[১] আল্লাহ তা'আলা বলেন, এ লোকগুলো সে রকম আযাবই পেয়েছে যে রকম আযাব তাদের পূর্ববর্তীরা পেয়েছে। অথচ তারা এদের চেয়ে বেশী শক্তিশালী ও বেশী সম্পদ ও সন্তান সন্ততির অধিকারী ছিল। অতঃপর তারা ভোগ করেছে তাদের অংশ। হাসান বসরী বলেন, এখানে অংশ বলে দীন বোঝানো হয়েছে। তারা তাদের দীনের অংশ অনুসারে আমল করে চলেছে। যেমনিভাবে তোমরা তোমাদের দীনের অংশ অনুসারে আমল করে চলছ। অনুরূপভাবে তোমরা মিথ্যা ও অসার আলোচনায় লিপ্ত হয়ে পড়েছ যেমনি তারা মিথ্যা ও অসার আলোচনায় লিপ্ত হয়েছিল। [ইবন কাসীর] ইবনুল কাইয়্যেম বলেন, এর অর্থ তারা প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে তোমরাও তা-ই করছ। আর তারা সন্দেহের বশবর্তী হয়ে দীনের মধ্যে না জেনে কথা বলেছে, তোমরাও তা বলছ। তোমাদের ও তাদের পথভ্রষ্টতার ধরণ একই। কারণ দীন নষ্ট হয় দু’ভাবে। কখনও বাতিল বিশ্বাস ও সে অনুসারে কথা বলার মাধ্যমে, আবার কখনও সঠিক জ্ঞানের বাইরে চলে বাতিল আমল করার মাধ্যমে। প্রথমটি হচ্ছে, বিদ’আত। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, খারাপ আমল। প্রথমটি সন্দেহ থেকে আসে আর দ্বিতীয়টি আসে প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে। বর্তমান যুগের ফাসেক লোকরাও পূর্ববর্তী লোকদের মতই এ দুটিতে লিপ্ত হয়ে পথভ্রষ্ট হয়েছে, হচ্ছে এবং হবে। [ইগাসাতুল লাহফান ২/১৬৬-১৬৭] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা অবশ্যই তোমাদের পূর্ববতীদের নিয়ম-পদ্ধতি অনুসরণ করবে, প্রতি গজে গজে প্রতি হাতে হাতে তাদের অনুসরণ করবে। এমনকি যদি তারা ‘দব’ তথা ষাণ্ডার গর্তেও প্রবেশ করে থাকে তবে তোমরাও তাতে প্রবেশ করবে। সাহাবায়ে কিরাম বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! ইয়াহুদী ও নাসারা সম্প্রদায়? তিনি বললেন, তবে আর কারা? [বুখারী ৩৪৫৬]
[১] হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “মুমিনগণকে তুমি দেখবে তাদের দয়া, ভালবাসা ও সহমর্মিতার ক্ষেত্রে এক শরীরের ন্যায় যার এক অংশে ব্যাথা হলে তার সারা শরীর নির্ঘুম ও জ্বরে ভোগে।” [বুখারী ৬০১১; মুসলিম ২৫৮৬]
[১] জান্নাতের বর্ণনা বিভিন্ন হাদীসেও এসেছে। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “জান্নাতীরা জান্নাতের কামরাগুলোকে এমনভাবে দেখবে যেমন তোমরা আকাশে তারকা দেখতে পাও।” [বিখারী ৬৫৫৫] অনা হাদীসে এসেছে, ‘জান্নাতে এমন কিছু কক্ষ আছে যে কক্ষের ভেতর থেকে বাইরের অংশ দেখা যায় আর বাইরে থেকে ভেতরের অংশ দেখা যায়। আল্লাহ তা'আলা এগুলো তো তাদের জন্য তৈরী করেছেন, যারা অপরকে খাদ্য খাওয়ায়, নম্রভাবে কথা বলে, নিয়মিত সাওম পালন করে এবং যখন মানুষ ঘুমন্ত, তখন সালাত আদায় করে।’ [মুসনাদ আহমাদ ৫/৩৪৩] অন্য হাদীসে এসেছে, “জান্নাতের প্রাসাদের এক ইট হবে রৌপ্যের, আরেক ইট হবে স্বর্ণের ...।” [মুসনাদ আহমাদ ২/৩০৪] অপর এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, "মুমিন ব্যক্তির জন্য জান্নাতে একটি তাবু থাকবে, যা হবে মাত্র একটি ফাঁপা মুক্তা, আর যার উচ্চতা হবে ষাট মাইল। মুমিন ব্যক্তির জন্য তাতে পরিবার-পরিজন থাকবে, সে তাদের কাছে ঘুরে বেড়াবে, কিন্তু তাদের একজন আরেকজনকে দেখতে পাবে না।" [বুখারী ৪৮৭৯, মুসলিম ২৮৩৪] আর আরশের অধিক নিকটবর্তী, জান্নাতের সবচেয়ে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন স্থানের নাম ওয়াসীলা। এটাই জান্নাতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাসস্থান। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “যদি তোমরা মুয়াৰ্যযিনের আযান শোন, তবে সে আযানের জবাব দাও। অতঃপর আমার উপর সালাত পাঠ কর। কেননা যে ব্যক্তি আমার উপর একবার সালাত পাঠ করে, আল্লাহ তা'আলা এর বিনিময়ে তার উপর দশবার সালাত পাঠ করেন। তারপর আমার জন্য তোমরা ‘ওয়াসীলা'র প্রার্থনা কর। আর ওয়াসীলা হল জান্নাতের এমন এক মর্যাদাসম্পন্ন স্থান, যা কেবলমাত্র একজন বান্দা ছাড়া আর কারও উপযুক্ত নয়। আর আমি আশা করি, আমি-ই সে বান্দা। সুতরাং যে ব্যক্তি আমার জন্য ওয়াসীলার প্রার্থনা করবে, সে কেয়ামতের দিন আমার শাফাআত পাবে।" [মুসলিম ১৩৮৪] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহ্ তা'আলা জান্নাতবাসীদেরকে বলবে, 'হে জান্নাতবাসীরা!' তখন তারা বলবে, হে রব আমরা হাজির, আমরা হাজির, আর সমস্ত কল্যাণ আপনারই হাতে। তখন তিনি বলবেন, ‘তোমরা কি সন্তুষ্ট?’ তখন তারা বলবে, আমরা কেন সন্তুষ্ট হব না, অথচ আপনি আমাদেরকে এমন কিছু দিয়েছেন, যা আপনার কোনো সৃষ্টিকেই দেন নি? তখন তিনি বলবেন, ‘আমি কি তোমাদেরকে এর চেয়ে উত্তম কিছু দেব না?’ তারা বলবে, এর চেয়েও উত্তম কী হতে পারে? তখন তিনি বলবেন, ‘আমি আমার সন্তুষ্টি তোমাদের উপর অবতরণ করাব; এরপর আর কখনো তোমাদের উপর অসন্তুষ্ট হব না।" [বুখারী ৬৫৪৯, মুসলিম ২৮২৯]