قۇرئان كەرىم مەنىلىرىنىڭ تەرجىمىسى - بىنگالچە تەرجىمىسى- ئەبۇ بەكرى زەكەرىيا

بەت نومۇرى:close

external-link copy
127 : 2

وَإِذۡ يَرۡفَعُ إِبۡرَٰهِـۧمُ ٱلۡقَوَاعِدَ مِنَ ٱلۡبَيۡتِ وَإِسۡمَٰعِيلُ رَبَّنَا تَقَبَّلۡ مِنَّآۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡعَلِيمُ

আর স্মরণ করুন, যখন ইবরাহীম ও ইসমাঈল কাবাঘরের ভিত্তি স্থাপন করছিলেন, (তারা বলছিলেন) ‘হে আমাদের রব [১]! আমাদের পক্ষ থেকে কবুল করুন [২]। নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ [৩]। info

[১] এখানে লক্ষণীয় যে, ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালাম (رب) শব্দ দ্বারা দো'আ আরম্ভ করেছেন। তিনি এই শব্দের মাধ্যমে দো'আ করার রীতি শিক্ষা দিয়েছেন। কারণ এ জাতীয় শব্দ আল্লাহ্‌র রহমত ও কৃপা আকৃষ্ট করার ব্যাপারে খুবই কার্যকর ও সহায়ক। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, “ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালাম ইসমাঈলকে বললেন, হে ইসমাঈল। আল্লাহ্‌ আমাকে একটি কাজের নির্দেশ দিয়েছেন। ইসমাঈল বললেন, আপনার রব আপনাকে যা নির্দেশ করেছেন তা বাস্তবায়িত করুন। ইবরাহীম বললেন, তুমি কি আমাকে সাহায্য করবে? ইসমাঈল বললেন, আমি আপনাকে সাহায্য করব। ইবরাহীম পাশের একটি উচু জায়গা দেখিয়ে বললেন, আল্লাহ্‌ আমাকে এখানে একটি ঘর বানাতে নির্দেশ দিয়েছেন। ইবন আব্বাস বলেন, তারপর তারা দু’জনে ঘরের ভিত্তি স্থাপন করে তা উচু করছিলেন। ইসমাঈল পাথর নিয়ে আসতেন আর ইবরাহীম ঘর বানাতেন। তারপর যখন ঘর উচু হয়ে গেল তখন ইসমাঈল এ পাথরটি এনে ইবরাহীমের পায়ের নীচে রাখলেন। তখন ইবরাহীম তাতে দাঁড়িয়ে ঘর বানাতে থাকলেন। এমতাবস্থায় তাদের মুখ থেকে এ দোআ বের হচ্ছিল।” [বুখারী ৩৬৬৪]

[২] ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালাম আল্লাহ্‌র নির্দেশে সিরিয়ার সুজলা-সুফলা সুদর্শন ভূ-খণ্ড ছেড়ে মক্কার বিশুস্ক পাহাড়সমূহের মাঝখানে স্বীয় পরিবার-পরিজনকে এনে রাখেন এবং কা'বা গৃহের নির্মাণে সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। এরূপ ক্ষেত্রে অন্য কোনো আত্মত্যাগী ইবাদাতকারীর অন্তরে অহংকার দানা বাধতে পারত এবং সে তার ক্রিয়াকর্মকে অনেক মূল্যবান মনে করতে পারত। কিন্তু এখানে ছিলেন আল্লাহ্‌র এমন একজন বন্ধু যিনি আল্লাহ্‌র প্রতাপ এবং মহিমা সম্পর্কে যথার্থভাবে অবহিত। তিনি জানতেন, আল্লাহ্‌র উপযুক্ত ইবাদাত ও আনুগত্য কোনো মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। প্রত্যেকেই নিজ নিজ শক্তি-সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করে। তাই আমল যত বড়ই হোক সেজন্য অহংকার না করে কেঁদে কেঁদে এমনি দো'আ করা প্রয়োজন যে, হে আমার রব! আমার এ আমল কবুল হোক। কা'বা গৃহ নির্মাণের আমল প্রসংগে ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালাম তাই বলেছেন, (رَبَّنَا تَقَبَّلْ مِنَّا) হে রব! আমাদের এ আমল কবুল করুন। কেননা আপনি শ্রোতা, আপনি সর্বজ্ঞ। [ মা'আরিফুল কুরআন ]

[৩] সন্তানের প্রতি স্নেহ ও মমতা শুধু একটি স্বাভাবিক ও সহজাত বৃত্তিই নয়; বরং এ ব্যাপারে আল্লাহ্ তা'আলারও নির্দেশ রয়েছে। উল্লেখিত আয়াতসমূহ এর প্রমাণ। তিনি সন্তানদের দুনিয়া ও আখেরাতের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য আল্লাহ্‌র কাছে দোআ করেছেন।

التفاسير:

external-link copy
128 : 2

رَبَّنَا وَٱجۡعَلۡنَا مُسۡلِمَيۡنِ لَكَ وَمِن ذُرِّيَّتِنَآ أُمَّةٗ مُّسۡلِمَةٗ لَّكَ وَأَرِنَا مَنَاسِكَنَا وَتُبۡ عَلَيۡنَآۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلتَّوَّابُ ٱلرَّحِيمُ

‘হে আমাদের রব ! আর আমাদের উভয়কে আপনার একান্ত অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধর হতে আপনার এক অনুগত জাতি উত্থিত করুন। আর আমাদেরকে ‘‘ইবাদাতের নিয়ম-পদ্ধতি দেখিয়ে দিন [১] এবং আমদের তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনিই বেশী তাওবা কবুলকারী, পরম দয়ালু। info

[১] আয়াতে বর্ণিত (مَنَاسِكَ) এর অর্থ ইবাদাতও হয়, যেমনটি উপরে করা হয়েছে। কাতাদাহ বলেন, এর অর্থ হচ্ছে, হজের নিয়মাবলী। [তাবারী]

التفاسير:

external-link copy
129 : 2

رَبَّنَا وَٱبۡعَثۡ فِيهِمۡ رَسُولٗا مِّنۡهُمۡ يَتۡلُواْ عَلَيۡهِمۡ ءَايَٰتِكَ وَيُعَلِّمُهُمُ ٱلۡكِتَٰبَ وَٱلۡحِكۡمَةَ وَيُزَكِّيهِمۡۖ إِنَّكَ أَنتَ ٱلۡعَزِيزُ ٱلۡحَكِيمُ

‘হে আমাদের রব! আর আপনি তাদের মধ্য থেকে তাদের কাছে এক রাসূল পাঠান [১], যিনি আপনার আয়াতসমূহ তাদের কাছে তিলাওয়াত করবেন [২] ; তাদেরকে কিতাব ও হেকমত শিক্ষা দেবেন [৩] এবং তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন [৪] আপনি তো পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়’। info

[১] হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “আমি আমার সূচনা বলে দিচ্ছি, আমার পিতা ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালামের দোআ, ঈসা ‘আলাইহিস সালামের সুসংবাদ এবং আমার মা স্বপ্নে দেখেছিলেন যে, তার থেকে একটি আলো বের হল, যে আলোতে সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ আলোকিত হয়েছে।” [মুসনাদে আহমাদ ৫/২৬২] ঈসা ‘আলাইহিস সালামের সুসংবাদের অর্থ তার এ উক্তি

(وَمُبَشِّرًۢا بِرَسُوْلٍ يَّاْتِيْ مِنْۢ بَعْدِي اسْمُهٗٓ اَحْمَدُ)"

“আমি এমন এক নবীর সুসংবাদদাতা, যিনি আমার পরে আসবেন। তার নাম আহমাদ।” [সূরা আস-সাফ: ৬] তার জননী গর্ভাবস্থায় স্বপ্নে দেখেন যে, তার পেট থেকে একটি নূর বের হয়ে সিরিয়ার প্রাসাদসমূহ আলোকোজ্জ্বল করে তুলেছে। কুরআনে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আবির্ভাবের আলোচনা প্রসংগে দু’জায়গায়, সূরা আলে-ইমরানের ১৬৪তম আয়াতে এবং সূরা জুমুআয় ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালামের দোআয় উল্লিখিত ভাষারই পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। এভাবে ইংগিত করা হয়েছে যে, ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালাম যে নবীর জন্য দোআ করেছিলেন, তিনি হচ্ছেন শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

[২] ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালামের দোআর কারণে আমাদের রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণের মূল উদ্দেশ্য তিনটি। তন্মধ্যে প্রথম হচ্ছে, আল্লাহ্‌র আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা। তিলাওয়াতের আসল অর্থ অনুসরণ করা। কুরআন ও হাদীসের পরিভাষায় এ শব্দটি কুরআন ও অন্যান্য আসমানী কিতাব পাঠ করার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কারণ, যে লোক এসব কালাম পাঠ করে, এর অনুসরণ করাও তার একান্ত কর্তব্য। আসমানী গ্রন্থ ঠিক যেভাবে আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে নাযিল হয়, হুবহু তেমনিভাবে পাঠ করা জরুরী। নিজের পক্ষ থেকে তাতে কোনো শব্দ অথবা স্বরচিহ্নটিও পরিবর্তন পরিবর্ধন করার অনুমতি নেই। ইমাম রাগেব বলেন, ‘আল্লাহ্‌র কালাম ছাড়া অন্য কোনো গ্রন্থ অথবা কালাম পাঠ করাকে সাধারণ পরিভাষায় তিলাওয়াত বলা যায়
না’। [মুফরাদাতুল কুরআন]

[৩] ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালামের দোআ অনুসারে নবী-রাসূলগণের বিশেষ করে আমাদের রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের দ্বিতীয় কর্তব্য হচ্ছে আল্লাহ্‌র কিতাব ও হিকমতের শিক্ষা দান। এখানে কিতাব বলে আল্লাহ্‌র কিতাব বুঝানো হয়েছে। হিকমত’ শব্দটি আরবী অভিধানে একাধিক অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যথা – সত্যে উপনীত হওয়া, ন্যায় ও সুবিচার, জ্ঞান ও প্রজ্ঞা ইত্যাদি। ইমাম রাগেব বলেন, এ শব্দটি আল্লাহ্‌র জন্য ব্যবহৃত হলে এর অর্থ হয় সকল বস্তুর পূর্ণজ্ঞান ও সুদৃঢ় উদ্ভাবন। অন্যের জন্য ব্যবহৃত হলে এর অর্থ হয়, বিদ্যমান বস্তুসমূহের বিশুদ্ধ জ্ঞান, সৎকর্ম, ন্যায়, সুবিচার, সত্য কথা ইত্যাদি। এখন লক্ষ্য করা দরকার যে, আয়াতে হিকমতের অর্থ কী? মূলতঃ এখানে হিকমত শব্দের অর্থ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ। ইবন কাসীর ও ইবন জরীর রাহিমাহুল্লাহ কাতাদাহ থেকে এ ব্যাখ্যাই উদ্ধৃত করেছেন। হিকমত অর্থ কেউ কুরআনের তাফসীর, কেউ দীনের গভীর জ্ঞান, কেউ শরীআতের বিধি-বিধানের জ্ঞান, কেউ এমন বিধিবিধানের জ্ঞান অর্জন বলেছেন, যা শুধু রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বর্ণনা থেকেই জানা যায়। নিঃসন্দেহে এসব উক্তির সারমর্ম হলো রাসূল সাল্লাল্লাহু '‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ।

[৪] ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালামের দোআ অনুসারে নবী-রাসূলগণ বিশেষ করে আমাদের রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের তৃতীয় কর্তব্য হচ্ছে পরিশুদ্ধি ও পবিত্রকরণ। আয়াতে উল্লেখিত (يُزَكِّيْهِمْ) শব্দটি (زكاة) শব্দ থেকে উদ্ভুত। এর অর্থ পবিত্রতা। বাহ্যিক ও আত্মিক সকল প্রকার পবিত্রতার অর্থেই এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়। বাহ্যিক নাপাকী সম্পর্কে সাধারণ মুসলিমরাও ওয়াকিফহাল। আত্মিক নাপাকী হচ্ছে কুফর, শির্ক, আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্যের উপর ভরসা করা, অহংকার, হিংসা, শক্রতা, দুনিয়াপ্রীতি ইত্যাদি। কুরআন ও সুন্নাহতে এসব বিষয়ের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। এ আয়াত থেকে আরও স্পষ্ট হয়ে গেল যে, হেদায়াত ও সংশোধনের ধারা দুটি, আল্লাহ্‌র রাসূল ও আল্লাহ্‌র গ্রন্থ। এ দুটি ব্যতীত কারও হিদায়াত লাভ হতে পারে না।
এ আয়াতসমূহে ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালাম অনেকগুলো দোআ করেছিলেন।

(১) “আপনার নির্দেশে আমি এই জনমানবহীন প্রান্তরে নিজ পরিবার-পরিজনকে রেখে যাচ্ছি। আপনি একে একটি শান্তিপূর্ণ শহর বানিয়ে দিন-যাতে এখানে বসবাস করা আতংকজনক না হয় এবং জীবনধারণের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সহজলভ্য হয়”। আল্লাহ্ তা'আলা কবুল করেছেন এবং সে ঊষর মরু প্রান্তর মক্কা নগরীতে পরিণত হয়েছে। (২) ”হে রব! শহরটিকে শান্তির ভূমি করে দিন”। অর্থাৎ হত্যা, লুন্ঠন, কাফিরদের অধিকার স্থাপন, বিপদাপদ থেকে সুরক্ষিত ও নিরাপদ রাখুন। ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালামের এই দো'আও কবুল হয়েছে। মক্কা মুকাররামা শুধু একটি জনবহুল নগরীই নয়, সারা বিশ্বের প্রত্যাবর্তনস্থলও বটে। বিশ্বের চারদিক থেকে মুসলিমগণ এ নগরীতে পৌছাকে সর্ববৃহৎ সৌভাগ্য মনে করে। নিরাপদ ও সুরক্ষিতও এতটুকু হয়েছে যে, আজ পর্যন্ত কোনো শক্রজাতি অথবা শক্রসম্রাট এর উপর অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে পারেনি। আল্লাহ্‌ তা'আলা হারাম শরীফের চতুঃসীমানায় জীব-জন্তুকেও নিরাপত্তা দান করেছেন। এই এলাকায় শিকার করা জায়েয নয়। (৩) ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালামের তৃতীয় দোআ এই যে, এ শহরের অধিবাসীদের উপজীবিকা হিসেবে যেন ফল-মূল দান করা হয়। মক্কা-মুকাররমা ও পাশ্ববতী ভূমি কোনোরূপ বাগ-বাগিচার উপযোগী ছিল না। দূর-দূরান্ত পর্যন্ত ছিল না পানির নাম -নিশানা। কিন্তু আল্লাহ্‌ তা'আলা ইবরাহীমের দোআ কবুল করেন। মক্কার কাছেই তায়েফে যাবতীয় ফলমূল প্রচুর পরিমাণে উৎপন্ন হয় যা মক্কার বাজারেই বেচা-কেনা হয়। এখনো সারা বিশ্ব থেকে ফলমূল মক্কায় নিয়ে আসা হয়। (৪) ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালামের চতুর্থ দোআ হচ্ছে, “হে আমাদের রব! আমাদের উভয়কে আপনার একান্ত অনুগত করুন এবং আমাদের বংশধর হতে আপনার এক অনুগত জাতি উত্থিত করুন। আমাদেরকে ‘ইবাদাতের নিয়ম-পদ্ধতি দেখিয়ে দিন এবং আমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হোন। আপনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”। এ দোআটিও ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালামের আল্লাহ্‌ সম্পর্কে জ্ঞান ও আল্লাহ্‌ ভীতিরই ফল, আনুগত্যের অদ্বিতীয় কীর্তি স্থাপন করার পরও তিনি এরূপ দোআ করেন যে, আমাদের উভয়কে আপনার আজ্ঞাবহ করুন। কারণ, আল্লাহ্‌ সম্পর্কিত জ্ঞান যার যত বৃদ্ধি পেতে থাকে সে তত বেশী অনুভব করতে থাকে যে, যথার্থ আনুগত্য তার দ্বারা সম্ভব হচ্ছে না। এ দোআতে স্বীয় সন্তান-সন্ততিকে অন্তর্ভুক্ত করেছেন। এতে বুঝা যায় যে, যিনি আল্লাহ্‌র পথে নিজের সন্তান-সন্ততিকে বিসর্জন দিতেও এতটুকু কুণ্ঠিত নন, তিনিও সন্তানদের প্রতি কতটুকু আন্তরিকতা ও ভালবাসা রাখেন। আল্লাহ্‌র প্রিয় বান্দারা শারিরিকের চাইতে আত্মিক ও জাগতিকের চাইতে পরলৌকিক আরামের জন্য চিন্তা করেন বেশী। এ কারণেই ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালাম দোআ করলেন - “আমার সন্তানদের মধ্য থেকে একটি দলকে পূর্ণ আনুগত্যশীল কর"। (৫) ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালাম ভবিষ্যত বংশধরদের দুনিয়া ও আখেরাতের সার্বিক মংগলের জন্য আল্লাহ্‌র কাছে দোআ করেছেন যে, আমার বংশধরের মধ্যে একজন নবী প্রেরণ করুন - যিনি আপনার আয়াতসমূহ তাদের তিলাওয়াত করে শোনাবেন, কুরআন ও সুন্নাহ শিক্ষা দেবেন এবং বাহ্যিক ও আত্মিক অপবিত্রতা থেকে তাদের পবিত্র করবেন। দো'আয় নিজের বংশধরের মধ্য থেকেই নবী হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এর কারণ প্রথমতঃ এই যে, এটা তার সন্তানদের জন্য গৌরবের বিষয়। দ্বিতীয়তঃ এতে তাদের কল্যাণও নিহিত রয়েছে। কারণ স্বগোত্র থেকে নবী হলে তার চাল-চলন ও অভ্যাস-আচরণ সম্পর্কে তারা উত্তমরূপে অবগত থাকবে। ধোঁকাবাজি ও প্রবঞ্চনার সম্ভাবনা থাকবে না।

التفاسير:

external-link copy
130 : 2

وَمَن يَرۡغَبُ عَن مِّلَّةِ إِبۡرَٰهِـۧمَ إِلَّا مَن سَفِهَ نَفۡسَهُۥۚ وَلَقَدِ ٱصۡطَفَيۡنَٰهُ فِي ٱلدُّنۡيَاۖ وَإِنَّهُۥ فِي ٱلۡأٓخِرَةِ لَمِنَ ٱلصَّٰلِحِينَ

আর যে নিজেকে নির্বোধ করেছে সে ছাড়া ইব্রাহীম এর মিল্লাত হতে আর কে বিমুখ হবে ! দুনিয়াতে তাকে আমরা মনোনীত করেছি; আর আখেরাতেও তিনি অবশ্যই সৎ কর্মশীলদের অন্যতম। info
التفاسير:

external-link copy
131 : 2

إِذۡ قَالَ لَهُۥ رَبُّهُۥٓ أَسۡلِمۡۖ قَالَ أَسۡلَمۡتُ لِرَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ

স্মরণ করুন, যখন তার রব তাকে বলেছিলেন, ‘আত্মসমর্পণ করুন’, তিনি বলেছিলেন, ‘আমি সৃষ্টিকুলের রবের কাছে আত্মসমর্পণ করলাম’ [১]। info

[১] আল্লাহ্ তা'আলার (أسلِم) -‘আনুগত্য গ্রহণ কর’ সম্বোধনের উত্তরে সম্বোধনেরই ভঙ্গিতে (أسْلَمْتُ لَكَ) ‘আমি আপনার আনুগত্য গ্রহণ করলাম’ বলা যেত। কিন্তু খলীলুল্লাহ ‘আলাইহিস সালাম এ ভঙ্গি ত্যাগ করে বলেছেন, (اَسْلَمْتُ لِرَبِّ العٰلَمِيْنَ) অর্থাৎ আমি সৃষ্টিকুলের রবের আনুগত্য অবলম্বন করলাম। কারণ, প্রথমতঃ এতে শিষ্টাচারের প্রতি লক্ষ্য রেখে আল্লাহ্‌র স্থানোপযোগী গুণকীর্তনও করা হয়েছে। দ্বিতীয়তঃ এ বিষয়টিও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যে, আমি আনুগত্য অবলম্বন করে কারও প্রতি অনুগ্রহ করিনি; বরং এমনটা করাই ছিল আমার প্রতি অপরিহার্য। কারণ, তিনি রাববুল আলামীন বা সৃষ্টিকুলের রব। তাঁর আনুগত্য না করে বিশ্ব তথা বিশ্ববাসীর কোনই গত্যন্তর নেই। যে আনুগত্য অবলম্বন করে, সে স্বীয় কর্তব্য পালন করে লাভবান হয়। এতে আরও জানা যায় যে, মিল্লাতে ইবরাহিমীর মৌলনীতির যথার্থ স্বরূপও এক ‘ইসলাম’ শব্দের মধ্যেই নিহিত - যার অর্থ আল্লাহ্‌র আনুগত্য। ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালামের দীনের সারমর্মও তাই। ঐসব পরীক্ষার সারমর্মও তাই, যাতে উত্তীর্ণ হয়ে আল্লাহ্‌র এ দোস্ত মর্যাদার উচ্চতর শিখরে পৌছেছেন। ইসলাম তথা আল্লাহ্‌র আনুগত্যের খাতিরেই সমগ্র সৃষ্টি। এরই জন্য নবীগণ প্রেরিত হয়েছিলেন এবং আসমানী গ্রন্থসমূহ নাযিল করা হয়েছে। এতে আরও বোঝা যায় যে, ইসলামই সমস্ত নবীর অভিন্ন দীন এবং ঐক্যের কেন্দ্রবিন্দু। আদম ‘আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে শেষ নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পর্যন্ত আগমনকারী সমস্ত রাসূল ইসলামের দিকেই মানুষকে আহবান করেছেন এবং তারা এরই ভিত্তিতে নিজ নিজ উম্মতকে পরিচালনা করেছেন। তবে এ ব্যাপারে মিল্লাতে ইবরাহিমীর একটি বৈশিষ্ট্য ছিল এই যে, তিনি তার দীনের নাম ইসলাম’ রেখেছিলেন এবং স্বীয় উম্মতকে ‘উম্মতে মুসলিমাহ্‌’ নামে অভিহিত করেছিলেন। তিনি দো'আ প্রসংগে বলেছিলেন, “হে আমাদের রব! আমাদের উভয়কে (ইবরাহীম ও ইসমাঈল ‘আলাইহিমুস্ সালাম) মুসলিম (অর্থাৎ আনুগত্যশীল) করুন এবং আমাদের বংশধরদের মধ্য থেকেও একদলকে আনুগত্যকারী করুন’। ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালাম তার সন্তান্দের প্রতি অসীয়ত প্রসংগে বলেছিলেন, ‘তোমরা মুসলিম হওয়া ছাড়া অন্য কোনো দীনের উপর মারা যেও না’। ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালাম-এর পর তারই প্রস্তাবক্রমে মুহাম্মাদ রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মত এ বিশেষ নাম লাভ করেছে। ফলে এ উম্মতের নাম হয়েছে ‘মুসলিম’। এ উম্মতের দীনও মিল্লাতে ‘ইসলামিয়াহ' নামে অভিহিত। কুরআনে বলা হয়েছে, “এটা তোমাদের পিতা ইবরাহীমের দীন। তিনিই ইতিপূর্বে তোমাদের মুসলিম’ নামকরণ করেছেন এবং এতেও (অর্থাৎ কুরআনেও) এ নামই রাখা হয়েছে।” [সূরা আল-হাজ্ব: ৭৮]

দীনের কথা বলতে গিয়ে ইয়াহুদী, নাসারা ও আরবের মুশরিকরাও বলে যে, তারা ইবরাহিমী দীনের অনুসারী, কিন্তু এসব তাদের ভুল ধারণা অথবা মিথ্যা দাবী মাত্র। বাস্তবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনীত দীনই ইবরাহিমী দীনের অনুরূপ।

মোটকথা, আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ থেকে যত রাসূল আগমন করেছেন এবং যত আসমানী গ্রন্থ ও শরীআত নাযিল হয়েছে, সে সবগুলোর প্রাণ হচ্ছে ইসলাম তথা আল্লাহ্‌র আনুগত্য। এ আনুগত্যের সারমর্ম হলো রিপুর কামনা-বাসনার বিপরীতে আল্লাহ্‌র নির্দেশের আনুগত্য এবং স্বেচ্ছাচারিতার অনুসরণ ত্যাগ করে হিদায়াতের অনুসরণ। পরিতাপের বিষয়, আজ ইসলামের নাম উচ্চারণকারী লক্ষ লক্ষ মুসলিম এ সত্য সম্পর্কে অজ্ঞ। তারা দীনের নামেও স্বীয় কামনা-বাসনারই অনুসরণ করতে চায়। কুরআন ও হাদীসের এমন ব্যাখ্যাই তাদের কাছে পছন্দ যা তাদের কামনা-বাসনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তারা শরীআতের পরিচ্ছদকে টেনে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন করে নিজেদের কামনার মূর্তিতে পরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে - যাতে বাহ্যদৃষ্টিতে শরীআতের অনুসরণ করছে বলেই মনে হতে পারে, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তা কামনারই অনুসরণ। গাফেলরা জানে না যে, এসব অপকৌশল ও অপব্যাখ্যার দ্বারা সৃষ্টিকে প্রতারিত করা গেলেও স্রষ্টাকে ধোকা দেয়া সম্ভব নয়; তাঁর জ্ঞান প্রতিটি অণু-পরমাণুতে পরিব্যপ্ত। তিনি মনের গোপন ইচ্ছা ও ভেদ পর্যন্ত দেখেন ও জানেন। তাঁর কাছে খাঁটি আনুগত্য ছাড়া কোনো কিছুই গ্রহণীয় নয়। [তাফসীরে মাআরিফুল কুরআন]

التفاسير:

external-link copy
132 : 2

وَوَصَّىٰ بِهَآ إِبۡرَٰهِـۧمُ بَنِيهِ وَيَعۡقُوبُ يَٰبَنِيَّ إِنَّ ٱللَّهَ ٱصۡطَفَىٰ لَكُمُ ٱلدِّينَ فَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنتُم مُّسۡلِمُونَ

আর ইবরাহীম ও ইয়া’কূব তাদের পূত্রদেরকে এরই নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন, ‘হে পুত্রগণ ! আল্লাহ্‌ই তোমাদের জন্য এ দীনকে মনোনীত করেছেন। কাজেই আত্মসমর্পণকারী (মুসলিম) না হয়ে তোমরা মারা যেও না’ [১]। info

[১] ইবরাহীম ‘আলাইহিস সালামের মিল্লাত বা দীন ইসলাম তা সমগ্র জাতি বরং সমগ্র বিশ্বের জন্যই এক অনন্য নির্দেশনামা। এমতাবস্থায় আয়াতে বিশেষভাবে ইবরাহীম ও ইয়াকুব ‘আলাইহিমুস সালাম কর্তৃক সন্তানদের সম্বোধন করার কথা বলা হয়েছে এবং উভয় মহাপুরুষ অসীয়তের মাধ্যমে স্বীয় সন্তানদেরকে যে ইসলামের উপর সুদৃঢ় থাকার নির্দেশ দিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে, এর কারণ এই যে, সন্তানদের ভালবাসা এবং মঙ্গল চিন্তা রিসালাত এমনকি বন্ধুত্বের স্তরেরও পরিপন্থী নয়। আল্লাহ্‌র বন্ধু যিনি এক সময় তার পালনকর্তার ইংগিতে স্বীয় আদরের দুলালকে কুরবানী করতে কোমর বেঁধেছিলেন, তিনিই অন্য সময় সন্তানের দুনিয়া ও আখেরাতের মঙ্গলের জন্য তার পালনকর্তার দরবারে দো'আও করেন এবং দুনিয়া থেকে বিদায় নেয়ার সময় সন্তানকে এমন বিষয় দিয়ে যেতে চান, যা তার দৃষ্টিতে সর্ববৃহৎ নেয়ামত অর্থাৎ ইসলাম। সাধারণ মানুষের দৃষ্টিতে নেয়ামত ও ধন-সম্পদ হচ্ছে দুনিয়ার দামী বস্তু। অথচ নবী-রাসূলগণের দৃষ্টি অনেক উর্ধ্বে। তাদের কাছে প্রকৃত ঐশ্বর্য হচ্ছে ঈমান ও সৎকর্ম তথা ইসলাম। সাধারণ মানুষ মৃত্যুর সময় সন্তানকে বৃহত্তম ধন-সম্পদ দিয়ে যেতে চায়। আজকাল একজন বিত্তশালী ব্যবসায়ী কামনা করে, তার সন্তান মিল-ফ্যাক্টরীর মালিক হোক, আমদানী ও রপ্তানীর বড় বড় লাইসেন্স লাভ করুক, লক্ষ লক্ষ এবং কোটি কোটি টাকার ব্যাংক-ব্যালেন্স গড়ে তুলুক। একজন চাকুরীজীবী চায় তার সন্তান উচ্চপদ ও মোটা বেতনে চাকুরী করুক। অপরদিকে একজন শিল্পপতি মনে-প্রাণে কামনা করে, তার সন্তান শিল্পক্ষেত্রে চুড়ান্ত সাফল্য অর্জন করুক। সে সন্তানকে সারা জীবনের অভিজ্ঞতালব্ধ কলা-কৌশল বলে দিতে চায়। কিন্তু নবীগণ ও তাদের অনুসারী ওলীগণের সর্ববৃহৎ বাসনা থাকে, যে বস্তুকে তারা সত্যিকার চিরস্থায়ী ও অক্ষয় বলে মনে করেন, তা সন্তানরাও পুরোপুরিভাবে লাভ করুক। আর সেটা হচ্ছে দীন ইসলামের উপর অটুট থাকা ও এর একনিষ্ঠ খাদেম হওয়া। এ জন্য তারা দো‘আ করেন এবং চেষ্টাও করেন। অন্তিম সময়ে এরই জন্য অসীয়ত করেন। [তাফসীরে মা'আরিফুল কুরআন]

নবী-রাসূলগণের এ বিশেষ আচরণের মধ্যে সাধারণ মানুষের জন্যও একটি নির্দেশ রয়েছে। তা এই যে, তারা যেভাবে সন্তানদের লালন-পালন ও পার্থিব আরাম আয়েশের ব্যবস্থা করে, সেভাবে; বরং তার চাইতেও বেশী তাদের কার্যকলাপ ও চরিত্র সংশোধনের ব্যবস্থা করা দরকার। মন্দ পথ ও মন্দ কার্যকলাপ থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করা আবশ্যক। এরই মধ্যে সন্তানদের সত্যিকারের ভালবাসা ও প্রকৃত শুভেচ্ছা নিহিত। এটা কোনো বুদ্ধিমানের কাজ নয় যে, সন্তানকে রৌদ্রের তাপ থেকে বাঁচাবার জন্য সর্বশক্তি নিয়োগ করবে, কিন্তু চিরস্থায়ী অগ্নি ও আযাবের কবল থেকে রক্ষা করার প্রতি ভ্রুক্ষেপও করবে না। সন্তানের দেহ থেকে কাটা বের করার জন্য সর্ব প্রযত্নে চেষ্টা করবে, কিন্তু তাকে বন্দুকের গুলি থেকে রক্ষা করবে না। নবীদের কর্মপদ্ধতি থেকে আরও একটি মৌলিক বিষয় জানা যায় যে, সর্বপ্রথম সন্তানদের মঙ্গল চিন্তা করা এবং এরপর অন্যদিকে মনোযোগ দেয়া পিতা-মাতার কর্তব্য। পিতা-মাতার নিকট থেকে এটাই সন্তানদের প্রাপ্য। এতে দুটি রহস্য নিহিত রয়েছে - প্রথমতঃ প্রাকৃতিক ও দৈহিক সম্পর্কের কারণে পিতা-মাতার উপদেশ সহজে ও দ্রুত গ্রহণ করবে। অতঃপর সংস্কার প্রচেষ্টায় ও সত্য প্রচারে তারা পিতা-মাতার সাহায্যকারী হতে পারবে। দ্বিতীয়তঃ এটাই সত্য প্রচারের সবচাইতে সহজ ও উপযোগী পথ যে, প্রত্যেক পরিবারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি আপন পরিবার-পরিজনের সংশোধনের কাজে মনে-প্রাণে আত্মনিয়োগ করবে। এ পদ্ধতির প্রতি লক্ষ্য করেই কুরআন বলে, “হে মুমিনগণ, নিজেকে এবং পরিবার-পরিজনকে আগুন থেকে রক্ষা কর”। [সূরা আত-তাহরীম: ৬]

মহানবী রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সারা বিশ্বের রাসূল তার হেদায়াত কেয়ামত পর্যন্ত সবার জন্য ব্যাপক। তাকেও সর্বপ্রথম নির্দেশ দেয়া হয়েছে, “নিকট আত্মীয়দেরকে আল্লাহ্‌র শাস্তির ভয় প্রদর্শন করুন।” [সূরা আশ-শু'আরা: ২১৪]

আরও বলা হয়েছে, “পরিবার-পরিজনকে সালাত আদায় করার নির্দেশ দিন এবং নিজেও সালাত অব্যাহত রাখুন।" [সূরা ত্বা-হা: ১৩২]

মহানবী রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদাই এ নির্দেশ পালন করেছেন। তৃতীয়তঃ আরও একটি রহস্য এই যে, কোনো মতবাদ ও কর্মসূচীতে পরিবারের লোকজন ও নিকটবতী আতীয়-স্বজন সহযোগী ও সমমনা না হলে সে মতবাদ অন্যের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে না। এ কারণেই প্রাথমিক যুগে মহানবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রচারকার্যের জবাবে সাধারণ লোকদের উত্তর ছিল যে, প্রথমে আপনি নিজ পরিবার কোরায়শকে ঠিক করে নিন; এরপর আমাদের কাছে আসুন। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের পরিবারে যখন ইসলাম বিস্তার লাভ করল এবং মক্কা বিজয়ের সময় তা পরিপূর্ণ রূপ লাভ করল, তখন এর প্রতিক্রিয়া কুরআনের ভাষায় এরূপ প্রকাশ পেল: “মানুষ দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করতে থাকবে।” [সূরা আন-নসর: ২]

আজকাল দীনহীনতার যে সয়লাব শুরু হয়েছে তার বড় কারণ এই যে, পিতা-মাতা দীনের জ্ঞানে জ্ঞানী ও দীনী হলেও সন্তানদের দীনি হওয়ার বিষয়ে চিন্তা করে না। সাধারণভাবে আমাদের দৃষ্টি সন্তানদের পার্থিব ও স্বল্পকালীন আরাম-আয়েশের প্রতিই নিবদ্ধ থাকে এবং আমরা এর ব্যবস্থাপনায়ই ব্যতিব্যস্ত থাকি। অক্ষয় ধন-সম্পদের দিকে মনোযোগ দেই না। আল্লাহ্ তা'আলা আমাদের সবাইকে তওফীক দিন, যাতে আমরা আখেরাতের চিন্তায় ব্যাপৃত হই এবং নিজের ও সন্তানদের জন্য ঈমান ও নেক আমলকে সর্ববৃহৎ পুঁজি মনে করে তা অর্জনে সচেষ্ট হই। [তাফসীরে মা'আরিফুল কুরআন]

التفاسير:

external-link copy
133 : 2

أَمۡ كُنتُمۡ شُهَدَآءَ إِذۡ حَضَرَ يَعۡقُوبَ ٱلۡمَوۡتُ إِذۡ قَالَ لِبَنِيهِ مَا تَعۡبُدُونَ مِنۢ بَعۡدِيۖ قَالُواْ نَعۡبُدُ إِلَٰهَكَ وَإِلَٰهَ ءَابَآئِكَ إِبۡرَٰهِـۧمَ وَإِسۡمَٰعِيلَ وَإِسۡحَٰقَ إِلَٰهٗا وَٰحِدٗا وَنَحۡنُ لَهُۥ مُسۡلِمُونَ

ইয়াকুবের যখন মৃত্যু এসেছিল তোমর কি তখন উপস্থিত ছিলে ? তিনি যখন সন্তানদের বলেছিলেন, ‘আমার পরে তোমরা কার ‘ইবাদাত করবে’ ? তারা বলেছিলো, ‘আমরা আপনার ইলাহ [১] ও আপনার পিতৃ পুরুষ ইবরাহীম, ইস্‌মাঈল ও ইসহাকের ইলাহ্‌ - সেই এক ইলাহ্‌রই ‘ইবাদাত করবো। আর আমরা তাঁর কাছেই আত্মসমর্পণকারী’ [২]। info

[১] ইলাহ শব্দটি মাসদার। যার অর্থ উপাস্য বা যার উপাসনা করা হয়। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, ইলাহ হলেন যাকে সবাই উপাসনা করে। [তাফসীরে তাবারী ১/৫৪] ইবন আববাসের এই উক্তি শুধুমাত্র হক মা’বুদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া বলেন, ইলাহ শব্দ দ্বারা এমন মা’বুদকে বুঝানো হয়, যিনি ইবাদাত পাওয়ার যোগ্য। আর যিনি মা’বুদ হওয়ার যোগ্য তার মধ্যে এমন গুণ থাকা আবশ্যক যার কারণে তাকে সর্বোচ্চ ভালোবাসা এবং সবচেয়ে বেশী বিনয় প্রদর্শন করতে বাধ্য হয়।

[২] এ আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, নবীদের সবার দীনই ছিল ইসলাম। এ জন্যই এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “নবীগণ হচ্ছেন বৈমাত্রেয় ভাই। তাদের মাতা বিভিন্ন কিন্তু তাদের দ্বীন এক।” [বুখারী ৩৪৪৩, মুসলিম ২৩৬৫] মাতা বিভিন্ন হওয়ার অর্থ হচ্ছে, তাদের শরীআত বিভিন্ন। আর দীন এক হওয়ার অর্থ হচ্ছে, তাওহীদের মূলনীতিসমূহে তাদের মধ্যে ঐক্য রয়েছে। [ইবন কাসীর]

التفاسير:

external-link copy
134 : 2

تِلۡكَ أُمَّةٞ قَدۡ خَلَتۡۖ لَهَا مَا كَسَبَتۡ وَلَكُم مَّا كَسَبۡتُمۡۖ وَلَا تُسۡـَٔلُونَ عَمَّا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ

তারা ছিল এমন এক জাতি, যারা অতীত হয়ে গেছে। তারা যা অর্জন করেছে তা তাদের, তোমরা যা অজন করেছো তা তোমাদের। আর তারা যা করত সে সম্বন্ধে তোমাদের প্রশ্ন করা হবে না [১]। info

[১] আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, বাপ-দাদার সৎকর্ম সন্তানদের উপকারে আসে না - যতক্ষণ না তারা নিজেরা সৎকর্ম সম্পাদন করবে। এমনিভাবে বাপ-দাদার কুকর্মের শাস্তিও সন্তানরা ভোগ করবে না, যদি তারা সৎকর্মশীল হয়। কুরআন এ বিষয়টি বারবার বিভিন্ন ভঙ্গিতে বর্ণনা করেছে। বিভিন্ন আয়াতে বলা হয়েছে, “একজনের বোঝা অন্যজন বহন করবে না।” [সূরা আল-আনআম: ১৬৪. আল-ইসরা: ১৫, ফাতির: ১৮, আৰ্য-যুমার: ৭, আন-নাজম: ৩৮]

রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “হে বনী-হাশেম! এমন যেন না হয় যে, কিয়ামতের দিন অন্যান্য লোকজন নিজ নিজ সৎকর্ম নিয়ে আসবে আর তোমরা আসবে সৎকর্ম থেকে উদাসীন হয়ে শুধু বংশ গৌরব নিয়ে এবং আমি বলব যে, আল্লাহ্‌র আযাব থেকে আমি তোমাদের বাচাতে পারব না।” [মুসলিম ২৫৪৩]

অন্য এক হাদীসে আছে, 'আমল যাকে পিছনে ফেলে দেয়, বংশ তাকে এগিয়ে নিতে পারে না।” [মুসলিম ২৬৯৯, আবু দাউদ ১৪৫৫]

التفاسير: