Übersetzung der Bedeutungen von dem heiligen Quran - Bengalische Übersetzung - Abu Bakr Zakaria

At-Taubah

external-link copy
1 : 9

بَرَآءَةٞ مِّنَ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦٓ إِلَى ٱلَّذِينَ عَٰهَدتُّم مِّنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ

এটা সম্পর্কচ্ছেদ আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে, সে সব মুশরিকদের সাথে, যাদের সাথে তোমরা পারস্পারিক চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছিলে [১]। info

সূরা সংক্রান্ত আলোচনা:

সূরা নাযিল হওয়ার স্থান:

সূরাটি সর্বসম্মতভাবে মাদানী সূরা। বারা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, সূরা বারা’আত সবশেষে অবতীর্ণ সূরা। [বুখারী ৪৬৫৪, মুসলিম ১৬১৮]

আয়াত সংখ্যা: ১২৯।

সূরার নামকরণ:

তাফসীরে এ সূরার ১৩ টি নাম উল্লেখ করা হয়েছে। তন্মধ্যে বিখ্যাত হলো, সূরা আত-তাওবাহ, সূরা আল-বারাআহ বা বারাআত। বারাআত বলা হয় এ জন্য যে, এতে কাফেরদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ ও তাদের ব্যাপারে দায়িত্ব মুক্তির উল্লেখ রয়েছে। আর "তাওবাহ’ বলা হয় এজন্য যে, এতে মুসলিমদের তাওবাহ কবুল হওয়ার বর্ণনা রয়েছে। এ ছাড়াও এ সূরার আরও কয়েকটি নাম উল্লেখ করা হয়। যেমন, সূরা আল-ফাদিহা বা গোপন বিষয় প্রকাশ করে লজ্জা দিয়ে মাথা হেটকারী। [বুখারী ৪৮৮২, মুসলিম ৩০৩১, মুস্তাদরাকে হাকেম ৩২৭৪] এ সূরার আরেক নাম সূরা আল-আযাব। এ ছাড়াও এ সূরার অন্যান্য নামের মধ্যে রয়েছে, ‘আল মুকাশকেশাহ’ ‘আল বুহুস’ ‘আল-মুনাক্কেরাহ’ ‘আল-হাফিরাহ’ ‘আল-মুসিরাহ’ ‘আল-মুবাসিরাহ’ আল-মুদামদিমাহ’ ‘আল-মুখযিয়াহ’ ‘আল মুনাক্কিলাহ’ ‘আল মুশাররিদাহ’। পরবর্তী নামগুলোর অধিকাংশই মুনাফেকদের অবস্থা বর্ণনাকারী। [আসমাউ সুওয়ারিল কুরআন ]

সূরাটির প্রথমে বিসমিল্লাহ পড়া না পড়ার হুকুম:

সূরাটির একটি বৈশিষ্ট্য হল, কুরআন মজীদে এর শুরুতে বিসমিল্লাহ লেখা হয় না, অথচ অন্যান্য সকল সূরার শুরুতে বিসমিল্লাহ লেখা হয়। কুরআন সংগ্রাহক উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু স্বীয় শাসনামলে যখন কুরআনকে গ্রন্থের রূপ দেন, তখন অন্যান্য সূরার মত করে সূরা তাওবার শুরুতে বিসমিল্লাহ' লিখা হয়নি। ইবন আব্বাস বলেন, আমি উসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞেস করলাম, কি কারণে আপনারা আল-আনফালকে মাসানী বা শতের চেয়েও ছোট হওয়া সত্বেও সূরা বারাআত এর সাথে রাখলেন, অথচ বারাআত হচ্ছে, শত আয়াত সম্পন্ন সূরা? আবার এ দু’সূরার মাঝখানে কেনইবা বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লাইনটি লিখলেন না? তারপরও সেটাকে লম্বা সাতটি সূরার অন্তর্ভুক্ত কেন করলেন? তখন উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, কুরআনে মজীদ বিভিন্ন সময় ধরে অল্প অল্প করে নাযিল হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখনই কোনো আয়াত নাযিল হত, তখনই যারা ওহী লিখত তাদের কাউকে ডেকে বলতেন, এটাকে ঐ সূরার মধ্যে সন্নিবেশিত করে দিবে যাতে অমুক অমুক বিষয় লিখা আছে। সুতরাং যখনই কোনো সূরা নাযিল হত, তখনই তিনি তাদেরকে বলতেন, এটাকে অমুক অমুক বিষয় যে সূরায় আলোচনা আছে তোমরা সেখানে স্থান দাও। আর সূরা আল-আনফাল ছিল মদীনায় নাযিল হওয়া প্রাথমিক সূরাগুলোর অন্যতম ৷ পক্ষান্তরে ‘বারাআত’ ছিল কুরআনের শেষে নাযিল হওয়া সূরা। কিন্তু এ দুটির ঘটনা একই ধরনের। তাই আমি মনে করেছি যে, এটা পূর্বের সূরারই অংশ। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যু হয়। অথচ তিনি আমাদেরকে স্পষ্ট জানিয়ে দেননি যে, এটি পূর্বের সূরার অংশ। এজন্যই আমি এ দু'টিকে একসাথে লিখেছি এবং এ দু’য়ের মাঝখানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম লিখিনি। তারপর সেটাকে প্রাথমিক সাতটি লম্বা সূরার মধ্যে স্থান দিলাম। [তিরমিযী ৩০৮৬; মুসনাদে আহমাদ ১/৫৭; আবু দাউদ ৭৮৬; নাসায়ী ফিল কুবরা ৮০০৭; মুস্তাদরাকে হাকিম ২/৩৩০]

ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা কর্তৃক আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে অপর একটি বর্ণনায় সূরা তাওবার শুরুতে বিসমিল্লাহ না লেখার কারণ দর্শানো হয় যে, বিসমিল্লাহ-তে আছে শান্তি ও নিরাপত্তার পয়গম, কিন্তু সূরা তাওবায় কাফেরদের জন্যে শান্তি ও নিরাপত্তা চুক্তিগুলো নাকচ করে দেয়া হয়। [কুরতুবী আত-তাহরীর ওয়াত তানওয়ীর]

---------------

[১] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবম হিজরীতে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে পাঠালেন। তিনি কুরবানীর দিন এগুলোকে মানুষের মধ্যে ঘোষণা করলেন। এর সাথে আরও ঘোষণা ছিল যে, এরপর আর কোনো লোক উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করবে না। কোনো মুশরিক হজ করবে না। মুমিন ছাড়া কেউ জান্নাতে যাবে না। এভাবে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু সেটা বলতেন, যখন অপারগ হতেন, তখন আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলতেন। [ইবন কাসীর]

التفاسير:

external-link copy
2 : 9

فَسِيحُواْ فِي ٱلۡأَرۡضِ أَرۡبَعَةَ أَشۡهُرٖ وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّكُمۡ غَيۡرُ مُعۡجِزِي ٱللَّهِ وَأَنَّ ٱللَّهَ مُخۡزِي ٱلۡكَٰفِرِينَ

অতঃপর তোমরা যমীনে চারমাস সময় পরিভ্রমন কর [১] এবং জেনে রাখ যে, তোমরা আল্লাহ্‌কে হীনবল করতে পারবে না। আর নিশ্চয় আল্লাহ্‌ কাফেরদেরকে আপদস্থকারী [২]। info

[১] এ চারমাস সময় কাদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল এ ব্যাপারে বিভিন্ন মত থাকলেও সবচেয়ে প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত হলো, এ চারমাস সময় ঐ সমস্ত কাফেরদেরকে দেয়া হয়েছে যাদের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো মেয়াদী চুক্তি ছিল না অথবা যাদের সাথে চারমাসের কম চুক্তি ছিল, কিন্তু যাদের সাথে মেয়াদী চুক্তি ছিল আর তারা সে চুক্তি বিরোধী কোনো কাজ করে নি, তাদেরকে তাদের সুনির্দিষ্ট মেয়াদ পূর্ণ করতে দেয়া হয়েছিল। সে অনুসারে এ মেয়াদপূর্তির পর তাদের সাথে আর কোনো নতুন চুক্তি করা হয়নি। [সা'দী]

[২] এখানে বলা হচ্ছে যে, যদিও তাদেরকে চারমাসের সময় দেয়া হয়েছে, তাতে তাদেরকে শুধু আল্লাহর দীন বোঝা ও জানার জন্য সে সময়টুকু দেয়া হচ্ছে। যদি তারা এ সময়টুকু সঠিকভাবে কাজে লাগাতে না পারে এবং ইসলাম গ্রহণ না করে তাহলে তারা যেন ভালো করেই জেনে নেয় যে, যমীনের কোথাও পালিয়ে থাকলেও আল্লাহর হাত থেকে তাদের নিস্তার নেই। [সা'দী]

التفاسير:

external-link copy
3 : 9

وَأَذَٰنٞ مِّنَ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦٓ إِلَى ٱلنَّاسِ يَوۡمَ ٱلۡحَجِّ ٱلۡأَكۡبَرِ أَنَّ ٱللَّهَ بَرِيٓءٞ مِّنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ وَرَسُولُهُۥۚ فَإِن تُبۡتُمۡ فَهُوَ خَيۡرٞ لَّكُمۡۖ وَإِن تَوَلَّيۡتُمۡ فَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّكُمۡ غَيۡرُ مُعۡجِزِي ٱللَّهِۗ وَبَشِّرِ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ

আর মহান হজের দিনে [১] আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে মানুষের প্রতি এটা এক ঘোষণা যে, নিশ্চয় মুশরিকদের সম্পর্কে আল্লাহ্‌ দায়মুক্ত এবং তাঁর রাসূলও। অতএব, তোমরা যদি তওবাহ্ কর, তবে তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর তোমরা যদি মুখ ফিরাও তবে জেনে রাখ যে, তোমরা আল্লাহ্‌কে অক্ষম করতে পারবে না এবং কাফেরদেরকে যন্ত্রণাদয়ক শাস্তির সুসংবাদ দিন। info

[১] এখানে মহান হজের দিনে বলতে কি বুঝানো হয়েছে তা নিয়ে মুফাসসিরগণের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস, উমর, আবদুল্লাহ ইবন ওমর এবং আবদুল্লাহ ইবন যুবায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহুম প্রমুখ সাহাবা বলেন, এর অর্থ আরাফাতের দিন। [ইবন কাসীর] কারণ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদীসে বলেছেন, “হজ হল আরাফাতের দিন।” [তিরমিযী ৮৮৯] পক্ষান্তরে আলী, আবদুল্লাহ ইবন আবি আওফা, মুগীরা ইবন শুবাহ, ইবন আব্বাসসহ সাহাবায়ে কিরামের এক বড় দল এবং অনেক মুফাসসির বলেন, এর অর্থ কোরবানীর দিন বা দশই যিলহজ। [ইবন কাসীর] এর সপক্ষে বেশ কিছু সহীহ হাদীস রয়েছে। যেমন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরবানীর দিন প্রশ্ন করেছিলেন, “এটা কোন দিন? লোকেরা চুপ ছিল এমনকি মনে করেছিল যে, তিনি হয়ত অন্য কোনো নামে এটাকে নাম দিবেন, শেষ পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এটা কি বড় হজের দিন নয়?” [বুখারী ৪৪০৬; মুসলিম ১৬৭৯] ইমাম সুফিয়ান সওরী রাহিমাহুল্লাহ এবং অপরাপর ইমামগণ এ সকল উক্তির সমস্বয় সাধনের উদ্দেশ্যে বলেন, হজের দিনগুলো হজ্জে আকবরের দিন। এতে আরাফাত ও কোরবানীর দিনগুলোও রয়েছে। [ইবন কাসীর]

التفاسير:

external-link copy
4 : 9

إِلَّا ٱلَّذِينَ عَٰهَدتُّم مِّنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ ثُمَّ لَمۡ يَنقُصُوكُمۡ شَيۡـٔٗا وَلَمۡ يُظَٰهِرُواْ عَلَيۡكُمۡ أَحَدٗا فَأَتِمُّوٓاْ إِلَيۡهِمۡ عَهۡدَهُمۡ إِلَىٰ مُدَّتِهِمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلۡمُتَّقِينَ

তবে মুশরিকদের মধ্যে যাদের সাথে তোমরা চুক্তিতে আবদ্ধ ও পরে তোমাদের চুক্তি রক্ষায় কোনো ত্রুটি করেনি এবং তোমাদের বিরুদ্ধে কাউকেও সাহায্য করেনি [১], তোমরা তাদের সাথে নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত চুক্তি পূর্ণ কর; নিশ্চয় আল্লাহ্‌ মুত্তাকীদেরকে পছন্দ করেন [২]। info

[১] এ আয়াত দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে, মুশরিকরা যদি অঙ্গীকার ভঙ্গ করে তবে তাদেরকে হত্যা করা জায়েয। [আদওয়াউল বায়ান] অন্য আয়াতেও অনুরূপ বলা হয়েছে। যেমন, “যতক্ষণ তারা তোমাদের চুক্তিতে স্থির থাকবে তোমরাও তাদের চুক্তিতে স্থির থাকবে।" [সূরা আত-তাওবাহ ৭] অন্য আয়াতে আরও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, “আর যদি তারা তাদের চুক্তির পর তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এবং তোমাদের দীন সম্বন্ধে কটুক্তি করে, তবে কুফরের নেতাদের সাথে যুদ্ধ কর; এরা এমন লোক যাদের কোনো প্রতিশ্রুতি নেই; যেন তারা নিবৃত্ত হয়।" [সূরা আত-তাওবাহ ১২] তবে এর বিপরীত কাউকে হত্যা করা জায়েয নেই। হাদীসে এসেছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে কেউ কোনো অঙ্গীকারবদ্ধ অমুসলিমকে হত্যা করবে সে জান্নাতের গন্ধও পাবে না। অথচ এর গন্ধ চল্লিশ বছরের পথের দুরত্ব থেকেও পাওয়া যায়।" [বুখারী ৬৯১৪]

[২] কাতাদা বলেন, এরা হচ্ছে কুরাইশ মুশরিক, যাদের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হুদায়বিয়ার সন্ধি করেছিলেন। ঐ বছর কুরবানীর দিনের পর তাদের সুনির্দিষ্ট মেয়াদের তখনও চারমাস বাকী ছিল। তাই আল্লাহ তার নবীকে এ সময়টুকু পূর্ণ করার নির্দেশ দিলেন। আর যাদের সাথে কোনো চুক্তি ছিল না তাদেরকে অবকাশ দিলেন মুহাররাম মাস শেষ হওয়া পর্যন্ত, আর যাদের সাথে চুক্তি ছিল সে চুক্তি শেষ হওয়ার পর আর কোনো চুক্তি করা হবে না ঘোষণা দিলেন, সুতরাং তারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ সাক্ষ্য দেয়া পর্যন্ত তাদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। তাদের কাছ থেকে অন্য কিছু গ্রহণ করা হবে না। [তাবারী]

التفاسير:

external-link copy
5 : 9

فَإِذَا ٱنسَلَخَ ٱلۡأَشۡهُرُ ٱلۡحُرُمُ فَٱقۡتُلُواْ ٱلۡمُشۡرِكِينَ حَيۡثُ وَجَدتُّمُوهُمۡ وَخُذُوهُمۡ وَٱحۡصُرُوهُمۡ وَٱقۡعُدُواْ لَهُمۡ كُلَّ مَرۡصَدٖۚ فَإِن تَابُواْ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَءَاتَوُاْ ٱلزَّكَوٰةَ فَخَلُّواْ سَبِيلَهُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ غَفُورٞ رَّحِيمٞ

অতঃপর নিষিদ্ধ মাস [১] অতিবাহিত হলে মুশরিকদেরকে যেখানে পাবে হত্যা কর [২], তাদেরকে পাকড়াও কর [৩], অবরোধ কর এবং প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের জন্য ওঁৎ পেতে থাক; কিন্তু যদি তারা তাওবাহ্ করে, সালাত কায়েম করে এবং যাকাত দেয় [৪] তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও [৫]; নিশ্চয় আল্লাহ্‌ অতিশয় ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু [৬]। info

[১] এখানে “আশহুরে হুরুম" বলতে কি বুঝানো হয়েছে এ ব্যাপারে দুটি মত রয়েছে। ১) বিখ্যাত চারটি মাস যা হারাম হওয়া শরীআতের স্বীকৃত সে চারটি মাস বুঝানো হয়েছে, অর্থাৎ রজব, জিলকদ, জিলহজ্জ ও মুহাররাম ৷ ২) এখানে মূলতঃ পূর্ববর্তী আয়াতে অবকাশ দেয়া চার মাসকেই বুঝানো হয়েছে। আর এটাই প্রাধান্যপ্রাপ্ত মত। অর্থাৎ পূর্ববর্তী আয়াতে কাফেরদেরকে যে চারমাসের অবকাশ দেয়া হয়েছে তা যখনি শেষ হয়ে যাবে তখনি তাদের সাথে আর কোন চুক্তি করা হবে না। তাদের হয় ইসলাম গ্রহণ করতে হবে নয় তো মক্কা ছেড়ে যেতে হবে। এর জন্য যুদ্ধের প্রয়োজন হলে তাও করতে হবে। [ফাতহুল কাদীর]

[২] সুফিয়ান ইবন উয়াইনাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ্ তা'আলা চার তরবারী নিয়ে পাঠিয়েছেন। তন্মধ্যে একটি কাফের মুশরিকদের বিরুদ্ধে, যার প্রমাণ আলোচ্য আয়াত। দ্বিতীয়টি আহলে কিতাবদের বিরুদ্ধে, তার প্রমাণ সূরা আত-তাওবার ২৯ নং আয়াত। তৃতীয়টি মুনাফিকদের বিরুদ্ধে যা সূরা আত-তাওবার ৭৩ ও সূরা আত-তাহরীমের ৯ নং আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। চতুর্থটি বিদ্রোহী, সীমালংঘনকারীদের বিরুদ্ধে, যার আলোচনা সূরা আল-হুজুরাত এর ৯ নং আয়াতে এসেছে। [ইবন কাসীর]

[৩] চাই তা হত্যার মাধ্যমে হোক বা বন্দী করার মাধ্যমে হোক, যে প্রকারেই হোক তাদের পাকড়াও করবে। তবে বন্দীকেই اخِيْذ বলা হয়। তাই এর অর্থ হচ্ছে, তাদের বন্দী কর। [ইবন কাসীর, ফাতহুল কাদীর] ইবন কাসীর আরও বলেন, এ আয়াতে যেখানে পাও পাকড়াও করার সাধারণ কথা বলা হলেও তা অন্য আয়াত দ্বারা বিশেষিত। অন্য আয়াতে হারাম এলাকায় হত্যা করতে নিষেধ করা হয়েছে। আল্লাহ বলেন, “আর মসজিদুল হারামের কাছে তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করবে না যে পর্যন্ত না তারা সেখানে তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে।" [সূরা আল-বাকারাহ ১৯১]

[৪] ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমাকে ততক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে যতক্ষণ না তারা বলবে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ও মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল’ এবং সালাত কায়েম করবে আর যাকাত প্রদান করবে। অতঃপর যদি তারা তা করে, তবে তাদের জান ও মাল আমার হাত থেকে নিরাপদ হবে, কিন্তু যদি ইসলামের অধিকার আদায় করতে হয়, তবে তা ভিন্ন কথা। আর তাদের হিসাব নেয়ার ভার তো আল্লাহর উপর।” [বুখারী ২৫; মুসলিম ২২]

[৫] আবু বকর সিদীক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ আয়াত দ্বারা যাকাত প্রদানে অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পক্ষে দলীল পেশ করেছেন। [দেখুন, বুখারী ২৫; মুসলিম ২২] কেননা এখানে কুফরী ও শিকী থেকে মুক্তির আলামত হিসাবে সালাত আদায়ের সাথে সাথে যাকাত প্রদানের কথাও বলা হয়েছে। [ইবন কাসীর] বর্তমানেও যারা যাকাত দিতে অস্বীকার করবে তাদের ব্যাপারে একই বিধান প্রযোজ্য হবে। [সা'দী] কাতাদা বলেন, আল্লাহ যাদেরকে ছেড়ে দেয়ার কথা বলেছেন তাদেরকে ছেড়ে দাও। মানুষ তো তিন ধরনের। এক. মুসলিম, যার উপর যাকাত ফরয। দুই. মুশরিক, তার উপর জিযইয়া ধার্য। তিন. কাফের যোদ্ধা যে মুসলিমদের সাথে ব্যবসা করতে চায়, তার উপর কর ধার্য। [তাবারী]

[৬] সুতরাং তিনি যারা তাওবাহ করবে তাদের শির্কসহ যাবতীয় গোনাহ ক্ষমা করবেন। তাদেরকে তাওফীক দেয়ার মাধ্যমে দয়া করবেন। তারপর তাদের থেকে তা কবুল করবেন। [সা'দী] সূরা তাওবাহ্ প্রথম পাঁচ আয়াতে মক্কাবিজয়ের পর মক্কা ও তার আশে-পাশের সকল কাফির-মুশরিকের জান-মালের সার্বিক নিরাপত্তা দানের বিষয়টি উল্লেখিত হয়। তবে তাদের চুক্তিভঙ্গ ও বিশ্বাসঘাতকতার তিক্ত অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে তাদের সাথে আর কোন চুক্তি না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ সত্বেও ইতিপূর্বে যাদের সাথে চুক্তি করা হয় এবং যারা চুক্তিভঙ্গ করেনি, তাদের মেয়াদ পূর্ণ হওয়া অবধি চুক্তি রক্ষার জন্য এ আয়াতসমূহে মুসলিমদের আদেশ দেয়া হয়। আর যাদের সাথে কোনো চুক্তি হয়নি, কিংবা যাদের সাথে কোনো মেয়াদী চুক্তি হয়নি, তাদের প্রতি এই অনুকম্পা করা হয় যে, তড়িৎ মক্কা ত্যাগের আদেশের স্থলে চার মাসের সময় দেয়া হয়, যাতে এ অবসরে যেদিকে সুবিধা চলে যেতে পারে অথবা এ সময়ে ইসলামের সত্যতা উপলব্ধি করে মুসলিম হতে পারে। আল্লাহর এ সকল আদেশের উদ্দেশ্য হল, আগামী সাল নাগাদ যেন মক্কা শরীফ সকল বিশ্বাসঘাতক মুশরিকদের থেকে পবিত্র হয়ে যায়। অধিকাংশ আলেম এ সর্বশেষ আয়াতকে ‘আয়াতুস সাইফ’ বা তরবারীর আয়াত আখ্যা দিয়েছেন। এর অর্থ হলো, এর মাধ্যমে যাবতীয় চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়েছে। এখন হয় ইসলাম না হয় তরবারীই তাদের মধ্যে মীমাংসা করতে পারে। [বাগভী; ইবন কাসীর; ফাতহুল কাদীর]

التفاسير:

external-link copy
6 : 9

وَإِنۡ أَحَدٞ مِّنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ ٱسۡتَجَارَكَ فَأَجِرۡهُ حَتَّىٰ يَسۡمَعَ كَلَٰمَ ٱللَّهِ ثُمَّ أَبۡلِغۡهُ مَأۡمَنَهُۥۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمۡ قَوۡمٞ لَّا يَعۡلَمُونَ

আর মুশরিকদের মধ্যে কেউ আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলে আপনি তাকে আশ্রয় দিন; যাতে সে আল্লাহ্‌র বাণী শুনতে পায় [১] তারপর তাকে তার নিরাপদ স্থানে পৌছিয়ে দিন [২]; কারণ তারা এমন এক সম্প্রদায় যারা জানে না। info

[১] আয়াত থেকে প্রমাণিত হয় যে, কোন বিধর্মী যদি ইসলামের সত্যতার দলীল জানতে চায়, তবে প্রমাণপঞ্জী সহকারে তার সামনে ইসলামকে পেশ করা মুসলিমদের কর্তব্য। অনুরূপভাবে কোনো বিধমী ইসলামের সম্যক তথ্য ও তত্ত্বাবলী হাসিলের জন্যে যদি আমাদের কাছে আসে, তবে এর অনুমতি দান ও তার নিরাপত্তা বিধান আমাদের পক্ষে ওয়াজিব। তাকে বিব্রত করা বা তার ক্ষতিসাধন অবৈধ। তারপর তাকে তার নিরাপদ স্থান যেখান থেকে সে এসেছে সেখানে পৌছে দেয়াও মুসলিমের দায়িত্ব। [তাবারী] এ আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, কুরআন আল্লাহর কালাম, তিনি স্বয়ং এ বাণীর প্রবক্তা। সুতরাং কুরআন সৃষ্ট নয়, যেমনটি কোনও কোনও বিদআতপন্থীরা মনে করে থাকে।

[২] এ সহনশীলতা প্রদর্শনের কারণ হলো, কাফের মুশরিকদেরকে আল্লাহর কালাম শুনে এবং মুসলিমদের বাস্তব অবস্থা দেখে সিদ্ধান্ত নেয়ার সুযোগ দেয়া। হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় মুশরিকগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যাবতীয় কর্মকাণ্ড ও রাসূলের প্রতি সাহাবাদের ভালবাসা দেখার পরে তাদের মধ্যে প্রচণ্ড ভাবান্তর সৃষ্টি হয়েছিল যা তাদের ঈমান গ্রহণে সহযোগিতা করেছিল। [ইবন কাসীর] তাছাড়া এমনও হতে পারে যে, তারা মূর্খতা বা অজ্ঞতা বশত: বিরোধিতায় লিপ্ত। আল্লাহর কালাম শোনার পর তাদের মধ্যে ভাবান্তর হবে এবং ইসলাম গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ হবে। [সা'দী]

التفاسير: