[১] অর্থাৎ বৃষ্টির কল্যাণধারা যদিও প্রত্যেক শহর ও ভূখণ্ডে সমভাবে বর্ধিত হয়, কিন্তু ফলাফলের দিক দিয়ে ভূখণ্ড দু' প্রকার হয়ে থাকে। (এক) উর্বর ও ভাল- যাতে উৎপাদন ক্ষমতা রয়েছে। এ ধরণের ভূখণ্ড থেকে সর্বপ্রকার ফল-মূল উৎপন্ন হয়। (দুই) শক্ত ও লবনাক্ত ভূখণ্ড। এতে উৎপাদনের যোগ্যতা নেই। এরূপ ভূখণ্ডে হয়তো কিছুই উৎপন্ন হয় না, আর কিছু হলেও খুব অল্প পরিমাণে হয়। তাও অকেজো ও নষ্ট হয়ে থাকে। [তাবারী, বাগভী, ইবন কাসীর, সাদী, জালালাইন] এর উদাহরণ দিতে গিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ আমাকে যে হেদায়াত ও ইলম নিয়ে পাঠিয়েছেন তার উদাহরণ হল এমন মুষল বৃষ্টির মত যা কোনো যমীনের উপর গিয়ে পড়ল। কিন্তু সেখানে বিভিন্ন শ্রেণীর যমীন ছিল। তন্মধ্যে কিছু ভাল জমি ছিল যা পানি গ্রহণ করল ফলে তাতে ফসল ও প্রচুর ঘাস জন্মালো, আবার তন্মধ্যে এমন কিছু নিন্ম যমীনও ছিল যা পানি আটকে রাখতে সক্ষম হয়েছিল, ফলে আল্লাহ তার দ্বারা মানুষের উপকার করলেন। তারা তা পান করল এবং ফসল সিক্ত করল, ক্ষেত খামার করল। আবার তন্মধ্যে এমন কিছু যমীনও ছিল যা শক্ত ভূমি যা পানিও ধারণ করতে পারল না, কিছু উৎপন্নও করতে পারল না। ঠিক এটাই হল ঐ ব্যক্তির উদাহরণ যে আল্লাহর দীনের ফিকহ তথা সুক্ষ জ্ঞান অর্জন করেছে আর আল্লাহ আমাকে যা নিয়ে পাঠিয়েছে তা তার উপকারে আসল, সে সেটা নিজে জানল অপরকে জানাল। আর ঐ ব্যক্তির উদাহরণ যে এর প্রতি মাথা উঠিয়ে তাকাল না, আর আমি যে হেদায়াত নিয়ে এসেছি তা কবুল করল না। [বুখারী ৭৯, মুসলিম ২২৮২]
[২] বৃষ্টির কল্যাণধারার মত আল্লাহর হেদায়াত ও নির্দেশাবলীর কল্যাণও সব মানুষের জন্য ব্যাপক; কিন্তু প্রতিটি ভূখণ্ডই যেমন বৃষ্টি থেকে উপকার লাভ করে না, তেমনি প্রতিটি মানুষও এ হেদায়াত থেকে ফায়দা হাসিল করে না; বরং একমাত্র তারাই ফায়দা হাসিল করে, যারা কৃতজ্ঞ ও এর মর্যাদা দিয়ে থাকে। [সা'দী]
অষ্টম রুকূ’
[১] মূলে ذكر শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে এর অর্থ হচ্ছে, তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদেরই একজন লোক, যার বংশ ও সত্যবাদিতা তোমাদের কাছে স্বীকৃত। তার কাছে এমন কিছু এসেছে যা তোমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিবে, যাতে তোমাদের কল্যাণ রয়েছে। [মুয়াসসার]
[১] আলোচ্য আয়াতসমূহে নূহ ‘আলাইহিস সালামের উম্মতের অবস্থা ও তাদের সংলাপের বিবরণ রয়েছে। আদম 'আলাইহিস সালাম যদিও সর্বপ্রথম নবী, কিন্তু তার আমলে ঈমানের সাথে কুফর ও গোমরাহীর দ্বন্দ ছিল না। কুফর ও কাফেরদের কোথাও অস্তিত্ব ছিল না। কুফর ও শির্কের সাথে ঈমানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা নূহ আলাইহিস্ সালামের আমল থেকেই শুরু হয়। রিসালাত ও শরীআতের দিক দিয়ে তিনিই জগতের প্রথম রাসূল। এছাড়া তুফানে সমগ্র বিশ্ব নিমজ্জিত হওয়ার পর যারা প্রাণে বেঁচে ছিল, তারা ছিল নূহ আলাইহিস সালাম ও তার নৌকাস্থিত সঙ্গী-সাথী ৷ তাদের দ্বারাই পৃথিবী নতুনভাবে আবাদ হয়। এই কাহিনীতে সাড়ে নয়শ বছরের সুদীর্ঘ আয়ুষ্কাল, তার নবীসুলভ চেষ্টা-চরিত্র, অধিকাংশ উম্মতের বিরুদ্ধাচরণ এবং এর পরিণতিতে গুটিকয়েক ঈমানদার ছাড়া অবশিষ্ট সবার প্লাবনে নিমজ্জিত হওয়ার বিষয় বর্ণিত হয়েছে। ইবন আববাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত রয়েছে যে, আদম আলাইহিস সালাম ও নূহ আলাইহিস সালামের মাঝখানে দশ ‘করণ’ বা প্রজন্ম অতিক্রান্ত হয়েছে। [মুস্তাদরাক হাকেম ২/৫৪৬] কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী তার বয়স হয়েছিল নয়শ’ পঞ্চাশ বছর। [সূরা আল-আনকাবৃত ১৪] কেউ কেউ বলেন, তিনি এক হাজার বছরই আয়ু পেয়েছিলেন তন্মধ্যে নয়শ’ পঞ্চাশ বছর প্লাবনের পূর্বে আর পঞ্চাশ বছর প্লাবনের পরে। উপরোক্ত আয়াতেও এ ব্যাপারে ইঙ্গিত রয়েছে।
নূহ আলাইহিস সালামের সম্প্রদায় ইরাকে বসবাসকারী ছিল এবং শির্কে লিপ্ত ছিল। তাদের শির্ক সম্পর্কে সুস্পষ্ট কথা এই যে, তারাই যমীনের বুকে সর্বপ্রথম শির্ক করেছিল। হাদীসে এসেছে যে, “তাদের সম্প্রদায়ের পাঁচজন মহাব্যক্তিত্ব যাদের নাম যথাক্রমে- উদ্দ, সুওয়া, ইয়াগূস, ইয়াউক ও নাসর; তারা অত্যন্ত নেককার লোক ছিলেন। হঠাৎ করেই তারা মারা যান। এতে করে তাদের সম্পপ্রদায়ের লোকেরা তাদের শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়ে। তখন শয়তান এসে তাদেরকে বলে: আমি কি তোমাদেরকে তাদের কিছু ছবি বানিয়ে দেব না, যাতে তোমরা তাদেরকে দেখে দেখে বেশী ইবাদাত করতে পার? তারা অনুমতি দিলে শয়তান কিছু ছবি বানিয়ে তাদের ইবাদাতখানার পিছনে টাঙিয়ে রাখে। পরবর্তী প্রজন্ম সেগুলোকে ইবাদাতখানার সম্মুখভাগে নিয়ে আসে এবং সেগুলোকে মূর্তির আকৃতি দান করে। তখনো তাদের ইবাদাত শুরু হয়নি। এ প্রজন্ম মারা যাওয়ার পরে পরবর্তী প্রজন্ম কি উদ্দেশ্যে এ মূর্তিগুলো স্থাপন করা হয়েছিল তা ভুলে গেলে শয়তান তাদের কাছে এসে বলল: তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা এগুলোর ইবাদাত করত এবং এগুলোর উসিলায় আল্লাহর কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করত। শেষপর্যন্ত তারা এগুলোর ইবাদাত শুরু করে।” [বুখারী ৪৯২০] আর এখান থেকেই পৃথিবীতে মূর্তিপূজার উদ্ভব হয়েছে। আল্লাহ্ তা'আলা সূরা নূহে তার বিস্তারিত আলোচনা করে কিভাবে নূহ আলাইহিস সালাম তাদেরকে দাওয়াত দিয়েছিলেন, তা সুস্পষ্টভাবে জানিয়েছেন। এখানে আল্লাহ্ তা'আলা নূহ আলাইহিস সালামের দাওয়াতের কিছু অংশ উল্লেখ করেছেন। তিনি তাদেরকে দাওয়াত দিয়ে একথা বলেন, “হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা আল্লাহ তা'আলার ইবাদাত কর। তিনি ব্যতীত তোমাদের কোনো উপাস্য নেই। আমি তোমাদের জন্য একটি মহাদিবসের শাস্তির আশংকা করি।” এখানে একমাত্র আল্লাহর ইবাদাতের দাওয়াত রয়েছে। এটাই সব নীতির মূলনীতি। তারপর শির্ক ও কুফর থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। এটি এ সম্প্রদায়ের মধ্যে মহামারীর আকারে ছড়িয়ে পড়েছিল। অতঃপর ঐ মহাশাস্তির আশংকা সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে, যা বিরুদ্ধাচরণের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। এর অর্থ আখেরাতের মহাশাস্তিও হতে পারে এবং দুনিয়ার প্লাবনের শাস্তিও হতে পারে। তার সম্প্রদায়ের ملا বা নেতা গোছের লোকেরা উত্তরে বলল: আমরা মনে করি যে, তুমি প্রকাশ্য ভ্রান্তিতে রয়েছ। কারণ, তুমি আমাদেরকে বাপ-দাদার দীন পরিত্যাগ করতে বলছ। কেয়ামতে পুনরায় জীবিত হওয়া, প্রতিদান ও শাস্তি ইত্যাদি কুসংস্কার বৈ আর কিছু নয়।
এহেন পীড়াদায়ক ও মর্মম্ভদ কথাবার্তার জবাবে নূহ আলাইহিস সালাম নবীসুলভ ভাষায় যা বললেন, তা প্রচারক ও সংস্কারকদের জন্য একটি উজ্জ্বল শিক্ষা ও হেদায়াত। উত্তেজনার স্থলে উত্তেজিত ও ক্রোধাম্বিত হওয়ার পরিবর্তে তিনি সাদাসিধা ভাষায় তাদের সন্দেহ নিরসনে প্রবৃত্ত হলেন। বললেন, হে আমার সম্প্রদায়, আমার মধ্যে কোনো ভ্রষ্টতা নেই। তবে আমি তোমাদের ন্যায় পৈতৃক দীনের অনুসারী নই; বরং বিশ্ব পালনকর্তার পক্ষ থেকে রাসূল। আমি যা কিছু বলি, পালনকর্তার নির্দেশেই বলি এবং আল্লাহ্ তা'আলার বাণীসমূহ তোমাদের কাছে পৌছাই। এতে তোমাদের মঙ্গল। এতে না আল্লাহর কোনো লাভ আছে এবং না আমার কোনো স্বার্থ আছে। এরপর তারা যেহেতু নূহ আলাইহিস সালামকে তাদের মত মানুষ হওয়ার কারণে রাসূল হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করছিল, সেহেতু তিনি তার জবাবে বলেন, তোমরা কি এর ফলে বিস্মিত যে, তোমাদের পালনকর্তার বাণী তোমাদেরই মধ্য থেকে একজনের মাধ্যমে তোমাদের কাছে এসেছে, যাতে সে তোমাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করে, যাতে তোমরা তাকওয়ার অধিকারী হও এবং রহমত লাভে ধন্য হও? অর্থাৎ তার ভয় প্রদর্শনের ফলে তোমরা হুশিয়ার হয়ে বিরুদ্ধাচরণ ত্যাগ কর যাতে করে তোমাদের প্রতি রহমত নাযিল হয়।
স্বজাতির মর্মম্ভদ কথাবার্তার জবাবে নূহ আলাইহিস সালামের দয়ার্দ্র এবং শুভেচ্ছামূলক আচরণও চেতনাহীন জাতির মধ্যে কোনোরূপ প্রভাব বিস্তার করতে পারল না। তারা অন্ধভাবেই মিথ্যারোপ করে যেতে থাকল। তখন আল্লাহ্ তাআলা তাদের প্রতি প্লাবনের শাস্তি প্রেরণ করলেন। আল্লাহ বলেন, এর পরিণতিতে আমরা নূহ ও তার সঙ্গীদেরকে নৌকায় উঠিয়ে মুক্তি দিয়েছি এবং যারা আমার নিদর্শনাবলীকে মিথ্যা বলেছিল, তাদেরকে নিমজ্জিত করে দিয়েছি। নিশ্চয়ই তারা ছিল অন্ধ।
মোটকথা, এখানে নূহ আলাইহিস সালামের সংক্ষিপ্ত কাহিনী বর্ণনা করে কয়েকটি বিষয় ব্যক্ত করা হয়েছে- (এক) পূর্বতন সমস্ত নবী-রাসূলের দাওয়াত ও বিশ্বাসের মূলনীতি ছিল অভিন্ন। (দুই) আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর বান্দাদেরকে কঠিন বিপদেও রক্ষা করেন। (তিন) রাসূলগণের প্রতি মিথ্যারোপ করা আল্লাহর আযাব ডেকে আনারই নামান্তর। পূর্ববর্তী উম্মতরা যেমন নবীগণের প্রতি মিথ্যারোপ করার কারণে আযাবে গ্রেফতার হয়েছে, এ কালের লোকদেরও এ থেকে ভয়মুক্ত হওয়া উচিত নয়।
নবম রুকূ’
[১] ‘আদ’ ছিল আরবের প্রাচীনতম জাতি। ‘আদ’ প্রকৃতপক্ষে নূহ ‘আলাইহিস সালামের পুত্র সামের বংশধরের এক ব্যক্তির নাম। তার বংশধর ও গোটা সম্প্রদায় ‘আদ’ নামে খ্যাত হয়ে গেছে। কুরআনুল কারীমে আদের সাথে কোথাও ‘আদে উলা' বা ‘প্রথম আদ’ এবং কোথাও ‘আদ ইরাম’ শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এতে বুঝা যায় যে, ‘আদ সম্প্রদায়কে ‘ইরাম’ও বলা হয় এবং প্রথম আদের বিপরীতে কোনো দ্বিতীয় ‘আদও রয়েছে। এ সম্পর্কে তাফসীরবিদ ও ইতিহাসবিদদের উক্তি বিভিন্ন রূপ। অধিক প্রসিদ্ধ উক্তি এই যে, দ্বিতীয় আদ হলো সামূদ জাতি। এ বক্তব্যের সারমর্ম এই যে, আদ ও সামূদ উভয়ই ইরামের দু’শাখা। এক শাখাকে প্রথম আদ এবং অপর শাখাকে সামূদ অথবা দ্বিতীয় ‘আদ বলা হয়। ইরাম শব্দটি আদ ও সামূদ উভয়ের জন্য সমভাবে প্রযোজ্য। [তাফসীর ইবন কাসীর; আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া]
কুরআনের বর্ণনা মতে এ জাতিটির আবাসস্থল ছিল ‘আহকাফ’ এলাকা। এ এলাকাটি হিজায, ইয়ামন ও ইয়ামামার মধ্যবর্তী রুবউল খালী’র দক্ষিন পশ্চিমে অবস্থিত। এখান থেকে অগ্রসর হয়ে তারা ইয়ামানের পশ্চিম সমুদ্রোপকূল এবং ওমান ও হাদরামাউত থেকে ইরাক পর্যন্ত নিজেদের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব বিস্তৃত করেছিল। ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে এ জাতিটির নিদর্শণাবলী দুনিয়ার বুক থেকে প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। কিন্তু দক্ষিন আরবের কোথাও কোথাও এখনো কিছু পুরাতন ধ্বংসস্তুপ দেখা যায়। সেগুলোকে আদ জাতির নিদর্শন মনে করা হয়ে থাকে।
[২] আল্লাহ্ তা'আলাই তাদের হেদায়াতের জন্য হুদ আলাইহিস সালামকে নবীরূপে প্রেরণ করেন। তিনি আদ জাতিকে মূর্তিপূজা ত্যাগ করে একত্ববাদের অনুসরণ করতে এবং অত্যাচার উৎপীড়ন ত্যাগ করে ন্যায় ও সুবিচারের পথ ধরতে আদেশ করেন। কিন্তু তারা স্বীয় ধনৈশ্বর্যের মোহে মত্ত হয়ে তার আদেশ অমান্য করে। তারা শক্তিমত্ত হয়ে বলে বসল: "আমাদের চাইতে শক্তিশালী কে"? [ সূরা ফুসসিলাত ১৫] এর পরিণতিতে তাদের উপর প্রথম আযাব নাযিল হয় এবং তিন বছর পর্যন্ত উপর্যুপরি বৃষ্টি বন্ধ থাকে। তাদের শস্যক্ষেত্র শুষ্ক বালুকাময় মরুভূমিতে পরিণত হয়ে যায়। বাগান জ্বলে-পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। কিন্তু এতদস্বত্ত্বেও তারা শির্ক ও মূর্তিপূজা ত্যাগ করল না। অতঃপর আট দিন সাত রাত্রি পর্যন্ত তাদের উপর প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের আযাব সওয়ার হয়। ফলে তাদের অবশিষ্ট বাগবাগিচা ও দালানকোঠা মাটির সাথে মিশে যায়। মানুষ ও জীব-জন্তু শূন্যে উড়তে থাকে। অতঃপর উপুড় হয়ে মাটিতে পড়তে থাকে। এভাবে আদ জাতিকে সমূলে ধ্বংস করে দেয়া হয়। তাই বলা হয়েছে: “আমরা মিথ্যারোপকারীদের বংশ কেটে দিয়েছি।” হুদ 'আলাইহিস সালামের আদেশ অমান্য করা এবং কুফর ও শির্কে লিপ্ত থাকার কারণে যখন আদ জাতির উপর আযাব নাযিল হয়, তখন হুদ আলাইহিস সালাম ও তার সঙ্গীদেরকে আল্লাহ রক্ষা করেন। হুদ আলাইহিস সালাম ও তার সঙ্গীরা আযাব থেকে মুক্তি পেলেন। বিস্তারিত ঘটনা [দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর] আদ জাতির উপর ঘূর্ণিঝড়ের আকারে আযাব আসা কুরআনুলকারীমে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। সূরা আল- মুমিনূনে নূহ আলাইহিস সালামের কাহিনী উল্লেখ করার পর বলা হয়েছে, “অতঃপর আমি তাদের পরে আরো একটি সম্পপ্রদায় সৃষ্টি করেছি।" বাহ্যতঃ এরাই হচ্ছে 'আদ’ জাতি। পরে এ সম্প্রদায়ের কাজকর্ম ও কথাবার্তা বর্ণনা করার পর বলা হয়েছে: একটি বিকট শব্দ তাদেরকে পাকড়াও করল। এ আয়াতের ভিত্তিতে কোনো কোনো তাফসীরবিদ বলেন: "আদ জাতির উপর বিকট ধরনের শব্দের আযাব এসেছিল। কিন্তু উভয় মতের মধ্যে কোনো বৈপরীত্য নেই। এটা সম্ভব যে, বিকট শব্দ ও ঘূর্ণিঝড় উভয়টিই হয়েছিল। [তাফসীর ইবন কাসীর ৫/৪৭৪; সূরা আল-মুমিনুনের ৪১ নং আয়াতের তাফসীর]
[১] অর্থাৎ তারা মনে করতে থাকল যে, তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে যা বলছেন তা মিথ্যা। [মুয়াসসার] যদিও তারা তাকে ব্যক্তিগতভাবে মিথ্যাবাদী মনে করত না। কারণ নবীগণ সর্বযুগেই সত্যবাদী ছিলেন।
[১] অর্থাৎ সম্প্রদায়ের নেতা গোছের লোকেরা বলল: “আমরা তোমাকে নির্বুদ্ধিতায় লিপ্ত দেখতে পাচ্ছি। আমাদের ধারণা তুমি একজন মিথ্যাবাদী।” এটা প্রায় নূহ আলাইহিস সালামের সম্প্রদায়ের প্রত্যুত্তরের মতই– শুধু কয়েকটি শব্দের পার্থক্য মাত্র। হুদ আলাইহিস্সালাম এর উত্তরে বললেন, আমার মধ্যে কোনো নিবুদ্ধিতা নেই। ব্যাপার শুধু এতটুকুই যে, আমি বিশ্ব পালনকর্তার কাছ থেকে রাসূল হয়ে এসেছি। তার বার্তা তোমাদের কাছে পৌছাই। আমি সুস্পষ্টভাবে তোমাদের হিতাকাংখী। তাই তোমাদের পৈত্রিক মূর্খতায় তোমাদের সঙ্গী হওয়ার পরিবর্তে তোমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে সত্য কথা তোমাদের কাছে পৌছে দেই। কিন্তু তা তোমাদের মনঃপুত নয়।