Firo maanaaji al-quraan tedduɗo oo - Eggo maanaaji Kur'aana e haala Bengali - Abu Bakar Jakariya

Tonngoode hello ngoo:close

external-link copy
216 : 2

كُتِبَ عَلَيۡكُمُ ٱلۡقِتَالُ وَهُوَ كُرۡهٞ لَّكُمۡۖ وَعَسَىٰٓ أَن تَكۡرَهُواْ شَيۡـٔٗا وَهُوَ خَيۡرٞ لَّكُمۡۖ وَعَسَىٰٓ أَن تُحِبُّواْ شَيۡـٔٗا وَهُوَ شَرّٞ لَّكُمۡۚ وَٱللَّهُ يَعۡلَمُ وَأَنتُمۡ لَا تَعۡلَمُونَ

তোমাদের উপর লড়াই করাকে লিখে দেয়া হয়েছে যদিও তোমাদের নিকট এটা অপ্রিয়। কিন্তু তোমরা যা অপছন্দ কর হতে পারে তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর এবং যা ভালবাস হতে পারে তা তোমাদের জন্য অকল্যাণকর। আর আল্লাহ্‌ জানেন তোমরা জান না [১]। info

[১] আয়াতের মর্ম হলো, “যদিও জিহাদ স্বাভাবিকভাবে বোঝা বলে মনে হয়, কিন্তু স্মরণ রেখো, মানুষের বিচক্ষণতা, বুদ্ধি-বিবেচনা ও চেষ্টা পরিণামে অনেক সময় অকৃতকার্য হয়। ভালকে মন্দ এবং মন্দকে ভাল মনে করা বিজ্ঞ ও বড় বুদ্ধিমানের পক্ষেও আশ্চর্যের কিছু নয়। প্রতিটি মানুষই তার জীবনের যাবতীয় ঘটনার প্রতি লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবে যে, তার জীবনেই অনেক ঘটনা রয়েছে, যাতে সে কোনো কাজকে অত্যন্ত লাভজনক ও উপকারী মনে করেছিল, কিন্তু পরিণামে তা অত্যন্ত অনিষ্টকর হয়েছে অথবা কোনো বস্তুকে অত্যন্ত ক্ষতিকর মনে করেছিল এবং তা থেকে দূরে সরে ছিল, কিন্তু পরিণামে দেখা গেল, তা অত্যন্ত লাভজনক ও উপকারী ছিল। তাই বলা হয়েছে: জিহাদ যদিও আপাতঃ দৃষ্টিতে জান ও মালের ক্ষতির আশংকা মনে হয়, কিন্তু যখন পরিণাম সামনে আসবে, তখন বোঝা যাবে যে, এ ক্ষতি বাস্তবে মোটেও ক্ষতি ছিল না; বরং সোজাসুজি লাভ, উপকার এবং চিরস্থায়ী শান্তির ব্যবস্থা ছিল। [মা'আরিফুল কুরআন]

التفاسير:

external-link copy
217 : 2

يَسۡـَٔلُونَكَ عَنِ ٱلشَّهۡرِ ٱلۡحَرَامِ قِتَالٖ فِيهِۖ قُلۡ قِتَالٞ فِيهِ كَبِيرٞۚ وَصَدٌّ عَن سَبِيلِ ٱللَّهِ وَكُفۡرُۢ بِهِۦ وَٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ وَإِخۡرَاجُ أَهۡلِهِۦ مِنۡهُ أَكۡبَرُ عِندَ ٱللَّهِۚ وَٱلۡفِتۡنَةُ أَكۡبَرُ مِنَ ٱلۡقَتۡلِۗ وَلَا يَزَالُونَ يُقَٰتِلُونَكُمۡ حَتَّىٰ يَرُدُّوكُمۡ عَن دِينِكُمۡ إِنِ ٱسۡتَطَٰعُواْۚ وَمَن يَرۡتَدِدۡ مِنكُمۡ عَن دِينِهِۦ فَيَمُتۡ وَهُوَ كَافِرٞ فَأُوْلَٰٓئِكَ حَبِطَتۡ أَعۡمَٰلُهُمۡ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِۖ وَأُوْلَٰٓئِكَ أَصۡحَٰبُ ٱلنَّارِۖ هُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ

পবিত্র মাসে যুদ্ধ করা সম্পর্কে লোকেরা আপনাকে জিজ্ঞেস করে [১]; বলুন, ‘এতে যুদ্ধ করা কঠিন অপরাধ। কিন্তু আল্লাহ্‌র পথে বাঁধা দান করা, আল্লাহ্‌র সাথে কুফরী করা, মসজিদুল হারামে বাধা দেয়া ও এর বাসিন্দাকে এ থেকে বহিষ্কার করা আল্লাহ্‌র নিকট তার চেয়েও বেশী অপরাধ। আর ফিতনা হত্যার চেয়েও গুরুতর অপরাধ। আর তারা সবসময় তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে থাকবে, যে পর্যন্ত তোমাদেরকে তোমাদের দীন থেকে ফিরিয়ে না দেয়, যদি তারা সক্ষম হয়। আর তোমাদের মধ্য থেকে যে কেউ নিজের দীন থেকে ফিরে যাবে [২] এবং কাফের হয়ে মারা যাবে, দুনিয়া ও আখেরাতে তাদের আমলসমূহ নিস্ফল হয়ে যাবে। আর এরাই আগুনের অধিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে’। info

[১] আলোচ্য আয়াতে প্রমাণিত হলো যে, নিষিদ্ধ মাস অর্থাৎ রজব, যিলকদ, যিলহজ এবং মুহাররাম মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ করা হারাম। প্রখ্যাত মুফাসসির ‘আতা ইবন আবী রাবাহ’ শপথ করে বলেছেন যে, এ আদেশ সর্বযুগের জন্য। তাবেয়ীগণের অনেকেও এ আদেশকে স্থায়ী আদেশ বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু অধিকাংশ ফকীহ এবং ইমাম জাসসাসের মতে এ আদেশ রহিত হয়ে গেছে। ফলে এখন কোনো মাসেই প্রয়োজনীয় যুদ্ধ নিষিদ্ধ নয়। কুরতুবী বলেন, এসব মাসে নিজে থেকে যুদ্ধ আরম্ভ করা সর্বকালের জন্যই নিষিদ্ধ। তবে কাফেররা যদি এসব মাসে আক্রমন করে, তবে প্রতিরক্ষামূলক পাল্টা আক্রমণ করা মুসলিমদের জন্যও জায়েয। [তাফসীরে কুরতুবী ৩/৪২৩]

[২] মুরতাদ সে ব্যক্তি, যে ইসলাম থেকে কুফরীর দিকে ফিরে গেছে, চাই তা কথায় হোক, বিশ্বাসে হোক বা কাজে হোক। এ আয়াতের শেষে মুসলিম হওয়ার পর তা ত্যাগ করা বা মুরতাদ হয়ে যাওয়ার হুকুম বলা হয়েছে। “তাদের আমল দুনিয়া ও আখেরাতে বরবাদ হয়ে গেছে"। এ বরবাদ হয়ে যাওয়ার অর্থ হচ্ছে যে, পার্থিব জীবনে তাদের স্ত্রী তাদের বিবাহ বন্ধন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, যদি তার কোনো নিকট আত্মীয়ের মৃত্যু হয়, তাহলে সে ঐ ব্যক্তির উত্তরাধিকার বা মীরাসের অংশ থেকে বঞ্চিত হয়, ইসলামে থাকাকালীন সালাত-সাওম যা কিছু করেছে সব বাতিল হয়ে যায়, মৃত্যুর পর তার জানাযা পড়া হয় না এবং মুসলিমদের কবরস্থানে তাকে দাফনও করা হবে না। আর আখেরাতে বরবাদ হওয়ার অর্থ হচ্ছে ‘ইবাদাতের সওয়াব না পাওয়া এবং চিরকালের জন্য জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হওয়া। মোটকথা, মুরতাদের অবস্থা কাফেরদের অবস্থা অপেক্ষাও নিকৃষ্টতর। এজন্য কাফেরদের থেকে জিযিয়া গ্রহণ করা যায়, কিন্তু পুনরায় ইসলাম গ্রহণ না করলে মুরতাদকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। কেননা মুরতাদের কার্যকলাপের দরুন সরাসরিভাবে ইসলামের অবমাননা করা হবে। কাজেই তারা সরকার অবমাননার শাস্তি পাওয়ার যোগ্য।

التفاسير:

external-link copy
218 : 2

إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَٱلَّذِينَ هَاجَرُواْ وَجَٰهَدُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ أُوْلَٰٓئِكَ يَرۡجُونَ رَحۡمَتَ ٱللَّهِۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ

নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং যারা হিজরত করেছে এবং আল্লাহ্‌র পথে জিহাদ করেছে [১], তারাই আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ প্রত্যাশা করে। আর আল্লাহ্‌ ক্ষমাপরায়ণ, পরম দয়ালু। info

[১] জিহাদের শাব্দিক অর্থ হলো চেষ্টা করা, সাধনা করা, তা কাজ অর্থবা কথা যে কোনো মাধ্যমে হতে পারে। শরঈ‘ পরিভাষায় — কাফির, সীমালঙ্ঘনকারী অথবা মুরতাদদের বিরুদ্ধে মুসলিমদের যুদ্ধের প্রাণান্তকর প্রচেষ্টাকে জিহাদ বলে। কুরআন ও হাদীসের অসংখ বর্ণনায় জিহাদের অসাধারণ ফয়ীলতের কথা বিধৃত হয়েছে। আল্লাহ্‌ রাববুল আলামীন জিহাদকে একটি লাভজনক ব্যবসা হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ মুমিনদের কাছ থেকে তাদের জীবন ও সম্পদ কিনে নিয়েছেন, তাদের জন্য জান্নাত আছে এর বিনিময়ে। তারা আল্লাহ্‌র পথে যুদ্ধ করে, মারে ও মরে। তাওরাত, ইন্জীল ও কুরআনে এ সম্পর্কে তাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতি রয়েছে। নিজ প্রতিজ্ঞা পালনে আল্লাহ্‌র চেয়ে শ্রেষ্ঠতর কে আছে? তোমরা যে সওদা করেছ সে সওদার জন্য আনন্দিত হও এবং ওটাই তো মহাসাফল্য।" [সূরা আত-তাওবা: ১১১]

রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিহাদকে ইসলামের সর্বোচ্চ শিখর হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সকল কিছুর মূল হলো ইসলাম। যার খুঁটি হলো সালাত এবং সর্বোচ্চ শিখর জিহাদ’। [তিরমিযী ২৬১৬]

জিহাদের তুলনা অন্য কিছু দ্বারা হয় না। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হাদীসে এসেছে, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে এমন একটি আমলের কথা বলে দিন যা জিহাদের পরিপূরক হতে পারে’। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাব দিলেন, ‘আমি পাইনি'। [বুখারী ২৮১৮]

এছাড়া আল্লাহ্‌র পথে যারা জিহাদ করবে, তাদেরও অসংখ্য মর্যাদার কথা ঘোষিত রয়েছে কুরআন ও হাদীসে। যেমন, আল্লাহ্‌ রাববুল আলামীন বলেন, “আর আল্লাহ্‌র পথে যারা নিহত হয় তাদেরকে মৃত বলো না, বরং তারা জীবিত; কিন্তু তোমরা উপলব্ধি করতে পার না।” [সূরা আল-বাকারাহ: ১৫৪]

অপর হাদীসে এসেছে, জিহাদের ময়দানে শাহাদাতবরণকারীরা আল্লাহ্‌ রাববুল আলামীনের সম্মানীত মেহমান। মিকদাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, ‘শহীদগণের ছয়টি মর্যাদা রয়েছে – (১) রক্তের প্রথম ফোটা মাটিতে পড়ার সাথে সাথেই তাকে মাফ করে দেয়া হয়। (২) জান্নাতে তার অবস্থানস্থল দেখিয়ে দেয়া হয়। (৩) কবরের আযাব থেকে মুক্ত থাকবে এবং মহা শংকার দিনে শংকামুক্ত থাকবে। (৪) তাকে ঈমানের অলংকার পরানো হবে। (৫) জান্নাতের হুর তাকে বিয়ে করানো হবে। (৬) তার নিকটাত্মীয়দের থেকে সত্তর জনের জন্য সুপারিশ করার সুযোগ দেয়া হবে। [বুখারী ২৭৯০]

আলোচ্য আয়াত দ্বারা পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে যে, প্রত্যেক মুসলিমের উপর সব সময়ই জিহাদ ফরয। তবে কুরআনের কোনো কোনো আয়াত ও রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীসের বর্ণনাতে বোঝা যায় যে, জিহাদের এ ফরয, ফরযে-‘আইনরূপে প্রত্যেক মুসলিমের উপর ফরয সাব্যস্ত হয় না, বরং এটা ফরযে কেফায়া। যদি মুসলিমদের কোনো দল তা আদায় করে, তবে সমস্ত মুসলিমই এ দায়িত্ব থেকে রেহাই পায়। তবে যদি কোনো দেশে বা কোনো যুগে কোনো দলই জিহাদের ফরয আদায় না করে, তবে ঐ দেশের বা ঐ যুগের সমস্ত মুসলিমই ফরয থেকে বিমুখতার দায়ে পাপী হবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমাকে প্রেরণের পর থেকে কেয়ামত পর্যন্ত জিহাদ চলতে থাকবে, আমার উম্মতেরা সর্বশেষ দাজ্জালের সাথে যুদ্ধ করবে’। [আবু দাউদ ২৫৩২]

কুরআনের অন্য এক আয়াতে বলা হয়েছে: “আল্লাহ্ তা'আলা জান ও মালের দ্বারা জিহাদকারীগণকে জিহাদ বর্জনকারীদের উপর মর্যাদা দিয়েছেন এবং উভয়কে পুরস্কার দেয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।” [সূরা আন-নিসা: ৯৫]

সুতরাং যেসব ব্যক্তি কোনো অসুবিধার জন্যে বা অন্য কোনো দ্বীনী খেদমতে নিয়োজিত থাকার কারণে জিহাদে অংশ গ্রহণ করতে পারে নি, তাদেরকে আল্লাহ্‌ তা‘আলা পুরস্কার প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এতে বোঝা যাচ্ছে যে, জিহাদ যদি ফরযে-আইন হতো, তবে তা বর্জনকারীদের সুফল দানের কথা বলা হত না। তাছাড়া হাদীসে বর্ণিত রয়েছে যে, এক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিহাদে অংশ গ্রহণ করার অনুমতি চাইলে তিনি তাকে জিজ্ঞেস করলেন যে, তোমার পিতা-মাতা কি বেঁচে আছেন? উত্তরে সে বলল, জি, বেঁচে আছেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে উপদেশ দিলেন, ‘তুমি পিতা-মাতার খেদমত করেই জিহাদের সওয়াব হাসিল কর’। [মুসলিম ২৫৪৯]

এতেও বোঝা যায় যে, জিহাদ ফরযে-কেফায়া। যখন মুসলিমদের একটি দল ফরয আদায় করে, তখন অন্যান্য মুসলিম অন্য খেদমতে নিয়োজিত হতে পারে। তবে যদি মুসলিমদের নেতা প্রয়োজনে সবাইকে জিহাদে অংশ গ্রহণ করার আহবান করেন, তখন জিহাদ ফরযে-আইনে পরিণত হয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে কুরআনুল কারীমে বর্ণিত হয়েছে: “হে মুমিনগণ! তোমাদের কি হয়েছে যে, যখন তোমাদেরকে বলা হয়, তোমরা আল্লাহ্‌র পথে বেরিয়ে যাও, তখনই তোমরা ভারাক্রান্ত হয়ে যমীনে ঝুঁকে পড়।” [সূরা আত-তাওবা: ৩৮]

এ আয়াতে আল্লাহ্‌র পথে বেরিয়ে পড়ার সার্বজনীন নির্দেশ ব্যক্ত হয়েছে। এমনিভাবে আল্লাহ্‌ না করুন, যদি কোনো ইসলামী দেশ অমুসলিম দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং সে দেশের লোকের পক্ষে এ আক্রমণ প্রতিহত করা সম্ভব না হয়, তবে পাশ্ববর্তী মুসলিম দেশবাসীর উপরও সে ফরয আপতিত হয়। তারাও যদি প্রতিহত করতে না পারে, তবে এর নিকটবতী মুসলিম দেশের উপর, এমনি সারা বিশ্বের প্রতিটি মুসলিমের উপর এ ফরয পরিব্যাপ্ত হয় এবং ফরযে-আইন হয়ে যায়। কুরআনের আলোচ্য আয়াতসমূহের পরিপ্রেক্ষিতে অধিকাংশ ফকীহ ও মুহাদিস এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, জিহাদ স্বাভাবিক অবস্থায় সাধারণভাবে ফরযে-কেফায়া। আর যতক্ষণ পর্যন্ত জিহাদ ফরযে-কেফায়া পর্যায়ে থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত সন্তানদের পক্ষে পিতা-মাতার অনুমতি ব্যতীত জিহাদে অংশ গ্রহণ করা জায়েয নয়। কিংবা ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির পক্ষে ঋণ পরিশোধ করার পূর্ব পর্যন্ত এ ফরযে কেফায়াতে অংশ গ্রহণ করা জায়েয নয়। আর যখন এ জিহাদ প্রয়োজনের তাকীদে ফরযে-আইনে পরিণত হয়, তখন পিতা-মাতা, স্বামী বা স্ত্রী ঋণদাতা কারোরই অনুমতির অপেক্ষা রাখে না।

التفاسير:

external-link copy
219 : 2

۞ يَسۡـَٔلُونَكَ عَنِ ٱلۡخَمۡرِ وَٱلۡمَيۡسِرِۖ قُلۡ فِيهِمَآ إِثۡمٞ كَبِيرٞ وَمَنَٰفِعُ لِلنَّاسِ وَإِثۡمُهُمَآ أَكۡبَرُ مِن نَّفۡعِهِمَاۗ وَيَسۡـَٔلُونَكَ مَاذَا يُنفِقُونَۖ قُلِ ٱلۡعَفۡوَۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ ٱللَّهُ لَكُمُ ٱلۡأٓيَٰتِ لَعَلَّكُمۡ تَتَفَكَّرُونَ

লোকেরা আপনাকে মদ [১] ও জুয়া [২] সম্পর্কে জিজ্জেস করে। বলুন, ‘দু’টোর মধ্যেই আছে মহাপাপ এবং মানুষের জন্য উপকারও ; আর এ দু’টোর পাপ উপকারের চেয়ে অনেক বড়’। আর তারা আপনাকে জিজ্জেস করে কি তারা ব্যায় করবে ? বলুন, যা উদ্বৃত্ত [৩]। এভাবে আল্লাহ্‌ তাঁর আয়াতসমূহ তোমাদের জন্য সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেন, যাতে তোমরা চিন্তা কর। info

[১] ইসলামের প্রথম যুগের জাহেলিয়াত আমলের সাধারণ রীতি-নীতির মধ্যে মদ্যপান স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের হিজরতের পরও মদীনাবাসীদের মধ্যে মদ্যপান ও জুয়ার প্রথা প্রচলিত ছিল। সাধারণ মানুষ এ দু'টি বস্তুর শুধু বাহ্যিক উপকারিতার প্রতি লক্ষ্য করেই এতে মত্ত ছিল। কিন্তু এদের অন্তর্নিহিত অকল্যাণ সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণাই ছিল না। তবে আল্লাহ্‌র নিয়ম হচ্ছে এই যে, প্রত্যেক জাতি ও প্রত্যেক অঞ্চলে কিছু বুদ্ধিমান ব্যক্তিও থাকেন যারা বিবেক-বুদ্ধিকে অভ্যাসের উর্ধের্ব স্থান দেন। যদি কোনো অভ্যাস বুদ্ধি বা যুক্তির পরিপন্থী হয়, তবে সে অভ্যাসের ধারে-কাছেও তারা যান না। এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্থান ছিল সবচেয়ে উর্ধ্বে। কেননা যেসব বস্তু কোনো কালে হারাম হবে, এমন সব বস্তুর প্রতিও তার অন্তরে একটা সহজাত ঘৃণাবোধ ছিল। সাহাবীগণের মধ্যেও এমন কিছুসংখ্যক লোক ছিলেন, যারা হারাম ঘোষিত হওয়ার পূর্বেও মদ্যপান তো দূরের কথা, তা স্পর্শও করেননি। মদীনায় পৌছার পর কতিপয় সাহাবী এসব বিষয়ের অকল্যাণগুলো অনুভব করলেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে উমর, মুআয ইবন জাবাল এবং কিছুসংখ্যক আনসার রাদিয়াল্লাহু আনহুম রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট উপস্থিত হয়ে বললেন, ‘মদ ও জুয়া মানুষের বুদ্ধি-বিবেচনাকে পর্যন্ত বিলুপ্ত করে ফেলে এবং ধন-সম্পদও ধ্বংস করে দেয়। এ সম্পর্কে আপনার নির্দেশ কি? এ প্রশ্নের উত্তরেই আলোচ্য আয়াতটি নাযিল হয়। [আবু দাউদ ৩৬৭০, তিরমিয়ী ৩০৪৯, মুসনাদে আহমাদ ১/৫৩]

এ হচ্ছে প্রথম আয়াত যা মুসলিমদেরকে মদ ও জুয়া থেকে দূরে রাখার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে নাযিল হয়েছে। আয়াতটিতে বলা হয়েছে যে, মদ ও জুয়াতে যদিও বাহ্যিক দৃষ্টিতে কিছু উপকারিতা পরিলক্ষিত হয়, কিন্তু দুটির মাধ্যমেই অনেক বড় বড় পাপের পথ উন্মুক্ত হয়, যা এর উপকারিতার তুলনায় অনেক বড় ও ক্ষতিকর। পাপ অর্থে এখানে সেসব বিষয়ও বোঝানো হয়েছে, যা পাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেমন, মদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় দোষ হচ্ছে এই যে, এতে মানুষের সবচাইতে বড় গুণ, বুদ্ধি-বিবেচনা বিলুপ্ত হয়ে যায়। কারণ, বুদ্ধি এমন একটি গুণ যা মানুষকে মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে। পক্ষান্তরে যখন তা থাকে না, তখন প্রতিটি মন্দ কাজের পথই সুগম হয়ে যায়। [মা'আরিফুল কুরআন]

এ আয়াতে পরিস্কারভাবে মদকে হারাম করা হয়নি, কিন্তু এর অনিষ্ট ও অকল্যাণের দিকগুলোকে তুলে ধরে বলা হয়েছে যে, মদ্য পানের দরুন মানুষ অনেক মন্দ কাজে লিপ্ত হয়ে যেতে পারে। বলতে গেলে আয়াতটিতে মদ্যপান ত্যাগ করার জন্য এক প্রকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। সুতরাং এ আয়াত নাযিল হওয়ার পর কোনো কোনো সাহাবী এ পরামর্শ গ্রহণ করে তৎক্ষণাৎ মদ্যপান ত্যাগ করেছেন। আবার কেউ কেউ মনে করেছেন, এ আয়াতে মদকে তো হারাম করা হয়নি, বরং এটা দীনের পক্ষে ক্ষতির কাজে ধাবিত করে বিধায় একে পাপের কারণ বলে স্থির করা হয়েছে, যাতে ফেতনায় পড়তে না হয়, সে জন্য পূর্ব থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পরবর্তী সূরার আন-নিসা এর ৪৩ নং আয়াতের মাধ্যমে মদপানের সময় সীমিত করা হয়। সবশেষে সূরা আল-মায়িদাহ এর ৯০ নং আয়াতের মাধ্যমে মদকে চিরতরে হারাম করা হয়। এ বিষয়ে আরও আলোচনা সূরা আল-মায়িদাহ এর ৯০ নং আয়াতে করা হবে।

[২] আয়াতে উল্লেখিত (ميسر) শব্দটির অর্থ বন্টন করা, (ياسر) বলা হয় বন্টনকারীকে। জাহেলিয়াত আমলে নানা রকম জুয়ার প্রচলন ছিল। তন্মধ্যে এক প্রকার জুয়া ছিল এই যে, উট জবাই করে তার অংশ বন্টন করতে গিয়ে জুয়ার আশ্রয় নেয়া হত। কেউ একাধিক অংশ পেত আবার কেউ বঞ্চিত হত। বঞ্চিত ব্যক্তিকে উটের পূর্ণ মূল্য দিতে হত, আর গোশত দরিদ্রের মধ্যে বন্টন করা হত; নিজেরা ব্যবহার করত না। এ বিশেষ ধরনের জুয়ায় যেহেতু দরিদ্রের উপকার ছিল এবং খেলোয়াড়দের দানশীলতা প্রকাশ পেত, তাই এ খেলাতে গর্ববোধ করা হত। আর যারা এ খেলায় অংশগ্রহণ না করত, তাদেরকে কৃপণ ও হতভাগ্য বলে মনে করা হত। বন্টনের সাথে সম্পর্কের কারণেই এরূপ জুয়াকে মাইসির’ বলা হত। [তাফসীরে কুরতুবী ৩/৪৪২-৪৪৩]

সকল সাহাবী ও তাবেয়ীগণ এ ব্যাপারে একমত যে, সব রকমের জুয়াই মাইসির’ শব্দের অন্তর্ভুক্ত এবং হারাম। ইবন কাসীর তার তাফসীরে এবং জাসসাস ‘আহকামুল-কুরআনে’ লিখেছেন যে, মুফাসসিরে কুরআন ইবন আববাস, ইবন উমর, কাতাদাহ, মু'আবিয়া ইবন সালেহ, আতা ও তাউস রাদিয়াল্লাহু আনহুম বলেছেন, সব রকমের জুয়াই ‘মাইসির’ এমনকি কাঠের গুটি এবং আখরোট দ্বারা বাচ্চাদের এ ধরনের খেলাও। ইবন আববাস বলেছেন, লটারীও জুয়ারই অন্তর্ভুক্ত। জাসসাস ও ইবন সিরীন বলেছেন, ‘যে কাজে লটারীর ব্যবস্থা রয়েছে, তাও ‘মাইসির’ এর অন্তর্ভুক্ত। কেননা লটারীর মাধ্যমে কেউ কেউ প্রচুর সম্পদ পেয়ে যায় অপরদিকে অনেকে কিছুই পায় না। আজকাল প্রচলিত বিভিন্ন ধরনের লটারীর সাথে এর তুলনা করা যেতে পারে। এসবই জুয়ার অন্তর্ভুক্ত ও হারাম। মোটকথা, মাইসির ও কেমারের সঠিক সংজ্ঞা এই যে, যে ব্যাপারে কোনো মালের মালিকানায় এমন সব শর্ত আরোপিত হয়, যাতে মালিক হওয়া না হওয়া উভয় সম্ভাবনাই সমান থাকে। আর এরই ফলে পূর্ণ লাভ কিংবা পূর্ণ লোকসান উভয় দিকই বজায় থাকবে। [ইবন কাসীর]

এ জন্য সহীহ হাদীসে দাবা ও ছক্কা-পাঞ্জা জাতীয় খেলাকেও হারাম বলা হয়েছে। কেননা এসবেও অনেক ক্ষেত্রেই টাকা-পয়সার বাজী ধরা হয়ে থাকে। তাস খেলায় যদি টাকা-পয়সার হার-জিত শর্ত থাকে, তবে তাও এর অন্তর্ভুক্ত হবে। বারীদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ছক্কা-পাঞ্জা খেলে সে যেন শূকরের গোশত ও রক্তে স্বীয় হাত রঞ্জিত করে’। [মুসলিম ২২৬০]

[৩] অর্থাৎ প্রয়োজনের অতিরিক্ত যা থাকে তাই খরচ কর। এতে বোঝা গেল যে, নফল সাদকার ক্ষেত্রে নিজের প্রয়োজনের অতিরিক্ত যা থাকে তাই ব্যয় করতে হবে। নিজের সন্তানাদিকে কষ্টে ফেলে, তাদের অধিকার হতে বঞ্চিত করে সদকা করার কোনো বিধান নেই। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি ঋণগ্রস্ত, ঋণ পরিশোধ না করে তার পক্ষে নফল সদকা করাও আল্লাহ্‌র পছন্দ নয়।

التفاسير: