Übersetzung der Bedeutungen von dem heiligen Quran - Bengalische Übersetzung - Abu Bakr Zakaria

Nummer der Seite:close

external-link copy
164 : 2

إِنَّ فِي خَلۡقِ ٱلسَّمَٰوَٰتِ وَٱلۡأَرۡضِ وَٱخۡتِلَٰفِ ٱلَّيۡلِ وَٱلنَّهَارِ وَٱلۡفُلۡكِ ٱلَّتِي تَجۡرِي فِي ٱلۡبَحۡرِ بِمَا يَنفَعُ ٱلنَّاسَ وَمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مِن مَّآءٖ فَأَحۡيَا بِهِ ٱلۡأَرۡضَ بَعۡدَ مَوۡتِهَا وَبَثَّ فِيهَا مِن كُلِّ دَآبَّةٖ وَتَصۡرِيفِ ٱلرِّيَٰحِ وَٱلسَّحَابِ ٱلۡمُسَخَّرِ بَيۡنَ ٱلسَّمَآءِ وَٱلۡأَرۡضِ لَأٓيَٰتٖ لِّقَوۡمٖ يَعۡقِلُونَ

নিশ্চয় আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টিতে [১], রাত ও দিনের পরিবর্তনে [২] , মানুষের উপকারী [৩] দ্রব্যবাহী চলমান সামুদ্রিক জাহাজে এবং আল্লাহ্‌ আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণের মাধ্যমে ভূ-পৃষ্ঠকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেছেন, তার মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন সকল প্রকার বিচরণশীল প্রাণী এবং বায়ুর দিক পরিবর্তনে, আকাশ ও পৃথিবীর মধ্যে নিয়ন্ত্রিত মেঘমালাতে বিবেকবান কাওমের জন্য নিদর্শনসমূহ রয়েছে [৪] । info

[১] আসমান ও যমীনের সৃষ্টি কিভাবে নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত, তা এ আয়াতে ব্যাখ্যা করে বলা হয় নি। অন্যত্র তা স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে, যেমন “তারা কি তাদের উপরে অবস্থিত আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে না, আমরা কিভাবে তা নির্মাণ করেছি ও তাকে সুশোভিত করেছি এবং তাতে কোনো ফাটলও নেই ? আর আমরা বিস্তৃত করেছি ভূমিকে ও তাতে স্থাপন করেছি পর্বতমালা এবং তাতে উদ্‌গত করেছি নয়ন প্রীতিকর সর্বপ্রকার উদ্ভিদ, আল্লাহ্‌র অনুরাগী প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য জ্ঞান ও উপদেশস্বরূপ।” [সূরা কাফ: ৬-৮]

আর আসমান সম্পর্কে বলেছেন “যিনি সৃষ্টি করেছেন স্তরে স্তরে সাত আসমান। রহমানের সৃষ্টিতে আপনি কোনো খুঁত দেখতে পাবেন না; আপনি আবার তাকিয়ে দেখুন, কোনো ক্রটি দেখতে পান কি? তারপর আপনি দ্বিতীয়বার দৃষ্টি ফেরান, সে দৃষ্টি ব্যর্থ ও ক্লান্ত হয়ে আপনার দিকে ফিরে আসবে। আমরা নিকটবর্তী আসমানকে সুশোভিত করেছি প্রদীপমালা দ্বারা এবং সেগুলোকে করেছি শয়তানের প্রতি নিক্ষেপের উপকরণ এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছি জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি।” [সূরা আল-মুলক ৩-৫] তারপর যমীন সম্পর্কে বলেছেন, “তিনিই তো তোমাদের জন্য যমীনকে সুগম করে দিয়েছেন; অতএব তোমরা এর দিক-দিগন্তে বিচরণ কর এবং তাঁর দেয়া রিয্‌ক থেকে তোমরা আহার কর; আর পুনরুত্থান তো তাঁরই কাছে।” [সূরা আল-মুলক: ১৫]

[২] রাত দিনের পরিবর্তন কিভাবে নিদর্শন হিসেবে বিবেচিত, তা এ আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হয় নি। অন্য আয়াতে তা ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে। যেমন, “বলুন, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আল্লাহ্‌ যদি রাতকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, আল্লাহ্‌ ছাড়া এমন কোন্‌ ইলাহ্‌ আছে, যে তোমাদেরকে আলো এনে দিতে পারে? তবুও কি তোমরা কর্ণপাত করবে না?’ বলুন, ‘তোমরা ভেবে দেখেছ কি, আল্লাহ্‌ যদি দিনকে কিয়ামতের দিন পর্যন্ত স্থায়ী করেন, আল্লাহ্‌ ছাড়া এমন কোন্‌ ইলাহ্‌ আছে, যে তোমাদের জন্য রাতের আবির্ভাব ঘটাবে যাতে বিশ্রাম করতে পার? তবুও কি তোমরা ভেবে দেখবে না ?” [সূরা আল-কাসাস: ৭১,৭২]

[৩] এর দ্বারা ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, সামুদ্রিক জাহাজের মাধ্যমে এক দেশের মালামাল অন্য দেশে আমদানী-রফতানী করার মাঝেও মানুষের এত বিপুল কল্যাণ নিহিত রয়েছে যা গণনাও করা যায় না। আর এ উপকারিতার ভিত্তিতেই যুগে যুগে, দেশে দেশে নতুন নতুন বাণিজ্যপন্থা উদ্ভাবিত হয়েছে। এমনিভাবে আকাশ থেকে এভাবে পানিকে বিন্দু বিন্দু করে বর্ষণ করা, যাতে কোনো কিছুর ক্ষতিসাধিত না হয়। যদি এ পানি প্লাবনের আকারে আসত, তাহলে কোনো মানুষ, জীব-জন্তু কিংবা অন্যান্য জিনিসপত্র কিছুই থাকত না। অতঃপর পানি বর্ষণের পর ভূ-পৃষ্ঠে তাকে সংরক্ষণ করা মানুষের সাধ্যের আওতায় ছিল না। যদি তাদেরকে বলা হত, তোমাদের সবাই নিজ নিজ প্রয়োজনমত ছ'মাসের প্রয়োজনীয় পানি সংরক্ষণ করে রাখ, তাহলে তারা পৃথক পৃথকভাবে কি সে ব্যবস্থা করতে পারত? আর কোনোক্রমে রেখে দিলেও সেগুলো পচন অথবা বিনষ্ট হওয়ার হাত থেকে কেমন করে রক্ষা করত? কিন্তু আল্লাহ্‌ রাববুল আলামীন নিজেই সে ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কুরআনে বলা হয়েছে: “আমি পানিকে ভূমিতে ধারণ করিয়েছি, যদিও বৃষ্টির পানি পড়ার পর তাকে প্রবাহিত করেই নিঃশেষ করে দেয়ার ক্ষমতা আমার ছিল।" [সূরা আল-মুমিনুন: ১৮]

কিন্তু আল্লাহ্ তা'আলা পানিকে বিশ্ববাসী মানুষ ও জীব-জন্তুর জন্য কোথাও উন্মুক্ত খাদ-খন্দে সংরক্ষিত করেছেন, আবার কোথাও ভূমিতে বিস্তৃত বিভিন্ন স্তরের মাধ্যমে ভূমির অভ্যন্তরে সংরক্ষণ করেছেন। তারপর এমন এক ফল্গুধারা সমগ্র জমীনে বিছিয়ে দিয়েছেন, যাতে মানুষ যেকোনো স্থানে খনন করে পানি বের করে নিতে পারে। আবার এ পানিরই একটা অংশকে জমাট বাঁধা সাগর বানিয়ে তুষার আকারে পাহাড়ের চূড়ায় চাপিয়ে দিয়েছেন যা পতিত কিংবা নষ্ট হয়ে যাওয়ার ব্যাপারে একান্ত সংরক্ষিত; অথচ ধীরে ধীরে গলে প্রাকৃতিক ঝর্ণাধারার মাধ্যমে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। সারকথা, উল্লিখিত আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলার পরিপূর্ণ ক্ষমতার কয়েকটি বিকাশস্থলের বর্ণনার মাধ্যমে তাওহীদ বা একত্ববাদই প্রমাণ করা হয়েছে।

[৪] এ আয়াতে আল্লাহ্‌ তা'আলার প্রকৃত একত্ববাদ সম্পর্কে বাস্তব লক্ষণ ও প্রমাণাদি উপস্থাপন করা হয়েছে যা জ্ঞানী-নির্জ্ঞান নির্বিশেষে যে কেউই বুঝতে পারে। আসমান ও যমীনের সৃষ্টি এবং রাত ও দিনের চিরাচরিত বিবর্তন তারই ক্ষমতার পরিপূর্ণতা ও একত্ববাদের প্রকৃত প্রমাণ। অনুরূপভাবে পানির উপর নৌকা ও জাহাজ তথা জলযানসমূহের চলাচলও একটি বিরাট প্রমাণ। পানিকে আল্লাহ্‌ তা'আলা এমন এক তরল পদার্থ করে সৃষ্টি করেছেন যে, একান্ত তরল ও প্রবাহমান হওয়া সত্বেও তার পিঠের উপর লক্ষ লক্ষ মণ ওজনবিশিষ্ট বিশালাকায় জাহাজ বিরাট ওজনের চাপ নিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে চলাচল করে। তদুপরি এগুলোকে গতিশীল করে তোলার জন্য বাতাসের গতি ও নিতান্ত রহস্যপূর্ণভাবে সে গতির পরিবর্তন করতে থাকা প্রভৃতি বিষয়ও এদিকেই ইঙ্গিত করে যে, এগুলোর সৃষ্টি ও পরিচালনার পিছনে এক মহাজ্ঞানী ও মহা বিজ্ঞ সত্তা বিদ্যমান। পানীয় পদার্থগুলো তরল না হলে যেমন এ কাজটি সম্ভব হত না, তেমনি বাতাসের মাঝে গতি সৃষ্টি না হলেও জাহাজ চলতে পারত না; এগুলোর পক্ষে সুদীর্ঘ পথ অতিক্রম করাও সম্ভব হত না। মহান আল্লাহ্‌ বলেন, “তিনি ইচ্ছে করলে বায়ুকে স্তব্ধ করে দিতে পারেন; ফলে নৌযানসমূহ নিশ্চল হয়ে পড়বে সমুদ্রপৃষ্ঠে। নিশ্চয়ই এতে অনেক নিদর্শন রয়েছে প্রত্যেক চরম ধৈর্যশীল ও একান্ত কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য।" [সূরা আশ-শুরা: ৩৩]

التفاسير:

external-link copy
165 : 2

وَمِنَ ٱلنَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ ٱللَّهِ أَندَادٗا يُحِبُّونَهُمۡ كَحُبِّ ٱللَّهِۖ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَشَدُّ حُبّٗا لِّلَّهِۗ وَلَوۡ يَرَى ٱلَّذِينَ ظَلَمُوٓاْ إِذۡ يَرَوۡنَ ٱلۡعَذَابَ أَنَّ ٱلۡقُوَّةَ لِلَّهِ جَمِيعٗا وَأَنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعَذَابِ

আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে যারা আল্লাহ্‌ ছাড়া অন্যকে আল্লাহ্‌র সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে, তারা তাদেরকে ভালবাসে আল্লাহ্‌র ভালবাসার মতই [১]; পক্ষান্তরে যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহ্‌কে সর্বাধিক ভালবাসে [২]। আর যারা যুলুম করেছে যদি তারা ‘আযাব দেখতে পেত [৩], (তবে তারা নিশ্চিত হত যে,) সমস্ত শক্তি আল্লাহ্‌রই। আর নিশ্চয় আল্লাহ্‌ শাস্তি দানে কঠোর। info

[১] অর্থাৎ তারা আল্লাহ্‌কে যেমন ভালবাসে তাদের মা’বুদদেরও তেমন ভালবাসে। এ থেকে বুঝা যাচ্ছে যে, আল্লাহ্ তা'আলার ভালবাসা কাফেরদের মনেও ছিল, কিন্তু তা ছিল শির্কযুক্ত। একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ্‌র জন্য নয়।

[২] আয়াতের এ অংশের অর্থ, কাফিরগণ তাদের মা’বুদদের যতবেশীই ভালবাসুক না কেন, ঈমানদারগণ আল্লাহ্‌কে তাদের থেকে অনেক বেশী ভালবাসে। কেননা, ঈমানদারগণ তাদের সম্পূর্ণ ভালোবাসা একমাত্র আল্লাহ্‌র জন্যই নির্দিষ্ট করেছে। অপরপক্ষে, কাফেরগণ তাদের ভালবাসা তাদের মা’বুদদের মধ্যে বন্টন করেছে।

[৩] মুফাস্‌সিরগণ আয়াতের এ অংশের বিভিন্ন অর্থ করেছেন:

১) যারা দুনিয়াতে শির্কের মাধ্যমে যুলুম করছে তারা যদি আখেরাতের শাস্তি দেখতে পেত এবং এও দেখতে পেত যে, যাবতীয় ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ্‌র এবং আল্লাহ্‌ কঠোর শাস্তিদাতা আর তাদের মা’বুদদের কোনো শক্তিই নেই, তাহলে তারা যাদেরকে আল্লাহ্‌র সমকক্ষ সাব্যস্ত করে ‘ইবাদাত করছে, কখনোই তাদের ইবাদাত করতো না।

২) যারা দুনিয়াতে শির্কের মাধ্যমে যুলুম করেছে তারা যদি আল্লাহ্‌র শক্তি ও কঠোর আযাব সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকত, তাহলে তারা তাদের মা’বুদদের ইবাদাত করার ক্ষতি সম্পর্কে অবহিত হতে পারত।

৩) সঠিক ‘কেরাআত’-এর মধ্যে কেউ কেউ (يرى) শব্দটিকে (ترى) পড়েছেন। তখন তার অর্থ হবে, হে নবী! আপনি যদি - যারা শির্কের মাধ্যমে যুলুম করছে - এ লোকদেরকে শাস্তি থেকে ভীত অবস্থায় দেখতে পেতেন, তাহলে আপনি জানতেন যে, সমস্ত ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ্‌র অথবা এর অর্থ হবে, হে নবী! আপনি যদি যালিমদেরকে শাস্তি প্রত্যক্ষরত অবস্থায় দেখতেন। কেননা, যাবতীয় শক্তি আল্লাহ্‌রই। তাহলে আপনি বুঝতে পারতেন যে, তাদের শাস্তির পরিমাণ কত ভয়াবহ!

৪) সঠিক ‘কেরাআত’-এর মধ্যে কেউ কেউ (يَرَوْن) শব্দটিকে (يُرَوْن) পড়েছেন। তখন তার অর্থ হবে, যারা যুলুম করেছে, যখন তাদেরকে শাস্তি দেখানো হবে তখন তারা দেখতে পাবে যে, সমস্ত শক্তি আল্লাহ্‌র আর আল্লাহ্‌ কঠোর শাস্তিদাতা।

التفاسير:

external-link copy
166 : 2

إِذۡ تَبَرَّأَ ٱلَّذِينَ ٱتُّبِعُواْ مِنَ ٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُواْ وَرَأَوُاْ ٱلۡعَذَابَ وَتَقَطَّعَتۡ بِهِمُ ٱلۡأَسۡبَابُ

যখন যাদের অনুসরণ করা হয়েছে তারা, যারা অনুসরণ করেছে তাদের থেকে নিজেদের মুক্ত করে নেবে এবং তারা শাস্তি দেখতে পাবে। আর তাদের পারস্পরিক সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাবে, info
التفاسير:

external-link copy
167 : 2

وَقَالَ ٱلَّذِينَ ٱتَّبَعُواْ لَوۡ أَنَّ لَنَا كَرَّةٗ فَنَتَبَرَّأَ مِنۡهُمۡ كَمَا تَبَرَّءُواْ مِنَّاۗ كَذَٰلِكَ يُرِيهِمُ ٱللَّهُ أَعۡمَٰلَهُمۡ حَسَرَٰتٍ عَلَيۡهِمۡۖ وَمَا هُم بِخَٰرِجِينَ مِنَ ٱلنَّارِ

আর যারা অনুসরণ করেছিল তারা বলবে, ‘হায়! যদি একবার আমাদের ফিরে যাওয়ার সুযোগ হতো তবে আমরাও তাদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করতাম যেমন তারা আমাদের থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে’ [১]। এভাবে আল্লাহ্‌ তাদের কার্যাবলী তদেরকে দেখাবেন, তাদের জন্য আক্ষেপস্বরূপ [২]। আর তারা কখনো আগুন থেকে বহির্গমণকারী নয়। info

[১] এ আয়াতে জাহান্নামবাসীদের মধ্যে নেতারা ও তাদের অনুসারীদের মধ্যে যে সমস্ত ঝগড়া-বিবাদ হবে সেটার কিছু কথোপকথন ও তাদের অনুতাপের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। পবিত্র কুরআনের অন্যান্য স্থানে এ বিষয়টি আরও বেশী করে বর্ণনা করা হয়েছে। যেমন বলা হয়েছে, “আর যারা কুফরী করেছে তারা বলে, ‘আমরা এ কুরআনে কখনো বিশ্বাস করব না, এর পূর্ববতী কিতাবসমূহেও নয়।’ হায়! আপনি যদি দেখতেন যালিমদেরকে যখন তাদের রবের সামনে দাঁড় করানো হবে তখন তারা পরস্পর বাদ-প্রতিবাদ করতে থাকবে, যাদেরকে দূর্বল মনে করা হত তারা ক্ষমতাদর্পীদেরকে বলবে, ‘তোমরা না থাকলে আমরা অবশ্যই মুমিন হতাম’। যারা ক্ষমতাদর্পী ছিল তারা, যাদেরকে দূর্বল মনে করা হত তাদেরকে বলবে, ‘তোমাদের কাছে সৎপথের দিশা আসার পর আমরা কি তোমাদেরকে তা থেকে নিবৃত্ত করেছিলাম? বরং তোমরাই ছিলে অপরাধী।’ যাদেরকে দুর্বল মনে করা হত তারা ক্ষমতাদর্পীদেরকে বলবে, ‘প্রকৃত পক্ষে তোমরাই তো দিনরাত চক্রান্তে লিপ্ত ছিলে, যখন তোমরা আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলে যেন আমরা আল্লাহ্‌র সাথে কুফরী করি এবং তাঁর জন্য সমকক্ষ (শির্ক) স্থাপন করি’। আর যখন তারা শাস্তি দেখতে পাবে তখন তারা অনুতাপ গোপন রাখবে এবং যারা কুফরী করেছে আমরা তাদের গলায় শৃংখল পরাব। তাদেরকে তারা যা করত তারই প্রতিফল দেয়া হবে।” [সূরা সাবা: ৩১-৩৩]

২) আবুল আলীয়াহ বলেন, তাদের খারাপ আমলসমূহ কিয়ামতের দিন তাদের জন্য আফসোস ও পরিতাপের কারণ হবে। আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “সেদিন প্রত্যেকেই জান্নাতে তাদের ঘর এবং জাহান্নামে তাদের ঘরের দিকে তাকাবে। সেদিন হচ্ছে আফসোসের দিন। তিনি বলেন, জাহান্নামীরা জান্নাতে তাদের জন্য নির্দিষ্ট ঘরের দিকে তাকাবে তারপর তাদেরকে বলা হবে, হায় যদি তোমরা এর জন্য আমল করতে! তখন তাদেরকে আফসোস পেয়ে বসবে। আর জান্নাতীরা জাহান্নামে তাদের জন্য নির্দিষ্ট তাদের ঘরের দিকে তাকাবে, তখন তাদের বলা হবে, যদি আল্লাহ্‌ তোমাদের উপর তার দয়া না করতেন তবে তো তোমরা সেখানকার অধিবাসীই হতে।" [মুস্তাদরাকে হাকিম ৪/৪৯৬-৪৯৭]

التفاسير:

external-link copy
168 : 2

يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ كُلُواْ مِمَّا فِي ٱلۡأَرۡضِ حَلَٰلٗا طَيِّبٗا وَلَا تَتَّبِعُواْ خُطُوَٰتِ ٱلشَّيۡطَٰنِۚ إِنَّهُۥ لَكُمۡ عَدُوّٞ مُّبِينٌ

হে মানুষ! তোমরা খাও যমীনে যা কিছু বৈধ ও পবিত্র [১] খাদ্যবস্তু রয়েছে তা থেকে। আর তোমরা শয়তানের পদাংক [২] অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শক্র। info

[১] (حلّ) শব্দের প্রকৃত অর্থ হলো গিট খোলা। যেসব বস্তু সামগ্রীকে মানুষের জন্য হালাল বা বৈধ করে দেয়া হয়েছে, তাতে যেন একটা গিঠই খুলে দেয়া হয়েছে এবং সেগুলোর উপর থেকে বাধ্যবাধকতা তুলে নেয়া হয়েছে। সাহ্‌ল ইবন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, মুক্তি বা পরিত্রাণ লাভ তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল [১] হালাল খাওয়া, [২] ফরয আদায় করা এবং [৩] রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতসমূহের আনুগত্য ও অনুসরণ করা। (طيّب) শব্দের অর্থ পবিত্র। শরী‘আতের দৃষ্টিতে হালাল এবং মানসিক দিক দিয়ে আকর্ষণীয় সমস্ত বস্তু-সামগ্ৰীও এরই অন্তর্ভুক্ত।

[২] (خُطُوَاتٌ) শব্দটি (خُطْوَةٌ) এর বহুবচন। (خُطْوَةٌ) বলা হয় পায়ের দুই ধাপের মধ্যবর্তী ব্যবধানকে। সে অনুসারে (خُطُوٰتِ الشَّيْطٰنِ) এর অর্থ হচ্ছে শয়তানী পদক্ষেপসমূহ বা শয়তানী কর্মকাণ্ড। হাদীসে কুদসীতে এসেছে, “আমি আমার বান্দাকে যে সম্পদ দিয়েছি তা বৈধ। আর আমি আমার সকল বান্দাকেই একনিষ্ঠ দীনের উপর সৃষ্টি করেছি। তারপর তাদের কাছে শয়তানরা এসে তাদেরকে তাদের দীন থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায় এবং তাদের উপর তা হারাম করে দেয় যা আমি তাদের জন্য হালাল করেছিলাম।" [মুসলিম ২৮৫৬] (অর্থাৎ তারা সেগুলোকে দেব-দেবীর নামে উৎসর্গ করে সেগুলোকে হারাম বানিয়ে ফেলে)

التفاسير:

external-link copy
169 : 2

إِنَّمَا يَأۡمُرُكُم بِٱلسُّوٓءِ وَٱلۡفَحۡشَآءِ وَأَن تَقُولُواْ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعۡلَمُونَ

সে তো শুধু তোমাদেরকে নির্দেশ দেয় [১] মন্দ ও অশ্লীল [২] কাজের এবং আল্লাহ্‌ সম্বন্ধে এমন সব বিষয় বলার যা তোমরা জান না [৩]। info

[১] এখানে শয়তানের নির্দেশদান অর্থ হচ্ছে মনের মাঝে ওয়াসওয়াসা বা সন্দেহের উদ্ভব করা। আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত এক হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আদম সন্তানের অন্তরে একাধারে শয়তানী প্রভাব এবং ফিরিশতার প্রভাব বিদ্যমান থাকে।’ [মুস্তাদরাকে হাকিম ৩/৫৪৩]

শয়তানী ওয়াস্‌ওয়াসার প্রভাবে অসৎ কাজের কল্যাণ এবং উপকারিতাগুলো সামনে এসে উপস্থিত হয় এবং তাতে সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার পথগুলো উন্মুক্ত হয়। পক্ষান্তরে ফিরিশতাদের ইলহামের প্রভাবে সৎ ও নেক কাজের জন্য আল্লাহ্ তাআলা যে কল্যাণ ও পুরস্কার দানের ওয়াদা করেছেন, সেগুলোর প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয় এবং সত্য ও সঠিক পথে চলতে গিয়ে অন্তরে শান্তি লাভ হয়। [দেখুন, সহীহ ইবন হিব্বান ৯৯৭]

[২] (سُوْءٌ) বলা হয় এমন বস্তু বা বিষয়কে যা দেখে রুচিজ্ঞানসম্পন্ন যে কোনো বুদ্ধিমান লোক দুঃখবোধ করে। (فَحْشَاءٌ) অর্থ অশ্লীল ও নির্লজ্জ কাজ। আবার অনেকে বলেন যে, এ ক্ষেত্রে (سُوْءٌ) এবং (فَحْشَاءٌ) - এর মর্ম যথাক্রমে ক্ষুদ্র ও বৃহৎ পাপ অর্থাৎ সাধারণ গোনাহ্‌ এবং কবীরা গোনাহ্‌।

[৩] না জেনে আল্লাহ্‌ ও তাঁর দীন সম্পর্কে কথা বলা বড় গোনাহ। এ আয়াতে এবং পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহ্‌ ও তাঁর দীন সম্পর্কে না জেনে কথা বলাকে বড় অপরাধ হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। যেমন, [সূরা আল-বাকারাহ: ৮০, সূরা আল-আরাফ: ২৮,৩৩, সূরা ইউনুস: ৬৮]

তবে এ আয়াতে ‘না জেনে’ কোনো কথা বলতে শয়তান মানুষকে নির্দেশ দেয় সেটা ব্যাখ্যা করে বলা হয় নি। পবিত্র কুরআনের অন্যত্র সেটার বর্ণনা দেয়া হয়েছে। যেমন, আল্লাহ্‌ ব্যতীত অন্য কারও সন্তুষ্টি বিধানের জন্য জন্তু-জানোয়ারকে ছেড়ে দেয়া, হালালকে হারাম করা ও হারামকে হালাল করা, আল্লাহ্‌র সাথে কাউকে শরীক করা, আল্লাহ্‌র জন্য সন্তান সাব্যস্ত করা, আল্লাহ্‌র জন্য এমন গুণাবলী সাব্যস্ত করা যা থেকে তিনি পবিত্র। যেমন আল্লাহ্‌ বলেন, “বাহীরাহ্‌, সায়েবাহ্‌, ওসীলাহ্‌ ও হামী আল্লাহ্‌ প্রবর্তণ করেননি; কিন্তু কাফিররা আল্লাহ্‌র প্রতি মিথ্যা আরোপ করে এবং তাদের অধিকাংশই উপলব্ধি করে না।" [সূরা আল-মায়েদাহ: ১০৩]

“তারা জিনকে আল্লাহ্‌র শরীক করে, অথচ তিনিই এদেরকে সৃষ্টি করেছেন, আর তারা অজ্ঞতাবশত আল্লাহ্‌র প্রতি পুত্র-কন্যা আরোপ করে; তিনি পবিত্র---মহিমান্বিত! এবং তারা যা বলে তিনি তার উর্ধ্বে।” [সূরা আল-আনআম: ১০০] “যারা নির্বুদ্ধিতার জন্য ও অজ্ঞানতাবশত নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করে এবং আল্লাহ্‌ প্রদত্ত জীবিকাকে আল্লাহ্‌ সম্বন্ধে মিথ্যা রটনা করার উদ্দেশ্যে নিষিদ্ধ গণ্য করে তারা তো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।" [সূরা আল-আনআম: ১৪০]

“বলুন, ‘তোমরা কি ভেবে দেখেছ আল্লাহ্‌ তোমাদের যে রিযক দিয়েছেন তারপর তোমরা তার কিছু হালাল ও কিছু হারাম করেছ?" বলুন, ‘আল্লাহ্‌ কি তোমাদেরকে এটার অনুমতি দিয়েছেন, না তোমরা আল্লাহ্‌র উপর মিথ্যা রটনা করছ।" [সূরা ইউনুস: ৫৯]

“তারা বলে, 'আল্লাহ্‌ সন্তান গ্রহণ করেছেন। তিনি মহান পবিত্র! তিনি অভাবমুক্ত! যা কিছু আছে আসমানসমূহে ও যা কিছু আছে পৃথিবীতে তা তাঁরই। এ বিষয়ে তোমাদের কাছে কোনো সনদ নেই। তোমরা কি আল্লাহ্‌র উপর এমন কিছু বলছ যা তোমরা জান না?” [সূরা ইউনুস: ৬৮]

“তোমাদের জি্‌হ্বা মিথ্যা আরোপ করে বলে আল্লাহ্‌র প্রতি মিথ্যা আরোপ করার জন্য তোমরা বলো না, ‘এটা হালাল এবং ওটা হারাম’। নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ্‌র উপর মিথ্যা উদ্ভাবন করবে তারা সফলকাম হবে না।" [সূরা আন-নাহল: ১১৬]

“আর তারা আল্লাহ্‌কে যথোচিত সম্মান করেনি অথচ কিয়ামতের দিন সমস্ত যমীন থাকবে তাঁর হাতের মুঠিতে এবং আসমানসমূহ থাকবে ভাঁজ করা অবস্থায় তার ডান হাতে। পবিত্র ও মহান তিনি, তারা যাদেরকে শরীক করে তিনি তাদের উধের্ব।” [সূরা আয-যুমার: ৬৭]

التفاسير: