সূরা সম্পর্কিত তথ্য:
৯৮- সূরা আল-বায়্যিনাহ
৮ আয়াত, মাদানী
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উবাই ইবন কা‘ব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুকে বললেন, আল্লাহ্ আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন আমি তোমাকে “লাম ইয়াকুনিল্লাযিনা কাফারু” (সূরা) পড়ে শোনাই। উবাই ইবন কা‘ব বললেন, আমার নাম নিয়ে আপনাকে বলেছেন? রাসূল বললেন, হ্যাঁ। উবাই ইবন কা‘ব তখন (খুশিতে) কেঁদে ফেললেন।” [বুখারী ৩৮০৮, ৪৯৫৯, মুসলিম ৭৯৯, মুসনাদে আহমাদ ৩/২৭৩]
-----------------------------
[১] আহলে কিতাব ও মুশরিক উভয় দলই কুফরী কর্মকাণ্ডে জড়িত হলেও দু’দলকে দু’টি পৃথক নামব দেয়া হয়েছে। যাদের কাছে আগের নবীদের আনা কোনো আসমানী কিতাব ছিল, তা যত বিকৃত আকারেই থাক না কেন, তারা তা মেনে চলতো, তাদেরকে বলা হয় আহলে কিতাব; আর তারা হল ইয়াহুদী ও নাসারাগণ। আর যারা মূর্তি-পূজারী বা অগ্নি-পূজারী, তারা-ই মুশরিক। [ইবন কাসীর]
[২] অর্থাৎ তারা তাদের কুফৱী থেকে নিবৃত্ত হবে না যতক্ষণ না একটি সুস্পষ্ট প্রমাণ এসে তাদেরকে কুফরীর প্রতিটি গলদ ও সত্য বিরোধী বিষয় বুঝাবে এবং যুক্তি-প্রমাণের সাহায্যে সুস্পষ্ট পদ্ধতিতে সত্য সঠিক পথ তাদের সামনে পেশ করবে, এর মাধ্যমে তারা কুফারী থেকে বের হতে পারবে। এর মানে এ নয় যে, এই সুস্পষ্ট প্রমাণটি এসে যাওয়ার পর তারা সাবাই কুফৱী পরিত্যাগ করবে। তবে তার আসার পরও তাদের মধ্য থেকে যারা নিজেদের কুফরীর ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল তার দায়িত্ব তাদের ওপরই বর্তায়। এরপর তারা আল্লাহর কাছে অভিযোগ করতে পারবে না যে, আপনি আমাদের হেদায়াতের কোন ব্যবস্থা করেননি। আল্লাহ্ অন্যত্র বলেন, “অনেক রাসূল পাঠিয়েছি যাদের কথা আগে আমি আপনাকে বলেছি এবং অনেক রাসূল, যাদের কথা আপনাকে বলিনি এবং মূসার সাথে আল্লাহ্ সাক্ষাত কথা বলেছিলেন। এই রাসূলগণকে সুসংবাদদানকারী ও সতর্ককারী করা হয়েছে যাতে রাসূলগণের পর লোকদের জন্য আল্লাহর বিরুদ্ধে কোনো যুক্তি না থাকে।” [সূরা আন-নিসা ১৬৪-১৬৫]
আরও বলেন, “হে আহলে কিতাব! রাসূলদের সিলসিলা দীর্ঘকাল বন্ধ থাকার পর প্রকৃত সত্যকে সুস্পষ্ট করার জন্য তোমাদের কাছে আমার রাসূল এসেছে। যাতে তোমরা বলতে না পারো আমাদের কাছে না কোনো সুসংবাদদানকারী এসেছিল, না এসেছিল কোনো সতর্ককারী। কাজেই নাও, এখন তোমাদের কাছে সুসংবাদদানকারী এসে গেছে এবং সতর্ককারীও।” [সূরা আল-মায়েদাহ ১৯]
[১] صحف শব্দটি صحيفة এর বহুবচন। আভিধানিক অর্থে ‘সহীফা’ বলা হয় লেখার জন্য প্রস্তুত, কিংবা লিখিত পাতাকে, এখানে পবিত্র সহীফা মানে হচ্ছে এমন সব সহীফা যার মধ্যে কোনো প্রকার বাতিল, কোনো ধরনের গোমরাহী ও ভ্ৰষ্টতা নেই এবং শয়তান যার নিকটে আসে না। এখানে পবিত্র সহীফা তেলাওয়াত করে শুনানো অর্থ তিনি সেসব বিধান শুনাতেন, যা পরে সহীফার মাধ্যমে সংরক্ষিত করা হয়। কেননা প্রথমে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোনো সহীফা থেকে নয় স্মৃতি থেকে পাঠ করে শুনাতেন। [ফাতহুল কাদীর] অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, فِي صُحُفٍ مُّكَرَّمَةٍ * مَّرْفُوعَةٍ مُّطَهَّرَةٍ * بِأَيْدِي سَفَرَةٍ * كِرَامٍ بَرَرَةٍ “ওটা আছে মর্যাদা সম্পন্ন লিপিসমূহে, যা উন্নত, পবিত্র, মহান, পূত-চরিত্র লেখকের হাতে লিখিত।” [সূরা আবাসা ১৩-১৬]
[১] আহলে-কিতাবদের নিকটেই রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের গুণাবলী, পরিচিতি ইত্যাদি জ্ঞান ছিল, তাই আয়াতে তাদের কথাই বলা হয়েছে- মুশরেকদের উল্লেখ করা হয়নি। আহলে কিতাবরা সত্যকে জানার পরও অনেকে তা অস্বীকার করেছিল। কিন্তু প্ৰথম ব্যাপারে উভয় দলই শরীক ছিল, তাই প্রথম আয়াতে উভয়কেই অন্তর্ভুক্ত করে لَم يَكُنِ الَّذِيْنَ كَفَرُ وْامِنْ اَهْلِ الْكِتٰبِ وَالْمُشْرِكِيْنَ বলা হয়েছে। [আদ্ওয়াউল বায়ান]
[১] অর্থাৎ আহলে-কিতাবদেরকে তাদের কিতাবে আদেশ করা হয়েছিল খাঁটি মনে ও একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করতে, সালাত কায়েম করতে ও যাকাত দিতে। এরপর বলা হয়েছে, এ নির্দেশটি শুধু বর্তমান আহলে কিতাবদের জন্য নয়; বরং সঠিক মিল্লাতের অথবা আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ সমস্ত কিতাবের তরীকাও তাই। [সা‘দী]