Traduction des sens du Noble Coran - La traduction bengalaise - Abû Bakr Zakariyâ

Numéro de la page:close

external-link copy
23 : 7

قَالَا رَبَّنَا ظَلَمۡنَآ أَنفُسَنَا وَإِن لَّمۡ تَغۡفِرۡ لَنَا وَتَرۡحَمۡنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ ٱلۡخَٰسِرِينَ

তারা বলল, ‘হে আমাদের রব! আমারা নিজেদের প্রতি যুলুম করছি। আর যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং দয়া না করেন, তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব [১]।’ info

[১] কাতাদা বলেন, তারা দু’জন নিজেদের লজ্জাস্থান পরস্পর দেখতে পেত না। কিন্তু অপরাধের পর সেটা প্রকাশ হয়ে পড়ল। তখন আদম আলাইহিস সালাম বললেন, হে রব! যদি আমি তাওবা করি এবং ক্ষমা চাই তাহলে কি হবে আমাকে জানান? আল্লাহ বললেন, তাহলে আমি তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবো। কিন্তু ইবলীস ক্ষমা চাইলো না, বরং সে অবকাশ চাইল। ফলে আল্লাহ প্রত্যেককে তার প্রার্থিত বিষয় দান করলেন। [আত-তাফসীরুস সহীহ]

التفاسير:

external-link copy
24 : 7

قَالَ ٱهۡبِطُواْ بَعۡضُكُمۡ لِبَعۡضٍ عَدُوّٞۖ وَلَكُمۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ مُسۡتَقَرّٞ وَمَتَٰعٌ إِلَىٰ حِينٖ

তিনি বললেন, ‘তোমরা নেমে যাও, তোমরা একে অন্যের শক্র এবং যমীনে কিছুদিনের জন্য তোমাদের বসবাস ও জীবিকা রইল।’ info
التفاسير:

external-link copy
25 : 7

قَالَ فِيهَا تَحۡيَوۡنَ وَفِيهَا تَمُوتُونَ وَمِنۡهَا تُخۡرَجُونَ

তিনি বললেন, ‘সেখানেই তোমারা যাপন করবে এবং সেখানেই তোমরা মারা যাবে। আর সেখান থেকেই তোমাদেরকে বের করা হবে [১]।’ info

[১] ইবন কাসীর বলেন, এ আয়াতের অর্থ অন্য আয়াতের মত, যেখানে এসেছে, “আমরা মাটি থেকে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, তাতেই তোমাদেরকে ফিরিয়ে দেব এবং তা থেকেই পুনর্বার তোমাদেরকে বের করব।" (সূরা ত্বা-হা ৫৫]

التفاسير:

external-link copy
26 : 7

يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ قَدۡ أَنزَلۡنَا عَلَيۡكُمۡ لِبَاسٗا يُوَٰرِي سَوۡءَٰتِكُمۡ وَرِيشٗاۖ وَلِبَاسُ ٱلتَّقۡوَىٰ ذَٰلِكَ خَيۡرٞۚ ذَٰلِكَ مِنۡ ءَايَٰتِ ٱللَّهِ لَعَلَّهُمۡ يَذَّكَّرُونَ

হে বনী আদম! অবশ্যই আমরা তোমাদের জন্য পোষাক নাযিল করেছি, তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকা ও বেশ-ভুষার জন্য। আর তাকওয়ার পোষাক [১], এটাই সর্বোওম [২]। এটা আল্লাহ্‌র নিদর্শসমূহের অন্যতম, যাতে তারা উপদেশ গ্রহণ করে [৩]। info

তৃতীয় রুকূ’

[১] (وَلِبَاسُ التَّقْوٰى) শব্দ থেকে এদিকেও ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, বাহ্যিক পোষাক দ্বারা গুপ্ত-অঙ্গ আবৃত করা ও সাজ-সজ্জা করার আসল উদ্দেশ্য তাকওয়া ও আল্লাহভীতি। এ আল্লাহভীতি পোষাকের মধ্যেও এভাবে প্রকাশ পায়। তাই পোষাকে যেন গুপ্তাঙ্গগুলি পুরোপুরি আবৃত হয়। উলঙ্গের মত দৃষ্টিগোচর না হয়। অহংকার ও গর্বের ভঙ্গিও না থাকা চাই। অপব্যয় না থাকা চাই। মহিলাদের জন্য পুরুষের পোষাকের মত আর পুরুষের জন্য মহিলাদের পোষাকের মত না হওয়া চাই। পোষাকে বিজাতির অনুকরণ না হওয়া চাই। এর প্রত্যেকটির ব্যাপারেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীসে বিস্তারিত দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

[২] এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা সমস্ত আদম সন্তানকে সম্বোধন করে বলেছেন, তোমাদের পোষাক আল্লাহ তা'আলার একটি মহান নেয়ামত। একে যথার্থ মূল্য দাও। এখানে মুসলিমদেরকে সম্বোধন করা হয়নি- সমগ্র বনী-আদমকে করা হয়েছে। এতে ইঙ্গিত রয়েছে যে, গুপ্তাঙ্গ আচ্ছাদন ও পোষাক মানব জাতির একটি সহজাত প্রবৃত্তি ও প্রয়োজন। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাই এ নিয়ম পালন করে। অতঃপর এর বিশদ বিবরণে তিন প্রকার পোশাকের উল্লেখ করা হয়েছে।

(এক)

(لِبَاسًا يُّوَارِيْ سَوْاٰتِكُمْ)

-এখানে يُوَارِي শব্দটি مواراة থেকে উদ্ভুত, এর অর্থ আবৃত করা। আর سَوْاٰت শব্দটি سوءة এর বহুবচন, এর অর্থ মানুষের ঐসব অঙ্গ, যেগুলো খোলা রাখাকে মানুষ স্বভাবতই খারাপ ও লজ্জাকর মনে করে। উদ্দেশ্য এই যে, আমি তোমাদের মঙ্গলার্থে এমন একটি পোষাক সৃষ্টি করেছি, যা দ্বারা তোমরা গুপ্তাঙ্গ আবৃত করতে পার। মুজাহিদ বলেন, আরবের কিছু লোক আল্লাহর ঘরের তাওয়াফ উলঙ্গ হয়ে সম্পাদন করত। আবার কোনো কোনো লোক যে পোষাক পরিধান করে তাওয়াফ করেছে সে পোষাক আর পরিধান করত না। এ আয়াতে তাদেরকেও উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে। [তাবারী]

(দুই) وَرِيْشًا -অর্থাৎ সাজ-সজ্জার জন্য মানুষ যে পোষাক পরিধান করে, তাকে ريش বলা হয়। অর্থ এই যে, গুপ্তাঙ্গ আবৃত করার জন্য তো সংক্ষিপ্ত পোষাকই যথেষ্ট হয়; কিন্তু আমি তোমাদেরকে আরো পোষাক দিয়েছি, যাতে তোমরা তা দ্বারা সাজ-সজ্জা করে বাহ্যিক দেহাবয়বকে সুশোভিত করতে পার। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এখানে ‘রীশ’ বলে ‘সম্পদ' বোঝানো হয়েছে। [তাবারী] বাস্তবিকই পোষাক একটি গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান সম্পদ।
(তিন) আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা তৃতীয় এক প্রকার পোশাকের কথা উল্লেখ করে বলেছেন,

(وَلِبَاسُ التَّقْوٰى ۙ ذٰلِكَ خَيْرٌ)

অর্থাৎ তা হচ্ছে তাকওয়ার পোষাক আর এটিই সর্বোত্তম পোষাক। ইবন আব্বাস ও উরওয়া ইবন যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুমের তাফসীর অনুযায়ী তাকওয়ার পোষাক বলে সৎকর্ম ও আল্লাহভীতি বুঝানো হয়েছে। এটি মানুষের চারিত্রিক দোষ ও দুর্বলতার আবরণ এবং স্থায়ী কষ্ট ও বিপদাপদ থেকে মুক্তিলাভের উপায়। এ কারণেই এটি সর্বোত্তম পোষাক। কাতাদা বলেন, তাকওয়ার পোষাক বলে ঈমানকে বোঝানো হয়েছে। [তাবারী]

[৩] অর্থাৎ মানুষকে এ তিন প্রকার পোষাক দান করা আল্লাহ তা'আলার শক্তির নিদর্শনসমূহের অন্যতম- যাতে মানুষ এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে।

التفاسير:

external-link copy
27 : 7

يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ لَا يَفۡتِنَنَّكُمُ ٱلشَّيۡطَٰنُ كَمَآ أَخۡرَجَ أَبَوَيۡكُم مِّنَ ٱلۡجَنَّةِ يَنزِعُ عَنۡهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوۡءَٰتِهِمَآۚ إِنَّهُۥ يَرَىٰكُمۡ هُوَ وَقَبِيلُهُۥ مِنۡ حَيۡثُ لَا تَرَوۡنَهُمۡۗ إِنَّا جَعَلۡنَا ٱلشَّيَٰطِينَ أَوۡلِيَآءَ لِلَّذِينَ لَا يُؤۡمِنُونَ

হে বনী আদম! শয়তান যেন তোমাদেরকে কিছুতেই প্রলুব্ধ না করে- যেভাবে সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে বের করেছিল, সে তাদেরকে তাদের লজ্জাস্থান দেখানোর জন্য [১] বিবস্ত্র করেছিল [২]। নিশ্চয় সে নিজে এবং তার দল তোমাদেরকে এমনভাবে দেখে যে, তোমরা তাদেরকে দেখতে পাও না। নিশ্চয় আমরা শয়তানকে তাদের অভিভাবক করেছি, যারা ঈমান আনে না। info

[১] শয়তান মানুষের এ দুর্বলতা আঁচ করে সর্বপ্রথম হামলা গুপ্তাঙ্গ আচ্ছাদনের উপর করেছে। তাই মানুষের সর্বপ্রথম মঙ্গল বিধানকারী শরীআত গুপ্তাঙ্গ আচ্ছাদনের প্রতি এতটুকু গুরুত্ব আরোপ করেছে যে, ঈমানের পর সর্বপ্রথম ফরয হলো গুপ্তাঙ্গ আবৃত করা। সালাত, সিয়াম ইত্যাদি সবই এরপর।

[২] মানুষের বিরুদ্ধে শয়তানের সর্বপ্রথম আক্রমণের ফলে তার পোষাক খসে পড়েছিল। আজও শয়তান তার শিষ্যবর্গের মাধ্যমে মানুষকে পথভ্রষ্ট করার ইচ্ছায় সভ্যতার নামে সর্বপ্রথম তাকে উলঙ্গ বা অর্ধ-উলঙ্গ করে পথে নামিয়ে দেয়। শয়তানের তথাকথিত প্রগতি নারীকে লজ্জা-শরম থেকে দূরে ঠেলে সাধারণ্যে অর্ধ-উলঙ্গ অবস্থায় নিয়ে আসা ছাড়া অর্জিতই হয় না।

التفاسير:

external-link copy
28 : 7

وَإِذَا فَعَلُواْ فَٰحِشَةٗ قَالُواْ وَجَدۡنَا عَلَيۡهَآ ءَابَآءَنَا وَٱللَّهُ أَمَرَنَا بِهَاۗ قُلۡ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَأۡمُرُ بِٱلۡفَحۡشَآءِۖ أَتَقُولُونَ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعۡلَمُونَ

আর যখন তারা কোনো অশ্লীল আচরণ করে [১] তখন বলে, ‘আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে এতে পেয়েছি এবং আল্লাহও আমাদেরকে এরই নির্দেশ দিয়েছেন।’ বলুন, ‘আল্লাহ্‌ অশ্লীলতার নির্দেশ দেন না। তোমরা কি আল্লাহ্‌ সম্বদ্ধে এমন কিছু বলছ যা তোমারা জান না [২]?’ info

[১] فحش، فحشاء ও فاحشة এমন প্রত্যেক মন্দ কাজকে বলা হয়, যা চূড়ান্ত পর্যায়ের মন্দ এবং যুক্তি, বুদ্ধি ও সুস্থ বিবেকের কাছে পূর্ণমাত্রায় সুস্পষ্ট। [ ফাতহুল কাদীর]

[২] ইসলামের পূর্বে জাহেলিয়াত যুগে শয়তান মানুষকে যেসব লজ্জাজনক ও অর্থহীন কুপ্রথায় লিপ্ত করেছিল, তন্মধ্যে একটি ছিল এই যে, কুরাইশ ছাড়া কোনো ব্যক্তি নিজ বস্ত্র পরিহিত অবস্থায় কা'বা গৃহের তাওয়াফ করতে পারত না। তাকে হয় কোনো কুরাইশীর কাছ থেকে বস্ত্র ধার করতে হত, না হয় উলঙ্গ অবস্থায় তাওয়াফ করতে হত। এটা জানা কথা যে, আরবের সব মানুষকে বস্ত্র দেয়া কুরাইশদের পক্ষে সম্ভবপর ছিল না। তাই পুরুষ মহিলা অধিকাংশ লোক উলঙ্গ অবস্থায় তাওয়াফ করত। মহিলারা সাধারণতঃ রাতের অন্ধকারে তাওয়াফ করত। তাদের নিকট এ শয়তানী কাজের যুক্তি হলো, যেসব পোষাক পরে আমরা পাপকাজ করি, সেগুলো পরিধান করে আল্লাহর ঘর প্রদক্ষিণ করা বে-আদবী। এ জ্ঞানপাপীরা এ বিষয়টি বুঝত না যে, উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করা আরো বেশী বেআদবীর কাজ। হারামের সেবক হওয়ার সুবাদে শুধু কুরাইশ গোত্র এ উলঙ্গতা আইনের ব্যতিক্রম ছিল। এ নির্লজ্জ প্রথা ও তার অনিষ্ট বর্ণনা করার জন্য এ আয়াত নাযিল হয়। [তাবারী] এতে বলা হয়েছে: তারা যখন কোনো অশ্লীল কাজ করত, তখন কেউ নিষেধ করলে তারা উত্তরে বলতঃ আমাদের বাপ-দাদা ও মুরুবিবরা তাই করে এসেছেন। তাদের তরিকা ত্যাগ করা লজ্জার কথা। তারা আরো বলত আল্লাহ্ তা'আলা আমাদেরকে এ নির্দেশই দিয়েছেন। প্রথমটি সত্য হলেও দ্বিতীয়টি নিঃসন্দেহে মিথ্যা।

التفاسير:

external-link copy
29 : 7

قُلۡ أَمَرَ رَبِّي بِٱلۡقِسۡطِۖ وَأَقِيمُواْ وُجُوهَكُمۡ عِندَ كُلِّ مَسۡجِدٖ وَٱدۡعُوهُ مُخۡلِصِينَ لَهُ ٱلدِّينَۚ كَمَا بَدَأَكُمۡ تَعُودُونَ

বলুন, ‘আমার রব নির্দেশ দিয়েছেন ন্যায়বিচারের [১]।’ আর তোমরা প্রত্যেক সাজদাহ বা ইবাদতে তোমাদের লক্ষ্য একমাত্র আল্লাহকেই নির্ধারণ কর [২] এবং তাঁরই অনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁকে ডাক [৩]। তিনি যেভাবে তোমাদেরকে প্রথমে সৃষ্টি করেছেন তোমরা সেভাবে ফিরে আসবে [৪]। info

[১] এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, যেসব মূর্খ উলঙ্গ তাওয়াফ বৈধ করার ভ্রান্ত সম্বন্ধ আল্লাহর দিকে করে, আপনি তাদের বলে দিন: আল্লাহ্ তা'আলা সর্বদা قسط এর নির্দেশ দেন। قسط এর আসল অর্থ ন্যায়বিচার ও সমতা। এখানে ঐ কাজকে বুঝানো হয়েছে, যাতে কোনোরূপ ক্রটিও নেই এবং নির্দিষ্ট সীমার লঙ্ঘনও নেই। অর্থাৎ স্বল্পতা ও বাহুল্য থেকে মুক্ত। শরীআতের সব বিধি-বিধানের অবস্থা তাই। এজন্য قسط শব্দের অর্থে যাবতীয় ইবাদাত, আনুগত্য ও শরী’আতের সাধারণ বিধিবিধান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

[২] এখানে ইবাদতের সময় সবকিছু বাদ দিয়ে কেবলমাত্র ইখলাসের সাথে আল্লাহকে উদ্দেশ্য নিতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে মসজিদসমূহে যখন ইবাদত করা হয়। [মুয়াসসার] ইবন তাইমিয়াহ বলেন, এ আয়াতে ‘কিয়ামুল ওয়াজহ' বলে অন্য আয়াত ‘ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিয়া’ যা বুঝানো হয়েছে, তাই বোঝানো হয়েছে। এ সবের অর্থ হচ্ছে, ইখলাসের সাথে যাবতীয় ইবাদত কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যে সম্পাদন করা। [ ইসতিকামাহ ২/৩০৬] এখানে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট হচ্ছে যে, ইবাদতের জন্য বিশেষ করে ইখলাসের সাথে ইবাদতের জন্য সবচেয়ে উত্তম স্থান হচ্ছে মাসজিদ, মাযার নয়। যেমনটি কোনো কোনো মানুষ মনে করে থাকে। [ইবন তাইমিয়্যাহ, ইকতিদায়ুস সিরাতিল মুস্তাকীম ১/৩৯২] মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহ আয়াতের অর্থে বলেন, ‘তোমরা তোমাদের চেহারাকে প্রতিটি মসজিদেই কিবলামূখী কর, যেখানেই সালাত আদায় কর না কেন। [আত-তাফসীরুস সহীহ]

[৩] অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলাকে এমনভাবে ডাক, যেন ইবাদাত খাঁটিভাবে তারই জন্য হয়; এতে যেন অন্য কারো অংশীদারিত্ব না থাকে; এমন কি গোপন শির্ক অর্থাৎ লোক-দেখানো ও নাম-যশের উদ্দেশ্য থেকেও পবিত্র হওয়া চাই। এতে বোঝা গেল যে, বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ উভয় অবস্থাকেই শরীআতের বিধান অনুযায়ী সংশোধন করা অবশ্য কর্তব্য। আন্তরিকতা ব্যতীত শুধু বাহ্যিক আনুগত্যই যথেষ্ট নয়। এমনিভাবে শুধুমাত্র আন্তরিকতাও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শরীআতের অনুসরণ ব্যতীত গ্রহনযোগ্য নয়।

[৪] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহর দিকে জমায়েত হবে খালি পা, কাপড়বিহীন, খতনাবিহীন অবস্থায়। তারপর তিনি বললেন, “তিনি যেভাবে প্রথমে তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তোমরা সেভাবে ফিরে আসবে” এখান থেকে আয়াতের শেষ পর্যন্ত পড়লেন। তারপর বললেন, মনে রেখ! কেয়ামতের দিন প্রথম যাকে কাপড় পরানো হবে, তিনি হলেন ইবরাহীম। মনে রেখ! আমার উম্মতের কিছু লোককে নিয়ে আসা হবে তারপর তাদেরকে বাম দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলব: হে রব! এরা আমার প্রিয় সার্থীবৃন্দ। তখন বলা হবে: আপনি জানেন না তারা আপনার পরে কি নতুন পদ্ধতির আবিস্কার করেছে। তারপর আমি তা বলব যা নেক বান্দা বলেছিল, "আর আমি তাদের মাঝে যতদিন ছিলাম তাদের উপর সাক্ষী ছিলাম, তারপর যখন আপনি আমাকে মৃত্যু দেন আপনিই তো তখন তাদের উপর খবরদার ছিলেন” তখন বলা হবে: আপনি তাদের কাছ থেকে চলে আসার পর থেকেই এরা তাদের পিছনে ফিরে গিয়েছিল। [বুখারী ৪৬২৫, মুসলিম ২৮৫৯]

التفاسير:

external-link copy
30 : 7

فَرِيقًا هَدَىٰ وَفَرِيقًا حَقَّ عَلَيۡهِمُ ٱلضَّلَٰلَةُۚ إِنَّهُمُ ٱتَّخَذُواْ ٱلشَّيَٰطِينَ أَوۡلِيَآءَ مِن دُونِ ٱللَّهِ وَيَحۡسَبُونَ أَنَّهُم مُّهۡتَدُونَ

একদলকে তিনি হিদায়াত করেছেন। আর অপরদল,তাদের উপর পথ ভ্রান্তি নির্ধারিত হয়েছে [১]। নিশ্চয় তারা আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে তাদের অভিভাবক-রুপে গ্রহণ করেছিল এবং মনে করত [২] তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত। info

[১] এ আয়াতের সমর্থনে আরও আয়াত ও অনেক হাদীস এসেছে। সূরা আত-তাগাবুনের ২নং আয়াতেও আল্লাহ তা’আলা এ কথাটি স্পষ্ট করে দিয়েছেন। এটা তাকদীরের সাথে সংশ্লিষ্ট। অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা সমস্ত মানুষকে কাফের ও মুমিন এ দু’ভাগে ভাগ করেছেন। কিন্তু মানুষ জানে না সে কোনভাগে। সুতরাং তার দায়িত্ব হবে কাজ করে যাওয়া। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বিভিন্ন হাদীসেও তা বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমাদের কেউ কেউ এমন কাজ করে যে, বাহ্য দৃষ্টিতে সে জান্নাতের অধিবাসী অথচ সে জাহান্নামী। আবার তোমাদের কেউ কেউ এমন কাজ করে যে, বাহ্য দৃষ্টিতে মনে হয় সে জাহান্নামী অথচ সে জান্নাতী। কারণ, মানুষের সর্বশেষ কাজের উপরই তার হিসাব নিকাশ।’ [বুখারী ২৮৯৮, ৪২০২; মুসলিম ১১২; আহমাদ ৫/৩৩৫] অন্য হাদীসে এসেছে, ‘প্রত্যেক বান্দাহ পুনরুখিত হবে সেটার উপর যার উপর তার মৃত্যু হয়েছে।’ [মুসলিম২৮৭৮]

[২] আয়াতে আল্লাহ তা'আলা এটা বর্ণনা করেছেন যে, কাফেররা শয়তানদেরকে তাদের অভিভাবক বানিয়েছে। তাদের এ অভিভাবকত্বের স্বরূপ হচ্ছে যে, তারা আল্লাহর শরী’আতের বিরোধিতা করে শয়তানের দেয়া মত ও পথের অনুসরণ করে থাকে। তারপরও মনে করে থাকে যে, তারা হিদায়াতের উপর আছে। অন্য আয়াতে যারা এ ধরণের কাজ করবে তাদেরকে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। “বলুন, ‘আমরা কি তোমাদেরকে সংবাদ দেব কাজে বিশেষ ক্ষতিগ্রস্তদের? ওরাই তারা, ‘পার্থিব জীবনে যাদের প্রচেষ্টা পণ্ড হয়, যদিও তারা মনে করে যে, তারা সৎকাজই করছে।" [সূরা আল-কাহাফ ১০৩-১০৪] [আদওয়াউল বায়ান] মূলতঃ শরী’আতের বিধি-বিধান সম্পর্কে মূর্খতা ও অজ্ঞতা কোনো স্থায়ী ওযর নয়। যদি কেউ ভ্রান্ত পথকে বিশুদ্ধ মনে করে পূর্ণ আন্তরিকতা সহকারে তা অবলম্বন করে, তবে সে আল্লাহর কাছে ক্ষমার যোগ্য নয়। কেননা, আল্লাহ তা'আলা প্রত্যেককে চেতনা, ইন্দ্রিয় এবং জ্ঞান-বুদ্ধি এ জন্যই দিয়েছেন, যাতে সে তা দ্বারা আসল ও মেকী এবং অশুদ্ধ ও শুদ্ধকে চিনে নেয়। অতঃপর তাকে এ জ্ঞান বুদ্ধির উপরই ছেড়ে দেননি, নবী প্রেরণ করেছেন এবং গ্রন্থ নাযিল করেছেন। এসবের মাধ্যমে শুদ্ধ ও ভ্রান্ত এবং সত্য ও মিথ্যাকে পুরোপুরিভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

التفاسير: