[১] আয়াতে চতুষ্পদ জন্তু সৃজনে মানুষের উপকারিতা এবং আল্লাহর অসাধারণ কারিগরি উল্লেখ করার সাথে তাঁর আরও একটি মহা অনুগ্রহ বিধৃত হয়েছে। তা এই যে, চতুষ্পদ জন্তু সৃজনে মানুষের কোনোই হাত নেই। এগুলো একান্তভাবে আল্লাহর নিজস্ব পরিকল্পনায় নির্মিত। আল্লাহ তা'আলা মুমিনকে কেবল চতুষ্পদ জন্তু দ্বারা উপকার লাভের সুযোগ ও অনুমতিই দেননি, বরং তাদেরকে এগুলোর মালিকও করে দিয়েছেন। ফলে তারা এগুলোতে সর্ব প্রকারে মালিকসুলভ অধিকার প্রয়োগ করতে পারে। নিজে এগুলোকে কাজে লাগাতে পারে অথবা এগুলো বিক্রি করে সে মূল্য দ্বারা উপকৃত হতে পারে। [দেখুন, তাবারী, সা'দী]
[১] এখানে جند এর অর্থ প্রতিপক্ষ নেয়া হলে আয়াতের উদ্দেশ্য হবে এই যে, তারা দুনিয়াতে যাদেরকে উপাস্য স্থির করেছে, তারাই কেয়ামতের দিন তাদের প্রতিপক্ষ হয়ে তাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিবে। তবে হাসান ও কাতাদাহ রাহে মাহুমাল্লাহ থেকে বর্ণিত এ আয়াতের তাফসীর এই যে, কাফেররা সাহায্য পাওয়ার আশায় মূর্তিদেরকে উপাস্য স্থির করেছিল, কিন্তু অবস্থা হচ্ছে এই যে, স্বয়ং তারাই মূর্তিদের সেবাদাস ও সিপাহী হয়ে গেছে। তারা মূর্তিদের হেফাযত করে। কেউ বিরুদ্ধে গেলে তারা ওদের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করে। অথচ তাদেরকে সাহায্য করার যোগ্যতা মূর্তিদের নেই অথবা আয়াতের অর্থ, তারাও জাহান্নামে হাযির হবে, যেমন তাদের এ মূর্তিগুলোও জাহান্নামে তাদের সাথে উপস্থিত থাকবে। [দেখুন, ইবন কাসীর, ফাতহুল কাদীর]
[১] সূরা ইয়াসীনের আলোচ্য সর্বশেষ পাঁচটি আয়াত একটি বিশেষ ঘটনার প্রেক্ষাপটে অবতীর্ণ হয়েছে, যা কোনো কোনো রেওয়ায়াতে উবাই ইবন খলফের ঘটনা বলে এবং কোনো কোনো রেওয়াতে আ’স ইবন ওয়ায়েলের ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে উভয়ের তরফ থেকে ঘটনাটি সংঘটিত হওয়াও অসম্ভব নয়। ঘটনাটি এই যে, আস ইবন ওয়ায়েল মক্কা উপত্যকা থেকে একটি পুরাতন হাড় কুড়িয়ে তাকে স্বহস্তে ভেঙে চূৰ্ণ-বিচূর্ণ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলল, এই যে হাড়টি চূর্ণ বিচূর্ণ অবস্থায় দেখছেন, আল্লাহ তা'আলা একেও জীবিত করবেন কি? রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হ্যাঁ, আল্লাহ তা'আলা তোমাকে মৃত্যু দেবেন, পুনরুজ্জীবিত করবেন এবং জাহান্নামে দাখিল করবেন। [মুস্তাদরাক ২/৪২৯]
[২] অর্থাৎ বীর্য থেকে সৃষ্ট এ মানুষ আল্লাহর কুদরত অস্বীকার করে কেমন খোলাখুলি বাকবিতণ্ডায় প্রবৃত্ত হয়েছে। হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার হাতে থুথু ফেললেন। তারপর তার তর্জনী সেখানে রাখলেন এবং বললেন, আল্লাহ বলেন, হে বনী আদম! কিসে আমাকে অপারগ করল? অথচ তোমাকে এ ধরণের বস্তু থেকে আমি সৃষ্টি করেছি। তারপর যখন তোমার আত্মা তোমার কণ্ঠনালীর কাছে পৌঁছায় তখন তুমি বল, আমি সাদাকাহ করব। তোমার সাদাকাহ দেয়ার সময় তখন আর কোথায়? [ইবন মাজাহ ২৭০৭, মুস্তাদরাকে হাকিম ২/৫০২]
[১] অর্থাৎ এ দৃষ্টান্ত বর্ণনা করার সময় সে নিজের সৃষ্টিতত্ত্ব ভুলে গেল যে, নিকৃষ্ট ও নিষ্প্রাণ একটি শুক্রবিন্দুতে প্রাণসঞ্চার করে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। যদি সে এই মূল তত্ত্ব বিস্মৃত না হত, তবে এরূপ দৃষ্টান্ত উপস্থিত করে আল্লাহর কুদরতকে অস্বীকার করার ধৃষ্টতা প্রদর্শন করতে পারত না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “বনী ইসরাইলের এক মুসলিম ব্যক্তির মৃত্যু সময় উপস্থিত হলো, সে তার পরিবার-পরিজনকে এ বলে আসিয়ত করল যে, যখন আমি মারা যাব তখন তোমরা আমার জন্য কাঠ সংগ্ৰহ করে আমাকে আগুনে পুড়িয়ে দিও। তারপর যখন আগুন আমার গোস্ত খেয়ে ফেলবে এবং আমার হাঁড় পর্যন্ত কঙ্কাল হয়ে যাবে তখন তা নিয়ে গুড়ো করে সমুদ্রে ভাসিয়ে দিও। তারা তাই করল। তখন আল্লাহ তা'আলা তাকে পুরোপুরি একত্রিত করে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি এমনটি কেন করলে? সে বলল, আপনার ভয়ে। আল্লাহ তখন তাকে ক্ষমা করে দিলেন।” [বুখারী ৩৪৫২, ৩৪৮১, ৩৪৭৮, মুসলিম ২৭৫৬, ২৭৫৭]
[১] অনুরূপ বর্ণনা পবিত্র কুরআনের অন্যান্য সূরায় এসেছে। যেমন, সূরা আল-মুমিনুন ৮৮, সূরা আল-মুলক ১। এখানে আল্লাহ্ তা'আলা তাঁর নিজ সত্তাকে পবিত্র ও ঐশ্বর্যমণ্ডিত এবং সমস্ত ক্ষমতা যে তাঁরই হাতে সে ঘোষণা দিয়ে বান্দাকে আখেরাতের ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করাচ্ছেন যে, তাঁর কাছেই সবাইকে ফিরে যেতে হবে তখন তিনি সবাইকে তার কাজ ও কথার সঠিক প্রতিফল প্ৰদান করবেন। আয়াতে ব্যবহৃত ملكوت এবং ملك একই অর্থবোধক, যার অর্থ ক্ষমতা, চাবিকাঠি ইত্যাদি। তবে ملكوت এর পরিধি ব্যাপক। [দেখুন- ইবন কাসীর]