঈমান আনো।” [সূরা আল-মুমতাহিনাহ ৪]

التفاسير:

external-link copy
42 : 10

وَمِنۡهُم مَّن يَسۡتَمِعُونَ إِلَيۡكَۚ أَفَأَنتَ تُسۡمِعُ ٱلصُّمَّ وَلَوۡ كَانُواْ لَا يَعۡقِلُونَ

আর তাদের মধ্যে কেউ কেউ আপনার দিকে কান পেতে রাখে। তবে কি আপনি বধিরকে শুনাবেন, তারা না বুঝলেও [১]? info

[১] শ্রবণ কয়েক রকমের হতে পারে। পশুরা যেমন আওয়াজ শোনে তেমনি এক ধরনের শ্রবণ আছে। তাদের কথাও আল্লাহ তা'আলা কুরআনে বর্ণনা করেছেন। [যেমন দেখুন, সূরা আল-বাকারাহ ১৭১] আবার আর এক ধরনের শ্রবণ হয়, যার মধ্যে অর্থের দিকে নজর থাকে এবং এমনি ধরনের একটা প্রবণতা দেখা যায় যে, যুক্তিসংগত কথা হলে মেনে নেয়া হবে। তাদের কথাও আল্লাহ কুরআনের অন্যত্র উল্লেখ করেছেন। [যেমন দেখুন, সূরা আল-আনআম ৩৬] তবে যারা কোনো প্রকার বদ্ধ ধারণা বা অন্ধ বিদ্বেষে আক্রান্ত থাকে এবং যারা আগে থেকেই ফায়সালা করে বসে থাকে যে, নিজের উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া আকীদা-বিশ্বাস ও পদ্ধতিসমূহের বিরুদ্ধে এবং নিজের প্রবৃত্তির আশা-আকাংখা ও আগ্রহ বিরোধী কথা যত যুক্তিসংগতই হোক না কেন মেনে নেবো না, তারা সবকিছু শুনেও আসলে কিছুই শোনে না। তাদের কথাও আল্লাহ্ তা'আলা কুরআনে উল্লেখ করেছেন। [যেমন দেখুন, সূরা আয-যুখরুফ ২২-২৩] তেমনিভাবে যারা দুনিয়ায় পশুদের মত উদাসীন জীবন যাপন করে, চারদিকে বিচরণ করা ছাড়া আর কিছুতেই যাদের আগ্রহ নেই অথবা যারা প্রবৃত্তির স্বাদ-আনন্দের পেছনে এমন পাগলের মতো দৌড়ায় যে, তারা নিজেরা যা কিছু করছে তার ন্যায় বা অন্যায় হওয়ার কথা চিন্তা করে না তারা শুনেও শোনে না। এদেরকে আল্লাহ পশুর সাথে তুলনা করেছেন। [যেমন, সূরা আল-আরাফ ১৭৯] এ ধরনের লোকদের কান বধির হয় না কিন্তু মন বধির হয়। এ ধরনের বধির লোকদেরকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শোনাতে পারবেন না বলে আল্লাহ্ তা'আলা এ আয়াতে জানিয়ে দিয়েছেন। এখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সান্তুনা প্রদান করা হয়েছে। অর্থাৎ যেভাবে আপনি যাদের শ্রবণেন্দ্রিয় নেই তাদেরকে শোনাতে পারেন না তেমনিভাবে তাদেরকেও হিদায়াতের দিকে নিয়ে আসতে পারবেন না। আর আল্লাহও তাদের উপর লিখে দিয়েছেন যে, তারা ঈমান আনবে না। [কুরতুবী]

التفاسير: