আল-কোৰআনুল কাৰীমৰ অৰ্থানুবাদ - বাংলা অনুবাদ - আবু বকৰ যাকাৰিয়্য়া

আল-মুতাফ্ফিফীন

external-link copy
1 : 83

وَيۡلٞ لِّلۡمُطَفِّفِينَ

দুর্ভোগ তাদের জন্য যারা মাপে কম দেয় [১], info

আয়াত সংখ্যা: ৩৬ আয়াত।

নাযিল হওয়ার স্থান: মক্কী।

সূরা সংক্রান্ত আলোচনা:

বিভিন্ন বর্ণনায় এসেছে যে, রাসূলুল্লাহ্র সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদীনায় তশরীফ আনেন, তখন মদীনাবাসীদের সাধারণ কাজ কারবার ‘কাইল’ তথা মাপের মাধ্যমে সম্পন্ন হত। তারা এ ব্যাপারে চুরি করা ও কম মাপায় খুবই অভ্যস্ত ছিল। এর প্রেক্ষিতে সূরা আল-মুতাফফেফীন নাযিল হয়। এই সূরা নাযিল হওয়ার পর তারা এই বদ-আভ্যাস থেকে বিরত হয় এবং এমন বিরত হয় যে, আজ পর্যন্ত তাদের সুখ্যাতি সৰ্বজনবিদিত। [নাসায়ী, আস-সুনানুল কুবরা ১১৫৯০, ইবন মাজহ ২২২৩]

______________________

[১] تَطْفِيْفٌ এর অর্থ মাপে কম করা। যে এরূপ করে তাকে বলা হয় مُطَفِّف। [কুরতুবী] কুরআনের এই আয়াত ও বিভিন্ন হাদীসে মাপ ও ওজনে কম করাকে হারাম করা হয়েছে এবং সঠিকভাবে ওজন ও পরিমাপ করার জন্য কড়া তাগিদ করা হয়েছে। যেমন বলা হয়েছে: “ইনসাফ সহকারে পুরো ওজন ও পরিমাপ করো। আমি কাউকে তার সামর্থের চেয়ে বেশীর জন্য দায়িত্বশীল করি না।” [সূরা আল-আন‘আম ১৫২] আরও বলা হয়েছে: “মাপার সময় পুরো মাপবে এবং সঠিক পাল্লা দিয়ে ওজন করবে।” [সূরা আল-ইসরা ৩৫] অন্যত্র তাকীদ করা হয়েছে: “ওজনে বাড়াবাড়ি করো না, ঠিক ঠিকভাবে ইনসাফের সাথে ওজন করো এবং পাল্লায় কম করে দিয়ো না।” [সূরা আর-রহমান ৮-৯] শু‘আইব আলাইহিস্ সালামের সম্প্রদায়ের ওপর এ অপরাধের কারণে আযাব নাযিল হয় যে, তাদের মধ্যে ওজনে ও মাপে কম দেওয়ার রোগ সাধারণভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং শু'আইব আলাইহিস্ সালামের বারবার নসীহত করা সত্ত্বেও এ সম্প্রদায়টি এ অপরাধমূলক কাজটি থেকে বিরত থাকেনি। তবে আয়াতে উল্লেখিত تطفيف শুধু মাপ ও ওজনের মধ্যেই সীমিত থাকবে না; বরং মাপ ও ওজনের মাধ্যমে হোক, গণনার মাধ্যমে হোক অথবা অন্য কোনো পন্থায় প্রাপককে তার প্রাপ্য কম দিলে তা تطفيف এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে হারাম হবে। সুতরাং প্রত্যেক প্রাপকের প্রাপ্য পূর্ণমাত্রায় দেয়াই যে আয়াতের উদ্দেশ্য এ কথা বলাই বাহুল্য। উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু জনৈক ব্যক্তিকে আসরের সালাতে না দেখে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলেন। সে একটি ওজর পেশ করল। তখন তিনি তাকে বললেন, طفَّفت অর্থাৎ ‘তুমি আল্লাহর প্রাপ্য আদায়ে কমতি করেছ।’ এই উক্তি উদ্ধৃত করে ইমাম মালেক রাহেমাহুল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যেক বস্তুর মধ্যে পূর্ণমাত্রায় দেয়া ও কম করা আছে। [মুয়াত্তা মালেক ১/১২, নং ২২] তাছাড়া ঝগড়া-বিবাদের সময় নিজের দলীল-প্রমাণাদি পেশ করার পর প্রতিপক্ষের দলীল-প্রমাণাদি পেশ করার সুযোগ দেয়াও এর অন্তর্ভুক্ত। [সা‘দী]

التفاسير:

external-link copy
2 : 83

ٱلَّذِينَ إِذَا ٱكۡتَالُواْ عَلَى ٱلنَّاسِ يَسۡتَوۡفُونَ

যারা লোকদের কাছ থেকে মেপে নেয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে, info
التفاسير:

external-link copy
3 : 83

وَإِذَا كَالُوهُمۡ أَو وَّزَنُوهُمۡ يُخۡسِرُونَ

আর যখন তাদেরকে মেপে দেয় অথবা ওজন করে দেয়, তখন কম দেয়। info
التفاسير:

external-link copy
4 : 83

أَلَا يَظُنُّ أُوْلَٰٓئِكَ أَنَّهُم مَّبۡعُوثُونَ

তারা কি বিশ্বাস করে না যে, তারা পুনরুথিত হবে info
التفاسير:

external-link copy
5 : 83

لِيَوۡمٍ عَظِيمٖ

মহাদিনে ? info
التفاسير:

external-link copy
6 : 83

يَوۡمَ يَقُومُ ٱلنَّاسُ لِرَبِّ ٱلۡعَٰلَمِينَ

যেদিন দাঁড়াবে সমস্ত মানুষ সৃষ্টিকুলের রবের সামনে [১]! info

[১] ইবন উমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যেদিন সমস্ত মানুষ জগতসমূহের রবের সামনে দাঁড়াবে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের কানের মধ্যভাগ পর্যন্ত ঘামে ডুবে থাকবে।’ [বুখারী ৬৫৩১, মুসলিম ২৮৬২] অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘কিয়ামতের দিন সূর্যকে সৃষ্টির এত নিকটে আনা হবে যে, তাদের মধ্যে দুরত্ব হবে এক ‘মাইল’। বর্ণনাকারী বলেন: আমি জানি না এখানে মাইল বলে পরিচিত এক মাইল না সুরমাদানি (যা আরবিতে মাইল বলা হয় তা) বুঝানো হয়েছে। অতঃপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘মানুষ তাদের স্বীয় আমল অনুযায়ী ঘামের মধ্যে নিমজ্জিত থাকবে। কারও ঘাম হবে গোড়ালি পর্যন্ত, কারও হবে হাঁটু পর্যন্ত। আবার কারও ঘাম হবে কোমর পর্যন্ত, কারও ঘাম মুখের লাগামের মত হবে।’ তারপর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার মুখের দিকে ইশারা করেন। [মুসলিম ২৮৬৪]

التفاسير:

external-link copy
7 : 83

كَلَّآ إِنَّ كِتَٰبَ ٱلۡفُجَّارِ لَفِي سِجِّينٖ

কখনো না, পাপাচারীদের আমলনামা তো সিজ্জীনে [১] আছে। info

[১] سجين শব্দটি سجن থেকে গৃহীত। سجن অর্থ সংকীর্ণ জায়গায় বন্দী করা। [ইবন কাসীর] আর سجّين এর অর্থ চিরস্থায়ী কয়েদ। [মুয়াসসার] এটি একটি বিশেষ স্থানের নাম। যেখানে কাফেরদের রূহ অবস্থান করে অথবা এখানেই তাদের আমলনামা থাকে। [জালালাইন]

التفاسير:

external-link copy
8 : 83

وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا سِجِّينٞ

আর কিসে আপনাকে জানাবে ‘সিজ্জীন’ কী? info
التفاسير:

external-link copy
9 : 83

كِتَٰبٞ مَّرۡقُومٞ

চিহ্নিত আমলনামা [১]। info

[১] مرقوم শব্দের কয়েকটি অর্থ আছে, লিখিত, চিহ্নিত এবং মোহরাঙ্কিত। [কুরতুবী] অর্থাৎ কিতাবটি লিখা শেষ হওয়ার পর তাতে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে ফলে তাতে হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটবে না। আর কিতাব বলতে, আমলনামা বোঝানো হয়েছে। ইবন কাসীর বলেন, এটা সিজ্জীনের তাফসীর নয়; বরং পূর্ববতী كِتٰبَ الْفُجَّارِ এর বর্ণনা। অর্থ এই যে, কাফের ও পাপাচারীদের আমলনামা মোহর লাগিয়ে সংরক্ষিত করা হবে। ফলে এতে হ্রাস-বৃদ্ধি ও পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকবে না। এই সংরক্ষণের স্থান হবে সিজ্জীন। এর প্রমাণ আমরা বারা ইবন আযিব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীসে দেখতে পাই। সেখানে বলা হয়েছে, মহান আল্লাহ্ কাফেরদের রূহ হরণ হওয়ার পর বলবেন,

اكْتُبُوا كِتَابَه فيِ سِجِّيْنٍ فيِ الأَرْضِ السُّفْلٰى

“তার কিতাবকে সর্বনিম্ন যমীনে সিজ্জীনে লিখে রাখ।” [মুসনাদে আহমাদ ৪/২৮৭]

التفاسير:

external-link copy
10 : 83

وَيۡلٞ يَوۡمَئِذٖ لِّلۡمُكَذِّبِينَ

সেদিন দুর্ভোগ হবে মিথ্যারোপকারীদের, info
التفاسير:

external-link copy
11 : 83

ٱلَّذِينَ يُكَذِّبُونَ بِيَوۡمِ ٱلدِّينِ

যারা প্রতিদান দিবসে মিথ্যারোপ করে, info
التفاسير:

external-link copy
12 : 83

وَمَا يُكَذِّبُ بِهِۦٓ إِلَّا كُلُّ مُعۡتَدٍ أَثِيمٍ

আর শুধু প্রত্যেক পাপিষ্ঠ সীমালংঘনকারীই এতে মিথ্যারোপ করে; info
التفاسير:

external-link copy
13 : 83

إِذَا تُتۡلَىٰ عَلَيۡهِ ءَايَٰتُنَا قَالَ أَسَٰطِيرُ ٱلۡأَوَّلِينَ

যখন তার কাছে আমাদের আয়াতসমূহ তেলাওয়াত করা হয় তখন সে বলে, (এ তো) ‘পূর্ববর্তীদের উপকথা।’ info
التفاسير:

external-link copy
14 : 83

كَلَّاۖ بَلۡۜ رَانَ عَلَىٰ قُلُوبِهِم مَّا كَانُواْ يَكۡسِبُونَ

কখনো নয়; বরং তারা যা অর্জন করেছে তা-ই তাদের হৃদয়ে জঙ্ ধরিয়েছে [১]। info

[১] ران শব্দটি رين থেকে উদ্ভূত। অর্থ প্রাধান্য বিস্তার করা। [কুরতুবী] ঢেকে ফেলা। [তাতিস্মাতু আদওয়াইল বায়ান] যাজ্জাজ বলেন, মরিচা ও ময়লা। [কুরতুবী] অর্থাৎ শাস্তি ও পুরস্কারকে গল্প বা উপকথা গণ্য করার কোনো যুক্তিসংগত কারণ নেই। কিন্তু যে কারণে তারা একে গল্প বলছে তা হচ্ছে এই যে, এরা যেসব গোনাহে লিপ্ত রয়েছে তাদের অন্তরে মরিচা ধরেছে। মরিচা যেমন লোহাকে খেয়ে মাটিতে পরিণত করে দেয়, তেমনি তাদের পাপের মরিচা তাদের অন্তরের যোগ্যতা নিঃশেষ করে দিয়েছে। ফলে তারা ভাল ও মন্দের পার্থক্য বোঝেনা। ফলে পুরোপুরি যুক্তিসংগত কথাও এদের কাছে গল্প বলে মনে হচ্ছে। [ইবন কাসীর] এই জং ও মরীচার ব্যাখ্যায় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: বান্দা যখন কোনো গোনাহ করে, তার অন্তরে একটি কালো দাগ পড়ে যায়। সে তওবা করলে দাগটি উঠে যায়। কিন্তু যদি সে গোনাহ করে যেতেই থাকে তাহলে সমগ্র দিলের ওপর তা ছেয়ে যায়। [তিরমিয় ৩৩৩৪, ইবন মজাহ ৪২৪৪]

التفاسير:

external-link copy
15 : 83

كَلَّآ إِنَّهُمۡ عَن رَّبِّهِمۡ يَوۡمَئِذٖ لَّمَحۡجُوبُونَ

কখনো নয়; নিশ্চয় সেদিন তারা তাদের রব হতে অন্তরিত থাকবে [১]; info

[১] অর্থাৎ কেয়ামতের দিন এই কাফেররা তাদের রবের দীদার বা দর্শন ও যেয়ারত থেকে বঞ্চিত থাকবে এবং পর্দার আড়ালে অবস্থান করবে। এই আয়াত থেকে জানা যায় যে, সেদিন মুমিনগণ আল্লাহ্ তা‘আলার দীদার ও যেয়ারত লাভে ধন্য হবে; নতুবা কাফেরদেরকে পর্দার অন্তরালে রাখার কোনো উপকারিতা নেই। [ইবন কাসীর]

التفاسير:

external-link copy
16 : 83

ثُمَّ إِنَّهُمۡ لَصَالُواْ ٱلۡجَحِيمِ

তারপর নিশ্চয় তারা জাহান্নামে দগ্ধ হবে; info
التفاسير:

external-link copy
17 : 83

ثُمَّ يُقَالُ هَٰذَا ٱلَّذِي كُنتُم بِهِۦ تُكَذِّبُونَ

তারপর বলা হবে, ‘এটাই তা যাতে তোমরা মিথ্যারোপ করতে।’ info
التفاسير:

external-link copy
18 : 83

كَلَّآ إِنَّ كِتَٰبَ ٱلۡأَبۡرَارِ لَفِي عِلِّيِّينَ

কখনো নয়, নিশ্চয় পূণ্যবানদের আমলনামা ‘ইল্লিয়ইয়্যীনে’ [১], info

[১] কারও কারও মতে عِلِّيِّيْنَ শব্দটি علوّ এর বহুবচন। উদ্দেশ্য উচ্চতা। [ইবন কাসীর] আবার কেউ কেউ বলেন, এটা জায়গার নাম- বহুবচন নয়। [কুরতুবী; ইবন কাসীর] বারা ইবন আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর হাদীসে এসেছে যে, ফেরশেতাগণ রূহ নিয়ে উঠতেই থাকবেন

حَتّٰى يُنْتَهٰى بِهِ إِلَى السَّمَاءِ السَّا بِعَةِ فَيَقُولُ اللهُ عَزَّ وَ جَلَّ اكْتُبُو اكِتَابَ عَبْدِي فِي عِلِّيِّينَ

“শেষ পর্যন্ত সপ্তম আসমানে উঠবেন তখন মহান আল্লাহ্ বলবেন, আমার বান্দার কিতাব ইল্লিয়্যীনে লিখে নাও।” [মুসনাদে আহমাদ ৪/২৮৭] এ থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, ইল্লিয়্যীন সপ্তম আকাশে আরশের কাছে এক স্থানের নাম। এতে মুমিনদের রূহ ও আমলনামা রাখা হয়। [ইবন কাসীর ইবন আব্বাস থেকে]

التفاسير:

external-link copy
19 : 83

وَمَآ أَدۡرَىٰكَ مَا عِلِّيُّونَ

আর কিসে আপনাকে জানাবে ‘ইল্লিয়্যীন’ কী? info
التفاسير:

external-link copy
20 : 83

كِتَٰبٞ مَّرۡقُومٞ

চিহ্নিত আমলনামা [১]। info

[১] এখানেও এটাই সঠিক যে, এটা ‘ইল্লিয়্যীন’ এর কোনো বিশেষণ নয়, বরং পূর্বে উল্লেখিত كِتٰبَ الْاَبْرَارِ এর বিশেষণ। [দেখুন, কুরতুবী; ইবন কাসীর] এর প্রমাণ উপরোক্ত বারা ইবন আযেব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত হাদীসে এসেছে,

فَيَقُولُ اللهُ عَزَّ وَ جَلَّ اكْتُبُو اكِتَابَ عَبْدِي فِي عِلِّيِّينَ

“অতঃপর মহান আল্লাহ্ বলবেন, আমার বান্দার আমলনামা ইল্লিয়্যীন লিখে রাখ।” সুতরাং ইল্লিয়্যীন কিতাব নয় বরং আমলনামা বা কিতাব কপি করে রাখার স্থান।

التفاسير:

external-link copy
21 : 83

يَشۡهَدُهُ ٱلۡمُقَرَّبُونَ

(আল্লাহর) সান্নিধ্যপ্রাপ্তরাই তা অবলোকন করে [১]। info

[১] يشهد শব্দটি شهود থেকেউদ্ভূত। شهود এর এক অর্থ প্রত্যক্ষ করা, তত্ত্বাবধান করা। তখন আয়াতের উদ্দেশ্য হবে এই যে, সৎকর্মশীলদের আমলনামার প্রতি আসমানের নৈকট্যশীল ফেরেশতাগণ দেখবে অর্থাৎ তত্ত্বাবধান ও হেফাযত করবে। [ইবন কাসীর] তাছাড়া شهود এর আরেক অর্থ উপস্থিত হওয়া। [উসাইমীন, তাফসীরুল কুরআনিল আয়ীম] তখন يشهده এর সর্বনাম দ্বারা ইল্লিয়্যীন বোঝানো হবে। আর এর অর্থ হবে, প্রতি আসমানের নৈকট্যপ্রাপ্তগণ সেখানে হাজির হবেন এবং সেটাকে হেফাযত করবেন; কেননা এটা নেক আমলকারীর জন্য জাহান্নাম থেকে নিরাপত্তা পত্র এবং জান্নাতে যাওয়ার সফলতার গ্যারান্টি। [আইসারুত তাফসীর] এটা ঐ সময়ই হবে, যখন ইল্লিয়্যীন দ্বারা আমলনামা বোঝানো হবে। আর যদি ইল্লিয়্যীন দ্বারা নৈকট্যপ্রাপ্তদের রূহের স্থান ধরা হয়, তখন আয়াতের অর্থ হবে, নৈকট্যশীলগণের রূহ্ এই ইল্লিয়্যীন নামক স্থানে উপস্থিত হবে। সে হিসেবে ইল্লিয়্যীন ঈমানদারদের রুহের আবাসস্থল; যেমন সিজ্জীন কাফেরদের রূহের আবাসস্থল। এর স্বপক্ষে একটি হাদীস থেকে ধারণা পাওয়া যায়, আবদুল্লাহ্ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বর্ণিত একটি হাদীসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “শহীদগণের রূহ আল্লাহর সান্নিধ্যে সবুজ পাখিদের মধ্যে থাকবে এবং জান্নাতের বাগ-বাগিচা ও নহরসমূহে ভ্রমণ করবে। তাদের বাসস্থানে আরাশের নিচে ঝুলন্ত প্ৰদীপ থাকবে।” [মুসলিম ১৮৮৭] এ থেকে বোঝা গেল যে, শহীদগণের রূহ্ আরাশের নিচে থাকবে এবং জান্নাতে ভ্ৰমণ করতে পারবে। তাছাড়া পবিত্র কুরআনের অন্য আয়াতে বলা হয়েছে,

عِنْدَسِدْرَةِالْمُنْتَهٰى ٭ عِنْدَهَا جَنَّةُ الْمَلْوٰى

এ থেকে পরিষ্কার জানা যায় যে, জান্নাত সিদরাতুল মুনতাহার সন্নিকটে। সিদরাতুল মুনতাহা যে সপ্তম আকাশে, এ কথা হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। তাই আত্মার স্থান ইল্লিয়্যীন জান্নাতের সংলগ্ন এবং আত্মাসমূহ জান্নাতের বাগিচায় ভ্ৰমণ করে। অতএব, আত্মার স্থান জান্নাতও বলা যায়। তাই কোনো কোনো মুফাসসির ইল্লিয়্যীন এর ব্যাখ্যা করেছেন জান্নাত। [সা‘দী]

التفاسير:

external-link copy
22 : 83

إِنَّ ٱلۡأَبۡرَارَ لَفِي نَعِيمٍ

নিশ্চয় পুণ্যবানগণ থাকবে পরম স্বাচ্ছন্দ্যে, info
التفاسير:

external-link copy
23 : 83

عَلَى ٱلۡأَرَآئِكِ يَنظُرُونَ

সুসজ্জিত আসনে বসে তারা দেখতে থাকবে। info
التفاسير:

external-link copy
24 : 83

تَعۡرِفُ فِي وُجُوهِهِمۡ نَضۡرَةَ ٱلنَّعِيمِ

আপনি তাদের মুখমণ্ডলে স্বাচ্ছন্দ্যের দীপ্তি দেখতে পাবেন, info
التفاسير:

external-link copy
25 : 83

يُسۡقَوۡنَ مِن رَّحِيقٖ مَّخۡتُومٍ

তাদেরকে মোহর করা বিশুদ্ধ পানীয় হতে পান করান হবে; info
التفاسير:

external-link copy
26 : 83

خِتَٰمُهُۥ مِسۡكٞۚ وَفِي ذَٰلِكَ فَلۡيَتَنَافَسِ ٱلۡمُتَنَٰفِسُونَ

যার মোহর হবে মিসকে্র [১] , আর এ বিষয়ে প্রতিযোগীরা প্ৰতিযোগিতা করুক [২]। info

[১] মূলে “খিতামুহু মিস্ক” বলা হয়েছে। এর একটি অর্থ হচ্ছে, যেসব পাত্রে এই শরাব রাখা হবে তার ওপর মাটি বা মোমের পরিবর্তে মিশকের মোহর লাগানো থাকবে। এ অর্থের দিক দিয়ে আয়াতের মানে হয়: এটি হবে উন্নত পর্যায়ের পরিচ্ছন্ন শরাব। এর দ্বিতীয় অর্থ হতে পারে: এই শরাব যখন পানকারীদের গলা থেকে নামবে তখন শেষের দিকে তারা মিশকের খুশবু পাবে। [ফাতহুল কাদীর] এই অবস্থাটি দুনিয়ার শরাবের সম্পূর্ণ বিপরীত। এখানে শরাবের বোতল খোলার সাথে সাথেই একটি বোটকা গন্ধ নাকে লাগে। পান করার সময়ও এর দুৰ্গন্ধ অনুভূত হতে থাকে এবং গলা দিয়ে নামবার সময় মস্তিষ্কের অভ্যন্তরেও পচা গন্ধ পৌছে যায়। এর ফলে শরাবীর চেহারায় বিস্বাদের একটা ভাব জেগে ওঠে।

[২] কোনো বিশেষ পছন্দনীয় জিনিস অর্জন করার জন্যে কয়েকজনের ধাবিত হওয়া ও দৌড়া, যাতে অপরের আগে সে তা অর্জন করতে সক্ষম হয় এর নাম تنافس। এখানে জন্নাতের নেয়ামতরাজি উল্লেখ করার পর আল্লাহ্ তা'আলা গাফেল মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, আজ তোমরা যেসব বস্তুকে প্রিয় ও কাম্য মনে করে সেগুলো অর্জন করার জন্যে অগ্রে চলে যাওয়ার চেষ্টায় রত আছ, সেগুলো অসম্পূর্ণ ও ধ্বংসশীল নেয়ামত। এসব নেয়ামত প্রতিযোগিতার যোগ্য নয়। এসব ক্ষণস্থায়ী সুখের সামগ্ৰী হাতছাড়া হয়ে গেলেও তেমন দুঃখের কারণ নয়। হ্যাঁ, জান্নাতের নেয়ামতরাজির জন্যই প্রতিযোগিতা করা উচিত। এগুলো সব দিক দিয়ে সম্পূর্ণ চিরস্থায়ী।

التفاسير:

external-link copy
27 : 83

وَمِزَاجُهُۥ مِن تَسۡنِيمٍ

আর তার মিশ্রণ হবে তাস্নীমের [১], info

[১] তাসনীম মানে উন্নত ও উঁচু। [ফাতহুল কাদীর] কোনো কোনো মুফাসসির বলেন, কোনো ঝরণাকে তাসনীম বলার মানে হচ্ছে এই যে, তা উঁচু থেকে প্রবাহিত হয়ে নীচের দিকে আসে। [ফাতহুল কাদীর]

التفاسير:

external-link copy
28 : 83

عَيۡنٗا يَشۡرَبُ بِهَا ٱلۡمُقَرَّبُونَ

এটা এক প্রস্রবণ, যা থেকে সান্নিধ্যপ্রাপ্তরা পান করে। info
التفاسير:

external-link copy
29 : 83

إِنَّ ٱلَّذِينَ أَجۡرَمُواْ كَانُواْ مِنَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ يَضۡحَكُونَ

নিশ্চয় যারা অপরাধ করেছে তারা মুমিনদেরকে উপহাস করত [১] info

[১] অর্থাৎ একথা ভাবতে ভাবতে ঘরের দিকে ফিরতো: আজ তো বড়ই মজা। ওমুক মুসলিমকে বিদ্রুপ করে, তাকে চোখা চোখা বাক্যবাণে বিদ্ধ করে বড়ই মজা পাওয়া গেছে এবং সাধারণ মানুষের সামনে তাকে চরমভাবে অপদস্থ করা গেছে। মোটকথা, তারা মু‘মিনদের নিয়ে অপমানজনক কথা-বার্তা, আচার-আচরণ, ইশারা-ইঙ্গিত করত। আর মজা লাভ করত। [ফাতহুল কাদীর]

التفاسير:

external-link copy
30 : 83

وَإِذَا مَرُّواْ بِهِمۡ يَتَغَامَزُونَ

আর যখন তারা মুমিনদের কাছ দিয়ে যেত তখন তারা চোখ টিপে বিদ্ররূপ করত। info
التفاسير:

external-link copy
31 : 83

وَإِذَا ٱنقَلَبُوٓاْ إِلَىٰٓ أَهۡلِهِمُ ٱنقَلَبُواْ فَكِهِينَ

আর যখন তাদের আপনজনের কাছে ফিরে আসত তখন তারা ফিরত উৎফুল্ল হয়ে, info
التفاسير:

external-link copy
32 : 83

وَإِذَا رَأَوۡهُمۡ قَالُوٓاْ إِنَّ هَٰٓؤُلَآءِ لَضَآلُّونَ

আর যখন মুমিনদেরকে দেখত তখন বলত, ‘নিশ্চয় এরা পথভ্ৰষ্ট [১]।’ info

[১] অর্থাৎ এরা বুদ্ধিভ্রষ্ট হয়ে গেছে। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এদেরকে জান্নাত ও জাহান্নামের চক্করে ফেলে দিয়েছেন। ফলে এরা নিজেরা নিজেদেরকে দুনিয়ার লাভ, স্বাৰ্থ ও ভোগ-বিলাসিতা থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে এবং সব রকমের আশংকা ও বিপদ আপদের মুখোমুখি হয়েছে। [ফাতহুল কাদীর] যা কিছু এদের সামনে উপস্থিত আছে তা কেবল এ অনিশ্চিত আশায় ত্যাগ করছে যে, এদের সাথে মৃত্যুর পরে কি এক জান্নাত দেয়ার ওয়াদা করা হয়েছে, আর পরবর্তী জগতে নাকি কোনো জাহান্নাম হবে, এদেরকে তার আযাবের ভয় দেখানো হয়েছে এবং তার ফলেই এরা আজ এ দুনিয়ায় সবকিছু কষ্ট বরদাশত করে যাচ্ছে। এভাবে যুগে যুগে মুমিনদেরকে অপমানজনক কথা সহ্য করতে হয়েছে। বর্তমানেও কেউ দীনদার হলে তার সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করতে শোনা যায়। [উসাইমীন, তাফসীরুল কুরআনিল আযীম]

التفاسير:

external-link copy
33 : 83

وَمَآ أُرۡسِلُواْ عَلَيۡهِمۡ حَٰفِظِينَ

অথচ তাদেরকে মুমিনদের তত্ত্বাবধায়ক করে পাঠানো হয়নি [১]। info

[১] এই ছোট বাক্যটিতে বিদ্রুপকারীদের জন্য বড়ই শিক্ষাপ্রদ হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে অর্থাৎ ধরে নেয়া যাক মুসলিমরা যা কিছুর প্রতি ঈমান এনেছে সবকিছুই ভুল। কিন্তু তাতে তারা তোমাদের তো কোনো ক্ষতি করছে না। যে জিনিসকে তারা সত্য মনে করেছে সেই অনুযায়ী তারা নিজেরাই আমল করছে। তোমরা তাদের সমালোচনা করছ কেন? আল্লাহ্ কি তোমাদেরকে এই দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন? মুমিনদের কর্মকাণ্ড হেফাযত করার দায়িত্ব তো তোমাদেরকে দেয়া হয়নি। তাহলে সেটা করতে যাবে কেন? এটাকেই তোমাদের উদ্দেশ্য বানিয়েছ কেন? [দেখুন, ইবন কাসীর]

التفاسير:

external-link copy
34 : 83

فَٱلۡيَوۡمَ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مِنَ ٱلۡكُفَّارِ يَضۡحَكُونَ

অতএব আজ মুমিনগণ উপহাস করবে কাফিরদেরকে, info
التفاسير:

external-link copy
35 : 83

عَلَى ٱلۡأَرَآئِكِ يَنظُرُونَ

সুসজ্জিত আসনে বসে তারা দেখতে থাকবে। info
التفاسير:

external-link copy
36 : 83

هَلۡ ثُوِّبَ ٱلۡكُفَّارُ مَا كَانُواْ يَفۡعَلُونَ

কাফিররা তাদের কৃতকর্মের ফল পেল তো? info
التفاسير: