《古兰经》译解 - 孟加拉语翻译 - 艾布拜克尔·宰克里亚。

页码:close

external-link copy
6 : 13

وَيَسۡتَعۡجِلُونَكَ بِٱلسَّيِّئَةِ قَبۡلَ ٱلۡحَسَنَةِ وَقَدۡ خَلَتۡ مِن قَبۡلِهِمُ ٱلۡمَثُلَٰتُۗ وَإِنَّ رَبَّكَ لَذُو مَغۡفِرَةٖ لِّلنَّاسِ عَلَىٰ ظُلۡمِهِمۡۖ وَإِنَّ رَبَّكَ لَشَدِيدُ ٱلۡعِقَابِ

আর তারা ভালোর পূর্বেই মন্দের জন্য তাড়াহুড়ো করছে। অথচ তাদের আগে শাস্তির অনুরূপ বহু (শিক্ষণীয়) দৃষ্টান্ত গত হয়েছে [১]। আর নিশ্চয় আপনার রব মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল তাদের যুলুম সত্ত্বেও এবং নিশ্চয় আপনার রব শাস্তি দানে কঠোর [২]। info

[১] কাফেরদের দ্বিতীয় সন্দেহ ছিল, যদি বাস্তবিকই আপনি আল্লাহ্‌র রাসূল হয়ে থাকেন, তবে রাসূলের বিরুদ্ধাচরণের কারণে আপনি যেসব শাস্তির কথা শুনান, সেগুলো আসে না কেন? কখনো তারা চ্যালেঞ্জের ভঙ্গীতে বলতে থাকে: “হে আমাদের রব! এখনই তুমি আমাদের হিসেব নিকেশ চুকিয়ে দাও। কিয়ামতের জন্য তাকে ঠেকিয়ে রেখো না।” [সূরা সোয়াদ ১৬] আবার কখনো বলতে থাকে: “হে আল্লাহ্! মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে কথাগুলো পেশ করছে এগুলো যদি সত্যি হয় এবং তোমারই পক্ষ থেকে হয় তাহলে আমাদের উপর আকাশ থেকে পাথর বর্ষণ করো অথবা অন্য কোনো যন্ত্রণাদায়ক আযাব নাযিল করো।” [সূরা আল-আনফাল ৩২] আবার কখনো তারা রাসূলকেই এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে বলতে থাকে: “তারা বলে, ’ওহে যার প্রতি কুরআন নাযিল হয়েছে! তুমি তো নিশ্চয় উন্মাদ। তুমি সত্যবাদী হলে আমাদের কাছে ফিরিশতাদেরকে উপস্থিত করছ না কেন?’ আমরা ফিরিশতাদেরকে যথার্থ কারণ ছাড়া নাযিল করি না; ফিরিশতারা উপস্থিত হলে তারা অবকাশ পাবে না।” [সূরা আল-হিজর ৬-৮] এ আয়াতে কাফেরদের পূর্বোক্ত কথাগুলোর জবাব দিয়ে বলা হয়েছে: এ মূর্খের দল কল্যাণের আগে অকল্যাণ চেয়ে নিচ্ছে। আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে এদেরকে যে অবকাশ দেয়া হচ্ছে তার সুযোগ গ্রহণ করার পরিবর্তে এরা এ অবকাশকে দ্রুত খতম করে দেয়ার এবং এদের বিদ্রোহাত্মক কর্মনীতির কারণে এদেরকে অনতিবিলম্বে পাকড়াও করার দাবী জানাচ্ছে। অন্যত্র বলা হয়েছে: “তারা আপনাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করতে বলে। যদি নির্ধারিত কাল না থাকত তবে শাস্তি অবশ্যই তাদের উপর আসত। নিশ্চয়ই তাদের উপর শাস্তি আসবে আকস্মিকভাবে, তাদের অজ্ঞাতসারে। তারা আপনাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করতে বলে, জাহান্নাম তো কাফিরদেরকে পরিবেষ্টন করবেই।” [সূরা আল-আনকাবূত ৫৩-৫৪] আরো এসেছে, “যারা এটা বিশ্বাস করে না তারাই এটা ত্বরান্বিত করতে চায়।” [সূরা আশ-শূরা ১৮] মোটকথা, তারা বিপদমুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বেই আপনার কাছে বিপদ নাযিল হওয়ার তাগাদা করে যে, আপনি নবী হয়ে থাকলে তাৎক্ষণিক আযাব এনে দিন। এতে বুঝা যায় যে, তারা আযাব আসাকে খুবই অবাস্তব অথবা অসম্ভব মনে করে। এটা ছিল তাদের অবিশ্বাস, কুফরি, অবাধ্যতা, বিরোধিতা ও অস্বীকৃতির চরম পর্যায়। তাই আল্লাহ্ তা'আলা বলছেন, অথচ তাদের পূর্বে অন্য কাফেরদের উপর অনেক আযাব এসেছে। সবাই তা প্রত্যক্ষ করেছে। তাদেরকে এর মাধ্যমে আল্লাহ্ পরবর্তীদের জন্য উদাহরণ, উপদেশ হিসেবে রেখে দিয়েছেন। [ইবন কাসীর] এমতাবস্থায় তাদের উপর আযাব অবাস্তব হল কিরূপে? এখানে مَثُلٰتُ শব্দটি مثلة -এর বহুবচন। এর অর্থ অপমানকর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। [ফাতহুল কাদীর]

[২] বলা হয়েছে, “মানুষের সীমালংঘন সত্বেও আপনার রব তো মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল।” মানুষের শত অন্যায়কেও তিনি ক্ষমা করেন। যদি তিনি ক্ষমাশীল না হতেন তবে কারোই রেহাই ছিল না। অন্য আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, “আল্লাহ মানুষকে তাদের কৃতকর্মের জন্য শাস্তি দিলে ভূ-পৃষ্ঠে কোনো জীব-জন্তুকেই রেহাই দিতেন না, কিন্তু তিনি এক নির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত তাদেরকে অবকাশ দিয়ে থাকেন। তারপর তাদের নির্দিষ্ট কাল এসে গেলে আল্লাহ্ তো আছেন তাঁর বান্দাদের সম্যক দ্রষ্টা।” [সূরা ফাতির ৪৫] আয়াতের শেষে আল্লাহ্ তা'আলা বলছেন যে, তিনি যে শুধু ক্ষমাশীল তা-ই নয় বরং তিনি কঠোর শাস্তিদাতাও। এভাবে আল্লাহ্ তা'আলা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে তাঁর বান্দাকে আশা ও ভীতির মধ্যে রাখেন। [যেমন, সূরা আল-আন’আম ১৪৭, সূরা আল-আ’রাফ ১৬৭, সূরা আল-হিজর ৪৯-৫০] যাতে করে মানুষের জীবনে ভারসাম্য বজায় থাকে। শুধু আশার বাণী শুনতে শুনতে মানুষ সীমালঙ্ঘন করতে দ্বিধা করবে না। আবার শুধু ভয়-ভীতির কথা শুনতে শুনতে মানুষের জীবন দূর্বিষহ হয়ে উঠবে না। এটাই আল্লাহ্ তা'আলা চান। সে জন্য তিনি যখনই কোনো আশার কথা শুনিয়েছেন সাথে সাথেই ভয়ের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। মূলতঃ আশা ও ভীতির মাঝেই হলো ঈমানের অবস্থান। [ইবন কাসীর]

التفاسير:

external-link copy
7 : 13

وَيَقُولُ ٱلَّذِينَ كَفَرُواْ لَوۡلَآ أُنزِلَ عَلَيۡهِ ءَايَةٞ مِّن رَّبِّهِۦٓۗ إِنَّمَآ أَنتَ مُنذِرٞۖ وَلِكُلِّ قَوۡمٍ هَادٍ

আর যারা কুফরী করেছে তারা বলে, ‘তার রবের কাছ থেকে তার উপর কোনো নিদর্শন নাযিল হয় না কেন [১]?’ আপনি তো শুধু সতর্ককারী, আর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য আছে পথ প্রদর্শক [২]। info

[১] কাফেরদের তৃতীয় সন্দেহ ছিল, আমরা রাসূলের কাছে বিশেষ ধরনের যেসব মু'জিযা দেখতে চাই, সেগুলো তিনি প্রকাশ করেন না কেন? এখানে তারা এমন নিশানীর কথা বলতে চাচ্ছিল যা দেখে তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আল্লাহ্‌র রাসূল হওয়ার উপর ঈমান আনতে পারে। এটা ছিল মূলতঃ তাদের গোঁড়ামী। যেমন, এর পূর্বেও তারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে সাফা পাহাড়কে স্বর্ণে পরিণত করার অযথা আব্দার করেছিল। তারা আরও বলেছিল যে, আপনি মক্কার পাহাড়গুলোকে সরিয়ে দিন। সে পাহাড়ের জায়গায় নদী-নালার ব্যবস্থা করে দিন। অন্য আয়াতে আল্লাহ্ বলেন, “আর আমাদেরকে নিদর্শন প্রেরণ করা থেকে শুধু এটাই বিরত রেখেছে যে, তাদের পূর্ববর্তীগণ তাতে মিথ্যারোপ করেছিল।” [সূরা আল-ইসরা ৫৯] [ইবন কাসীর] মু'জিযা প্রকাশ করা সরাসরি আল্লাহ্‌র কাজ। তিনি যখন যে ধরনের মু'জিযা প্রকাশ করতে চান, তাই করেন। তিনি কারো দাবী ও ইচ্ছা পূরণ করতে বাধ্য নন। এ জন্যই বলা হয়েছে: (اِنَّمَآ اَنْتَ مُنْذِرٌ) অর্থাৎ আপনার কাজ শুধু আল্লাহ্‌র আযাব সম্পর্কে ভয় প্রদর্শন করা।

[২] আয়াতের কয়েকটি অর্থ করা হয়ে থাকে। এক. আপনি তো একজন ভীতিপ্রদর্শনকারী আর প্রতিটি কাওমের জন্য রয়েছে হিদায়াতকারী নবী, যিনি তাদেরকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করবেন। [বাগভী; ইবন কাসীর] দুই. আপনি তো একজন ভীতিপ্রদর্শনকারী এবং প্রতিটি কাওমের জন্যও আপনি হিদায়াতকারী অর্থাৎ আহ্বানকারী। [বাগভী; ইবন কাসীর] তিন. সাঈদ ইবন জুবাইর বলেন, এর অর্থ আপনি তো একজন ভীতিপ্রদর্শনকারী। আর সত্যিকার হিদায়াতকারী তো আল্লাহ্ তা'আলাই। [বাগভী; ইবন কাসীর] প্রথম মতটিকে ইমাম শানকীতী প্রাধান্য দিয়ে বলেন, এর সমার্থে অন্যত্র এসেছে, “আর প্রত্যেক উম্মতের জন্য আছে একজন রাসূল।” [সূরা ইউনুস ৪৭] আরও এসেছে, “আর এমন কোনো উম্মত নেই যার কাছে গত হয়নি সতর্ককারী।” [সূরা ফাতির ২৪] আরও এসেছে, “আর অবশ্যই আমরা প্রত্যেক জাতির মধ্যে রাসূল পাঠিয়েছিলাম।” [সূরা আন-নাহল ৩৬] [আদওয়াউল বায়ান]

التفاسير:

external-link copy
8 : 13

ٱللَّهُ يَعۡلَمُ مَا تَحۡمِلُ كُلُّ أُنثَىٰ وَمَا تَغِيضُ ٱلۡأَرۡحَامُ وَمَا تَزۡدَادُۚ وَكُلُّ شَيۡءٍ عِندَهُۥ بِمِقۡدَارٍ

প্রত্যেক নারী যা গর্ভে ধারণ করে এবং গর্ভাশয়ে যা কিছু কমে ও বাড়ে আল্লাহ্ তা জানেন [১] এবং তাঁর নিকট প্রত্যেক বস্তুরই এক নির্দিষ্ট পরিমাণ আছে। info

[১] এর অর্থ হচ্ছে, মায়ের গর্ভাশয়ে ভ্রুণের অংগ-প্রত্যংগ, শক্তি-সামৰ্থ, যোগ্যতা ও মানসিক ক্ষমতার যাবতীয় হ্রাস-বৃদ্ধি আল্লাহর সরাসরি তত্ত্বাবধানে সাধিত হয়। অর্থাৎ প্রত্যেক নারী যা গর্ভধারণ করে, তা ছেলে কি মেয়ে, সুশ্রী কি কুশ্রী, সৎ কি অসৎ তা সবই আল্লাহ্ জানেন এবং নারীদের গর্ভাশয়ে যে হ্রাস-বৃদ্ধি হয়, অর্থাৎ কোনো সময় এক বা একাধিক সন্তান জন্মগ্রহণ করে, কোনো সময় দ্রুত কোনো সময় দেরীতে তাও আল্লাহ্ তা'আলা জানেন। [আদওয়াউল বায়ান]

এ আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলার একটি বিশেষ গুণ বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি ‘আলেমুল গায়েব’। সৃষ্টিজগতের প্রতিটি অণু-পরমাণু ও সেসবের পরিবর্তনশীল অবস্থা সম্পর্কে তিনি ওয়াকিফহাল। এর সাথেই মানব সৃষ্টির প্রতিটি স্তর, প্রতিটি পরিবর্তন ও প্রতিটি চিহ্ন সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর সত্যিকার ও নিশ্চিত জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ্ তা'আলাই রাখেন। এ বিষয়টিই অন্য এক আয়াতে বর্ণিত হয়েছে:

(وَيَعْلَمُ مَا فِي الْاَرْحَامِ)

অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলাই জানেন যা কিছু গর্ভাশয়ে রয়েছে। [সূরা লোকমান ৩৪] আমরা যদি সূরা লোকমান এর এ আয়াতটির সাথে আলোচ্য সূরার

(وَمَا تَغِيْضُ الْاَرْحَامُ وَمَا تَزْدَادُ)

আয়াতকে একসাথে মিলিয়ে তাফসীর করি তাহলে বর্তমান কালের এ আয়াত সংক্রান্ত অনেক সন্দেহের জবাব দেয়া সহজ হয়ে যাবে। কারণ, সূরা লোকমানের আয়াতে যা বলা হয়েছে এ আয়াত তার তাফসীর হতে পারে। ফলে গর্ভাশয়ে অবস্থিত সন্তানের অবস্থা বর্তমানে বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেলেও তা সূরা লোকমান এবং সহীহ হাদীসে বর্ণিত পাঁচটি গায়েব এর জ্ঞানের দাবী কেউ করতে পারবে না। বিশেষ করে সহীহ হাদীসে গায়েবের পাঁচটি বস্তু বর্ণনায় যে শব্দ ব্যবহার হয়েছে তাও এ তাফসীর সমর্থন করছে। হাদীসে এসেছে, “পাঁচটি বিষয় হলো সমস্ত গায়েবের চাবিকাঠি, আল্লাহ্ ব্যতীত কেউ তা জানে না ... আল্লাহ ব্যতীত কেউ গর্ভাশয়ে যা কিছু হ্রাস হয় তা জানে না।” [বুখারী ৪৬৯৭] আর এটা সর্বজনবিদিত যে, গর্ভাশয়ে যা কিছু হ্রাস-বৃদ্ধি হয় বা হবে তা কেউ কোনো দিন বলে দিতে পারবে না। অন্য আয়াতে আল্লাহ্ বলেন, “তিনি তোমাদের সম্পর্কে সম্যক অবগত---যখন তিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছিলেন মাটি হতে এবং যখন তোমরা মাতৃগর্ভে ভ্রণরূপে ছিলে।” [সূরা আন-নাজম ৩২] আরও বলেন, “তিনিই মাতৃগর্ভে যেভাবে ইচ্ছে তোমাদের আকৃতি গঠন করেন।” [সূরা আলে ইমরান ৬] আয়াতের আরেক অর্থ হচ্ছে, একমাত্র আল্লাহ্ই জানেন কোন মহিলা কোন ধরণের সন্তান গর্ভে ধারণ করবে। তখন ما টি হবে موصولة [আদওয়াউল বায়ান]

التفاسير:

external-link copy
9 : 13

عَٰلِمُ ٱلۡغَيۡبِ وَٱلشَّهَٰدَةِ ٱلۡكَبِيرُ ٱلۡمُتَعَالِ

তিনি গায়েব ও প্রকাশ্যের জ্ঞানী, মহান, সর্বোচ্চ [১]। info

[১] আয়াতের অর্থ এই যে, এটা আল্লাহ্ তা'আলার বিশেষ গুণ যে, তিনি প্রত্যেক অনুপস্থিতকে এমনিভাবে জানেন, যেমন উপস্থিত ও বিদ্যমানকে জেনে থাকেন। الْكَبِيْرُ শব্দের অর্থ বড় এবং الْمُتَعَالِ -এর অর্থ উচ্চ। তিনি মান মর্যাদার দিক থেকে যেমন সবার উপরে, ক্ষমতার দিক থেকেও সবার উপরে। অনুরূপভাবে তিনি অবস্থানের দিক থেকেও সবার উপরে। [ইবনুল কাইয়েম, মাদারিজুস সালেকীন ১/৫৫] উভয় শব্দ দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, তিনি সবার চেয়ে বড়, তিনি সবকিছুর উপরে। [ইবন কাসীর] অনুরূপভাবে তিনি সৃষ্ট বস্তুসমূহের গুণাবলীর উর্ধ্বে। কাফের ও মুশরিকরা আল্লাহ্ তা'আলার মহত্ব ও উচ্চমর্যাদা স্বীকার করত, কিন্তু উপলদ্ধি-দোষে তারা আল্লাহকে সাধারণ মানুষের সমতুল্য জ্ঞান করে তাঁর জন্য এমন সব গুণাবলী সাব্যস্ত করত, যেগুলো তাঁর মর্যাদার পক্ষে খুবই অসম্ভব। তিনি সেগুলো থেকে অনেক উর্ধ্বে। [ফাতহুল কাদীর] উদাহরণতঃ ইয়াহূদী ও নাসারাগণ আল্লাহ্‌র জন্য পুত্র সাব্যস্ত করেছে। আরবের মুশরিকগণ আল্লাহ্‌র জন্য কন্যা সাব্যস্ত করেছে। অথচ তিনি এসব অবস্থা ও গুণ থেকে উচ্চে, উর্ধ্বে ও পবিত্র। কুরআনুল কারীম তাদের বর্ণিত গুণাবলী থেকে পবিত্রতা প্রকাশের জন্য বার বার বলেছে:

(سُبْحٰنَ اللّٰهِ عَمَّا يَصِفُوْنَ)

[সূরা আল-মু'মিনূন ৯১] -অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা ঐসব গুণ থেকে পবিত্র যেগুলো তারা বর্ণনা করে। প্রথম

(عٰلِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ)

এবং তৎপূর্ববর্তী

(اَللّٰهُ يَعْلَمُ مَا تَحْمِلُ كُلُّ اُنْثٰى)

বাক্যে আল্লাহ্ তা'আলার জ্ঞানগত পরাকাষ্ঠা বর্ণিত হয়েছিল। দ্বিতীয়

(الْكَبِيْرُ الْمُتَعَالِ)

বাক্যে শক্তি ও মাহাত্ম্যের পরাকাষ্ঠা বর্ণিত হয়েছে। অর্থাৎ তাঁর শক্তি ও সামর্থ্য মানুষের কল্পনার উর্ধ্বে। এর পরবর্তী আয়াতেও এ জ্ঞান ও শক্তির পরাকাষ্ঠা একটি বিশেষ আঙ্গিকে বর্ণনা করা হয়েছে।

التفاسير:

external-link copy
10 : 13

سَوَآءٞ مِّنكُم مَّنۡ أَسَرَّ ٱلۡقَوۡلَ وَمَن جَهَرَ بِهِۦ وَمَنۡ هُوَ مُسۡتَخۡفِۭ بِٱلَّيۡلِ وَسَارِبُۢ بِٱلنَّهَارِ

তোমাদের মধ্যে যে কথা গোপন রাখে বা যে তা প্রকাশ করে, রাতে যে আত্মগোপন করে এবং দিনে যে প্রকাশ্যে বিচরণ করে, তারা সবাই আল্লাহ্‌র নিকট সমান [১]। info

[১] অর্থাৎ আল্লাহ্ তা'আলা প্রকাশ্য ও গোপন সবকিছু সম্পর্কে পূর্ণভাবে জানেন। পবিত্র কুরআনের অন্যান্য স্থানেও এ বিষয়টি বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ্ বলেন: “তোমরা তোমাদের কথা গোপনেই বল অথবা প্রকাশ্যে বল, তিনি তো অন্তর্যামী। যিনি সৃষ্টি করেছেন, তিনি কি জানেন না? তিনি সূক্ষ্মদর্শী, সম্যক অবগত।” [সূরা আল-মুলক ১৩-১৪] আরো বলেছেন, “যদি আপনি উচ্চকণ্ঠে কথা বলেন, তবে তিনি তো যা গুপ্ত ও অব্যক্ত সবই জানেন।” [সূরা ত্বা-হা ৭] অন্য আয়াতে বলেছেন, “এবং তিনি জানেন যা তোমরা গোপন কর আর যা প্রকাশ কর।” [সূরা আন-নামল ২৫] অন্যত্র বলেছেন, “সাবধান! নিশ্চয়ই তারা তাঁর কাছে গোপন রাখার জন্য তাদের বক্ষ দ্বিভাঁজ করে। সাবধান! তারা যখন নিজেদেরকে বস্ত্রে আচ্ছাদিত করে তখন তারা যা গোপন করে ও প্রকাশ করে, তিনি তা জানেন। অন্তরে যা আছে, নিশ্চয়ই তিনি তা সবিশেষ অবহিত।” [সূরা হূদ ৫] আয়াতের অর্থ এই যে, আল্লাহ্ তা'আলার জ্ঞান সর্বব্যাপী। কাজেই যে ব্যক্তি আস্তে কথা বলে এবং যে ব্যক্তি উচ্চঃস্বরে কথা বলে, তারা উভয়ই আল্লাহ্‌র কাছে সমান। তিনি উভয়ের কথা সমভাবে শোনেন এবং জানেন। এমনিভাবে যে ব্যক্তি রাতের অন্ধকারে গা ঢাকা দেয় এবং যে ব্যক্তি দিবালোকে প্রকাশ্য রাস্তায় চলে, তারা উভয়ই আল্লাহ্ তা'আলার জ্ঞান ও শক্তির দিক দিয়ে সমান। উভয়ের আভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক অবস্থা তিনি সমভাবে জানেন এবং উভয়ের উপর তাঁর শক্তি সমভাবে পরিব্যপ্ত। কেউ তাঁর ক্ষমতার আওতাবহির্ভূত নয়।

التفاسير:

external-link copy
11 : 13

لَهُۥ مُعَقِّبَٰتٞ مِّنۢ بَيۡنِ يَدَيۡهِ وَمِنۡ خَلۡفِهِۦ يَحۡفَظُونَهُۥ مِنۡ أَمۡرِ ٱللَّهِۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوۡمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُواْ مَا بِأَنفُسِهِمۡۗ وَإِذَآ أَرَادَ ٱللَّهُ بِقَوۡمٖ سُوٓءٗا فَلَا مَرَدَّ لَهُۥۚ وَمَا لَهُم مِّن دُونِهِۦ مِن وَالٍ

মানুষের জন্য রয়েছে তার সামনে ও পিছনে একের পর এক আগমনকারী প্রহরী; তারা আল্লাহ্‌র আদেশে তার রক্ষণাবেক্ষণ করে [১]। নিশ্চয় আল্লাহ্ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে [২]। আর কোনো সম্প্রদায়ের জন্য যদি আল্লাহ্ অশুভ কিছু ইচ্ছে করেন তবে তা রদ হওয়ার নয় [৩] এবং তিনি ছাড়া তাদের কোনো অভিভাবক নেই। info

[১] مُعَقِّبٰتٌ শব্দটি معقبة এর বহুবচন। যে দল অপর দলের পেছনে কাছাকাছি হয়ে আসে, তাকে معقبة অথবা متعقبة বলা হয়। (مِّنْۢ بَيْنِ يَدَيْهِ) এর শাব্দিক অর্থ, উভয় হাতের মাঝখানে। উদ্দেশ্য মানুষের সম্মুখ দিক। (مِنْ خَلْفِهٖ) এর অর্থ পশ্চাদ্দিক। আয়াতের কয়েকটি অর্থ করা হয়ে থাকে।

এক. তারা আল্লাহ্‌র নির্দেশের কারণে তাকে হেফাযত করে। [ফাতহুল কাদীর] অর্থাৎ যে ব্যক্তি কথা গোপন করতে কিংবা প্রকাশ করতে চায় এবং যে ব্যক্তি চলাফেরাকে রাতের অন্ধকারে ঢেকে রাখতে চায় অথবা প্রকাশ্য সড়কে ঘুরাফেরা করে- এমন প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে ফিরিশতাদের দল নিযুক্ত রয়েছে। তার সম্মুখে ও পশ্চাদ্দিক থেকে তাকে ঘিরে রাখে। তাদের কাজ ও দায়িত্ব পরিবর্তিত হতে থাকে এবং তারা একের পর এক আগমন করে। রাতে তাদের জন্য কিছু পাহারাদার রয়েছে, যেমন রয়েছে দিনে। তারা তাকে বিভিন্ন দুর্ঘটনা থেকে হেফাযত করে। যেমন, আরও কিছু ফেরেশতা রয়েছে যারা তার ভালো কিংবা মন্দ আমল হেফাযত করে। রাতে কিছু ফেরেশতা দিনে কিছু ফেরেশতা। তার ডানে বামে দুজন, যারা তার আমল লিখে। ডান দিকের ফেরেশতা তার সৎকর্ম লিখে, আর বাম দিকের ফেরেশতা তার অসৎকর্ম লিখে। আবার দুজন ফেরেশতা রয়েছে যারা তাকে হেফাযত করে, একজন তার সামনের দিকে অপরজন তার পিছনের দিকে। সুতরাং সে দিনে রাতে চার ফেরেশতার মাঝখানে বসবাস করে। যারা পরিবর্তিতভাবে আগমন করে থাকে। দু'জন আমল হেফাযতকারী আল্লাহ্‌র নির্দেশে মানুষের হেফাযত করা তাদের দায়িত্ব। আর বাকী দু’জন লিখক। তাদের আমলনামা লিখে। [ইবন কাসীর] হাদীসে এসেছে: ‘ফিরিশতাদের দু’টি দল হেফাযতের জন্য নিযুক্ত রয়েছে। একদল রাত্রির জন্য এবং একদল দিনের জন্য। উভয় দল ফজর ও আসরের সালাতের সময় একত্রিত হন। ফজরের সালাতের পর রাতের পাহারাদার দল বিদায় নেন এবং দিনের পাহারাদাররা কাজ বুঝে নেন। আসরের সালাতের পর তারা বিদায় হয়ে যায় এবং রাতের ফিরিশতারা দায়িত্ব নিয়ে চলে আসে।’ [বুখারী ৭৪২৯, মুসলিম ৬৩২]

দুই. ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে আয়াতের আরেকটি অর্থ বর্ণিত আছে, তা হচ্ছে, আল্লাহ্‌র নির্দেশ থেকে তাকে হেফাযত করে। [ইবন কাসীর] অর্থাৎ তাঁর কোনো প্রকার আযাব যেমন, জিন ইত্যাদি থেকে তাদেরকে হেফাযত করে। [কুরতুবী] তারপর যখন তার তাকদীর অনুসারে কোনো কিছু ঘটার জন্য আল্লাহ্‌র নির্দেশ আসে তখন ফিরিশতাগণ সরে পড়ে। আলী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন, ‘প্রত্যেক মানুষের সাথে কিছুসংখ্যক হেফাযতকারী ফিরিশতা নিযুক্ত রয়েছেন। তার উপর যাতে কোনো প্রাচীর ধ্বসে না পড়ে কিংবা সে কোনো গর্তে পতিত না হয়, কিংবা কোনো জন্তু অথবা মানুষ তাকে কষ্ট না দেয়, ইত্যাদি বিষয়ে ফিরিশতাগণ তার হেফাযত করেন। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা বলেন, তবে কোনো মানুষের তাকদীর লিখিত বিপদাপদে জড়িত হওয়ার সময় ফিরিশতারা সেখান থেকে সরে যায়।’ [ইবন হাজার, ফাতহুল বারী ৮/৩৭২] অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকের সাথেই একজন ফিরিশতা এবং একজন শয়তান জুড়ে দেয়া আছে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, আপনার সাথেও? তিনি উত্তরে বললেন, হ্যাঁ, তবে আল্লাহ্ আমাকে তার উপর সহযোগিতা করেছেন, ফলে সে আত্মসমৰ্পন করেছে বা আমি নিরাপদ হয়ে গেছি, সে আমাকে ভালো কাজ ছাড়া আর কোনো কিছুর নির্দেশ দেয় না।’ [মুসলিম ২৮১৪] মোটকথা, হেফাযতকারী ফিরিশতা দীন ও দুনিয়া উভয় দিকের বিপদাপদ থেকেই মানুষকে নিদ্রায় ও জাগরণে হেফাযত করে। [ইবন কাসীর]

[২] অর্থাৎ “আল্লাহ্ তা'আলা কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ স্বয়ং তারাই নিজেদের অবস্থা ও কাজকর্ম মন্দ ও অশান্তিতে পরিবর্তন করে না নেয়।” [বাগভী] তারা যখন নিজেদের অবস্থা অবাধ্যতা ও নাফরমানীতে পরিবর্তিত করে নেয়, তখন আল্লাহ্ তা'আলাও স্বীয় কর্মপন্থা পরিবর্তন করে দেন। এ পরিবর্তন হয় তারা নিজেরা করে অথবা তাদের উপর যারা কর্তৃত্বশীল তারা করে, নতুবা তাদেরই মধ্যকার অন্যদের কারণে সেটা সংঘটিত হয়। যেমন, উহুদের মাঠে তীরন্দাযদের স্থান পরিবর্তনের কারণে মুসলিমদের উপর বিপদ এসে পড়েছিল। ইসলামী শরী’আতে এরকম আরও বহু উদাহরণ রয়েছে। তবে আয়াতের অর্থ এ নয় যে, তিনি কারও কোনো গুনাহ ব্যতীত তাদের উপর বিপর্যয় দেন না। বরং কখনও কখনও অপরের গুনাহের কারণে বিপর্যয় নেমে আসে। যেমন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে, আমাদের মধ্যে নেককাররা থাকা অবস্থায় কি আমাদের ধ্বংস করা হবে? তিনি বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ, যখন অন্যায় অপরাধ ও পঙ্কিলতা বৃদ্ধি পায়।’ [বুখারী ৩৩৪৬; মুসলিম ২৮৮০]

সারকথা, মানুষের হেফাযতের জন্য আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে ফিরিশতাদের পাহারা নিয়োজিত থাকে; কিন্তু সম্প্রদায় যখন আল্লাহ্‌র নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা ও তাঁর আনুগত্য ত্যাগ করে পাপাচার, ভ্রষ্টতা ও অবাধ্যতার পথ বেছে নেয়, তখন আল্লাহ্‌র গযব ও আযাব তাদের উপর নেমে আসে। এ আযাব থেকে আত্মরক্ষার কোনো উপায় থাকে না। অন্য আয়াতে আল্লাহ্ তা'আলা বলেন, “এটা এজন্যে যে, যদি কোনো সম্প্রদায় নিজের অবস্থার পরিবর্তন না করে তবে আল্লাহ্ এমন নন যে, তিনি তাদেরকে যে সম্পদ দান করেছেন, তাতে পরিবর্তন আনবেন।” [সূরা আল-আনফাল ৫৩]

[৩] বলাবাহুল্য, যখন আল্লাহ্ তা'আলাই কাউকে আঘাত দিতে চান, বিপদে ফেলতে চান, অসুখ দিতে চান, রোগাক্রান্ত করতে চান, তখন কেউ তার সে বিপদ ফেরাতে পারে না। [কুরতুবী] আল্লাহ্‌র নির্দেশের বিপরীতে তার সাহায্যার্থেও কেউ এগিয়ে আসতে পারে না। সুতরাং তোমরা এ ধরনের ভুল ধারণা পোষণ করো না যে, যা কিছু করতে থাকো না কেন আল্লাহ্‌র দরবারে এমন কোনো শক্তিশালী পীর, ফকীর বা কোনো পূর্ববতী -পরবর্তী মহাপুরুষ অথবা কোনো জিন বা ফেরেশতা আছে যে তোমাদের নযরানার উৎকোচ নিয়ে তোমাদেরকে অসৎকাজের পরিণাম থেকে বাঁচাবে। অন্য আয়াতে আল্লাহ্ বলেন, “এবং অপরাধী সম্প্রদায়ের উপর থেকে তাঁর শাস্তি রদ করা হয় না।” [আল-আন’আম ১৪৭] আরো বলেছেন, “অপরাধী সম্পপ্রদায় হতে আমাদের শাস্তি রদ করা যায় না।” [সূরা ইউসুফ ১১০]

التفاسير:

external-link copy
12 : 13

هُوَ ٱلَّذِي يُرِيكُمُ ٱلۡبَرۡقَ خَوۡفٗا وَطَمَعٗا وَيُنشِئُ ٱلسَّحَابَ ٱلثِّقَالَ

তিনিই তোমাদেরকে দেখান বিজলী, ভয় ও আশা-আকাংখারূপে এবং তিনিই সৃষ্টি করেন ভারী মেঘ [১]; info

[১] অর্থাৎ আল্লাহ্ তা’আলাই তোমাদেরকে বিদ্যুৎ প্রদর্শন করান। এটা মানুষের জন্য ভয়েরও কারণ হতে পারে। কারণ, এটা যে জায়গায় পতিত হয় সবকিছু জ্বালিয়ে ছাই-ভষ্ম করে দেয়। আবার এটা আশার সঞ্চার করে যে, বিদ্যুৎ চমকানোর পর বৃষ্টি হবে, যা মানুষ ও জীব-জন্তুর জীবনের অবলম্বন। [বাগভী] আল্লাহ্ তা'আলাই বড় বড় ভারী মেঘমালা উত্থিত করেন এরপর স্বীয় ফয়সালা ও তকদীর অনুযায়ী যথা ইচ্ছা, তা বর্ষণ করেন। কাতাদা রাহেমাহুল্লাহ বলেন, এখানে মুসাফিরের জন্য কষ্টের ভয় এবং মুকীম বা স্থায়ীভাবে বসবাসকারীর জন্য আশার বৃষ্টি ও রহমতের কারণ বলা হয়েছে। [ইবন কাসীর; আত-তাফসীরুস সহীহ]

التفاسير:

external-link copy
13 : 13

وَيُسَبِّحُ ٱلرَّعۡدُ بِحَمۡدِهِۦ وَٱلۡمَلَٰٓئِكَةُ مِنۡ خِيفَتِهِۦ وَيُرۡسِلُ ٱلصَّوَٰعِقَ فَيُصِيبُ بِهَا مَن يَشَآءُ وَهُمۡ يُجَٰدِلُونَ فِي ٱللَّهِ وَهُوَ شَدِيدُ ٱلۡمِحَالِ

আর রা’দ তাঁর সপ্রশংস মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করে [১] এবং ফেরেশতাগণও তা-ই করে তাঁর ভয়ে। আর তিনি গর্জনকারী বজ্র পাঠান অতঃপর যাকে ইচ্ছে তা দ্বারা আঘাত করেন [২] এবং তারা আল্লাহ্ সম্বন্ধে বিতণ্ডা করে, আর তিনি শক্তিতে প্রবল শাস্তিতে কঠোর [৩]। info

[১] অর্থাৎ রা’দ আল্লাহ্ তা'আলার প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতার তাসবীহ্ পাঠ করে এবং ফিরিশতারা তাঁর ভয়ে তাসবীহ্ পাঠ করে। মুজাহিদ বলেন, রা’দ বলে যদি মেঘের গর্জন বুঝা হয়, তবে এ তাসবীহ্ পাঠ করার অর্থ হবে আল্লাহ্ তাতে জীবন সৃষ্টি করেন। [কুরতুবী] অথবা এটা ঐ তাসবীহ্ যা কুরআনুল কারীমের অন্য এক আয়াতে উল্লেখ রয়েছে যে, “সপ্ত আকাশ, পৃথিবী এবং তাদের অন্তর্বর্তী সব কিছু তাঁরই পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে এবং এমন কিছু নেই যা তাঁর সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করে না; কিন্তু তাদের পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা তোমরা অনুধাবন করতে পার না।” [সূরা আল-ইসরা ৪৪] [ইবন কাসীর] কোনো কোনো হাদীসে আছে যে, বৃষ্টি বর্ষণের কাজে নিযুক্ত ফিরিশতার নাম রা’দ। [দেখুন, তিরমিয়ী ৩১১৭] এই অর্থে তাসবীহ্ পাঠ করার মানে সুস্পষ্ট।

[২] হাদীসে এসেছে, এক প্রতাপশালী লোকের কাছে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দীনের দাওয়াত নিয়ে পাঠালে সে লোক বলল: কে আল্লাহ্‌র রাসূল? আল্লাহ্ কি? সোনার না রূপার? নাকি পিতলের? এভাবে তিনবার সে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাঠানো লোককে বলে পাঠাল। শেষ পর্যন্ত আল্লাহ্ তার উপর আকাশ থেকে বজ্রপাত করালেন। ফলে তার মাথা গুঁড়িয়ে যায়। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। [ইবন আবি আসেম: আস্সুন্নাহ ৬৯২]

[৩] এখানে مِحَالِ শব্দটি মীমের নীচে كسرة বা যের যোগে। যার অর্থ: কৌশল, শক্তি-সামর্থ্য ইত্যাদি। [বাগভী] শব্দটির বিভিন্ন অর্থ অনুসারে আয়াতের অর্থ দাঁড়ায়, তারা আল্লাহ্ তা’আলার তাওহীদের ব্যাপারে পারস্পরিক কলহ-বিবাদ ও তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত রয়েছে, অথচ আল্লাহ্ তা’আলা শক্তিশালী কৌশলকারী। [মুয়াসসার] তাঁর সামনে সবার চাতুরী অচল। যে কোনো সময় যে কারো বিরুদ্ধে যে কোনো কৌশল তিনি এমন পদ্ধতিতে ব্যবহার করতে পারেন যে, আঘাত আসার এক মুহুর্ত আগেও সে জানতে পারে না কখন কোনো দিক থেকে তার উপর আঘাত আসছে। এ ধরনের একচ্ছত্র শক্তিশালী সত্তা সম্পর্কে যারা না ভেবে-চিন্তে এমনি হালকাভাবে আজে-বাজে কথা বলে, কে তাদের বুদ্ধিমান বলতে পারে? তাঁর ক্ষমতা ও কৌশল সম্পর্কে কারও কোনো সন্দেহ থাকা উচিত নয়। তিনি যখন যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন। তাঁর পাকড়াও থেকে কেউই পালিয়ে যেতে পারবে না। [সা’দী] সুতরাং যদি তিনিই কেবল বান্দাদের জন্য বৃষ্টি নিয়ে আসেন, তাদের জন্য রিযিকের মৌলিক ব্যবস্থাপনা করেন, তিনিই যদি তাদের যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করেন, সমস্ত বড় বড় সৃষ্টি যেগুলো বান্দাদের মনে ভীতির উদ্রেক করে এবং বিরক্তির সঞ্চার করে তারাও যদি তাঁকেই ভয় পায়, তবে তো তিনিই সবচেয়ে বেশী শক্তিমান। একমাত্র তিনি ইবাদাত পাওয়ার উপযুক্ত। আর তাই পরবর্তী আয়াতে তাকে ডাকার কথা বলা হয়েছে। [সা'দী]

التفاسير: