[১] এ আয়াতে সে সমস্ত সাহাবায়ে কেরামের জেহাদের জন্য রওয়ানা হওয়া এবং ‘হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি’মাল ওয়াকীল’ বলার উপকারিতা, ফলশ্রুতি ও বরকত বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে- “এরা আল্লাহ্র দান ও অনুগ্রহ নিয়ে ফিরে আসল। তাতে তাদের কোনো রকম অনিষ্ট হলো না আর তারা হল আল্লাহ্র ইচ্ছার অনুগত।” আল্লাহ তা’আলা তাদেরকে তিনটি নেয়ামত প্রদান করলেন। প্রথম নেয়ামত হলো এই যে, কাফেরদের মনে ভীতি সঞ্চার করে দিলেন, এতে তারা পালিয়ে গেল। ফলে তারা যুদ্ধ-বিগ্রহ থেকে নিরাপদ রইলেন। এ নেয়ামতকে আল্লাহ তা’আলা ‘নেয়ামত’ শব্দেই উল্লেখ করলেন। দ্বিতীয় নেয়ামত এই যে, হামরাউল আসাদের বাজারে তাঁদের ব্যবসা-বাণিজ্যের যে সুযোগ হয়েছিল এবং তাতে তারা যে লাভবান হয়েছিলেন এবং কাফেরদের ফেলে যাওয়া গণীমতের মাল থেকে তারা যে লাভবান হয়েছিলেন তাকেই বলা হয়েছে ‘ফযল’। তৃতীয় নেয়ামতটি হলো ‘আল্লাহ্র সন্তুষ্টি লাভ’ যা সমস্ত নেয়ামতের উর্ধ্বে এবং যা এই জেহাদে তাদেরকে বিশেষ ভঙ্গিতে দেয়া হয়েছে।
[১] এখানে ‘সে’ বলতে তাকে বোঝানো হয়েছে, যে ব্যক্তি মুমিনদের কাছে এসে বলেছিল যে, ‘তোমাদের বিরুদ্ধে মানুষ জড়ো হয়েছে কাজেই তোমরা তাদের ভয় করো’। তারা ছিল বনী আব্দুল কায়েসের কিছু লোক। [তাবারী]
[১] এক্ষেত্রে কেউ যেন এমন কোনো সন্দেহ না করে যে, আল্লাহ তা’আলা কাফেরদেরকে অবকাশ, দীর্ঘায়ু, স্বাস্থ্য-সামর্থ্য ও আরাম-আয়েশের উপকরণ এ জন্যই দিয়েছেন, যাতে তারা নিজেদের অপরাধ প্রবণতায় অধিকতর এগিয়ে যায়, তাহলে তো কাফেররা নির্দোষ। কারণ, আয়াতের উদ্দেশ্য হল, কাফেরদের সামান্য কয়েক দিনের এ অবকাশ ও ভোগ-বিলাসে যেন মুসলিমরা পেরেশান না হয়। কেননা কুফর ও পাপ সত্ত্বেও তাদেরকে পার্থিব শক্তি-সামর্থ্য ও বৈভব দান করাটাও তাদের শাস্তিরই একটি পন্থা, যার অনুভূতি আজকে নয় এই পৃথিবী থেকে যাবার পরই হবে যে, তাদেরকে দেয়া পার্থিব ভোগ-বিলাসের যে উপকরণ তারা পাপ কর্মে ব্যয় করেছে প্রকৃতপক্ষে সেসবই ছিল জাহান্নামের অঙ্গার। এ বিষয়টিই কতিপয় আয়াতে আল্লাহ বলেছেন। বলা হয়েছে, “কাফেরদের ধন-সম্পদ এবং ভোগ-বিলাস তাদের জন্য গৌরবের বস্তু নয়; এগুলো আল্লাহ তা’আলার পক্ষ থেকে আযাবেরই একটি কিস্তি যা আখেরাতে তাদের আযাব বৃদ্ধির কারণ হবে।” [সূরা আত-তাওবাহ ৫৫]
[১] এ আয়াতে কাফেরদেরকে কেন আল্লাহ তা’আলা তাদের পাপের কারণে শাস্তি না দিয়ে অবকাশ দিয়ে থাকেন তার বর্ণনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, তাদের এ অবকাশ তাদের জন্য মঙ্গল বা সুখকর নয়। এটা তাদের গোনাহ আরও বর্ধিত করে তাদেরকে ভালভাবে পাকড়াও করার জন্য। অন্য আয়াতে অবশ্য বলা হয়েছে যে, তাদেরকে এ অবকাশ প্রদানের পূর্বে আল্লাহ্ তা’আলা দুঃখ-কষ্ট দিয়ে আল্লাহ্র দিকে ফিরানোর সুযোগ দিয়ে থাকেন। কিন্তু তারপরও যারা অবাধ্যতা অবলম্বন করে তাদেরকে তিনি শক্তহাতে পাকড়াও করেন। আল্লাহ বলেন, “আমি কোনো জনপদে নবী পাঠালে সেখানকার অধিবাসীদেরকে অর্থ-সংকট ও দুঃখ-কষ্ট দ্বারা আক্রান্ত করি, যাতে তারা কাকুতি-মিনতি করে। তারপর আমরা অকল্যাণকে কল্যাণে পরিবর্তিত করি। অবশেষে তারা প্রাচুর্যের অধিকারী হয় এবং বলে, ‘আমাদের পূর্বপুরুষরাও তো দুঃখ-সুখ ভোগ করেছে।’ তারপর হঠাৎ তাদেরকে আমরা পাকড়াও করি, কিন্তু তারা উপলব্ধি করতে পারে না।” [সূরা আল-আরাফ ৯৪-৯৫]
আরও বলেন, “আপনার আগেও আমরা বহু জাতির কাছে রাসূল পাঠিয়েছি; তারপর তাদেরকে অর্থসংকট ও দুঃখ-কষ্ট দিয়ে পীড়িত করেছি, যাতে তারা বিনীত হয়। আমাদের শাস্তি তাদের উপর যখন আপতিত হল তখন তারা কেন বিনীত হল না? কিন্তু তাদের হৃদয় কঠিন হয়েছিল এবং তারা যা করছিল শয়তান তা তাদের দৃষ্টিতে শোভন করেছিল। তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল তারা যখন তা ভুলে গেল তখন আমরা তাদের জন্য সবকিছুর দরজা খুলে দিলাম; অবশেষে তাদেরকে যা দেয়া হল যখন তারা তাতে উল্লাসিত হল তখন হঠাৎ তাদেরকে ধরলাম; ফলে তখনি তারা নিরাশ হল।” [সূরা আল-আনআম ৪২-৪৪]
অন্য আয়াতে উল্লেখ করেছেন যে, এ অবকাশ প্রদান তাঁর মজবুত কৌশলের অন্তর্গত। আল্লাহ বলেন, “আর যারা আমাদের নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে আমরা তাদেরকে এমনভাবে ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাই যে, তারা জানতেও পারবে না। আমি তাদেরকে সময় দিয়ে থাকি; আমার কৌশল অত্যন্ত বলিষ্ঠ।” [সূরা আল-আরাফ ১৮২-১৮৩]
আরও বলেন, “অতএব ছেড়ে দিন আমাকে এবং যারা এ বাণীতে মিথ্যারোপ করে তাদেরকে, আমরা তাদেরকে ক্রমে ক্রমে ধরব এমনভাবে যে, তারা জানতে পারবে না। আর আমি তাদেরকে সময় দিয়ে থাকি, নিশ্চয় আমার কৌশল অত্যন্ত বলিষ্ঠ।” [সূরা আল-কালাম ৪৪-৪৫]
[১] অর্থাৎ সাধারণ মানুষকে গায়েবী বিষয়ের জ্ঞান আল্লাহ্ তা’আলা প্রদান করেন না। কিন্তু নবী-রাসূলদের যাকে ইচ্ছা আল্লাহ্ তা’আলা ওহীর মাধ্যমে কিছু কিছু গায়েবী বিষয়ের জ্ঞান দান করেন। যাতে তারা এর মাধ্যমে আল্লাহ্র দীনকে প্রচার করতে সমর্থ হন। যেমন, মুনাফিকদের সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা তার রাসূলকে কিছু কিছু গায়েবী জ্ঞান দান করেছিলেন এবং তাদের ব্যাপারে সাবধান করেছিলেন। [আল-মুইয়াসসার] সুতরাং তোমাদের কাজ হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান আনয়ন করা। গায়েবী সংবাদ জানার জন্য বসে থাকা তোমাদের কাজ নয়। যদি প্রকৃত ঈমান ও তাকওয়া তোমাদের অর্জিত হয়, তবে এতেই তোমাদের সাফল্য রয়েছে।
[১] রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যাকে আল্লাহ ধন-সম্পদ দিয়েছেন, কিন্তু সে তার যাকাত আদায় করেনি, তার সে ধন-সম্পদকে কেয়ামতের দিন একটি সাপের রূপ দেয়া হবে। যার মাথায় চুল থাকবে এবং চোখের উপর দুটি কালো দাগ থাকবে। সাপটিকে তার গলায় পেঁচিয়ে দেয়া হবে, সেটি তার মুখে দংশন করতে থাকবে এবং বলবে: আমি তোমার ধন-সম্পদ, আমি তোমার গচ্ছিত অর্থসম্পদ। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ আয়াতটি পাঠ করেন। [বুখারী ৪৫৬৫]