Qurani Kərimin mənaca tərcüməsi - Benqal dilinə tərcümə- Əbu Bəkir Zəkəriyyə.

Səhifənin rəqəmi:close

external-link copy
18 : 17

مَّن كَانَ يُرِيدُ ٱلۡعَاجِلَةَ عَجَّلۡنَا لَهُۥ فِيهَا مَا نَشَآءُ لِمَن نُّرِيدُ ثُمَّ جَعَلۡنَا لَهُۥ جَهَنَّمَ يَصۡلَىٰهَا مَذۡمُومٗا مَّدۡحُورٗا

কেউ আশু সুখ-সম্ভোগ কামনা করলে আমরা যাকে যা ইচ্ছে এখানেই সত্ত্বর দিয়ে থাকি [১]; পরে তার জন্য জাহান্নাম নির্ধারিত করি যেখানে সে শাস্তিতে দগ্ধ হবে নিন্দিত ও অনুগ্রহ হতে দূরীকৃত অবস্থায় [২]। info

[১] অর্থাৎ যারা শুধু দুনিয়াতেই নগদ পেতে চায়, আমি তাদেরকে নগদই দান করি। তবে সেজন্য দুটি শর্ত রয়েছে। একটি শর্ত হচ্ছে, আমি যতটুকু ইচ্ছা করি, ততটুকুই দান করি, তাদের চেষ্টা বা চাহিদা মোতাবেক দান করা আবশ্যক নয়। দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে, আমার হেকমত অনুসারে যাকে সমীচীন মনে করি, শুধু তাকেই নগদ দান করি। সবাইকে দিতে হবে, এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নাই। এ আয়াতটি এ জাতীয় যত আয়াতে শর্তহীনভাবে দেয়ার কথা আছে সবগুলোর জন্য শর্ত আরোপ করে দিয়েছে। [দেখুন, ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

[২] এর অর্থ হচ্ছে, যে ব্যক্তি আখেরাতে বিশ্বাস করে না অথবা আখেরাত পর্যন্ত সবর করতে প্ৰস্তুত নয় এবং শুধুমাত্র দুনিয়া এবং দুনিয়াবী সাফল্য ও সমৃদ্ধিকেই নিজের যাবতীয় প্রচেষ্টার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করে, সে যা কিছু পাবে এ দুনিয়াতেই পাবে। আখেরাতে সে কিছুই পেতে পারে না। কারণ সে দুনিয়াকে আখেরাতের উপর প্রাধান্য দিয়েছে, সুতরাং সে আখেরাতের জন্য কিছুই করেনি। অতএব সে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। [ইবন কাসীর]

التفاسير:

external-link copy
19 : 17

وَمَنۡ أَرَادَ ٱلۡأٓخِرَةَ وَسَعَىٰ لَهَا سَعۡيَهَا وَهُوَ مُؤۡمِنٞ فَأُوْلَٰٓئِكَ كَانَ سَعۡيُهُم مَّشۡكُورٗا

আর যারা মুমিন হয়ে আখিরাত কামনা করে এবং তার জন্য যথাযথ চেষ্টা করে তাদের প্রচেষ্টা পুরস্কারযোগ্য [১]। info

[১] মুমিন যখনই যে কাজে আখেরাতের ইচ্ছা ও নিয়ত করবে, তার সেই কাজ গ্রহণ যোগ্য হবে; যদিও তার কোনো কোনো কাজের নিয়তে মন্দ মিশ্রিত হয়ে যায়। এ অবস্থাটি হচ্ছে মুমিনের। তার যে কর্ম খাঁটি নিয়ত সহকারে অন্যান্য শর্তনুযায়ী হবে, তা গ্রহণযোগ্য হবে এবং যে কর্ম এরূপ হবে না, তা গ্রহণযোগ্য হবে না। এ আয়াতে চেষ্টা ও কর্মের সাথে سعيها এ শব্দ যোগ করে বলা হয়েছে যে, প্রত্যেক কর্ম ও চেষ্টা কল্যাণকর ও আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় না; বরং সেটিই ধর্তব্য হয়, যা আখেরাতের লক্ষ্যের উপযোগী। উপযোগী হওয়া না হওয়া শুধু আল্লাহ ও রাসূলের বর্ণনা দ্বারাই জানা যেতে পারে। তাই তাকে সে কাজটি সুন্নাত অনুযায়ীই করতে হবে। কাজেই যে সৎকর্ম মনগড়া পন্থায় করা হয়- সাধারণ বেদআতি পন্থাও এর অন্তর্ভুক্ত, তা দৃশ্যতঃ যতই সুন্দর ও উপকারী হোক না কেন- আখেরাতের জন্যে উপযোগী নয়। তাই সেটা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয় এবং আখেরাতেও কল্যাণকর নয়। [দেখুন, ফাতহুল কাদীর]

التفاسير:

external-link copy
20 : 17

كُلّٗا نُّمِدُّ هَٰٓؤُلَآءِ وَهَٰٓؤُلَآءِ مِنۡ عَطَآءِ رَبِّكَۚ وَمَا كَانَ عَطَآءُ رَبِّكَ مَحۡظُورًا

আপনার রবের দান থেকে আমরা এদের ও ওদের প্রত্যেককে সাহায্য করি এবং আপনার রবের দান অবারিত [১]। info

[১] অর্থাৎ দুনিয়ায় জীবিকা ও জীবন উপকরণ দুনিয়াদাররাও পাচ্ছে এবং আখেরাতের প্রত্যাশীরাও পাচ্ছে। এসব অন্য কেউ নয়, আল্লাহই দান করছেন। আখেরাতের প্রত্যাশীদেরকে জীবিকা থেকে বঞ্চিত করার ক্ষমতা দুনিয়া পূজারীদের নেই এবং দুনিয়া পূজারীদের কাছে আল্লাহর নিয়ামত পৌঁছার পথে বাধা দেয়ার ক্ষমতা আখেরাত প্রত্যাশীদেরও নেই। তিনি সর্বময় কর্তৃত্ববান, তিনি কোনো যুলুম করেন না। তিনি প্রত্যেককে তার সৌভাগ্য বা দূৰ্ভাগ্য সবই প্ৰদান করেন। তাঁর হুকুমকে কেউ রদ করতে পারেনা, তিনি যা দিয়েছেন তা কেউ নিষেধ করতে পারেনা। তিনি যা ইচ্ছা! করেছেন তা কেউ পরিবর্তন করতে পারেনা। [ইবন কাসীর]

التفاسير:

external-link copy
21 : 17

ٱنظُرۡ كَيۡفَ فَضَّلۡنَا بَعۡضَهُمۡ عَلَىٰ بَعۡضٖۚ وَلَلۡأٓخِرَةُ أَكۡبَرُ دَرَجَٰتٖ وَأَكۡبَرُ تَفۡضِيلٗا

লক্ষ্য করুন, আমরা কীভাবে তাদের একদলকে অন্যের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি, আখিরাত তো অবশ্যই মর্যাদায় মহত্তর ও শ্রেষ্ঠত্বে বৃহত্তর [১]! info

[১] আর্থাৎ দেখুন, কিভাবে আমরা দুনিয়াতে মানুষকে একে অপরের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি। তাদের মধ্যে কেউ ধনী, কেউ গরীব আবার কেউ মাঝামাঝি। অন্যদিকে কেউ সুন্দর কেউ কুৎসিত, আবার কেউ মাঝামাঝি। কেউ শক্তিশালী, কেউ দূর্বল। কেউ সুস্থ, কেউ অসুস্থ, কেউ আহমক, কেউ বুদ্ধিমান। দুনিয়াতে এ পার্থক্য মানুষের মধ্যে আছেই। এটা আল্লাহই করে দিয়েছেন। এর রহস্য মানুষের বুঝার বাইরে। [ফাতহুল কাদীর] কিন্তু আখেরাতের শ্রেষ্ঠত্ব ঈমানদারদেরই থাকবে। সেখানকার পার্থক্য দুনিয়ার পার্থক্যের চেয়ে বড় হয়ে দেখা দিবে। সেখানে কেউ থাকবে জাহান্নামের নীচের স্তরে, জাহান্নামের জিঞ্জির ও লোহার বেড়ির মধ্যে আবদ্ধ। আর কেউ থাকবে জান্নাতের উচুস্তরে, নেয়ামতের মধ্যে, খুশির মধ্যে। তারপর আবার জাহান্নামের লোকদেরও ভিন্ন ভিন্ন স্তর হবে। আর জান্নাতের লোকদের স্তরও বিভিন্ন হবে। তাদের কারও মর্যাদা অপরের মর্যাদার চেয়ে আসমান ও যমীনের মধ্যকার পার্থক্যের মত হবে। বরং উঁচু স্তরে যে সমস্ত জান্নাতীরা থাকবে তারাই ইল্লিয়ীনবাসীদের দেখবে, যেমন দূরের কোনো নক্ষত্ৰকে আকাশের প্রান্তে কেউ দেখতে পায়। [ইবন কাসীর]

التفاسير:

external-link copy
22 : 17

لَّا تَجۡعَلۡ مَعَ ٱللَّهِ إِلَٰهًا ءَاخَرَ فَتَقۡعُدَ مَذۡمُومٗا مَّخۡذُولٗا

আল্লাহর সাথে অন্য কোনো ইলাহ সাব্যস্ত করো না; করলে নিন্দিত ও লাঞ্চিত হয়ে বসে পড়বে [১]। info

[১] সাধারণত যারা আল্লাহর সাথে শির্ক করে তাদের বেশির ভাগেই বিপদাপদে আল্লাহকে ভুলে বিভিন্ন পীর-ফকীর, আলী, দরগাহ ইত্যাদিকে ডাকে এবং তাদের কাছে নিজের অভাব গোছানো বা বিপদ মুক্তির আহবান জানাতে থাকে। এতে তারা শির্ক করার কারণে আখেরাতে নিন্দিত ও লাঞ্ছিত হবে। কারণ, আল্লাহর সাথে কেউ শরীক করলে আল্লাহ তাকে আর সাহায্য করবেন না। বরং তাকে সে শরীকের কাছে ন্যস্ত করে দেন যাকে সে আল্লাহর সাথে শরীক করেছে। অথচ সে তার কোনো ক্ষতি কিংবা উপকারের মালিক নয়। কারণ, ক্ষতি বা উপকারের মালিকতো আল্লাহতা'আলাই। সুতরাং আল্লাহর সাথে শরীক করার কারণে তাকে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হয়েই থাকতে হবে। [ইবন কাসীর] এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "অভাব ও সমস্যাগ্ৰস্ত কেউ যখন তার অভাব ও সমস্যা মানুষের কাছে ব্যক্ত করে তখন তার সে অভাব পূর্ণ হয়না, পক্ষান্তরে যে আল্লাহর দরবারে পেশ করে অচিরেই আল্লাহ তাকে অমুখাপেক্ষী করে দেয়। দ্রুত মৃত্যুর মাধ্যমে অথবা দ্রুত ধনী করার মাধ্যমে।” [আবুদাউদ ১৬৪৫, তিরমিয়ী ২৩২৬, মুসনাদেআহমাদ ১/৪০৭]

التفاسير:

external-link copy
23 : 17

۞ وَقَضَىٰ رَبُّكَ أَلَّا تَعۡبُدُوٓاْ إِلَّآ إِيَّاهُ وَبِٱلۡوَٰلِدَيۡنِ إِحۡسَٰنًاۚ إِمَّا يَبۡلُغَنَّ عِندَكَ ٱلۡكِبَرَ أَحَدُهُمَآ أَوۡ كِلَاهُمَا فَلَا تَقُل لَّهُمَآ أُفّٖ وَلَا تَنۡهَرۡهُمَا وَقُل لَّهُمَا قَوۡلٗا كَرِيمٗا

আর আপনার রব আদেশ দিয়েছেন তিনি ছাড়া অন্য কারো 'ইবাদাত না করতে [১] ও পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে [২]। তারা একজন বা উভয়ই তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে 'উফ' বল না এবং তাদেরকে ধমক দিও না [৩]; তাদের সাথে সম্মানসূচক কথা বল [৪]। info

তৃতীয় রুকু’

[১] আল্লাহ তা'আলা তাঁর বান্দাদেরকে একমাত্র তাঁরই ইবাদাত করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এখানে قضي এটা শব্দের অর্থ أَمر বা নির্দেশ দিয়েছেন। মুজাহিদ বলেন, এখানে قضي অর্থ وصي বা অসিয়ত করেছেন। [ইবন কাসীর] অন্য কোনো কোনো মুফাসসির বলেছেন, এখানে قضي শব্দটি قضاء شرعي বা শরীআতগত ফয়সালা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। [সা’দী]

[২] এ আয়াতে আল্লাহ তা’আলা পিতা-মাতার আদব, সম্মান এবং তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করাকে নিজের ইবাদতের সাথে একত্রিত করে ফরয করেছেন। যেমন, অন্যত্র আল্লাহ তা'আলা নিজের শোকরের সাথে পিতা-মাতার শোকরকে একত্রিত করে অপরিহার্য করেছেন। বলা হয়েছে: “আমার শোকর কর এবং পিতা-মাতারও।” [সূরা লুকমান ১৪]

এতে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তা'আলার ইবাদতের পর পিতা-মাতার আনুগত্য সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং আল্লাহ তা'আলার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়ার ন্যায় পিতা-মাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়াও ওয়াজিব। হাদীসে রয়েছে, কোনো এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করল: আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় কাজ কোনটি? তিনি বললেন, সময় হলে সালাত পড়া। সে আবার প্রশ্ন করল, এরপর কোন কাজটি সর্বাধিক প্রিয়? তিনি বললেন, পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার। [মুসলিম ৮৫]

তাছাড়া বিভিন্ন হাদীসে পিতা-মাতার আনুগত্যও সেবা যত্ন করার অনেক ফযীলত বর্ণিত হয়েছে, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “পিতা জান্নাতের মধ্যবর্তী দরজা। এখন তোমাদের ইচ্ছা, এর হেফাযত কর অথবা একে বিনষ্ট করে দাও।" [তিরমিয়ী ১৯০১] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, “আল্লাহর সন্তুষ্টি পিতার সন্তুষ্টির মধ্যে এবং আল্লাহর অসম্ভাষ্টি পিতার অসন্তুষ্টির মধ্যে নিহিত।" [তিরমিয়ী ১৮৯৯]। অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “সে ব্যক্তির নাক ধুলিমলিন হোক, তারপর ধুলিমলিন হোক, তারপর ধুলিমলিন হোক”, সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! সে কে ? রাসূল বললেন, “যে পিতা-মাতার একজন বা উভয়কে তাদের বৃদ্ধাবস্থায় পেল তারপর জান্নাতে যেতে পারল না।” [মুসলিম ২৫৫১]

আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রশ্ন করেন, কোন আমল মহান আল্লাহর কাছে বেশী প্রিয়? রাসূল বললেন, সময় মত সালাত আদায় করা। তিনি বললেন, তারপর কোন কাজ? তিনি বললেন, পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা। তিনি বললেন, তারপর ? তিনি বললেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। [বুখারী ৫৯৭০]

তবে সৃষ্টিকর্তার নাফরমানীর কাজে কোনো সৃষ্ট-জীবের আনুগত্য জায়েয নয়। সে হিসেবে কোনো কোনো বিষয়ে পিতা-মাতার আনুগত্য ওয়াজিব তো নয়ই; বরং জায়েযও নয়। কিন্তু পিতা-মাতার সেবাযত্ন ও সদ্ব্যবহারের জন্য তাঁদের মুসলিম হওয়া জরুরী নয়, আসমা রাদিয়াল্লাহু আনহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করেন: আমার জননী মুশরিকা। তিনি আমার সাথে দেখা করতে আসেন। তাঁকে আদর-আপ্যায়ন করা জায়েয হবে কি? তিনি বললেন, “তোমার জননীকে আদর-আপ্যায়ন কর।” [মুসলিম ১০০৩]

কাফের পিতা-মাতা সম্পর্কে অন্যত্র আল্লাহ্ বলেছেন, “আমি মানুষকে নির্দেশ দিচ্ছি তার পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার করতে। তবে তারা যদি তোমার উপর বল প্রয়োগ করে আমার সাথে এমন কিছু শরীক করতে যার সম্পর্কে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তুমি তাদেরকে মেনো না।” [সূরা আল-আনকাবুত ৮]

আল্লাহ আরেক জায়গায় বলেন, “তোমার পিতা-মাতা যদি তোমাকে পীড়াপীড়ি করে আমার সমকক্ষ দাঁড় করাতে যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তুমি তাদের কথা মেনো না, তবে পৃথিবীতে তাদের সাথে বসবাস করবে সদভাবে।” [সূরা লুকমান ১৫]

অর্থাৎ যার পিতা-মাতা কাফের এবং তাকেও কাফের হওয়ার আদেশ করে এ ব্যাপারে তাদের আদেশ পালন করা জায়েয নয়, কিন্তু দুনিয়াতে তাদের সাথে সদ্ভাব বজায় রেখে চলতে হবে। বলাবাহুল্য, আয়াতে মারুফ' বলে তাদের সাথে আদর-আপ্যায়ন মূলক ব্যবহার বোঝানো হয়েছে। ইসলাম পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহারের এমনই গুরুত্ব দিয়েছে যে, যদি জিহাদ ফরযে আইন না হয়, ফরযে কেফায়ার স্তরে থাকে, তখন পিতা-মাতার অনুমতি ছাড়া সন্তানের জন্যে জিহাদে যোগদান করা জায়েয নেই। আবদুল্লাহ ইবন আমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, “এক লোক রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে জিহাদের যাওয়ার অনুমতি চাইল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, তোমার পিতা মাতা কি জীবিত? সে বলল, হ্যাঁ। রাসূল বললেন, “তাহলে তুমি তাদের খেদমতে জিহাদ করো।” [মুসলিম ২৫৪৯]

অনুরূপভাবে পিতা-মাতার মৃত্যুর পরে তাদের বন্ধুদের সাথে সদ্ব্যবহার করারও নির্দেশ রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কোনো লোকের জন্য সবচেয়ে উত্তম নেক কাজ হলো, পিতার মৃত্যুর পরে তার বন্ধুদের সাথে সদ্ব্যবহার করা।” [মুসলিম ২৫৫২]

[৩] পিতা-মাতার সেবাযত্ন ও আনুগত্য পিতা-মাতা হওয়ার দিক দিয়ে কোনো সময়ও বয়সের গন্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়। সর্বাবস্থায় এবং সব বয়সেই পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা ওয়াজিব। কিন্তু বার্ধক্যে উপনীত হয়ে পিতা-মাতা সন্তানের সেবাযত্নের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়ে এবং তাদের জীবন সন্তানদের দয়া ও কৃপার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। তখন যদি সন্তানের পক্ষ থেকে সামান্যও বিমুখতা প্ৰকাশ পায়, তবে তাদের অন্তরে তা ক্ষত হয়ে দেখা দেয়। অপরদিকে বার্ধক্যের উপসৰ্গসমূহ স্বভাবগতভাবে মানুষকে খিটখিটে করে দেয়। তদুপরি বার্ধক্যের শেষপ্রান্তে যখন বুদ্ধি-বিবেচনা ও অকেজো হয়ে পড়ে, তখন পিতা-মাতার বাসনা এবং দাবীদাওয়াও এমনি ধরনের হয়ে যায় যা পূর্ণ করা সন্তানের পক্ষে কঠিন হয়। আল্লাহ তা'আলা এসব অবস্থায় পিতা-মাতার মনোতুষ্টি ও সুখ-শান্তি বিধানের আদেশ দেয়ার সাথে সাথে সন্তানকে তার শৈশবকাল স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, আজ পিতা-মাতা তোমার যতটুকু মুখাপেক্ষী, এক সময় তুমিও তদপেক্ষা বেশী তাদের মুখাপেক্ষী ছিলে। তখন তারা যেমন নিজেদের আরাম-আয়েশও কামনা-বাসনা তোমার জন্যে কোরবান করেছিলেন এবং তোমার অবুঝ কথাবার্তাকে স্নেহ-মমতার আবরণ দ্বারা ঢেকে নিয়েছিলেন, তেমনি মুখাপেক্ষিতার এই দুঃসময়ে বিবেক ও সৌজন্যবোধের তাগিদ এই যে, তাদের পূর্বঋণ শোধ করা কর্তব্য। أَف বাক্যে এদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে, যদ্দারা বিরক্তি প্ৰকাশ পায়। এমনকি, তাঁদের কথা শুনে বিরক্তিবোধক দীর্ঘশ্বাস ছাড়াও এর অন্তর্ভুক্ত। মোটকথা, যে কথায় পিতা-মাতার সামান্য কষ্ট হয়, তাও নিষিদ্ধ। এরপর বলা হয়েছে, وَّلاتَنهَرهُما এখানে نهر শব্দের অর্থ ধমক দেয়া। এটা যে কষ্টের কারণ তা বলাই বাহুল্য।

[৪] প্রথমোক্ত দু'টি আদেশ ছিল নেতিবাচক তাতে পিতা-মাতার সামান্যতম কষ্ট হতে পারে, এমন সব কাজও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। [ইবন কাসীর] তৃতীয় আদেশে ইতিবাচক ভঙ্গিতে পিতা-মাতার সাথে কথা বলার আদব শিক্ষা দেয়া হয়েছে যে, তাদের সাথে সম্প্রীতি ও ভালবাসার সাথে নম্রস্বরে কথা বলতে হবে। [ফাতহুল কাদীর]

التفاسير:

external-link copy
24 : 17

وَٱخۡفِضۡ لَهُمَا جَنَاحَ ٱلذُّلِّ مِنَ ٱلرَّحۡمَةِ وَقُل رَّبِّ ٱرۡحَمۡهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرٗا

আর মমতাবশে তাদের প্রতি নম্রতার পক্ষপুট অবনমিত কর [১] এবং বল, ‘হে আমার রব! তাঁদের প্রতি দয়া করুন যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন [২]।’ info

[১] পাখি যেভাবে তাঁর সন্তান্দেরকে লালন-পালন করার সময় তাঁর দু' ডানা নত করে আগলে রাখে তেমনি পিতা-মাতাকে আগলে রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তাছাড়া পাখি যখন উড়ে তখন ডানা মেলে ধরে তারপর যখন অবতরণ করতে চায় তখন ডানা গুটিয়ে নেয়; তেমনি পিতামাতার প্রতি ব্যবহারের ক্ষেত্রে পাখি যেভাবে নিচে নামার জন্য গুটিয়ে নিয়ে নিজেকে নিচে নামায় তেমনি তুমি নিজেকে গৰ্ব-অহংকার মুক্ত হয়ে পিতা-মাতার সাথে ব্যবহার করবে। [ফাতহুল কাদীর] উরওয়া ইবন যুবাইর বলেন এর অর্থ, তাদের নির্দেশ মান্য করা এবং তাদের কাংখিত কোনো বস্তু দিতে নিষেধ না করা। [ফাতহুল কাদীর]

[২] এর সারমর্ম এই যে, পিতা-মাতার ষোল আনা সুখ-শান্তি বিধান মানুষের সাধ্যাতীত। কাজেই সাধ্যানুযায়ী চেষ্টার সাথে সাথে তাদের জন্যে আল্লাহ তা'আলার কাছে দো'আ করবে যে, তিনি যেন করুণাবশতঃ তাদের সব মুশকিল আসান করেন এবং কষ্ট দূর করেন। বৃদ্ধ অবস্থাও মৃত্যুর সময় তাদেরকে রহমত করেন। [ইবন কাসীর] সর্বশেষ আদেশটি অত্যন্ত ব্যাপক ও বিস্তৃত। পিতা-মাতার মৃত্যুর পরও দোআর মাধ্যমে সর্বদা পিতা-মাতার খেদমত করা যায়। পিতা-মাতা মুসলিম হলেই তাদের জন্য রহমতের দো'আ করতে হবে, কিন্তু মুসলিম না হলে তাদের জীবদ্দশায় পার্থিব কষ্ট থেকে মুক্ত থাকাও ঈমানের তওফীক লাভের জন্য করা যাবে। মৃত্যুর পর তাদের জন্যে রহমতের দো'আ করা জায়েয নেই।

التفاسير:

external-link copy
25 : 17

رَّبُّكُمۡ أَعۡلَمُ بِمَا فِي نُفُوسِكُمۡۚ إِن تَكُونُواْ صَٰلِحِينَ فَإِنَّهُۥ كَانَ لِلۡأَوَّٰبِينَ غَفُورٗا

তোমাদের রব তোমাদের অন্তরে যা আছে তা ভালো জানেন; যদি তোমরা সৎকর্মপরায়ণ হও তবেই তো তিনি আল্লাহ-অভিমুখীদের প্রতি খুবই ক্ষমাশীল [১] info

[১] আয়াতটি নতুন কথাও হতে পারে, তখন অর্থ হবে, তোমাদের অন্তরেই ইখলাস আছে কিনা, আনুগত্যের অবস্থা কি, গোনাহ থেকে তাওবাহ করার প্রস্তুতি কেমন আছে এসব আল্লাহ খুব ভালো করেই জানেন। [ফাতহুল কাদীর] আবার পূর্ব কথার রেশ ধরে পিতার আদব ও সম্মান সম্পর্কিত আদেশসমূহের কারণে সন্তানদের মনে এমন একটা আশঙ্কা দেখা দিতে পারে যে, পিতা-মাতার সাথে সদা সর্বদা থাকতে হবে। তাঁদের এবং নিজেদের অবস্থাও সব সময় সমান যায়না। কোনো সময় মুখ দিয়ে এমন কথা ও বের হয়ে যেতে পারে যা উপরোক্ত আদবের পরিপন্থী। তাই বলা হয়েছে যে, বে-আদবীর ইচ্ছা ব্যতিরেকে কোনো সময় কোনো পেরেশানী অথবা অসাবধানতার কারণে কোনো কথা বের হয়ে গেলে এবং এজন্যে তওবা করলে আল্লাহ তা'আলা মনের অবস্থা সম্পর্কে সম্যক অবগত রয়েছেন যে, কথাটি বে-আদবী অথবা কষ্টদানের জন্যে বলা হয়নি। সুতরাং তিনি আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কারীদেরকে ক্ষমা করবেন। [দেখুন, ইবন কাসীর] আওয়াবীন শব্দের অর্থ নিয়ে বেশ মতভেদ থাকলেও এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে, প্রত্যাবর্তনকারী। সে হিসেবে এর অর্থ দাঁড়ায়, যারা গোনাহ থেকে তাওবাহ করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে তাদেরকে তিনি ক্ষমা করে দিবেন। যারাই ইখলাসহীন অবস্থা থেকেই খলাসের দিকে ফিরে আসে তাদেরকেও তিনি পূর্বে কথা, কাজ ও বিশ্বাসে যে ভুল-ত্রুটি হয়ে গেছে সেগুলো ক্ষমা করে দিবেন। মূলতঃ যে তাওবা করে আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন। যে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে আল্লাহও তার দিকে ফিরে আসেন। [ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

التفاسير:

external-link copy
26 : 17

وَءَاتِ ذَا ٱلۡقُرۡبَىٰ حَقَّهُۥ وَٱلۡمِسۡكِينَ وَٱبۡنَ ٱلسَّبِيلِ وَلَا تُبَذِّرۡ تَبۡذِيرًا

আর আত্মীয়স্বজনকে দাও, তাঁর প্রাপ্য এবং অভাবগ্রস্থ ও মুসাফিরদেরকেও [১] এবং কিছুতেই অপব্যয় কর না [২]। info

[১] আলোচ্য আয়াতে সকল আত্মীয়দের হক বর্ণিত হয়েছে যে, প্রত্যেক আত্মীয়ের হক আদায় করতে হবে। অর্থাৎ কমপক্ষে তাদের সাথে সুন্দরভাবে জীবনযাপন ও সদ্ব্যবহার করতে হবে। যদি তারা অভাবগ্ৰস্ত হয়, তবে সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের আর্থিক সাহায্যও এর অন্তর্ভুক্ত। [ফাতহুল কাদীর]

[২] আয়াতে বর্ণিত আত্মীয়দের হক, মিসকিনের হক এবং মুসাফিরের হক, এ তিনটির উদ্দেশ্য হচ্ছে, মানুষ নিজের উপার্জন ও ধন-দৌলত শুধুমাত্র নিজের জন্যই নির্ধারিত করে নেবে না। বরং ন্যায়সংগতভাবে ও ভারসাম্য সহকারে নিজের প্রয়োজন পূর্ণ করার পর নিজের আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী ও অন্যান্য অভাবী লোকদের অধিকারও আদায় করবে।

التفاسير:

external-link copy
27 : 17

إِنَّ ٱلۡمُبَذِّرِينَ كَانُوٓاْ إِخۡوَٰنَ ٱلشَّيَٰطِينِۖ وَكَانَ ٱلشَّيۡطَٰنُ لِرَبِّهِۦ كَفُورٗا

নিশ্চয়ই যারা অপব্যয় করে তারা শয়তানের ভাই এবং শয়তান তার রবের প্রতি খুবই অকৃতজ্ঞ [১]। info

[১] ব্যয়ের ক্ষেত্রে অপচয় করতে নিষেধ করা হয়েছে। মধ্যপস্থা অবলম্বনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “এবং যখন তারা ব্যয় করে তখন অপব্যয় করেনা, কৃপনতাও করেনা, আর তাদের পন্থা হয় এতদুভয়ের মধ্যবর্তী।” [সূরা আল-ফুরকান ৬৭]

ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, অপচয় হচ্ছে অন্যায় পথে ব্যয় করা। মুজাহিদ বলেন, যদি কোনো লোক তার সমস্ত সম্পত্তি হক পথে ব্যয় করে তারপরও সেটা অপচয় হবে না। আর যদি অন্যায়ভাবে এক মুদ পরিমাণও ব্যয় করে, তবুও সেটা অপচয় হবে। কাতাদাহ বলেন, অপচয় হচ্ছে আল্লাহর অবাধ্যতা, অন্যায় ও ফাসাদ-সৃষ্টিতে ব্যয় করা। [ইবন কাসীর]

التفاسير: