पवित्र कुरअानको अर्थको अनुवाद - बंगाली अनुवाद : डा. अबु बकर मुहम्मद जकारिया ।

رقم الصفحة:close

external-link copy
31 : 7

۞ يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ خُذُواْ زِينَتَكُمۡ عِندَ كُلِّ مَسۡجِدٖ وَكُلُواْ وَٱشۡرَبُواْ وَلَا تُسۡرِفُوٓاْۚ إِنَّهُۥ لَا يُحِبُّ ٱلۡمُسۡرِفِينَ

হে বনী আদম! প্রত্যেক সালাতের সময় তোমরা সুন্দর পোষাক গ্রহণ কর [১]। আর খাও এবং পান কর কিন্তু অপচয় কর না [২] নিশ্চয় তিনি অপচয়কারীদেরকে পছন্দ করেন না। info

[১] আয়াতে পোষাককে ‘যীনাত’ বা ‘সাজ-সজ্জা’ শব্দের মাধ্যমে এ জন্যই ব্যক্ত করা হয়েছে যে, সালাতে শধু গুপ্ত অঙ্গ আবৃত করা ছাড়াও সামর্থ্য অনুযায়ী সাজ-সজ্জার পোষাক পরিধান করা শ্ৰেয়। হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহু সালাতের সময় উত্তম পোষাক পরিধানে অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি বলতেন: ‘আল্লাহ্ তা'আলা সৌন্দর্য পছন্দ করেন, তাই আমি প্রতিপালকের সামনে সুন্দর পোষাক পরে হাজির হই।’ যে গুপ্ত-অঙ্গ সর্বাবস্থায় বিশেষতঃ সালাত ও তাওয়াফে আবৃত করা ফরয, তার সীমা কী? কুরআনুল কারীম সংক্ষেপে গুপ্ত-অঙ্গ আবৃত করার নির্দেশ দিয়েছে। এর বিবরণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন যে, পুরুষের গুপ্তাঙ্গ নাভী থেকে হাটু পর্যন্ত এবং মহিলাদের গুপ্তাঙ্গ মুখমন্ডল, হাতের তালু এবং পদযুগল ছাড়া সমস্ত দেহ। হাদীসসমূহে এসব বিবরণ বর্ণিত রয়েছে। এ হচ্ছে গুপ্ত অঙ্গের ফরয সম্পর্কিত বিধান। এটি ছাড়া সালাতই হয় না। সালাতে শুধু গুপ্ত অঙ্গ আবৃত করাই কাম্য নয়; বরং সাজ-সজ্জার পোষাক পরিধান করতেও বলা হয়েছে। যেমন সাদা পোষাক, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের পোষাকাদির মধ্যে সাদা পোষাক পরিধান কর। কেননা পোষাকাদির মধ্যে তাই উত্তম পোষাক। আর এতে তোমাদের মৃতদেরকে কাফনও দাও।’ [আবু দাউদ ৩৮৭৮, তিরমিয়ী ৯৯৪, ইবন মাজাহ ১৪৭২] অনেকে সাজ-সজ্জার পোষাক পরাকে অহংকারী পোষাক মনে করে থাকে এটা আসলে ঠিক নয়। এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যার অন্তরে অনু পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ এক লোক বলল, কোনো লোক পছন্দ করে তার পোষাক উত্তম হোক, তার জুতা সুন্দর হোক। রাসূল বললেন, “অবশ্যই আল্লাহ সুন্দর, সুন্দরকে ভালোবাসেন।” অহংকার হল, হককে না মানা, মানুষকে অবজ্ঞা করা। [ মুসলিম ১৪৭] আবার অহংকার হয় এমন পোষাকও পরা যাবে না যদিও তাতে কারো কারো নিকট বাহ্যিক সুন্দর রয়েছে। যেমন, টাখনুর নীচে কাপড় পরা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে অহংকার বশে কাপড় টাখনুর নীচে ছেড়ে দিবে আল্লাহ তার দিকে তাকাবেন না।’ [বুখারী ৫৭৮৩] আয়াতের শানে নুযুল হিসেবে এসেছে যে, আরবের মুশরিকরা জাহেলিয়াতে মাসজিদে হারামে কাবার তাওয়াফ করার সময় উলঙ্গ হয়ে তাওয়াফ করত। এ ব্যাপারে তাদের দর্শন ছিল, যে কাপড় পরে গুণাহ করেছি তা দিয়ে তাওয়াফ করা যাবে না। বিশেষতঃ কুরাইশরা এ বিধিবিধানের প্রবর্তন করে। তারাই শুধু তাওয়াফের জন্য কাপড় দিতে পারবে। এতে করে তারা কিছু বাড়তি সুবিধা আদায় করতে পারত। এমনকি মহিলারাও উলঙ্গ তাওয়াফ করত। শয়তান তাদেরকে এভাবে ইবাদাত করতে উদ্বুদ্ধ করত এবং এ কাজকে তাদের মনে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে দিত। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, মহিলা উলঙ্গ অবস্থায় কাবার তাওয়াফ করত আর বলত, কে আমাকে তাওয়াফের কাপড় ধার দেবে? যা তার লজ্জাস্থানে রাখবে। আরও বলত: আজ হয় কিছু অংশ প্রকাশ হয়ে পড়বে নয়ত পুরোটাই। আর যা আজ প্রকাশিত হবে তা আর হালাল করব না। তখন এ আয়াত নাযিল হয়- “তোমরা তোমাদের মাসজিদ তথা ইবাদাতের স্থানে সুন্দর পোষাক পরবে।” [মুসলিম ৩০২৮]

[২] এ আয়াত থেকে একটি মাসআলা এরূপ বুঝা যায় যে, জগতে পানাহারের যত বস্তু রয়েছে সেগুলো সব হালাল ও বৈধ। যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো বিশেষ বস্তুর অবৈধতা ও নিষিদ্ধতা শরীআতের কোনো দলীল দ্বারা প্রমাণিত না হয়, ততক্ষণ প্রত্যেক বস্তুকে হালাল ও বৈধ মনে করা হবে। আয়াতে (وَلَاتُسْرِفُوْا) বলে পানাহারের অনুমতি বরং নির্দেশ থাকার সাথে সাথে অপব্যয় করার নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। আয়াতে ব্যবহৃত اسراف শব্দের অর্থ সীমালংঘন করা। সীমালংঘন কয়েক প্রকারের হতে পারে। (এক) হালালকে অতিক্রম করে হারাম পর্যন্ত পৌঁছা এবং হারাম বস্তু পানাহার করতে থাকা। এ সীমালংঘন যে হারাম তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। (দুই) আল্লাহর হালালকৃত বস্তুসমূহকে শরীআত সম্মত কারণ ছাড়াই হারাম মনে করে বর্জন করা। হারাম বস্তু ব্যবহার করা যেমন অপরাধ ও গোনাহ, তেমনি হালালকে হারাম মনে করাও আল্লাহর আইনের বিরোধিতা ও কঠোর গোনাহ। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কম খেয়ে দুর্বল হয়ে পড়া, ফলে ফরয কর্ম সম্পাদনের শক্তি না থাকা- এটাও সীমালংঘনের মধ্যে গণ্য। উল্লিখিত উভয় প্রকার অপব্যয় নিষিদ্ধ করার জন্য কুরআনুল কারমের এক জায়গায় বলা হয়েছে: “অপব্যয়কারীরা শয়তানের ভাই।” [সূরা আল-ইসরা ২৭] অন্যত্র বলা হয়েছে: “আল্লাহ তাদেরকে পছন্দ করেন, যারা ব্যয় করার ক্ষেত্রে মধ্যবর্তিতা অবলম্বন করে- প্রয়োজনের চেয়ে বেশী ব্যয় করে না এবং কমও করে না।" [সূরা আল-ফুরকান ৬৭] এ আয়াতে পানাহার সম্পর্কে যে মধ্যবর্তিতার নির্দেশ বর্ণিত হয়েছে, তা শুধু পানাহারের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং পরিধান ও বসবাসের প্রত্যেক কাজেই মধ্য পন্থা পছন্দনীয় ও কাম্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সীমালংঘন ও অহংকার না করে খাও, দান কর এবং পরিধান কর। [নাসাঈ ৫/৭৯, ইবন মাজাহ ৩৬০৫] অনুরূপভাবে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, যা ইচ্ছা পানাহার কর এবং যা ইচ্ছা পরিধান কর, তবে শুধু দুটি বিষয় থেকে বেঁচে থাক। (এক) তাতে অপব্যয় অর্থাৎ প্রয়োজনের চাইতে বেশী না হওয়া চাই এবং (দুই) গর্ব ও অহংকার না থাকা চাই। [বুখারী] অন্যত্র এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকেও বর্ণিত হয়েছে। [নাসায়ী ২৫৫৯] তবে এ ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি স্বাভাবিক সীমা দিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আদম সন্তান যে সমস্ত ভাণ্ডার পূর্ণ করে, তন্মধ্যে পেট হল সবচেয়ে খারাপ। আদম সন্তানের জন্য স্বল্প কিছু লোকমাই যথেষ্ট, যা দিয়ে সে তার পিঠ সোজা রাখতে পারে। এর বেশী করতে চাইলে এক-তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানীয়ের জন্য এবং এক-তৃতীয়াংশ নিঃশ্বাসের জন্য নির্দিষ্ট করে।’ [তিরমিযী ২৩৮০, ইবন মাজাহ ৩৩৪৯, মুসনাদে আহমাদ ৪/১৩২]

(وَّكُلُوْا وَاشْرَبُوْا وَلَا تُسْرِفُوْا)

আয়াত থেকে বেশ কয়েকটি মাসআলা জানা যায়। (এক) যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু পানাহার করা ফরয। (দুই) শরীআতের কোনো দলীল দ্বারা কোনো বস্তুর অবৈধতা প্রমানিত না হওয়া পর্যন্ত সব বস্তুই হালাল। (তিন) আল্লাহ্ তা'আলা ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক নিষিদ্ধ বস্তুসমূহকে ব্যবহার করা অপব্যয় ও অবৈধ ৷ (চার) যেসব বস্তু আল্লাহ্ তাআলা হালাল করেছেন, সেগুলোকে হারাম মনে করাও অপব্যয় এবং মহাপাপ। (পাঁচ) পেট ভরে খাওয়ার পরও আহার করা সমীচীন নয়। (ছয়) এতটুকু কম খাওয়াও অবৈধ, যদ্দরুন দুর্বল হয়ে ফরয কর্ম সম্পাদন করতে অক্ষম হয়ে পড়ে। [দেখুন, কুরতুবী; ফাতহুল কাদীর]

التفاسير:

external-link copy
32 : 7

قُلۡ مَنۡ حَرَّمَ زِينَةَ ٱللَّهِ ٱلَّتِيٓ أَخۡرَجَ لِعِبَادِهِۦ وَٱلطَّيِّبَٰتِ مِنَ ٱلرِّزۡقِۚ قُلۡ هِيَ لِلَّذِينَ ءَامَنُواْ فِي ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَا خَالِصَةٗ يَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِۗ كَذَٰلِكَ نُفَصِّلُ ٱلۡأٓيَٰتِ لِقَوۡمٖ يَعۡلَمُونَ

বলুন, 'আল্লাহ নিজের বান্দাদের জন্য যেসব শোভার বস্তু ও বিশুদ্ধ জীবিক সৃষ্টি করেছেন তা কে হারাম করেছে [১]?’ বলুন, ‘পার্থিব জীবনে, বিশেষ করে কেয়ামতের দিনে এ সব তাদের জন্য, যারা ঈমান আনে [২]।’ এভাবে আমরা জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আয়াতসমূহ বিশদভাবে বিবৃত করি। info

চতুর্থ রুকূ’

[১] কোনো বস্তু হালাল অথবা হারাম করা একমাত্র সে সত্তারই কাজ যিনি এসব বস্তু সৃষ্টি করেছেন। এতে অন্যের হস্তক্ষেপ বৈধ নয়। কাজেই সেসব লোক দণ্ডনীয়, যারা আল্লাহর হালালকৃত উৎকৃষ্ট পোষাক অথবা পবিত্র ও সুস্বাদু খাদ্যকে হারাম মনে করে। সংগতি থাকা সত্ত্বেও জীর্ণাবস্থায় থাকা ইসলামের শিক্ষা নয় এবং ইসলামের দৃষ্টিতে পছন্দনীয়ও নয়। খোরাক ও পোষাক সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবী ও তাবেয়ীগণের সুন্নাতের সারকথা এই যে, ‘এসব ব্যাপারে লৌকিকতা পরিহার করতে হবে। যেরূপ পোষাক ও খোরাক সহজলভ্য তাই কৃতজ্ঞতা সহকারে ব্যবহার করতে হবে।’ আয়াতের তাফসীরে ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে যে, আরবরা জাহিলিয়াতে কাপড়-চোপড়সহ বেশ কিছু জিনিস হারাম করত। অথচ এগুলো আল্লাহ হারাম করেননি। যেমন অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, “বলুন, ‘তোমরা আমাকে জানাও, আল্লাহ তোমাদের যে রিযক দিয়েছেন তারপর তোমরা তার কিছু হালাল ও কিছু হারাম করেছ’ বলুন, ‘আল্লাহ কি তোমাদেরকে এটার অনুমতি দিয়েছেন, নাকি তোমরা আল্লাহর উপর মিথ্যা রটনা করছ?" [সূরা ইউনুস ৫৯] তখন আল্লাহ্ তা'আলা আলোচ্য এ আয়াত নাযিল করেন। [তাবারী] কাতাদা বলেন, ‘এ আয়াত দ্বারা জাহেলিয়াতের কাফেররা বাহীরা, সায়েবা, ওসীলা, হাম ইত্যাদি নামে যে সমস্ত প্রাণী হারাম করত সেগুলোকে উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে।' [তাবারী]

[২] আয়াতের এ বাক্যে একটি বিশেষ তাৎপর্য বর্ণনা করা হয়েছে যে, দুনিয়ার সব নেয়ামত; উৎকৃষ্ট পোষাক ও সুস্বাদু খাদ্য প্রকৃতপক্ষে আনুগত্যশীল মুমিনদের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তাদের কল্যাণেই অন্যেরা ভোগ করতে পারছে। কিন্তু আখেরাতে সমস্ত নেয়ামত ও সুখ কেবলমাত্র আল্লাহর অনুগত বান্দাদের জন্য নির্দিষ্ট থাকবে। আয়াতের এ বাক্যে বলা হয়েছে, “আপনি বলে দিন: সব পার্থিব নেয়ামত প্রকৃতপক্ষে পার্থিব জীবনেও মুমিনদেরই প্রাপ্য এবং কেয়ামতের দিন তো এককভাবে তাদের জন্যই নির্দিষ্ট হবে।” [তাবারী ইবন আব্বাস হতে] আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমার অপর মতে এ বাক্যটির অর্থ এই যে, পার্থিব সব নেয়ামত ও সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য আখেরাতে শাস্তির কারণ হবে না- এ বিশেষ অবস্থাসহ তা একমাত্র অনুগত মুমিন বান্দাদেরই প্রাপ্য। কাফের ও পাপাচারীর অবস্থা এরূপ নয়। পার্থিব নেয়ামত তারাও পায় বরং আরো বেশী পায়; কিন্তু এসব নেয়ামত আখেরাতে তাদের জন্য শাস্তি ও স্থায়ী আযাবের কারণ হবে। কাজেই পরিণামের দিক দিয়ে এসব নেয়ামত তাদের জন্য সম্মান ও সুখের বস্তু নয়। [কুরতুবী] কোনো কোনো তাফসীরবিদের মতে এর অর্থ এই যে, পার্থিব সব নেয়ামতের সাথে পরিশ্রম, কষ্ট, হস্তচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা ও নানারকম দুঃখ-কষ্ট লেগে থাকে, নির্ভেজাল নেয়ামত ও অনাবিল সুখের অস্তিত্ব এখানে নেই। তবে কেয়ামতে যারা এসব নেয়ামত লাভ করবে, তারা নির্ভেজাল অবস্থায় লাভ করবে। এগুলোর সাথে কোনোরূপ পরিশ্রম, কষ্ট, হস্তচু্যত হওয়ার আশংকা এবং কোনো চিন্তা-ভাবনা থাকবে না। [বাগভী] উপরোক্ত তিন প্রকার অর্থই আয়াতের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। তাই সাহাবী ও তাবেয়ী তাফসীরবিদগণ এসব অর্থই গ্রহণ করেছেন।

التفاسير:

external-link copy
33 : 7

قُلۡ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ ٱلۡفَوَٰحِشَ مَا ظَهَرَ مِنۡهَا وَمَا بَطَنَ وَٱلۡإِثۡمَ وَٱلۡبَغۡيَ بِغَيۡرِ ٱلۡحَقِّ وَأَن تُشۡرِكُواْ بِٱللَّهِ مَا لَمۡ يُنَزِّلۡ بِهِۦ سُلۡطَٰنٗا وَأَن تَقُولُواْ عَلَى ٱللَّهِ مَا لَا تَعۡلَمُونَ

বলুন, ‘নিশ্চয় আমার রব হারাম করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা [১]। আর পাপ ও অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন এবং কোনো কিছুকে আল্লাহর শরীক করা- যার কোনো সনদ তিনি নাযিল করেননি। আর আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলা যা তোমরা জান না [২]।’ info

[১] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'আল্লাহর চেয়ে অধিক আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন আর কেউ নেই; এজন্যই তিনি অশ্লীলতাকে হারাম করেছেন আর আল্লাহর চেয়ে অধিক প্রশংসাপ্রিয় আর কেউ নেই।’ [ বুখারী ৫২২০]

[২] আল্লাহর উপর না জেনে কথা বলার ব্যাপারে কুরআনুল কারীমের বিভিন্ন আয়াতে সাবধান করা হয়েছে। যেমন, সূরা আল-বাকারার ১৬৯ এবং সূরা আল-ইসরার ৩৬ নং আয়াত আল্লাহর উপর না জেনে কথা বলা আসলেই বড় গোনাহর কাজ। আল্লাহ্‌ সম্পর্কে, গায়েব সম্পর্কে, আখেরাত সম্পর্কে, আল্লাহ্‌র দীন সম্পর্কে যাবতীয় কথা যতক্ষণ পর্যন্ত কুরআন ও সহীহ হাদীস ভিত্তিক না হবে ততক্ষণ তা আল্লাহর উপর না জেনে কথা বলার আওতায় পড়বে। অনুরূপভাবে যারা না জেনে-বুঝে ফাতাওয়া দেয় তারাও আল্লাহর উপর না জেনে কথা বলেন। আর এজন্যই বলা হয়: ‘ফাতাওয়া দানে যে যতবেশী তৎপর জাহান্নামে যাওয়ার জন্যও সে ততবেশী তৎপর’।

التفاسير:

external-link copy
34 : 7

وَلِكُلِّ أُمَّةٍ أَجَلٞۖ فَإِذَا جَآءَ أَجَلُهُمۡ لَا يَسۡتَأۡخِرُونَ سَاعَةٗ وَلَا يَسۡتَقۡدِمُونَ

আর প্রত্যেক জাতির জন্য এক নির্দিষ্ট সময় আছে [১]। অতঃপর যখন তাদের সময় আসবে তখন তারা মুহূর্তকাল দেরি করতে পারবে না এবং এগিয়েও আনতে পারবে না। info

[১] এ সুনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তারা দুনিয়াতে ভোগ-বিলাসে থাকতে পারবে। কিন্তু এরপর যখন আল্লাহ তা'আলা তাদের পাকড়াও করতে চাইবেন তখন তাদের আর সময় দেয়া হবে না। এ ব্যাপারে বিভিন্ন সূরায় অনুরূপ আলোচনা এসেছে: যেমন, সূরা আল-হিজর ৫ ও সূরা নূহ ৪, সূরা আল-মুনাফিকূন ১১ ৷

التفاسير:

external-link copy
35 : 7

يَٰبَنِيٓ ءَادَمَ إِمَّا يَأۡتِيَنَّكُمۡ رُسُلٞ مِّنكُمۡ يَقُصُّونَ عَلَيۡكُمۡ ءَايَٰتِي فَمَنِ ٱتَّقَىٰ وَأَصۡلَحَ فَلَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ

হে বনী আদম! যদি তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য থেকে রাসূলগণ আসেন, যারা আমার আয়াতসমূহ তোমাদের কাছে বিবৃত করবেন, তখন যারা তাকওয়া অবলম্বন করবে এবং নিজেদের সংশোধন করবে, তাদের কোনো ভয় থাকবে না এবং তারা চিন্তিতও হবে না। info
التفاسير:

external-link copy
36 : 7

وَٱلَّذِينَ كَذَّبُواْ بِـَٔايَٰتِنَا وَٱسۡتَكۡبَرُواْ عَنۡهَآ أُوْلَٰٓئِكَ أَصۡحَٰبُ ٱلنَّارِۖ هُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ

আর যারা আমাদের আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করেছে এবং তার ব্যাপারে অহংকার করেছে, তারাই অগ্নিবাসী, সেখানে তারা স্থায়ী হবে। info
التفاسير:

external-link copy
37 : 7

فَمَنۡ أَظۡلَمُ مِمَّنِ ٱفۡتَرَىٰ عَلَى ٱللَّهِ كَذِبًا أَوۡ كَذَّبَ بِـَٔايَٰتِهِۦٓۚ أُوْلَٰٓئِكَ يَنَالُهُمۡ نَصِيبُهُم مِّنَ ٱلۡكِتَٰبِۖ حَتَّىٰٓ إِذَا جَآءَتۡهُمۡ رُسُلُنَا يَتَوَفَّوۡنَهُمۡ قَالُوٓاْ أَيۡنَ مَا كُنتُمۡ تَدۡعُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِۖ قَالُواْ ضَلُّواْ عَنَّا وَشَهِدُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ أَنَّهُمۡ كَانُواْ كَٰفِرِينَ

সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রটনা করে কিংবা তাঁর আয়াতসমূহে মিথ্যারোপ করে তার চেয়ে বড় যালিম আর কে? তাদের জন্য যে অংশ লেখা আছে তা তাদের কাছে পৌঁছবে [১]। অবশেষে যখন আমাদের ফিরিশতাগণ তাদের জান কবজের জন্য তাদের কাছে আসবে, তখন তারা জিজ্ঞেস করবে, ‘আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে তোমরা ডাকতে [২] তারা কোথায়?' তারা বলবে, ‘তারা আমাদের থেকে উধাও হয়েছে’ এবং তারা নিজেদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবে যে, নিশ্চয় তারা কাফের ছিল। info

[১] অর্থাৎ তাদের শাস্তির যে পরিমাণ লেখা আছে তা তাদের কাছে পৌঁছবেই। [তাবারী]
কাতাদা বলেন, দুনিয়াতে তারা যে আমল করেছে সেটার ফলাফল আখেরাতে তাদের কাছে পৌঁছবেই। [আত-তাফসীরুস সহীহ]

[২] অর্থাৎ আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে তোমরা ডাকতে, যাদের তোমরা ইবাদত করতে এখন তারা কোথায়? তারা কি তোমাদেরকে এখন সাহায্য করতে পারে না? তারা কি তোমাদেরকে এ বিপদ থেকে উদ্ধার করতে পারে না? তখন তারা স্বীকার করবে যে, আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে তারা আহবান করত, যাদের ইবাদত করত, তারা সবাই তাদের কাছ থেকে হারিয়ে গেছে। এভাবে তারা তাদের নিজেদের বিপক্ষে সাক্ষী দিল যে, তারা মুশরিক ছিল, তাওহীদবাদী ছিল না। [মুয়াসসার]

التفاسير: