[১] অর্থাৎ তাদের একটি নির্বুদ্ধিতা হচ্ছে, তারা ফেরেশতাদের উপাস্য বানিয়ে নিয়েছে, যারা আল্লাহ তা'আলার কাছে সুপারিশ পর্যন্ত করার সামর্থ ও সাহস রাখে না।
তাছাড়া আরো নির্বুদ্ধিতা হচ্ছে এই যে, তারা তাদেরকে নারী বলে মনে করে এবং আল্লাহর কন্যা বলে আখ্যায়িত করে। এসব অজ্ঞতায় নিমজ্জিত হওয়ার মৌলিক কারণ হলো, তারা আখেরাতকে বিশ্বাস করে না। তারা যদি আখেরাতে বিশ্বাস করতো তাহলে এ ধরনের দায়িত্বহীন কথাবার্তা বলতে পারত না। [ফাতহুল কাদীর]
[১] অর্থাৎ ফেরেশতারা যে স্ত্রীলোক এবং আল্লাহর কন্যা এ বিশ্বাসটি তারা জ্ঞান অর্জনের কোনো একটি মাধ্যম ছাড়া জানতে পেরেছে বলে অবলম্বন করেনি। বরং নিজেদের অনুমান ও ধারণার ওপর ভিত্তি করে এ বিষয়টা স্থির করে নিয়েছে এবং এর ওপর ভিত্তি করেই এ সমস্ত আস্তানা গড়ে নিয়েছে। [ফাতহুল কাদীর]
[১] এখানে ‘যিকর’ শব্দটি কয়েকটি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এর অর্থ কুরআন, ঈমান, আখিরাত কিংবা ইবাদত হতে পারে। [ফাতহুল কাদীর, আইসারুত তাফাসীর]
[১] এতে اللمم শব্দের মাধ্যমে ব্যতিক্রম প্রকাশ করা হয়েছে। এই ব্যতিক্রমের সারমর্ম হচ্ছে, ছোটখাট গোনাহে লিপ্ত হওয়া তাদেরকে সৎকর্মর উপাধি থেকে বঞ্চিত করে না। اللَّمَم শব্দের তাফসীর প্রসঙ্গে সাহাবী ও তাবেয়ীগণের কাছ থেকে দু'রকম উক্তি বর্ণিত আছে। (এক) এর অর্থ সগীরা অর্থাৎ ছোটখাট গোনাহ। সূরা আন-নিসার ৩১ নং আয়াতে একে سئات বলা হয়েছে। এই উক্তি ইবন আব্বাস ও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুম থেকে ইবন কাসীর বর্ণনা করেছেন। (দুই) এর অর্থ সেসব গোনাহ, যা কদাচিৎ সংঘটিত হয়, অতঃপর তা থেকে তওবা করত চিরতরে বর্জন করা হয়। [ইবন কাসীর] এই উক্তিও ইবন কাসীর প্রথমে মুজাহিদ থেকে এবং পরে ইবন আব্বাস ও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকেও বর্ণনা করেছেন। [দেখুন, বুখারী ৬৬১২]
[২] أجنة শব্দটি جنين এর বহুবচন। এর অর্থ গর্ভস্থত ভ্ৰাণ। [কুরতুবী] আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে যে, “তোমরা নিজেদের পবিত্ৰতা দাবি করো না। কারণ, আল্লাহ-ই ভাল জানেন কে কতটুকু মুত্তাকী”। শ্রেষ্ঠত্ব তাকওয়ার ওপর নির্ভরশীল, বাহ্যিক কাজ-কর্মের ওপর নয়। তাকওয়াও তা-ই ধর্তব্য যা মৃত্যু পর্যন্ত কায়েম থাকে। যয়নব বিনত আবু সালমা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহার পিতামাতা তার নাম রেখেছিলেন ‘বাররা’ যার অর্থ সৎকর্মপরায়ণ। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলোচ্য আয়াত তেলাওয়াত করে এই নাম রাখতে নিষেধ করেন। কারণ, এতে সৎ হওয়ার দাবি রয়েছে। অতঃপর তাঁর নাম পরিবর্তন করে যায়নব রাখা হয়। [মুসলিম ১৮, ১৯] অনরূপভাবে, জনৈক ব্যক্তি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সামনে অন্য এক ব্যক্তির প্রশং করলে তিনি নিষেধ করে বললেন: তুমি যদি কারও প্রশংসা করতেই চাও, তবে এ কথা বলে কর: আমার জানা মতে এই ব্যক্তি সৎ, আল্লাহভীরু। সে আল্লাহর কাছেও পাক পবিত্র কিনা আমি জানি না। [বুখারী ২৬৬২, মুসলিম ৬৫, মুসনাদে আহমাদ ৫/৪১,৪৫]
এ আয়াতের শানে নুযুল সম্পর্কে একটি বর্ণনা এসেছে, সাবেত ইবনুল হারিস আনসারী বলেন, ইয়াহূদীদের কোনো সন্তান ছোট অবস্থায় মারা গেলে তারা তাকে বলত, সে সিদ্দীকীনের মর্যাদায় পৌঁছে গেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এ কথা পৌঁছলে তিনি বললেন, ইয়াহুদীরা মিথ্যা বলেছে। কোনো সন্তান তার মায়ের পেটে থাকতেই তার সৌভাগ্যবান হওয়া বা দূৰ্ভাগা হওয়া লিখে নেয়া হয়েছে। তারপর আল্লাহ তা'আলা উপরোক্ত আয়াত নাযিল করেন। [মুজামুল কাবীর লিত তাবরানী ২/৮১,৮২ হাদীস নং ১৩৬৮]
[১] أكدى শব্দটি كدية থেকে উদ্ভূত। এর অর্থ সেই প্রস্তরখণ্ড, যা কুপ অথবা ভিত্তি খনন করার সময় মৃত্তিকা গৰ্ভ থেকে বের হয় এবং খননকার্যে বাধা সৃষ্টি করে। তাই এখানে أكدى এর অর্থ এই যে, প্রথমে কিছু দিল, এরপর হাত গুটিয়ে নিল। [ফাতহুল কাদীর] আয়াতের অর্থ এই হবে, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে কিছু ব্যয় করে অতঃপর তা পরিত্যাগ করে অথবা শুরুতে আল্লাহর আনুগত্যের দিকে কিছুটা আকৃষ্ট হয়, অতঃপর আনুগত্য বর্জন করে বসে। [মুয়াসসার]
[১] মূসা আলাইহিস সালামের সহীফা বলতে তাওরাতকে বোঝানো হয়েছে, কুরআনই একমাত্র গ্রন্থ যার দুটি স্থানে ইব্রাহীমের সহীফার শিক্ষাসমূহের কোনো কোনো অংশ উদ্ধৃত হয়েছে। তার একটি স্থান হলো এটি এবং অপর স্থানটি হলো সূরা আল-আ’লার শেষ কয়েকটি আয়াত। [ফাতহুল কাদীর; কুরতুবী]
[২] ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, “ইবরাহীম আলাইহিস সালামের পূর্বে ইসলামের ত্ৰিশ অংশের পূর্ণ বাস্তবায়ন কেউ করতে পারেনি, এজন্যই আল্লাহ বলেছেন, “আর ইবরাহীম যিনি পূর্ণ করেছেন।” [মুস্তাদরাকে হাকিম ২/৪৭০]
রেসালতের কর্তব্য পালনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সংশোধনও এর পর্যায়ভুক্ত। এক হাদীস দ্বারাও এর সমর্থন পাওয়া যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহ বলেন, হে বনী আদম, দিনের শুরুতে আমার জন্যে চার রাকাআত সালাত পড়, আমি দিনের শেষ পর্যন্ত তোমার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাব।” [তিরমিয়ী ৪৭৫]
[১] এ আয়াত থেকে তিনটি বড় মূলনীতি পাওয়া যায়। কেয়ামতের দিন এক ব্যক্তির শাস্তি অপরের ঘাড়ে চাপানো হবে না এবং অপরের শাস্তি নিজে বরণ করার ক্ষমতাও কারও হবে না। [দেখুন, মুয়াসসার] অন্য এক আয়াতে বলা হয়েছে,
وَإِن تَدْعُ مُثْقَلَةٌ إِلَىٰ حِمْلِهَا لَا يُحْمَلْ مِنْهُ شَيْءٌ [সূরা ফাতির ১৮]
অর্থাৎ কোনো শক্তি যদি পাপের বোঝায় ভারাক্রান্ত হয়ে অপরকে অনুরোধ করে যে, আমার কিছু বোঝা তুমি বহন কর, তবে তার বোঝার কিয়দংশও বহন করার সাধ্য কারও হবে না।
[১] প্রত্যেক ব্যক্তি যা পরিণতি ভোগ করবে তা তার কৃতকর্মেরই ফল। চেষ্টা সাধনা ছাড়া কেউ-ই কিছু লাভ করতে পারে না। [কুরতুবী] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “মানুষ যখন মরে যায় তখন তিনটি কর্ম ব্যতীত আর কোনো কাজ তার জন্য বাকী থাকে না। সাদকায়ে জারিয়া বা উপকারী ইলম অথবা এমন সৎ সন্তান যে তার জন্য দো'আ করে।” [মুসলিম ১৬৩১]
[১] উদ্দেশ্য এই যে, অবশেষে সবাইকে আল্লাহ তা'আলার দিকেই ফিরে যেতে হবে এবং কর্মের হিসার-নিকাশ দিতে হবে। কোনো কোনো তফসীরবিদ এই বাক্যের অর্থ এরূপ সাব্যস্ত করেছেন যে, মানুষের চিন্তা-ভাবনার গতিধারা আল্লাহ তা’আলার সত্তায় পৌছে নিঃশেষ হয়ে যায়। তাঁর সত্তা ও গুণাবলির স্বরূপ চিন্তাভাবনার মাধ্যমে অর্জন করা যায় না। [ইবন কাসীর; কুরতুবী]
[১] অর্থাৎ কারও আনন্দ অথবা শোক এবং হাসি ও কান্না স্বয়ং তার কিংবা অন্য কারও করায়ত্ত নয়। এগুলো আল্লাহ তা’আলার পক্ষে থেকে আসে। তিনিই কারণ সৃষ্টি করেন এবং তিনিই কারণাদিকে ক্রিয়াশক্তি দান করেন। [ইবন কাসীর; কুরতুবী]