[১] হাদীসে এসেছে, “সাবা ছিল আরবের এক ব্যক্তির নাম। আরবে তার বংশ থেকে নিম্নোক্ত গোত্রগুলোর উদ্ভব হয়: কিন্দার, হিম্য়ার, আয্দ, আশ’আরিয়্যীন, মায্হিজ, আনমার (এর দুটি শাখা: খাস'আম ও বাজীলাহ), আমেলাহ, জুযাম, লাখম ও গাসসান।’ [তিরমিয়ী ৩২২২] ইবন কাসীরের মতে, ইয়ামনের সম্রাট ও সে দেশের অধিবাসীদের উপাধি হচ্ছে সাবা। তাবাবেয়া সম্প্রদায়ও সাবা সম্পপ্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত ছিল। [ইবন কাসীর]
[২] শহরের ডানে ও বায়ে অবস্থিত পাহাড়দ্বয়ের কিনারায় ফল-মুলের বাগান তৈরী করা হয়েছিল। এসব বাগানে খালের পানি প্রবাহিত হত। সমগ্র সাবা রাজ্য শ্যামল সবুজ ক্ষেত ও বনানীতে পরিপূর্ণ ছিল। তার যে কোনো জায়গায় দাঁড়ালে দেখা যেতো ডানেও বাগান এবং বাঁয়েও বাগান। এ সব বাগান পরস্পর সংলগ্ন অবস্থায় পাহাড়ের কিনারায় দুসারিতে বহুদূর পর্যন্ত ছিল। এগুলো সংখ্যায় অনেক হলেও পবিত্র কুরআন দু'টি বাগানের কথা ব্যক্ত করেছে। কারণ, এক সারির সমস্ত বাগান পরস্পর সংলগ্ন হওয়ার কারণে এক বাগান এবং অপর সারির সমস্ত বাগানকে একই কারণে দ্বিতীয় বাগান বলে অভিহিত করা হয়েছে। এসব বাগানে সবরকম বৃক্ষ ফল-মুল প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হত। কাতাদাহ ও অন্যান্যদের বর্ণনা অনুযায়ী একজন লোক মাথায় খালি ঝুড়ি নিয়ে গমন করলে গাছ থেকে পতিত ফলমুল দ্বারা তা আপনা-আপনি ভরে যেত; হাত লাগানোরও প্রয়োজন হত না। [ইবন কাসীর, কুরতুবী, ফাতহুল কাদীর]
[৩] আল্লাহ তা’আলা নবীগণের মাধ্যমে তাদেরকে আদেশ দিয়েছিলেন, তোমরা আল্লাহ প্রদত্ত এই অফুরন্ত জীবনোপকরণ ব্যবহার কর এবং কৃতজ্ঞতা স্বরূপ সৎকর্ম ও আল্লাহর আনুগত্য করতে থাক। আল্লাহ তাআলা তোমাদের এ শহরকে পরিচ্ছন্ন স্বাস্থ্যকর শহর করেছেন। শহরটি নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলে অবস্থিত ছিল এবং আবহাওয়া স্বাস্থ্যকর ও বিশুদ্ধ ছিল। সমগ্র শহরে মশা-মাছি ছারপোকা ও সাপ-বিচ্ছুর মত ইতর প্রাণীর নামগন্ধও ছিল না। বাইরে থেকে কোনো ব্যক্তি শরীরে ও কাপড়-চোপড়ে উকুন ইত্যাদি নিয়ে এ শহরে পৌঁছালে সেগুলো আপনা-আপনি মরে সাফ হয়ে যেত। [দেখুন-কুরতুবী]
[১] ইবন কাসীরের বর্ণনা অনুযায়ী এই বাঁধের ইতিহাস এই: ইয়ামনের রাজধানী সানআ থেকে তিন মনযিল দূরে মাআরেব নগরী অবস্থিত ছিল। এখানে ছিল সাবা সম্প্রদায়ের বসতি। দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী উপত্যকায় শহরটি অবস্থিত ছিল বিধায় উভয় পাহাড়ের উপর থেকে বৃষ্টির পানি বন্যার আকারে নেমে আসত। ফলে শহরের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে যেত। দেশের সম্রাটগণ উভয় পাহাড়ের মাঝখানে একটি শক্ত ও মজবুত বাঁধ নির্মাণ করলেন। এ বাঁধ পাহাড় থেকে আগত বন্যার পানি রোধ করে পানির একটি বিরাট ভাণ্ডার তৈরী করে দেয়। পাহাড়ী ঢলের পানিও এতে সঞ্চিত হতে থাকে। বাঁধের উপরে-নীচে ও মাঝখানে পানি বের করার তিনটি দরজা নির্মাণ করা হয় যাতে সঞ্চিত পানি সুশৃংখলভাবে শহরের লোকজনের মধ্যে এবং তাদের ক্ষেতে ও বাগানে পৌঁছানো যায়। প্রথমে উপরের দরজা খুলে পানি ছাড়া হত। উপরের পানি শেষ হয়ে গেলে মাঝখানের এবং সর্বশেষে নীচের তৃতীয় দরজা খুলে দেয়া হত। পরবর্তী বছর বৃষ্টির মওসুমে বাঁধের তিনটি স্তরই আবার পানিতে পূর্ণ হয়ে যেত। বাঁধের নীচে পানি সংরক্ষণ করার উদ্দেশ্যে একটি সুবৃহৎ আধার নির্মাণ করা হয়েছিল। এতে পানির বারটি খাল তৈরী করে শহরের বিভিন্ন দিকে পৌঁছানো হয়েছিল। সব খালে একই গতিতে পানি প্রবাহিত হত এবং নাগরিকদের প্রয়োজন মেটাত।
[১] এ আয়াত ও এর পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কিছুর ইবাদাতের মুলোৎপাটন করা হয়েছে। কারণ, আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদাত করা হয়, তারা কেউই কোনো কিছুর মালিক নয়। যদি মালিক না হয় তবে কিভাবে কোনো কিছু দাবী করতে পারে? আর তাছাড়া ইবাদাতের অন্য কারণ এটাও হতে পারত যে, তারা মালিক না হলেও অংশীদার। কিন্তু আসমান ও যমীনে কোনো কিছুতেই তাদের কোনো অংশীদারিত্ব নেই। সুতরাং তাদের ইবাদাত কেন করা হবে? তাছাড়া ইবাদাতের আরও একটি কারণ হতে পারত যে, তারা মালিক বা অংশীদার না হলেও আল্লাহ তাদের সাহায্যের মুখাপেক্ষী। তিনি তাদের সাহায্য নিয়ে থাকেন। কিন্তু আল্লাহ্র তো কোনো সাহায্যকারীর প্রয়োজন নেই। সুতরাং তাদের ইবাদাত কেন করা হবে? আর যদি বলা হয় যে, তারা কোনো কিছুর মালিক নয়, তারা অংশীদার নয়, তারা সাহায্যকারীও নয়, কিন্তু তারা নেক বান্দা, তাদের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে। এ শেষোক্ত সন্দেহটির উত্তর পরবর্তী আয়াতে দেয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে, তাদের কারও কারও যদি সুপারিশ থেকেও থাকে, তবে তা একমাত্ৰ আল্লাহর অনুমতিক্রমেই হবে। তিনি তাদেরকে সেটার অনুমতি না দিলে তারা সেটার জন্য অগ্রণী হয়ে কিছু করবে না। সুতরাং এ আয়াতের মাধ্যমে শির্কের মুলোৎপাটন করা হয়েছে। [ইবন তাইমিয়্যা, আল-জাওয়াবুস সহীহ ৩/১৫৪; আর-রাদ্দু আলাল মানতিকিইয়্যীন ৫২৯; দারয়ু তাআরিযিল আকলি ওয়ান নাকল ৫/১৪৯] বরং যাদের সুপারিশ কামনা করা হয়, তাদের মধ্যে প্রধান হচ্ছে, ফেরেশতাগণ। আল্লাহর সামনে তাদের অবস্থা কী তা পরবতী আয়াতে বৰ্ণিত হয়েছে।