[১] কাতাদা বলেন, মুনাফিকদের এক লোক বলেছিল যে, যদি মুহাম্মদ যা বলে তা সত্য হয় তবে তারা গাধার চেয়েও অধম৷ একথা শুনে মুসলিমদের এক ব্যক্তি বলল যে, আল্লাহর শপথ, মুহাম্মাদ যা বলে তা সত্য, আর তুমি গাধার চেয়েও অধম। মুসলিম লোকটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে ঘটনাটি জানাল। তিনি মুনাফিকটিকে ডেকে জিজ্ঞেস করলেন যে, এ কথাটি তুমি কেন বলেছ? সে লা'নত দিতে লাগল এবং আল্লাহর নামে শপথ করে বলল যে, সে তা বলেনি। তখন মুসলিম লোকটি বলল, হে আল্লাহ! আপনি সত্যবাদীকে সত্যায়ন করুন আর মিথ্যাবাদীকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করুন। তখন এ আয়াত নাযিল হয়। [ইবন কাসীর]
[২] অর্থাৎ তারা তোমাদেরকে আল্লাহর নামে শপথ করে সন্তুষ্ট করতে চায়। অথচ তাদের উচিত ঈমান এনে আল্লাহ ও তার রাসূলকে সন্তুষ্ট করবে। [মুয়াসসার] কারণ, একজন মুমিনের একমাত্র উদ্দেশ্য থাকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে সন্তুষ্ট করা। মুমিন এর উপর অন্য কিছুকে প্রাধান্য দেয় না। তারা যেহেতু সেটা করছে না সেহেতু প্রমাণিত হলো যে, তারা ঈমানদার নয়। [সা'দী]
[১] তারা যেহেতু রাসূলকে কষ্ট দিয়েছে, মুমিনদের কাছে মিথ্যা শপথ করে তাদেরকে ধোঁকা দিতে চেষ্টা করছে, সুতরাং তারা আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরোধিতায় নেমেছে। আর যারাই আল্লাহ্ তা'আলা ও তার রাসূলের বিরোধিতায় নামে তাদের জন্য জাহান্নাম অবধারিত। আর তা ‘নিঃসন্দেহে লাঞ্ছিত জীবন। [সা'দী; মুয়াসসার]
[১] আল্লাহ তা'আলা এ আয়াতে জানাচ্ছেন যে, মুনাফিকরা এ ভয়ে থাকে যে, কখন আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন সূরা নাযিল হয়ে তাদের অপমানিত করবে, তাদের মনের অব্যক্ত কথা ব্যক্ত করে দিবে। তারপর আল্লাহ তা'আলা ঘোষণা দিলেন যে, তারা যতই গোপন করুক না কেন আল্লাহ তা অবশ্যই বের করে দেবেন। [আদওয়াউল বায়ান] মুজাহিদ বলেন, তারা নিজেদের মধ্যে কোন কথা বলে তারপর ভাবতে থাকে যে, এমনও তো হতে পারে যে, আল্লাহ আমাদের এ গোপন কথা তাদেরকে জানিয়ে দিবেন? কাতাদা বলেন, তাদের মনের গোপন কথাগুলো বলে দিয়ে আল্লাহ তাদেরকে অপমানিত করলেন। আর এ জন্যই এ সূরার অপর নাম আল-ফাদিহা বা অপদস্থকারী বা অপমানকারী। [ইবন কাসীর] অন্য আয়াতেও তাদের এ আশঙ্কার কথা আল্লাহ জানিয়েছেন। যেমন, "যাদের অন্তরে রোগ আছে তারা কি মনে করে যে, আল্লাহ কখনো তাদের বিদ্বেষভাব প্রকাশ করে দেবেন না, আর আমরা ইচ্ছে করলে আপনাকে তাদের পরিচয় দিতাম; ফলে আপনি তাদের লক্ষণ দেখে তাদেরকে চিনতে পারতেন। তবে আপনি অবশ্যই কথার ভংগিতে তাদেরকে চিনতে পারবেন। আর আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় আমল সম্পর্কে জানেন।" [সূরা মুহাম্মাদ ২৯-৩০] অন্য আয়াতে তাদের ভীত-সন্ত্রস্ত ভাবের কথা অন্যভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। “তারা যে কোনো আওয়াজকেই তাদের বিরুদ্ধে মনে করে।" [সূরা আল-মুনাফিকুন ৪]
[১] যায়দ ইবন আসলাম রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, এক মুনাফিক আওফ ইবন মালিককে তাবুকের যুদ্ধে বলে বসল: আমাদের এ কারীসাহেবগণ (রাসূল ও সাহাবায়ে কিরামদেরকে মুনাফিকদের পক্ষ থেকে উপহাস করে দেয়া নাম) উদরপূর্তির প্রতি বেশী আগ্রহী, কথা-বার্তায় মিথ্যাচার, আর শক্রর সামনে সবচেয়ে ভীরু। তখন আওফ ইবন মালিক বললেন, তুমি মিথ্যা বলেছ, তুমি মুনাফিক, আমি অবশ্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তা জানাব। আওফ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানাতে গেলে দেখতে পেলেন কুরআন তার আগেই সেটা জানিয়েছে। যায়দ বলেন, আব্দুল্লাহ ইবন উমর বলেন, তখন আমি ঐ মুনাফিক লোকটিকে দেখতে পেলাম যে, সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উষ্ট্রীর পেছনের দিকে ঝুলে ছিল, পাথর তার উপর ছিটে এসে পড়ছিল, সে বলছিল, আমরা তো কেবল আলাপ-আলোচনা ও খেল-তামাশা করছিলাম।’ তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলছিলেন, ‘তোমরা কি আল্লাহ, তার আয়াতসমূহ ও তার রাসূলকে নিয়ে বিদ্রুপ করছিলে?’ [তাবারী]
[১] ইকরিমা বলেন, মুনাফিকদের একজনকে আল্লাহ্ তাঁর ইচ্ছা মোতাবেক ক্ষমা করলে সে বলল, হে আল্লাহ! আমি একটি আয়াত শুনতে পাই যাতে আমাকে উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে, যা আমার চামড়া শিহরিত করে এবং অন্তরে আঘাত করে। হে আল্লাহ! সুতরাং আমার মৃত্যু যেন আপনার রাহে শাহাদাতের মাধ্যমে হয়। কেউ যেন বলতে না পারে যে, আমি অমুককে গোসল দিয়েছি, তাকে কাফন দিয়েছি, তাকে দাফন করেছি। ইকরিমা বলেন, সে ইয়ামামাহ এর যুদ্ধে মারা গেল, কিন্তু অন্যান্য মুসলিমদের লাশ পাওয়া গেলেও তাকে পাওয়া যায় নি। [ইবন কাসীর]