Prijevod značenja časnog Kur'ana - Prijevod na bengalski jezik - Ebu bekr Zekerija

Broj stranice:close

external-link copy
17 : 8

فَلَمۡ تَقۡتُلُوهُمۡ وَلَٰكِنَّ ٱللَّهَ قَتَلَهُمۡۚ وَمَا رَمَيۡتَ إِذۡ رَمَيۡتَ وَلَٰكِنَّ ٱللَّهَ رَمَىٰ وَلِيُبۡلِيَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ مِنۡهُ بَلَآءً حَسَنًاۚ إِنَّ ٱللَّهَ سَمِيعٌ عَلِيمٞ

সুতরাং তোমরা তাদেরকে হত্যা করনি বরং আল্লাহই তাদেরকে হত্যা করেছেন [১]। আর আপনি যখন নিক্ষেপ করেছিলেন তখন আপনি নিক্ষেপ করেননি বরং আল্লাহ্‌ই নিক্ষেপ করেছিলেন [২] এবং এটা মুমিনদেরকে আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে উত্তমরূপে পরীক্ষার (মাধ্যমে উচ্চ মর্যাদার অসীন করার) জন্য [৩]; নিশ্চয় আল্লাহ্‌ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ। info

[১] এ আয়াতে যে ঘটনা বর্ণিত হয়েছে তা হচ্ছে, বদর যুদ্ধের দিনে যখন মক্কার এক হাজার জওয়ানের বাহিনী ময়দানে এসে উপস্থিত হয়, তখন মুসলিমদের সংখ্যাল্পতা এবং নিজেদের সংখ্যাধিক্যের কারণে তারা একান্ত গর্বিত ও সদম্ভ ভঙ্গিতে উপস্থিত হয়। সে সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দো’আ করেন: ‘ইয়া আল্লাহ! আপনাকে মিথ্যা জ্ঞানকারী এই কুরাইশরা গর্ব ও দম্ভ নিয়ে এগিয়ে আসছে, আপনি বিজয়ের যে প্রতিশ্রুতি আমাকে দিয়েছেন, তা যথাশীঘ্র পূরণ করুন। তখন জিবরাঈল আলাইহিস সালাম এসে নিবেদন করেন: ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি একমুঠো মাটি তুলে নিয়ে শক্রবাহিনীর প্রতি নিক্ষেপ করুন। তিনি তাই করলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিনবার মাটি ও কাঁকরের মুঠো তুলে নেন এবং একবার শক্রবাহিনীর ডান অংশের উপর, একবার বাম অংশের উপর এবং একবার সামনের দিকে নিক্ষেপ করেন। সেই এক কিংবা তিন মুঠি কাঁকরকে আল্লাহ তার একান্ত কুদরতে এমন বিস্তৃত করে দেন যে, প্রতিপক্ষের সৈন্যদের এমন একটি লোকও বাকী ছিল না, যার চোখ অথবা মুখমণ্ডলে এই ধুলি ও কাকর পৌঁছেনি। আর তারই প্রতিক্রিয়ায় গোটা শক্রবাহিনীর মাঝে এক ভীতির সঞ্চার হয়ে যায়। [তাবারী] এভাবে মুসলিমগণ এই মহান বিজয় লাভে সমর্থ হন। আয়াতে মুসলিমদেরকে হেদায়াত দান করা হয় যে, নিজের চেষ্টা-চরিত্রের জন্য গর্ব করো না; যা কিছু ঘটেছে তা শুধুমাত্র তোমাদের চেষ্টা ও পরিশ্রমেরই ফসল নয়; বরং এটা আল্লাহ্ তা'আলার একান্ত সাহায্য ও সহায়তারই ফল। তোমাদের হাতে যেসব শক্র নিহত হয়েছে প্রকৃতপক্ষে তাদেরকে তোমরা হত্যা করনি; বরং আল্লাহ্ তা'আলাই হত্যা করেছেন।

[২] অর্থাৎ আপনি যে কাঁকরের মুঠো নিক্ষেপ করেছেন প্রকৃতপক্ষে তা আপনি নিক্ষেপ করেননি, বরং স্বয়ং আল্লাহই নিক্ষেপ করেছেন। কাঁকর নিক্ষেপের এই কাজটি যদিও আপনার দ্বারা হয়েছিল, কিন্তু সেগুলো কাফেরদের চোখে-মুখে পৌঁছে দেয়ার কাজটি ছিল আল্লাহর। [সা'দী]


[৩] অর্থাৎ আমি মুমিনগণকে এই মহাবিজয় দিয়েছি তাদের পরিশ্রমের পরিপূর্ণ প্রতিদান দেয়ার উদ্দেশ্যে। بَلاءً এর শব্দগত অর্থ হল পরীক্ষা। অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা বিনা যুদ্ধেই মুসলিমদের বিজয় দানে সক্ষম, কিন্তু তিনি যাচ্ছেন যেন মুসলিমরা যুদ্ধ করে উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হতে পারে। [সা'দী] بَلاءً দ্বারা নেয়ামতও উদ্দেশ্য হতে পারে। তখন অর্থ হবে, আমি তাদেরকে যে নে'আমত দান করেছি তারা যেন সেটার শুকরিয়া করে। [আইসারুত তাফসীর]

التفاسير:

external-link copy
18 : 8

ذَٰلِكُمۡ وَأَنَّ ٱللَّهَ مُوهِنُ كَيۡدِ ٱلۡكَٰفِرِينَ

এটা তোমাদের জন্য, আর নিশ্চই আল্লাহ্‌ কাফেরদের ষড়যন্ত্র দুর্বল করেন [১]। info

[১] অর্থাৎ মুসলিমদেরকে এ বিজয় এ কারণেই দেয়া হয়েছে যেন এর মাধ্যমে কাফেরদের পরিকল্পনা ও কলা-কৌশলসমূহকে নস্যাৎ করে দেয়া যায় এবং যাতে কাফেররা এ কথা উপলব্ধি করে যে, আল্লাহ্ তা'আলার সহায়তা আমাদের প্রতি নেই এবং কোনো কলা-কৌশল তথা পরিকল্পনাই আল্লাহ্ তা'আলার সাহায্য ছাড়া কৃতকার্য হতে পারে না। তাদের কলা-কৌশল তাদেরই বিরুদ্ধে যাবে। [সাদী]

التفاسير:

external-link copy
19 : 8

إِن تَسۡتَفۡتِحُواْ فَقَدۡ جَآءَكُمُ ٱلۡفَتۡحُۖ وَإِن تَنتَهُواْ فَهُوَ خَيۡرٞ لَّكُمۡۖ وَإِن تَعُودُواْ نَعُدۡ وَلَن تُغۡنِيَ عَنكُمۡ فِئَتُكُمۡ شَيۡـٔٗا وَلَوۡ كَثُرَتۡ وَأَنَّ ٱللَّهَ مَعَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ

যদি তোমরা মীমাংসা চেয়ে থাক, তাহলে তা তো তোমাদের কাছে এসেছে; আর যদি তোমরা বিরত হও তবে তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর, কিন্তু যদি তোমরা আবার যুদ্ধ করতে আস তবে আমরাও আবার শাস্তি নিয়ে আসব। আর তোমাদের দল সংখ্যায় বেশী হলেও তোমাদের কোনো কাজে আসবে না। আর নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের সাথে আছেন [১]। info

[১] এ আয়াতে পরাজিত কুরাইশ কাফেরদের সম্বোধন করে একটি ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে যা মুসলিমদের সাথে মোকাবেলা করার উদ্দেশ্যে কুরাইশ বাহিনীর মক্কা থেকে বের হওয়ার সময় ঘটেছিল। ঘটনাটি এই যে, কুরাইশ কাফেরদের বাহিনী মুসলিমদের সাথে যুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে প্রস্তুতি নেয়ার পর মক্কা থেকে রওয়ানা হওয়ার প্রাক্কালে বাহিনী প্রধান আবু জাহল প্রমূখ বায়তুল্লাহর পর্দা ধরে প্রার্থনা করেছিল। আর আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে, এই দো'আ করতে গিয়ে তারা নিজেদের বিজয়ের দো'আর পরিবর্তে সাধারণ বাক্যে এভাবে দোআ করেছিল: ইয়া আল্লাহ! উভয় বাহিনীর মধ্যে যেটি উত্তম ও উচ্চতর, উভয় বাহিনীর মধ্যে যেটি হেদায়াতের উপর রয়েছে এবং উভয় দলের যেটি বেশী ভদ্র ও শালীন এবং উভয়ের মধ্যে যে দীন উত্তম তাকেই বিজয় দান কর। [মুসনাদে আহমাদ ৫/৪৩১]

এই নির্বোধেরা এ কথাই ভাবছিল যে, মুসলিমদের তুলনায় আমরাই উত্তম ও উচ্চতর এবং অধিক হেদায়াতের উপর রয়েছি, কাজেই এ দোআটি আমাদেরই অনুকূলে হচ্ছে। আর এই দোআর মাধ্যমে তারা কামনা করছিল, আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে যেন হক ও বাতিল তথা সত্য ও মিথ্যার ফয়সালা হয়ে যায়। তাদের ধারণা ছিল, যখন আমরা বিজয় অর্জন করব, তখন এটাই হবে আল্লাহ্ তা'আলার পক্ষ থেকে আমাদের সত্যতার ফয়সালা। কিন্তু তারা একথা জানত না যে, এই দোআর মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে তারা নিজেদের জন্য বদদোআ ও মুসলিমদের জন্য নেকদোআ করে যাচ্ছে। যুদ্ধের ফলাফল সামনে আসার পর আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে বলে দিলেন (وَاَنَّ اللهَ مَعَ الْمُؤْمِنِيْنَ) অর্থাৎ আল্লাহ যখন মুমিনদের সাথে রয়েছেন, তখন কোনো দল তোমাদের কিইবা কাজে লাগতে পারে?

التفاسير:

external-link copy
20 : 8

يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَطِيعُواْ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَلَا تَوَلَّوۡاْ عَنۡهُ وَأَنتُمۡ تَسۡمَعُونَ

হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর এবং তোমরা যখন তাঁর কথা শোন তখন তা হতে মুখ ফিরিয়ে নিও না [১]। info

তৃতীয় রুকূ’

[১] মুসলিমগণ (তাদের সংখ্যাল্পতা ও নিঃসম্বলতা সত্বেও) শুধুমাত্র আল্লাহ তা'আলার সাহায্যের মাধ্যমেই এহেন বিপুল বিজয় অর্জন করতে সমর্থ হয়েছেন। আর এ সাহায্য আল্লাহর প্রতি তাদের আনুগত্যের ফল। এই আনুগত্যের উপর দৃঢ়তার সাথে স্থির থাকার জন্য মুসলিমদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে “হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য কর" এবং তাতে স্থির থাক। কারণ, তোমরা আল্লাহর কিতাবের নির্দেশ, অসীয়ত, নসীহত সবই শুনতে পাচ্ছ। সুতরাং কুরআন ও সত্যবাণী শুনে নেয়ার পরেও তোমরা আনুগত্য-বিমুখ হয়ো না। বিমুখ হলে বর্তমান অবস্থা থেকে তোমাদেরকে নিকৃষ্ট অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হবে। [সা’দী]

التفاسير:

external-link copy
21 : 8

وَلَا تَكُونُواْ كَٱلَّذِينَ قَالُواْ سَمِعۡنَا وَهُمۡ لَا يَسۡمَعُونَ

আর তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা বলে, ‘শুনলাম’; আসলে তারা শুনে না [১]। info

[১] অর্থাৎ তোমরা তাদের মত হয়ো না যারা মুখে এ কথা বলে সত্য যে, আমরা শুনে নিয়েছি, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কিছুই শোনেনি। কাজেই তাদের এই শ্রবণ না শোনারই শামিল। মুসলিমদেরকে এদের অনুরূপ হতে বারণ করা হয়েছে। কারণ, ঈমান দাবীর নাম নয়, ঈমান হচ্ছে যা অন্তরে প্রবেশ করে এবং যা সত্য হওয়ার উপর বান্দার আমল প্রমাণ বহন করে। [সা’দী]

التفاسير:

external-link copy
22 : 8

۞ إِنَّ شَرَّ ٱلدَّوَآبِّ عِندَ ٱللَّهِ ٱلصُّمُّ ٱلۡبُكۡمُ ٱلَّذِينَ لَا يَعۡقِلُونَ

নিশ্চয় আল্লাহ্‌র কাছে নিকৃষ্টতম বিচরণশীল জীব হছে বধির, বোবা, যারা বুঝে না [১]। info

[১] (الدَّوَابِّ) শব্দটি دابة এর বহুবচন। অভিধান অনুযায়ী যমীনের উপর বিচরণকারী প্রতিটি জীবকেই دابة বলা হয়। [কাশশাফ] কিন্তু সাধারণ প্রচলন ও পরিভাষায় دابة বলা হয় শুধুমাত্র চতুষ্পদ জন্তুকে। সুতরাং আয়াতের অর্থ দাড়ায় এই যে, আল্লাহর নিকট সে সমস্ত লোকই সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট ও চতুষ্পদ জীবতুল্য যারা সত্য ও ন্যায় শ্রবণের ব্যাপারে বধির এবং তা গ্রহণ করার ব্যাপারে মুক। কারণ আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে হক জানা ও সে পথে চলার জন্য চোখ ও কান দিয়েছিলেন, কিন্তু তারা সেটা না করে সেগুলোকে ভিন্ন পথে পরিচালিত করেছে। [সা’দী]

التفاسير:

external-link copy
23 : 8

وَلَوۡ عَلِمَ ٱللَّهُ فِيهِمۡ خَيۡرٗا لَّأَسۡمَعَهُمۡۖ وَلَوۡ أَسۡمَعَهُمۡ لَتَوَلَّواْ وَّهُم مُّعۡرِضُونَ

আর আল্লাহ্‌ যদি তাদের মধ্যে ভাল কিছু জানতেন তবে তিনি তাদেরকে শুনাতেন। কিন্তু তিনি তাদেরকে শুনালেও তারা উপেক্ষা করে মুখ ফিরিয়ে নিত [১]। info

[১] অর্থাৎ আল্লাহ তা'আলা যদি তাদের মধ্যে সামান্যতম কল্যাণকর দিক তথা সৎচিন্তা দেখতেন, তবে তাদের বিশ্বাস সহকারে শোনার সামর্থ্য দান করতেন কিন্তু বর্তমান সত্যানুরাগ না থাকা অবস্থায় যদি আল্লাহ তা’আলা সত্য ও ন্যায় কথা তাদেরকে শুনিয়ে দেন, তাহলে তারা অনীহাভরে তা থেকে বিমুখতা অবলম্বন করবে। তাদের এ বিমুখতা এ কারণে হবে না যে, তারা দীনের মধ্যে কোনো আপত্তিকর বিষয় দেখতে পেয়েছে, সে জন্যই তা গ্রহণ করেনি; বরং প্রকৃতপক্ষে তারা সত্যের বিষয়ে কোনো লক্ষ্যই করেনি। এর দ্বারা বোঝা গেল যে, আল্লাহ্ তা'আলা শুধু তাকেই ঈমান থেকে বঞ্চিত করেন যার মধ্যে কোনো কল্যাণ অবশিষ্ট নেই, যে পবিত্র হতে চায় না, যার কোনো ভাল কথা কোনো ফল দেয় না। আর এতে রয়েছে বিরাট হিকমত ও রহস্য। [সা’দী]

التفاسير:

external-link copy
24 : 8

يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ ٱسۡتَجِيبُواْ لِلَّهِ وَلِلرَّسُولِ إِذَا دَعَاكُمۡ لِمَا يُحۡيِيكُمۡۖ وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ يَحُولُ بَيۡنَ ٱلۡمَرۡءِ وَقَلۡبِهِۦ وَأَنَّهُۥٓ إِلَيۡهِ تُحۡشَرُونَ

হে ঈমানদারগণ! রাসূল যখন তোমাদেরকে এমন কিছুর দিকে ডাকে যা তোমাদেরকে প্রাণবন্ত করে, তখন তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের ডাকে সাড়া দেবে এবং জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহ মানুষ ও তার হৃদয়ের মাঝে অন্তরায় হন [১]। আর নিশ্চয় তাঁরই দিকে তোমাদেরকে একত্রিত করা হবে। info

[১] অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা মানুষের এবং তার অন্তরের মাঝে অন্তরায় হয়ে থাকেন। এ বাক্যটির বিভিন্ন অর্থ হতে পারে।

(এক) একটি অর্থ হতে পারে যে, যখনই কোনো সৎকাজ করার কিংবা পাপ থেকে বিরত থাকার সুযোগ আসে, তখন সঙ্গে সঙ্গে তা করে ফেল: এতটুকু বিলম্ব করো না এবং অবকাশকে গনীমত জ্ঞান কর। কারণ, যে কোনো সময় মানুষের রোগ-শোক, মৃত্যু কিংবা এমন কোনো কাজ উপস্থিত হয়ে যেতে পারে, যাতে সে কাজ করার আর অবকাশ থাকে না। সুতরাং মানুষের কর্তব্য হলো আয়ু এবং সময়ের অবকাশকে গনীমত মনে করা। আজকের কাজ কালকের জন্য ফেলে না রাখা। কারণ, এ কথা কারোরই জানা নেই যে, কাল কি হবে। পরবর্তীতে ভালো কাজ করতে চাইলে সক্ষম নাও হতে পার। [সা’দী]

(দুই) এ বাক্যের দ্বিতীয় মর্ম এও হতে পারে যে, এতে আল্লাহ্ তা'আলা যে বান্দার অতি সন্নিকটে তাই বলে দেয়া হয়েছে। প্রতিটি মানুষ আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, যখনই তিনি কোনো বান্দাকে অকল্যাণ থেকে রক্ষা করতে চান, তখন তিনি তার অন্তর ও পাপের মাঝে অন্তরায় সৃষ্টি করে দেন। আবার যখন কারো ভাগ্যে অমঙ্গল থাকে, তখন তার অন্তর ও সৎকর্মের মাঝে অন্তরায় সৃষ্টি করে দেয়া হয়। সে কারণেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময় এই দোআ করতেন

(يَامُقَلِّبَ الْقُلُوْب ثَبِّتْ قَلْبِيْ عَلٰى دِيْنِكَ)

অর্থাৎ ‘হে অন্তরসমূহের বিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে আপনার দীনের উপর প্রতিষ্ঠিত রাখুন।' [তিরমিযী ২১৪১] [ইবন কাসীর]

(তিন) ইবন অববাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এর অর্থ আল্লাহ কাফেরের ঈমান ও মুমিনের কুফরীর মাঝে অন্তরায় হয়ে যান। [মুসানদে আহমাদ ৩/১১২] [ইবন কাসীর]

(চার) কেউ কেউ বলেন, আয়াতটি যেহেতু বদর যুদ্ধের সাথে সংশ্লিষ্ট সেহেতু তার অর্থ হবে- জেনে রাখ, আল্লাহ তার নেক বান্দাদের ভাগ্যকে নিরাপত্তায় রূপান্তরিত করেন। আর কাফেরদের প্রশান্ত অন্তরে অশান্তি ও ভয়ে পরিবর্তন করে দেবেন। আবার তিনি ইচ্ছে করলে মুসলিমদের নিরাপদ অবস্থাকে ভীত অবস্থায় রুপান্তরিত করতে পারেন। [ফাতহুল কাদীর]

التفاسير:

external-link copy
25 : 8

وَٱتَّقُواْ فِتۡنَةٗ لَّا تُصِيبَنَّ ٱلَّذِينَ ظَلَمُواْ مِنكُمۡ خَآصَّةٗۖ وَٱعۡلَمُوٓاْ أَنَّ ٱللَّهَ شَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ

আর তোমরা ফেৎনা থেকে বেঁচে থাক যা বিশেষ করে তোমাদের মধ্যে যারা যালিম শুধু তাদের উপরই আপতিত হবে না। আর জেনে রাখ যে, নিশ্চয় আল্লাহ্‌ শাস্তি দানে কঠোর [১]। info

[১] এ আয়াতে কিছু পাপ থেকে বেঁচে থাকার জন্য বিশেষভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কারণ, পাপের আযাব শুধু পাপীদের পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং পাপ করেনি এমন লোকও তাতে জড়িয়ে পড়ে। সে পাপ যে কি, সে সম্পর্কে মুফাসসিরীন ওলামায়ে কেরামের বিভিন্ন মত রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, এখানে ফেতনা বলতে সে সব সামাজিক সামগ্রিক ফেতনা বুঝানো হয়েছে, যা এক সংক্রামক ব্যাধির মত জন-সমাজে ছড়িয়ে পড়ে, যাতে কেবল গোনাহগার লোকরাই নিপতিত হয় না, সে লোকেরাও এতে পড়ে মার খায়, যারা গোনাহগার সমাজে বসবাস করাকে বরদাশত করে থাকে। [ইবন কাসীর] মুতাররিফ বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইরকে জিজ্ঞেস করলাম, হে আবু আবদিল্লাহ! আপনারা কী জন্য এসেছেন? আপনারা এক খলীফা (উসমান) কে নিঃশেষ করে দিয়েছেন। তারপর তার রক্তের দাবী নিয়ে এসেছেন। তখন আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর বললেন, আমরা وَاتَّقُوْافِتْنَةً এ আয়াতটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, আবু বকর, উমর ও উসমানের সময় পড়েছিলাম, কিন্তু আমরা মনে করেনি যে, আমরাই এর দ্বারা উদ্দিষ্ট। শেষ পর্যন্ত তা আমাদের মধ্যেই যেভাবে ঘটার ঘটে গেল। [মুসনাদে আহমাদ ১/১৬৫] [ইবন কাসীর]

কোনো কোনো মুফাসসির বলেন, ‘আম্‌র বিল মা’রূফ’ তথা সৎকাজের নির্দেশ দান এবং ‘নাহী আনিল মুনকার’ অর্থাৎ অসৎকাজ থেকে মানুষকে বিরত রাখার চেষ্টা পরিহার করাই হল এই পাপ। [ইবন কাসীর] আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আল্লাহ মানুষকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন তারা নিজের এলাকায় কোনো অপরাধ ও পাপানুষ্ঠান হতে না দেয়। কারণ, যদি তারা এমন না করে, অর্থাৎ সামর্থ্য থাকা সত্বেও অপরাধ ও পাপকৰ্ম অনুষ্ঠিত হতে দেখে তা থেকে বারণ না করে, তবে আল্লাহ স্বীয় আযাব সবার উপরই ব্যাপক করে দেন। [তাবারী] তখন তা থেকে না বাঁচতে পারে কোনো গোনাহগার, আর না বাচতে পারে নিরপরাধ।

এখানে নিরপরাধ বলতে সেসব লোককেই বোঝানো হচ্ছে যারা মূল পাপে পাপীদের সাথে অংশগ্রহণ করেনি, কিন্তু তারাও ‘আমর বিল মা’রূফ বর্জন করার পাপে পাপী। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “যখন কোনো জাতির এমন অবস্থার উদ্ভব হয় যে, সে নিজের এলাকায় পাপকৰ্ম অনুষ্ঠিত হতে দেখে বাধা দানের ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তাতে বাধা দেয় না, তখন আল্লাহর আযাব সবাইকে ঘিরে ফেলে। [আবু দাউদ ৩৭৭৬, ইবন মাজাহ ৩৯৯৯] আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু তার এক ভাষণে বলেছেন যে, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন যে, মানুষ যখন কোনো অত্যাচারীকে দেখেও অত্যাচার থেকে তার হাতকে প্রতিরোধ করবে না, শীঘ্রই আল্লাহ তাদের সবার উপর ব্যাপক আযাব নাযিল করবেন। [আবু দাউদ ৩৭৭৫, তিরমিয়ী ২০৯৪] নু’মান ইবন বশীর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যারা আল্লাহর কানুনের সীমালংঘনকারী গোনাহগার এবং যারা তাদের দেখেও মৌনতা অবলম্বন করে, অর্থাৎ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে সেই পাপানুষ্ঠান থেকে বাধা দান করে না, এতদুভয় শ্রেণীর উদাহরণ এমন একটি সামুদ্রিক জাহাজের মত যাতে দু’টি শ্রেণী রয়েছে এবং নীচের শ্রেণীর লোকেরা উপরে উঠে এসে নিজেদের প্রয়োজনে পানি নিয়ে যায়, যাতে উপরের লোকেরা কষ্ট অনুভব করে। নীচের লোকেরা বলে বসে যে, যদি আমরা জাহাজের তলায় ছিদ্র করে নিজেদের কাজের জন্য পানি সংগ্রহ করতে শুরু করি, তবে আমরা আমাদের উপরের লোকদের কষ্ট দেয়া থেকে অব্যাহতি পাব। এখন যদি নিচের লোকদেরকে এ কাজ করতে দেয়া হয় এবং বাধা না দেয়া হয়, তবে বলাবাহুল্য যে, গোটা জাহাজেই পানি ঢুকে পড়বে। আর তাতে নীচের লোকেরা যখন ডুবে মরবে, তখন উপরের লোকেরাও বাঁচতে পারবে না।” [সহীহ আল-বুখারী ২৪৯৩] এসব বর্ণনার ভিত্তিতে অনেক মুফাসসির মনীষী সাব্যস্ত করেছেন যে, এ আয়াতে فتنة (ফিতনাহ) বলতে এই ‘পাপ’ অর্থাৎ ‘সৎকাজের নির্দেশ দান ও অসৎ কাজে বাধা দান’ বর্জনকেই বোঝানো হয়েছে।

التفاسير: