[১] দু’বার মৃত্যু এবং দু’বার জীবন বলতে বুঝানো হয়েছে তোমরা প্রাণহীন ছিলে, তিনি তোমাদের প্রাণ দান করেছেন। এরপর তিনি পুনরায় তোমাদের মৃত্যু দিবেন এবং পরে আবার জীবন দান করবেন। কাফেররা এসব ঘটনার প্রথম তিনটি অস্বীকার করে না। কারণ, ঐগুলো বাস্তবে প্রত্যক্ষ করা যায় এবং সে জন্য অস্বীকার করা যায় না। কিন্তু তারা শেষোক্ত ঘটনাটি সংঘটিত হওয়া অস্বীকার করে। কারণ, এখনো পর্যন্ত তারা তা প্রত্যক্ষ করেনি এবং শুধু নবী-রসূলগণই এটির খবর দিয়েছেন। কিয়ামতের দিন এ চতুর্থ অবস্থাটিও তারা কার্যত দেখতে পাবে এবং তখন স্বীকার করবে যে, আমাদেরকে যে বিষয়ের খবর দেয়া হয়েছিলো তা প্রকৃতই সত্যে পরিণত হলো। [দেখুন, তাবারী]
[১] এর আরেক অর্থ ‘তাঁর মহান আরশ সমুচ্চ’। আল্লাহর আরশ সমস্ত পৃথিবী ও আকাশসমূহে পরিব্যাপ্ত এবং সবার ছাদস্বরূপ উচ্চ। সূরা আল-মা'আরেজে বলা হয়েছে:
تَعْرُجُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ
এ আয়াতে উল্লেখিত পঞ্চাশ হাজার বছরের পরিমাণ হলে সে দূরত্বের বিশ্লেষণ যা মাটির সপ্তম স্তর থেকে আরশ পর্যন্ত রয়েছে। এ ব্যাখ্যা বহু সংখ্যক পুর্ববর্তী ও পরবর্তী তফসীরবিদদের কাছে অগ্রগণ্য। কোনো কোনো তফসীরবিদ বলেন, এর অর্থ আল্লাহ তা’আলা মুমিনমুত্তাকীদের মর্যাদা বৃদ্ধিকারী। যেমন, কুরআনের অন্যান্য আয়াত এর সাক্ষ্য বহন করে। এক আয়াতে আছে,
نَرْفَعُ دَرَجَاتٍ مَّن نَّشَاءُ
[সূরা আল-আন’আম ৮৩] অন্য এক আয়াতে আছে,
هُمْ دَرَجَاتٌ عِندَ اللَّهِ
[সূরা আলে ইমরান ১৬৩]
[২] রূহ অর্থ অহী ও নবুওয়াত। [কুরতুবী]
[৩] কিয়ামতের একটি নাম يَوْمَ التَّلَاقِ বা সম্মেলন দিবস। [তাবারী]
[১] উল্লেখিত আয়াতসমূহে এ বাক্যটি
يَوْمَ التَّلَاقِ ও يَوْمَ هُمْ بَارِزُوْنَ
এর পরে এসেছে। বলাবাহুল্য, يَوْمَ التَّلَاقِ তথা সাক্ষাত ও সমাবেশের দিন দ্বিতীয় ফুঁকের পরে হবে। এমনিভাবে يَوْمَ هُمْ بَارِزُوْنَ এর ঘটনাও তখন হবে, যখন দ্বিতীয় ফুৎকারের পরে নতুন ভূপৃষ্ঠ সমতল করে দেয়া হবে, যাতে কোনো আড়াল থাকবে না। এরপরে لِمَنِ الْمُلْكُ বাক্যটি আনার কারণে বাহ্যতঃ বোঝা যায় যে, আল্লাহ তা'আলার এ বাণী দ্বিতীয় ফুঁকের মাধ্যমে সবকিছু পুনরুজ্জীবিত হওয়ার পরে বাস্তবায়িত হবে। কিন্তু একটি হাদীসে এসেছে “কিয়ামতের প্রারম্ভে আহবানকারী আহবান করে বলবেন: হে লোক সকল! তোমাদের কিয়ামত এসেছে, তখন জীবিত মৃত সবাই শুনতে পাবে। আর আল্লাহ প্রথম আসমানে নেমে এসে বললেন: আজকের দিনে কার রাজত্ব? একমাত্র পরাক্রম আল্লাহর জন্যই। [মুস্তাদরাকে হাকিম ২/৪৭৫, ৩৬৩৭] তাছাড়া অন্য বর্ণনা থেকে জানা যায় যে, আল্লাহ তা'আলা এ উক্তি তখন করবেন, যখন প্রথম ফুঁকের পর সমগ্র সৃষ্টি ধ্বংস হয়ে যাবে এবং জিবরাইল, মীকাইল, ইস্রাফীল, প্রমূখ নৈকট্যশীল ফেরেশতাগণও মারা যাবে এবং আল্লাহর সত্ত্বা ব্যতীত কোনো কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। আল্লাহ বলবেন, আজকের দিন রাজত্ব কার? আল্লাহ নিজেই জওয়াব দেবেন: প্রবল পরাক্রান্ত এক আল্লাহর!” হাদীস থেকে এর সমর্থন পাওয়া যায় ‘কেয়ামতের দিন আল্লাহ তা'আলা সমগ্ৰ পৃথিবী এবং সমগ্র আসমানসমূহকে হাতে গুটিয়ে বলবেন: আমিই বাদশাহ! আমিই পরাক্রমশালী, আমি অহংকারী, দুনিয়ার বাদশারা কোথায়? কোথায় পরাক্রমশালীরা? কোথায় অহংকারকারীরা? [বুখারী ৭৪১২; মুসলিম ২৭৮৮]