[১] কাতাদাহ বলেন, এ আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সান্তনা প্ৰদান করা হচ্ছে, যেমনটি তোমরা শুনতে পাচ্ছ। [তাবারী]
[১] الغرور শব্দটি আধিক্যবোধক। অৰ্থাৎ, “অতি প্ৰবঞ্চক” বা “বড় প্রতারক” এখানে হচ্ছে শয়তান যেমন সামনের বাক্য বলছে। তার কাজই মানুষকে প্রতারিত করে কুফার ও গোনাহে লিপ্ত করা। বলা হয়েছে, ‘শয়তান যেন তোমাদেরকে আল্লাহর ব্যাপারে ধোঁকা না দেয়। মূলতঃ শয়তানের ধোঁকা বিভিন্ন ধরনের। কখনো কখনো সে মন্দ কর্মকে শোভনীয় করে মানুষদেরকে তাতে লিপ্ত করে দেয়। তখন মানুষের অবস্থা হয় যে, তারা গোনাহ করার সাথে সাথে মনে করতে থাকে যে, তারা আল্লাহর প্রিয় এবং তাদের শাস্তি হবে না। আবার কখনো কখনো সন্দেহ সৃষ্টি করে তাদেরকে পথভ্ৰষ্ট করে দেয়। শয়তান লোকদেরকে একথা বুঝায় যে, আসলে আল্লাহ বলে কিছুই নেই এবং কিছু লোককে এ বিভ্রান্তির শিকার করে যে, আল্লাহ একবার দুনিয়াটা চালিয়ে দিয়ে তারপর বসে আরাম করছেন, এখন তাঁর সৃষ্ট এ বিশ্ব-জাহানের সাথে কার্যত তাঁর কোনো সম্পর্ক নেই। আবার কিছু লোককে সে এভাবে ধোঁকা দেয় যে, আল্লাহ অবশ্যই এ বিশ্ব-জাহানের ব্যবস্থাপনা করে যাচ্ছেন কিন্তু তিনি মানুষকে পথ দেখানোর কোনো দায়িত্ব নেননি। কাজেই এ অহী ও রিসালাত নিছক একটি ধোঁকাবাজী ছাড়া আর কিছুই নয়। সে কিছু লোককে এ মিথ্যা আশ্বাসও দিয়ে চলছে যে, আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল ও মেহেরবান, তোমরা যতই গোনাহ কর না কেন তিনি সব মাফ করে দেবেন এবং তাঁর এমন কিছু প্রিয় বান্দা আছে যাদেরকে আঁকড়ে ধরলেই তোমরা কামিয়াব হয়ে যাবে। [এ ব্যাপারে বিস্তারিত দেখুন, ইবনুল কাইয়্যেম, ইগাসাতুল লাহফান ফী মাসায়িদিস শায়তান]
[১] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর সৃষ্টিকে অন্ধকারে সৃষ্টি করেছেন। তারপর সেগুলোতে তার নূরের আলো ফেললেন। সুতরাং যার কাছে এ নূরের কিছু পৌঁছেছে সেই হেদায়েত প্রাপ্ত হবে। আর যার কাছে সে নূরের আলো পৌঁছেনি সে ভ্ৰষ্ট হবে। আর এজন্যই বলি, আল্লাহর জ্ঞান অনুসারে কলম শুকিয়ে গেছে। [তিরমিয়ী ২৬৪২; মুসনাদে আহমাদ ২/১৭৬]
[১] মৃত্যুর পর জীবিত হয়ে উঠার জন্য আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে উদ্ভিদ উৎপন্ন করার উদাহরণ আল্লাহ্ তা'আলা কুরআনের অন্যত্রও পেশ করেছেন। [আদওয়াউল বায়ান]
[১] অর্থাৎ সম্মান চাইলে কেবলমাত্র তাঁর কাছেই চাওয়া উচিত। আর তা চাইতে হবে তাঁর আনুগত্য করেই। কারণ, তিনি সম্মান প্রতিপত্তির মালিক। [বাগভী, মুয়াসসার] আসল ও চিরস্থায়ী মর্যাদা, দুনিয়া থেকে নিয়ে আখেরাত পর্যন্ত যা কখনো হীনতা ও লাঞ্ছনার শিকার হতে পারে না, তা কেবল আল্লাহর বন্দেগীর মধ্যে পাওয়া যেতে পারে। তুমি যদি তাঁর হয়ে যাও, তাহলে তাঁকে পেয়ে যাবে এবং যদি তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও, তাহলে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হবে। [দেখুন, কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]
[২] ইবন আব্বাস বলেন, ভাল কথা হচ্ছে, আল্লাহর যিকির। আর সৎকাজ হচ্ছে, আল্লাহর ফরয আদায় করা, সুতরাং যে কেউ আল্লাহর ফরয আদায়ে আল্লাহর যিকির করবে তারই সে আমল উপরের দিকে উঠবে। আর যে কেউ যিকির করবে, কিন্তু আল্লাহর ফরয আদায় করবে না তার কথা তার আমলের দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে, তখন সেটা তার ধ্বংসের কারণ হবে। [তাবারী] কাতাদাহ বলেন, আল্লাহ তা'আলা আমল ব্যতীত কোনো কথা কবুল করেন না। যে ভাল বলল এবং ভাল আমল করল সেটাই শুধু আল্লাহ কবুল করেন। [তাবারী]
[১] কিতাবে বলে লাওহে মাহফুযে রয়েছে বুঝানো হয়েছে। [মুয়াসসার] অধিকাংশ তাফসীরবিদদের মতে এ আয়াতের মর্ম এই যে, আল্লাহ্ তা'আলা যাকে দীর্ঘ জীবন দান করেন, তা পূর্বেই লওহে মাহফুযে লিখিত রয়েছে। অনুরূপভাবে স্বল্প জীবনও পূর্ব থেকে লওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ থাকে। যার মর্ম দাঁড়াল, এখানে ব্যক্তিবিশেষের জীবনের দীর্ঘতা বা হ্রস্বতা বোঝানো উদ্দেশ্য নয়। বরং গোটা মানবজাতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে যে, তাদের কাউকে দীর্ঘ জীবন দান করা হয় এবং কাউকে তার চেয়ে কম। কেউ কেউ বলেন, যদি আয়াতের অর্থ একই ব্যক্তির বয়সের হ্রাসবৃদ্ধি ধরে নেয়া যায়, তবে বয়স হ্রাস করার উদ্দেশ্য এই যে, প্রত্যেক ব্যক্তির বয়স আল্লাহ তা’আলা যা লিখে দিয়েছেন তা নিশ্চিত, কিন্তু এই নির্দিষ্ট বয়ঃক্রম থেকে একদিন অতিবাহিত হলে একদিন হ্রাস পায়, দুদিন অতিবাহিত হলে দুদিন হ্রাস পায়। এমনিভাবে প্রতিটি দিন ও প্রতিটি নিঃশ্বাস তার জীবনকে হ্রাস করতে থাকে। রাসূলুল্লাহ বলেন: “যে ব্যক্তি চায় তার রিযিক প্রশস্ত ও জীবন দীর্ঘ হোক, তার উচিত আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সদ্ব্যবহার করা।” [বুখারী ২০৬৭, মুসলিম ২৫৫৭] এই হাদীস থেকে বাহ্যতঃ জানা যায় যে, আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহারের ফলে জীবন দীর্ঘ হয়। সারকথা, যেসব হাদীসে কোনো কোনো কর্ম সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এগুলো সম্পাদন করলে বয়স বেড়ে যায়, সেগুলোর অর্থ, পূর্বেই তার তাকদীরে লিখা আছে অমুক আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করবে, তাই তার আয়ু বর্ধিত আকারে দেয়া হলো। সুতরাং যে কেউ আত্মীয়-স্বজনের সাথে সদ্ব্যবহার করার তাওফীক পাবে সে যেন এটা বুঝে নেয় যে, এ কারণেই হয়তঃ তার আয়ু বৃদ্ধি ঘটেছে।
[২] যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ্ বলেন, “হে মানুষ! পুনরুত্থান সম্পর্কে যদি তোমরা সন্দেহে থাক তবে অনুধাবন কর—আমরা তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি মাটি হতে, তারপর শুক্র হতে, তারপর ‘আলাকাহ’ (রক্তপিণ্ড বা লেগে থাকে এরকম পিণ্ড) হতে, তারপর পূর্ণাকৃতি অথবা অপূৰ্ণাকৃতি গোশতপিণ্ড হতে -- যাতে আমরা বিষয়টি তোমাদের কাছে সুস্পষ্টরূপে প্রকাশ করি। আর আমরা যা ইচ্ছে তা এক নির্দিষ্ট কালের জন্য মাতৃগর্ভে স্থিত রাখি, তারপর আমরা তোমাদেরকে শিশুরূপে বের করি, পরে যাতে তোমরা পরিণত বয়সে উপনীত হও। তোমাদের মধ্যে কারো কারো মৃত্যু ঘটান হয় এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে কাউকে হীনতম বয়সে প্রত্যাবর্তিত করা হয়, যার ফলে সে জানার পরেও যেন কিছুই (আর) জানে না। [সূরা আল-হাজ্জ ৫] আরও বলেন, “তিনি শুক্র হতে মানুষ সৃষ্টি করেছেন; অথচ দেখুন, সে প্রকাশ্য বিতণ্ডাকারী!” [সূরা আন-নাহল ৪]