সূরা সংক্রান্ত আলোচনা:
আয়াত সংখ্যা: ২৮ আয়াত।
নাযিল হওয়ার স্থান: মক্কী।
রহমান, রহীম আল্লাহর নামে
[১] নূহ আলাইহিস সালাম তার রিসালাতের দায়িত্ব পালনের শুরুতেই তার জাতির সামনে তিনটি বিষয় পেশ করেছিলেন। এক. আল্লাহর দাসত্ব, দুই. তাকওয়া বা আল্লাহভীতি এবং তিন. রাসূলের আনুগত্য। প্রথমেই ছিল আল্লাহর অবাধ্যতা না করার আহ্বান। কারণ, তাঁর অবাধ্য হলে আযাব অনিবার্য। তারপর তাকওয়ার আহ্বান। যার মাধ্যমে রাসূলকে মেনে নিয়ে একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত করার আহ্বান রয়েছে। তারপর রয়েছে রাসূলের আনুগত্যের আহ্বান। তিনি যা করতে আদেশ করেন তাই করা যাবে আর যা করতে নিষেধ করেন তা-ই ত্যাগ করতে হবে। [মুয়াসসার]
[১] مِن অব্যয়টি প্রায়শঃ কতক অর্থ জ্ঞাপন করার জন্যে ব্যবহৃত হয়। এই অর্থে আয়াতের উদ্দেশ্য এই যে, ঈমান আনলে তোমাদের কতক গোনাহ মাফ হয়ে যাবে। কোনো কোনো মুফাসসির বলেন, এর অর্থ আল্লাহ্ তা‘আলার হক সম্পর্কিত গোনাহ মাফ হয়ে যাবে। কেননা বান্দার হক মাফ হওয়ার জন্যে ঈমান আনার পরও একটি শর্ত আছে। তা এই যে হকটি আদায় যোগ্য হলে তা আদায় করতে হবে; যেমন আর্থিক দায়-দেনা এবং আদায় যোগ্য না হলে তা মাফ নিতে হবে যেমন মুখে কিংবা হাতে কাউকে কষ্ট দেয়া। কোনো কোনো তফসীরবিদ বলেন, আয়াতে من অব্যয়টি বর্ণনাসূচক। উদ্দেশ্য এই যে, ঈমান আনলে তোমাদের সব গোনাহ মাফ হয়ে যাবে। [দেখুন, ফাতহুল কাদীর]
[২] উদ্দেশ্য এই যে তোমরা ঈমান আনলে আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদেরকে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দিবেন। বয়সের নির্দিষ্ট মেয়াদের পূর্বে তোমাদেরকে কোনো আযাবে ধ্বংস করবেন না। [সা’দী]
[১] মুখ ঢাকার একটি কারণ হতে পারে, তারা নূহ আলাইহিস সালামের বক্তব্য শোনা তো দূরের কথা তার চেহারা দেখাও পছন্দ করতো না। [মুয়াসসার] আরেকটি কারণ হতে পারে, তারা তার সম্মুখ দিয়ে যাওয়ার সময় মুখ ঢেকে চলে যেতো, যাতে তিনি তাদের চিনে কথা বলার কোনো সুযোগ আদৌ না পান। [ইবন কাসীর] মক্কার কাফেররা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে যে ধরনের আচরণ করছিলো সেটিও ছিল অনুরূপ একটি আচরণ। পবিত্র কুরআনের অন্যত্র তাদের এ আচরণের উল্লেখ করা হয়েছে এভাবে “দেখ, এসব লোক তাদের বক্ষ ঘুরিয়ে নেয়, যাতে তারা রাসূলের চোখের আড়ালে থাকতে পারে। সাবধান! যখন এরা কাপড় দ্বারা নিজেদেরকে ঢেকে আড়াল করে তখন আল্লাহ্ তাদের প্রকাশ্য বিষয়গুলোও জানেন এবং গোপন বিষয়গুলোও জানেন। তিনি তো মনের মধ্যকার গোপন কথাও জানেন।” [সূরা হূদ ৫]