আল-কোৰআনুল কাৰীমৰ অৰ্থানুবাদ - বাংলা অনুবাদ - আবু বকৰ যাকাৰিয়্য়া

পৃষ্ঠা নং:close

external-link copy
48 : 9

لَقَدِ ٱبۡتَغَوُاْ ٱلۡفِتۡنَةَ مِن قَبۡلُ وَقَلَّبُواْ لَكَ ٱلۡأُمُورَ حَتَّىٰ جَآءَ ٱلۡحَقُّ وَظَهَرَ أَمۡرُ ٱللَّهِ وَهُمۡ كَٰرِهُونَ

অবশ্য তারা আগেও [১] ফিৎনা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল এবং তারা আপনার বহু কাজে ওলট-পালট করেছিল, অবশেষে সত্যের আগমন ঘটল এবং আল্লাহ্‌র হুকুম বিজয়ী হল [২], অথচ তারা ছিল অপছন্দকারী। info

[১] অর্থাৎ তারা চিন্তাশক্তি ও মতামতকে আপনার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে খাটিয়েছিল। তারা প্রচেষ্টা চালিয়েছে আপনার দীনকে অপমানিত করতে। যেমন, প্রথম যখন আপনি মদীনায় আগমন করেছিলেন তখন আপনার বিরুদ্ধে ইয়াহুদী ও মুনাফিকরা যৌথ প্রচেষ্টা চালিয়েছে। তারপর যখন বদরের যুদ্ধে মুসলিমরা জয়লাভ করল তখন আব্দুল্লাহ ইবন উবাই ও তার সার্থীরা বলল, এ কাজ তো দেখি পথে উঠে এসেছে। তারপর তারা প্রকাশ্যে ইসলাম গ্রহণ করে। তারপর যখনই কোথাও মুসলিমদের বিজয় দেখে তখনই তা তাদেরকে পীড়া দেয়। [ইবন কাসীর]

[২] অর্থাৎ “আল্লাহর আদেশ বিজয় হল”, যাতে মুনাফিকরা মর্মপীড়া বোধ করছিল। এর দ্বারা ইঙ্গিত দেয়া হয় যে, জয়-বিজয় সবই আল্লাহর আয়ত্তে। যেমন ইতিপূর্বের যুদ্ধসমূহে আপনাকে জয়ী করা হয়েছে, তেমনি এ যুদ্ধেও জয়ী হবেন এবং মুনাফিকদের সমস্ত ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়ে পড়বে।

التفاسير:

external-link copy
49 : 9

وَمِنۡهُم مَّن يَقُولُ ٱئۡذَن لِّي وَلَا تَفۡتِنِّيٓۚ أَلَا فِي ٱلۡفِتۡنَةِ سَقَطُواْۗ وَإِنَّ جَهَنَّمَ لَمُحِيطَةُۢ بِٱلۡكَٰفِرِينَ

আর তাদের মধ্যে এমন লোক আছে যে বলে, ‘আমাকে অব্যাহতি দিন এবং আমাকে ফিৎনায় ফেলবেন না।‘ সাবধান! তারাই ফিৎনাতে পড়ে আছে [১]। আর জাহান্নাম তো কাফেরদের বেষ্টন করেই আছে [২]। info

[১] এ আয়াতে জদ ইবন কায়স নামক জনৈক বিশিষ্ট মুনাফিকের এক বিশেষ বাহানার উল্লেখ করে তার গোমরাহীর বর্ণনা দেয়া হয়। সে জিহাদ থেকে অব্যাহতি লাভের জন্যে ওযর পেশ করে বলেছিল আমি এক পৌরুষদীপ্ত যুবক। রোমানদের সাথে যুদ্ধে লড়তে গিয়ে তাদের সুন্দরী যুবতীদের মোহগ্ৰস্ত হয়ে পড়ার আশংকা রয়েছে। [সা’দী] আল্লাহ্ তা'আলা তার কথার উত্তরে বলেন, “ভাল করে শোন", এই নির্বোধ এক সম্ভাব্য আশংকার বাহানা করে এক নিশ্চিত আশংকা অর্থাৎ রাসূলের অবাধ্যতা ও জিহাদ পরিত্যাগের অপরাধে এখনই দণ্ডযোগ্য হয়ে গেল। সে যদি মহিলাদের মোহে পড়ার ফিতনা থেকে বাঁচতে এ কথা বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে জিহাদে যাওয়া থেকে বিরত থাকে তবে জেনে নিক যে, সে আরও বড় ফিতনায় পড়েছে। আর সেটা হচ্ছে, দুনিয়াতে শির্ক ও কুফর, আর আখেরাতে তার শাস্তি। [ইবনুল কাইয়্যেম : ইগাসাতুল লাহফান ২/১৫৮-১৫৯]

[২] “আর নিঃসন্দেহে জাহান্নাম এই কাফেরদের পরিবেষ্টন করে আছে।” তা থেকে নিস্তার লাভের উপায় নেই। [ইবন কাসীর; সা’দী] পরিবেষ্টন করার অর্থ, যারাই আল্লাহর সাথে কুফরি করবে, তার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করবে, জাহান্নামে তাদের রাখবে, কিয়ামতের দিন তাদের সবাইকে একত্রিত করবে। [তাবারী]

التفاسير:

external-link copy
50 : 9

إِن تُصِبۡكَ حَسَنَةٞ تَسُؤۡهُمۡۖ وَإِن تُصِبۡكَ مُصِيبَةٞ يَقُولُواْ قَدۡ أَخَذۡنَآ أَمۡرَنَا مِن قَبۡلُ وَيَتَوَلَّواْ وَّهُمۡ فَرِحُونَ

আপনার মঙ্গল হলে তা তাদেরকে কষ্ট দেয়, আর আপনার বিপদ ঘটলে তারা বলে, ‘আমরা তো আগেই আমাদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করেছিলাম’ এবং তারা উৎফুল্ল চিত্তে মুখ ফিরিয়ে নেয়। info
التفاسير:

external-link copy
51 : 9

قُل لَّن يُصِيبَنَآ إِلَّا مَا كَتَبَ ٱللَّهُ لَنَا هُوَ مَوۡلَىٰنَاۚ وَعَلَى ٱللَّهِ فَلۡيَتَوَكَّلِ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ

বলুন, ‘আমাদের জন্য আল্লাহ্‌ যা লিখেছেন তা ছাড়া আমাদের অন্য কিছু ঘটবে না; তিনি আমাদের অভিভাবক। আর আল্লাহ্‌র উপরই মুমিনদের নির্ভর করা উচিত [১]। info

[১] এ আয়াতে আল্লাহ তা'আলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও মুসলিমদেরকে মুনাফিকদের কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে আসল সত্যকে সদা সামনে রাখার নির্দেশ দিয়ে বলছেন, “বলুন, আমাদের বিপদতো এতটুকুই হবে যতটুকু আল্লাহ আমাদের জন্য লিখে রেখেছেন।” অর্থাৎ আমরা যে সকল অবস্থার সম্মুখীন হই, তা আগেই আল্লাহ আমাদের জন্যে নির্ধারিত করে রেখেছেন। তিনিই আমাদের কার্যনির্বাহক ও সাহায্যকারী। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “প্রতিটি বস্তুরই হাকীকত রয়েছে। কোনো বান্দাই প্রকৃত ঈমানের পর্যায়ে পৌছতে পারবে না, যতক্ষণ না এটা দৃঢ়ভাবে জানবে যে, তার যা ঘটেছে তা কখনো তাকে ছেড়ে যেতো না। আর যা তাকে ছেড়ে গেছে তা কখনো তার জন্য ঘটতো না।" [মুসনাদে আহমাদ ৬/৪৪১-৪৪২] তাই মুসলিমদের আবশ্যক আল্লাহর প্রতি ভালবাসা রাখা এবং পার্থিব উপায় উপকরণকে নিছক মাধ্যম মনে করা। আর মনে করা যে, এগুলোর উপর ভাল মন্দ নির্ভরশীল নয়। প্রকৃত ব্যাপার আল্লাহর হাতে। আমার উপর দায়িত্ব হবে সঠিক কাজটি করে যাওয়া এবং আল্লাহর উপর ভরসা করা। তাঁরই কাছে সার্বিক সহযোগিতা কামনা করা। হাদীসে এসেছে, ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, আমি একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পিছনে বসা ছিলাম। তখন তিনি বললেন, হে বৎস! নিশ্চয় আমি তোমাকে কিছু বাক্য শিখিয়ে দেব, তুমি আল্লাহকে হিফাযত কর, তিনিও তোমার হিফাযত করবেন, তুমি আল্লাহর হিফাযত কর, তুমি তাকে তোমার দিকে পাবে। যখন তুমি কোনো কিছু চাইবে তখন তা চাইবে কেবল আল্লাহর কাছে। আর যখন সাহায্য চাইবে তখন কেবল আল্লাহর সাহায্য চাইবে। আর জেনে রাখ, যদি উম্মতের সবাই তোমার কোনো উপকার করতে একত্রিত হয়, তারা তোমার কোনো উপকার করতে সমর্থ হবে না, তবে শুধু ঐটুকুই পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। আর তারা যদি সবাই তোমার কোনো ক্ষতি করতে ইচ্ছা করে, তবে শুধু ঐটুকু করতে পারবে যা আল্লাহ তোমার উপর লিখে রেখেছেন। কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, আর গ্রন্থটি শুকিয়ে গেছে। [তিরমিয়ী ২৫১৬]

التفاسير:

external-link copy
52 : 9

قُلۡ هَلۡ تَرَبَّصُونَ بِنَآ إِلَّآ إِحۡدَى ٱلۡحُسۡنَيَيۡنِۖ وَنَحۡنُ نَتَرَبَّصُ بِكُمۡ أَن يُصِيبَكُمُ ٱللَّهُ بِعَذَابٖ مِّنۡ عِندِهِۦٓ أَوۡ بِأَيۡدِينَاۖ فَتَرَبَّصُوٓاْ إِنَّا مَعَكُم مُّتَرَبِّصُونَ

বলুন, ‘তোমরা আমাদের দুটি মঙ্গলের একটির প্রতীক্ষা করছ এবং আমরা প্রতীক্ষা করছি যে, আল্লাহ্‌ তোমাদেরকে শাস্তি দেবেন সরাসরি নিজ পক্ষ থেকে অথবা আমাদের হাত দ্বারা। অতএব তোমরা প্রতীক্ষা কর, আমরাও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষা করছি [১]। info

[১] এ আয়াতে মুমিনদের এক বিরল অবস্থার উল্লেখ করে তাদের বিপদে আনন্দ উপভোগকারী কাফেরদের বলা হয় যে, আমাদের যে বিপদ দেখে তোমরা এত উৎফুল্ল, তাকে আমরা বিপদই মনে করিনা বরং তা আমাদের জন্য শান্তি ও সফলতার অন্যতম মাধ্যম। কারণ, মুমিন আপন চেষ্টায় বিফল হলেও স্থায়ী সওয়াব ও প্রতিদান লাভের যোগ্য হয়, আর এটিই সকল সফলতার মূলকথা। তাই তারা অকৃতকার্য হলেও কৃতকার্য। আল্লাহ বলেন, বলুন, ‘তোমরা কি আমাদের দুটি মঙ্গলের একটির প্রতীক্ষায় আছ?’ ইবন আব্বাস বলেন, সে দুটি বিষয় হচ্ছে, বিজয় তথা গনীমত অথবা শাহাদাত। আমরা নিহত হলেও শাহাদাতে ধন্য হব, সেটা তো জীবন ও জীবিকার নাম অথবা আল্লাহ আমাদের হাতে তোমাদেরকে অপমানিত করবেন। [তাবারী; কুরতুবী] অপর দিকে কাফেরদের অবস্থা হল তার বিপরীত। আযাব থেকে কোনো অবস্থায়ই তাদের অব্যাহতি নেই। এ জীবনেই তারা মুসলিমগনের মাধ্যমে আল্লাহর আযাব ভোগ করবে এবং এভাবে তারা দুনিয়া ও আখেরাতের লাঞ্ছনা পোহাবে। আর যদি এ দুনিয়ায় কোনো প্রকারে নিস্কৃতি পেয়েও যায়, তবে আখেরাতের আযাব থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো উপায় নেই; তা অবশ্যই ভোগ করবে। আর দুনিয়ার আযাব, হয়ত সে আযাব হবে আল্লাহর পক্ষ থেকে ধ্বংসকারী আযাব নাযিল হওয়ার মাধ্যমে, যেমন তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতগণকে পেয়ে বসেছিল অথবা তিনি তোমাদের হত্যা করার অনুমোদন দিবেন। সুতরাং তোমরা শয়তানের ওয়াদার অপেক্ষায় থাকো, আমরাও আল্লাহর ওয়াদার অপেক্ষায় থাকলাম। [কুরতুবী]

التفاسير:

external-link copy
53 : 9

قُلۡ أَنفِقُواْ طَوۡعًا أَوۡ كَرۡهٗا لَّن يُتَقَبَّلَ مِنكُمۡ إِنَّكُمۡ كُنتُمۡ قَوۡمٗا فَٰسِقِينَ

বলুন, ‘তোমরা ইচ্ছাকৃত ব্যয় কর অথবা অনিচ্ছাকৃত, তোমাদের কাছে থেকে তা কিছুতেই গ্রহণ করা হবে না। নিশ্চয় তোমরা হচ্ছ ফাসিক সম্প্রদায়।’ info
التفاسير:

external-link copy
54 : 9

وَمَا مَنَعَهُمۡ أَن تُقۡبَلَ مِنۡهُمۡ نَفَقَٰتُهُمۡ إِلَّآ أَنَّهُمۡ كَفَرُواْ بِٱللَّهِ وَبِرَسُولِهِۦ وَلَا يَأۡتُونَ ٱلصَّلَوٰةَ إِلَّا وَهُمۡ كُسَالَىٰ وَلَا يُنفِقُونَ إِلَّا وَهُمۡ كَٰرِهُونَ

আর তাদের অর্থসাহায্য গ্রহন করা নিষেধ করা হয়েছে এজন্যেই যে, তারা আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসূলের সাথে কুফরী করেছে [১] এবং সালাতে উপস্থিত হয় কেবল শৈথিল্যের সাথে, আর অর্থসাহায্য করে কেবল অনিচ্ছাকৃতভাবে [২]। info

[১] কারণ, ঈমান থাকা আমল কবুল হওয়ার পূর্বশর্ত। কাফের যত আমলই করুক না কেন, ঈমান না থাকার কারণে সেটা আখেরাতে তার কোনো কাজে আসবে না| কাফির যদি কোনো ভালো কাজ করে, যেমন আত্মীয়দের দান করে, অসহায়কে সহায়তা দেয়, কাউকে বিপদ থেকে উত্তরণে সহায়তা করে, সে এ সমস্ত ভালো কাজের দ্বারা আখেরাতে উপকৃত হতে পারবে না। তবে দুনিয়াতেই তাকে সেটার কারণে পর্যাপ্ত রিযক দেয়া হবে। হাদীসে এসেছে, আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ইবন জুদ'আন, সে তো জাহেলিয়াতের যুগে আত্মীয়তার সম্পর্ক স্থাপন করত, মিসকীনদের খাওয়াত, এগুলো কি তার কোনো উপকার দিবে? তিনি বললেন, না, তার কোনো উপকার দিবে না। কেননা সে কোনো দিন বলেনি, হে রব! কিয়ামতের দিন আমার অপরাধ ক্ষমা করে দাও। [মুসলিম ২১৪] অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ্‌ কোনো মুমিনের সামান্যতম সৎকাজও নষ্ট হতে দেন না। দুনিয়াতে সেটার বিনিময় দেন আর আখেরাতে তো তার জন্য প্রতিফল রয়েছেই। পক্ষান্তরে কাফের, তাকে তার প্রশংসনীয় কাজগুলোর বিনিময় দুনিয়াতে জীবিকা প্রদান করেন। অবশেষে যখন আখেরাতে পৌঁছবে, তখন তার এমন কোনো কাজ থাকবে না যার প্রতিফল তিনি তাকে দেবেন। [মুসলিম ২৮০৮]

[২] আয়াতে মুনাফিকদের দুটি আলামত বর্ণিত হয়েছে। সালাতে অলসতা ও দান খয়রাতে কুষ্ঠাবোধ। এতে মুসলিমদের প্রতি হুশিয়ারী প্রদান করা হয়েছে, যেন তারা মুনাফিকদের এই দুপ্রকার অভ্যাস থেকে দুরে থাকে। বরং তারা যেন সালাতে অত্যন্ত তৎপরতা ও আগ্রহের সাথে হাজির হয়, তাদের মধ্যে বিমৰ্ষভাব, অনীহা না থাকে। দানের ক্ষেত্রেও তারা যেন মন খুলে খুশী মনে একমাত্র আল্লাহর কাছে সওয়াবের আশা করে দান করে। কোনোক্রমেই মুনাফিকদের মত না হয়। [সা’দী]

التفاسير: